আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও -আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও-যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে..আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে..এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও..আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান..তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও পৃথিবী -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ~ alokrekha আলোক রেখা
1) অতি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না, কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায় -এডওয়ার্ড হল । 2) অবসর জীবন এবং অলসতাময় জীবন দুটো পৃথক জিনিস – বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন । 3) অভাব অভিযোগ এমন একটি সমস্যা যা অন্যের কাছে না বলাই ভালো – পিথাগোরাস । 4) আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও , আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট । 5) আমরা জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না বলে আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না – শিলার । 6) উপার্জনের চেয়ে বিতরণের মাঝেই বেশী সুখ নিহিত – ষ্টিনা। 7) একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি কে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী । 8) একজন দরিদ্র লোক যত বেশী নিশ্চিত , একজন রাজা তত বেশী উদ্বিগ্ন – জন মেরিটন। 9) একজন মহান ব্যাক্তির মতত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যাক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে – কার্লাইন । 10) একজন মহিলা সুন্দর হওয়ার চেয়ে চরিত্রবান হওয়া বেশী প্রয়োজন – লং ফেলো। 11) কাজকে ভালবাসলে কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় – আলফ্রেড মার্শা
  • Pages

    লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে

    পৃথিবী -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর










    পৃথিবী -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    আজ আমার প্রণতি গ্রহন করো, পৃথিবী,
    শেষ নমস্কারে অবনত দিনাবসানের বেদিতলে।।
    মহাবীর্যবতী তুমি বীরভোগ্যা,
    বিপরীত তুমি ললিতে কঠোরে,
    মিশ্রিত তোমার প্রকৃতি পুরুষে নারীতে,
    মানুষের জীবন দোলায়িত কর তুমি দু:সহ দ্বন্দ্বে।
    ডান হাতে পূর্ণ কর সুধা,
    বাম হাতে চুর্ণ কর পাত্র,
    তোমার লীলাক্ষেত্র মুখরিত কর অট্টবিদ্রূপে;
    দু:সাধ্য কর বীরের জীবনকে মহত্ জীবনে যার অধিকার।

    শ্রেয়কে কর দুরমূল্য, কৃপা কর না কৃপাপাত্রকে।
    তোমার গাছে গাছে প্রচ্ছন্ন রেখেছো প্রতি মুহূর্তের সংগ্রাম,
    ফলে শস্যে তার জয়মাল্য হয় সার্থক।
    জলে স্থলে তোমার ক্ষমাহীন রণরঙ্গভূমি-
    সেখানে মৃত্যুর মুখে ঘোষিত হয় বিজয়ী প্রাণের জয়বার্তা।
    তোমার নির্দয়তার ভিত্তিতে উঠেছে সভ্যতার জয়তোরণ
    ত্রুটি ঘটলে তার পূর্ণ মূল্য শোধ হয় বিনাশে।।
    তোমার ইতিহাসের আদিপর্বে দানবের ছিল দুর্জয়-
    সে পুরুষ, সে বর্বর, সে মূঢ়।
    তার অঙ্গুলি ছিল স্থুল, কলাকৌশলবর্জিত;
    গদা-হাতে মুষল-হাতে লন্ডভন্ড করেছে সে সমুদ্র পর্বত;
    অগ্নিতে বাষ্পেতে দু:স্বপ্ন ঘুলিয়ে তুলেছে আকাশে।
    জড়রাজত্বে সে ছিল একাধিপতি,
    প্রাণের পরে ছিল তার অন্ধ ঈর্ষা।।
    দেবতা এলেন পরযুগে, মন্ত্র পড়লেন দানবদমনের-
    জড়ের ঔদ্ধত্য হল অভিভূত;
    জীবধাত্রী বসলেন শ্যামল আস্তরণ পেতে।
    উষা দাঁড়ালেন পূর্বাচলের শিখরচূড়ায়,
    পশ্চিমসাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শান্তিঘট।।
    নম্র হল শিকলে-বাঁধা দানব,
    তবু সেই আদিম বর্বর আঁকড়ে রইল তোমার ইতিহাস।
    ব্যবস্থার মধ্যে সে হঠাৎ আনে বিশৃঙ্খলতা-
    তোমার স্বভাবের কালো গর্ত থেকে
    হঠাৎ বেরিয়ে আসে এঁকেবেঁকে!
    তোমার নাড়ীতে লেগে আছে তার পাগলামি।
    দেবতার মন্ত্র উঠেছে আকাশে বাতাসে অরণ্যে
    দিনে রাত্রে উদাত্ত অনুদাত্ত মন্দ্রস্বরে।
    তবু তোমার বক্ষের পাতাল থেকে আধপোষা নাগদানব
    ক্ষণে ক্ষণে উঠেছে ফণা তুলে-
    তার তাড়নায় তোমার আপন জীবকে করেছ আঘাত,
    ছারখার করছ আপন সৃষ্টিকে।।
    শুভে-অশুভে স্থাপিত তোমার পাদপীঠে
    তোমার প্রচন্ড সুন্দর মহিমার উদ্দেশে
    আজ রেখে যাব আমার ক্ষতচিহ্নলাঞ্জিত জীবনের প্রণতি।
    বিরাট প্রাণের, বিরাট মৃত্যুর, গুপ্তসঞ্চার তোমার যে মাটির তলায়
    তাকে আজ স্পর্শ করি- উপলব্ধি করি সর্বদেহে মনে।
    অগণিত যুগযুগান্তের অসংখ্য মানুষের লুপ্তদেহ পুঞ্জিত তার ধুলায়।
    আমিও রেখে যাব কয়-মুষ্টি ধূলি, আমার সমস্ত সুখদু:খের শেষ পরিণাম-
    রেখে যাব এই নামগ্রাসী আকারগ্রাসী সকল-পরিচয়-গ্রাসী
    নি:শব্দ ধূলিরাশির মধ্যে।।
    অচল অবরোধে আবদ্ধ পৃথিবী, মেঘলোকে উধাও পৃথিবী,
    গিরিশৃঙ্গমালার মহৎ মৌনে ধ্যাননিমগ্না পৃথিবী,
    নীলাম্বুরাশির অতন্দ্র তরঙ্গে কলমন্দ্রমুখরা পৃথিবী,
    অন্নপূর্ণা তুমি সুন্দরী, অন্নরিক্তাতুমি ভীষণা।
    একদিকে আপক্বধান্যভারনম্র তোমার শস্যত্রে-
    সেখানে প্রসন্ন প্রভাতসূর্য প্রতিদিন মুছে নেয় শিশিরবিন্দু
    কিরণ-উত্তরীয় বুলিয়ে দিয়ে;
    অস্তগামী সূর্য শ্যামশস্যহিল্লোলে রেখে যায় অকথিত এই বাণী
    আমি আনন্দিত
    অন্যদিকে তোমার জলহীন ফলহীন আতঙ্কপান্ডুর মরুক্ষেত্র
    পরিকীর্ণ পশুকঙ্কালের মধ্যে মরীচিকার প্রেতনৃত্য।
    বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুত্চঞ্চুবিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল
    কালো শ্যেনপাখির মতো তোমার ঝড়-
    সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোলা সিংহ;
    তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু করে
    হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে;
    হাওয়ার মুখে ছুটল ভাঙা কুঁড়ের চাল
    শিকল-ছেঁড়া কয়েদি-ডাকাতের মতো।
    আবার ফাল্গুনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিণে হাওয়া
    ছড়িয়ে দিয়েছে বিরহমিলনের স্বগতপ্রলাপ আম্রমুকুলের গন্ধে;
    চাঁদের পেয়ালা ছাপিয়ে দিয়ে উপচিয়ে পড়েছে স্বর্গীয় মদের ফেনা;
    বনের মর্মরধ্বনি বাতাসের স্পর্ধায় ধৈর্য হারিয়েছে
    অকস্মাৎ কল্লোলোচ্ছ্বাসে।।
    স্নিগ্ধ তুমি, হিংস্র তুমি, পুরাতনী তুমি নিত্যনবীনা,
    অনাদি সৃষ্টির যজ্ঞহুতাগ্নি থেকে বেরিয়ে এসেছিলে
    সংখ্যাগণনার-অতীত প্রত্যুষে;
    তোমার চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে এসেছে
    শত শত ভাঙা ইতিহাসের অর্থলুপ্ত অবশেষ;
    বিনা বেদনায় বিছিয়ে এসেছে তোমার বর্জিত সৃষ্টি
    অগণ্য বিস্মৃতির স্তরে স্তরে।।
    জীবপালিনী, আমাদের পুষেছ
    তোমার খন্ডকালের ছোট ছোট পিঞ্জরে,
    তারই মধ্যে সব খেলার সীমা, সব কীর্তির অবসান।।
    আজ আমি কোন মোহ নিয়ে আসি নি তোমার সম্মুখে;
    এতদিন যে দিনরাত্রির মালা গেঁথেছি বসে বসে
    তার জন্য অমরতার দাবি করব না তোমার দ্বারে।
    তোমার অযুত নিযুত বৎসর সূর্যপ্রদক্ষিণের পথে
    যে বিপুল নিমেষগুলি উম্মীলিত নিমীলিতহতে থাকে
    তারই এক ক্ষুদ্র অংশে কোন-একটি আসনের
    সত্যমুল্য যদি দিয়ে থাকি,
    জীবনের কোন-একটি ফলবান্ খন্ডকে
    যদি জয় করে থাকি পরম দু:খে
    তবে দিয়ো তোমার মাটির ফোঁটার একটি তিলক আমার কপালে;
    সে চিহ্ন যাবে মিলিয়ে
    যে রাত্রে সকল চিহ্ন পরম অচিনের মধ্যে যায় মিশে।।
    হে উদাসীন পৃথিবী,
    আমাকে সম্পূর্ণ ভোলবার আগে
    তোমার নির্মম পদপ্রান্তে
    আজ রেখে যাই আমার প্রণতি।।

     http://www.alokrekha.com

    3 comments:

    1. মোহন সিরাজীAugust 22, 2018 at 6:06 PM

      আলোকরেখা পড়তে ভালো লাগে কারণ এখানে আমরা সর্বদা আমরা যা পড়তে চাই তা পাই। সে কোনূতুন কবিদের লেখা হোক আর বরেণ্য কবিদের কবিতায় হোক। আলোকখার চলার পথ সুগম হোক এই কামনা করি।

      ReplyDelete
    2. ইকবাল আহসানAugust 22, 2018 at 7:07 PM

      কদিনধরেই মাথায় কবিতাটা গুন্ গুন্ করছিল -- বই খুলে পড়তে যাবো তখনি আলোকরেখা সেই তৃস্না মিটিয়ে দিল তাইতো আমার আলোকরেখা পড়তে ভালো লাগে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা আলোকরেখার জন্য।

      ReplyDelete
    3. সমীরণ চ্যাটার্জিAugust 22, 2018 at 7:53 PM

      পৃথিবী -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর কবিতা আমার সব থেকে প্রিয় কবিতা। ঘুরতে ঘুরতে চলতে চলতে প্রায় আলোকরেখা খুলে বসি। মনের চাহিদা মেটাতে। যখন নতুন লেখা পাইনা পুরোনো খাতা খুলে বসি আলোকরেখার। প্রতিবারই নতুন মনে হয়। মানসম্মত লেখা। আলোকরেখার চলার পথ সুললিত হোক আর আমরা মনের মনন খোরাক খোঁজে পাই।

      ReplyDelete

    অনেক অনেক ধন্যবাদ