সাধারণ
অর্থে হিজড়ার অভিধানিক অর্থ বলতে আমরা বুঝি একই দেহে নারী ও পুরুষের চিহ্নযুক্ত
মানুষ । যারা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। শারীরিক ভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিক ভাবে নারী
বৈশীষ্ট্য এর অধীকারী।সাধারণ অর্থে হিজড়ার বলতে আমরা বুঝি একই দেহে নারী ও পুরুষের চিহ্নযুক্ত মানুষ ।
যারা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। শারীরিক ভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিক ভাবে
নারী বৈশীষ্ট্য এর অধীকারী। হিজড়া হওয়ার কারণ নানা কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। কেউ এটাকে
সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ বলে,
কেউ বলে পিতামাতার দোষ কিংবা প্রকৃতির
খেয়াল। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী
মাতৃগর্ভে একটি শিশুর পূর্ণতা পেতে ২৮০ দিন সময়ের প্রয়োজন। x x প্যাটার্ন ডিম্বাণু বর্ধিত হয়ে জন্ম দেয় নারী
শিশুর। আর x-y প্যাটার্ন জন্ম দেয় পুরুষ শিশুর।
ভ্রূণের পূর্ণতা প্রাপ্তির একটি স্তরে
ক্রোমোজম প্যাটার্নের প্রভাবে পুরুষ শিশুর মধ্যে অন্ডকোষ এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে
ডিম্বকোষ জন্ম নেয়। অন্ডকোষ থেকে নিঃসৃত হয় পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন এবং ডিম্বকোষ
থেকে নিঃসৃত হয় এস্ট্রোজন। পরবর্তী স্তরগুলোতে পুরুষ শিশুর যৌনাঙ্গ এন্ড্রোজেন
এবং স্ত্রী শিশুর যৌনাঙ্গ এস্ট্রোজনের প্রভাবে তৈরি হয়। ভ্রূণের বিকাশকালে এই সমতা নানাভাবে বিশৃঙ্খল হতে পারে। প্রথমত ভ্রূণের নিষিক্তকরণ এবং বিভাজনের ফলে কিছু অস্বাভাবিক
প্যাটার্নের সূচনা হতে পারে। যেমন এক্স-ওয়াই ওয়াই অথবা এক্স এক্স, ওয়াই। এক্স ওয়াই ওয়াই প্যাটার্নের
শিশু দেখতে নারী শিশুর মতো। কিন্তু একটি এক্সের অভাবে এই প্যাটার্নের স্ত্রী শিশুর
সব অঙ্গ পূর্ণতা পায় না। একে স্ত্রী হিজড়াও বলে। আবার এক্স এক্স ওয়াই
প্যাটার্নে যদিও শিশু দেখতে পুরুষের মতো কিন্তু একটি বাড়তি মেয়েলি ক্রোমোজম
এক্সের জন্য তার পৌরুষ প্রকাশে বিঘ্নিত
হয়। মূলত এটি একটি শারীরিক গঠনজনিত সমস্যা যা অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতই
কিন্তু প্রতিবন্ধকতার স্থানটি ভিন্ন হওয়াতেই তারা হিজড়া। হিজড়াদের শারীরিক গঠন
মূলত তিন প্রকার।নারীদের সকল বৈশিষ্ট্য
থাকলেও নারী যৌনাঙ্গ থাকে না।পুরুষের সকল
বৈশিষ্ট্য থাকলেও পুরুষ যৌনাঙ্গ থাকে না। আবার উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে।
যদিও
হিজড়ার জন্ম প্রকৃতি প্রদত্ত যা জন্মগত
জেনেটিক ত্রূটি কারণে। কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট আরেক রকমের হিজড়া হয় তাদের খোজা বলে। তাদের লিঙ্গ বা প্রজনন অঙ্গ কেটে ফেলে খোজা বানানো
হয় । একে ক্যাস্ট্রেশন বলা হয়।
যাদের ক্যাস্ট্রেশন হয় তাদের কোনো প্রকার যৌন আকাঙ্ক্ষাই থাকে না । এই প্রথা বহু প্রাচীন। ঐতিহাসিক ও
নৃতাত্ত্বিক নানা গবেষণা থেকে জানা যায় যে, বহুবিবাহ, উপপত্নী (বাঁদি) ও হারেম ব্যবস্থা গড়ে ওঠার
কারণে খোজা ব্যবস্থারও উদ্ভব ঘটে। হারেমের নারীদের ওপর নজর রাখার জন্য খোজাকৃত
পুরুষ প্রহরী নিয়োগ করা হতো। সাধারণত রণাঙ্গণে বন্দি তরুণ সৈনিকদের খোজা করা হতো।
এই প্রথা এখনো চালু আছে।শারীরিক ও মানসিক গঠনের উপর নির্ভর করে এদেরকে ৬ ভাগে ভাগ
করা যায়। শারীরিক ভাবে পুরুষ কিন্তু মানষিক ভাবে নারী বৈশীষ্ট্য এর অধীকারী
হিজড়াদের বলা হয় অকুয়া, অন্য হিজড়াদের ভরা হয় জেনানা, আর মানুষের হাতে সৃষ্ট বা ক্যাসট্রেড
পুরুষদের বলা হয় চিন্নি বা খোজা।
হিজড়ারাও
ভালবাসে । হিজড়াদের জীবনেও সাধারণ মানুষের মত প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপারগুলো আসে ।
এর পরিনতি হিসাবে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় । একই লিঙ্গের দু’জন অথচ ঘর বাঁধার স্বপ্ন
। পুরুষের কাছে নিজেকে নারী হিসাবে উপস্থাপন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।
নিজের জন্মের জন্য দায়ী না হলেও সমাজ মনে করে
হিজড়ারা অভিশপ্ত। সমাজ তো দূরের কথা ভাই-বোন, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন
তাদের বিতাড়িত দূরে সরিয়ে দেয়।
সবাই তাদের দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়, কানাকানি, হাসি-তামাশার পাত্র হয়ে দাঁড়ায়।
গালি দেয় হিজড়া বলে। নিগৃহীত উপদ্রুত হচ্ছে সারাক্ষণ । একজন হিজড়া
ব্যক্তিগতভাবে যেমন প্রতিষ্ঠা পায় না, তেমনি কোনও প্রতিষ্ঠা পায় না। সমাজ, সরকারের কাছ থেকেও। এই সমাজের মানুষগুলোর
দৃষ্টিভঙ্গি এমন যে হিজড়া বলে শিশুটিকে কোনও স্কুলে ভর্তি করা যাবে না। তার সঙ্গে
নিজের সন্তানদের খেলতে দেওয়া যাবে না। এমনকি পরিবারের লোকজন হিজড়া সন্তান হওয়ার
লজ্জা ঘোচাতে হিজড়া সন্তানটিকে ছেলে সাজাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু সেটা আর
কতদিন। তার শরীর, মন তো হিজড়ার মতো আচরণ করে।
পারিপার্শ্বিক অবস্থা, লোকলজ্জা, কুসংস্কারের কারণে ওই হিজড়া সন্তানটির
আর পড়াশোনা হয় না। সে শৈশবে তার ইচ্ছাগুলো পূরণ না করতে পেরে একসময় সুযোগ বুঝে
রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে। মিশে যায় এদের মতো কোনও হিজড়ার দলে। তারপর বাড়ি বাড়ি
নাচ-গান করে মানুষের কাছে হাত পেতে পেটের খিদে নিবারণ করে। চিরদিনের মতো এই পরিবার
তার আদরের সন্তানটিকে হারিয়ে ফেলে।
ওরা
চায় সমাজে ওদের মানুষ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো ওরা
সমাজের সঙ্গে, পরিবার পরিজনদের সঙ্গে বসবাস করতে
চায়। ওরা দেশ ও দশের সেবা করতে চায়। চায় একটা সামাজিক, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। হিজড়াদের মধ্যে
কেউ কেউ নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে একটু-আধটু পড়াশোনা করেছে।
ওদের
দুঃখ কষ্টগুলো লাঘব করার চেষ্টা করি, এ পৃথিবী থেকে ওদের পাওনা বুঝিয়ে দেই । মানুষ হিসাবে অবশ্যই
হিজড়াদের জীবন-যাপনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। কিন্তু বর্তমান সমাজে এরা বাস করে খুবই
অবহেলিত ভাবে।
Sanjida Bravo! hats of to you. To create a separate topic of transgender people beside the Art and literature of Rabindranath Freedom 71 ', as well as philosophy.
ReplyDeleteবৃহন্নলা বরীন্দ্রনাথের পাশাপাশি সমাজের এই অবহেলিত মানুষ নিয়ে একটা বিশেষ বিষয় তৈরী করা প্রসংশার দাবিদার
ReplyDeleteবৃহন্নলা এত তথ্যবহুল লেখা আগে পড়িনি কেন ?খুব ভালো লাগলো।সানজিদা আশা করি এমন লেখা আরো পাবো
ReplyDeleteসমাজের মানীগুনীদের সাথে এই অচ্ছুৎ মানুষদের আলোকরেখায় তুলে আনার জন্য সানজিদা রুমি কে অনেক ধন্যবাদ।শুভ কামনা আলোকরেখার জন্য।
ReplyDeleteআমি সানজিদা কে অনেক অনেক সাধুবাদ জানাই ওঃ অর সাথে এক মত--- সমাজে ওদের মানুষ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো ওরা সমাজের সঙ্গে, পরিবার পরিজনদের সঙ্গে বসবাস করতে দেওয়া হোক।মানুষ হিসাবে অবশ্যই ওদের জীবন-যাপনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। কিন্তু বর্তমান সমাজে এরা বাস করে খুবই অবহেলিত ভাবে।
ReplyDeleteতথ্যবহুল পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
ReplyDeleteThanks for such a good article 🙂
ReplyDeleteHa ata akdom sotti sadarron manus hijrader gurutto dayna tader grina kore apner kotha sune khubi valo laglo i 'm so happy of your lecture🙂
ReplyDelete