রবীন্দ্রনাথ
মানুষের এমন কোন মনস্তাত্ত্বিক দিক নেই যা তিনি লিখে যাননি। কোনটা ন্যায্য নিয়মশুদ্ধ
কোনটা নিয়মবিরূদ্ধ, কোনটা সমাজ বহির্ভুত বা অন্তর্গত তা মুখ্য না করে কেবল মানুষের
জীবনের ঘটনা প্রবাহ ও মনের কথা লিখেছেন নিরপেক্ষভাবে। আগেও পড়েছি কিন্তু আজ "সুয়োরাণীরসাধ" কথা কবিতা পড়ে তাই মনে হলো।জীবনের নিগুড় সত্য কথাগুলো কত অপরূপ চমৎকার ভাবে
তিঁনি কতগুলো শব্দে তুলে ধরেছেন।
আমরা সেই ছোট বেলা থেকেই সুয়োরাণী আর দুয়ো রানীর
গল্প শুনে আসছি। আজ আমি কোন তাত্ত্বিক ন্যায়সঙ্গত বা ঠিক বেঠিকের তর্কে যাবো না। কেবল
আমাদের জীবনে যা ঘটে তাই লিখছি। আনার ফিরে আসি সুয়োরাণী আর দুয়ো রানীর গল্পে।এক রাজার
দুই রানী। একজন সমাজ বৈধ রানী যে সুয়োরাণী আর একজন সমাজ বিরুদ্ধ মনের রানী সে দুয়ো
রানী। রাজবাড়িতে সুয়োরানীর কত আদরযত্ন! সাতশো দাসী সেবা করে, পা ধোয়, আলতা পরায়, চুল
বাঁধে, সাত সিন্ধুক ভরা সাত হাজার ধন-মানিকের গহনা। রাজার একেবারে প্রাণ সুয়োরানী। দুয়োরানীর বড় অনাদর, অযত্ন, অবহেলা। থাকে ভাঙ্গা ঘরে, পরে জীর্ণ শাড়ি, শোয় ছেঁড়া কাঁথায়। রাজা বিদেশ যাবার
আগে সুয়োরানীর সাথে দেখা করলেন এবং জানতে চাইলেন কি আনবেন । সুয়োরানী সাথে বললেন তাঁর জন্যে আট গাছা
মানিকের চুড়ি, আগুন বরণ সোনার দশগাছা মল, পায়রার ডিমের মত মুক্তোর হার, জলের মত চিকন
শাড়ি আনতে।এদিকে দুয়োরানীর এই কামনা রাজা ভালোয়
ফিরুক। সেই ঘটনা আজ ঘটে কেবল রাজা বা রাজ্যের ফারাক। বাস্তব জীবনের গাঁথা।
মন এমন একটা অপদার্থ যা বেঁধে রাখা কঠিন সাধ্য। মনতো ভালোবাসতেই পারে।পারে অবাধ্য হতেই । যেতে পারে দুয়ো রানীর কাছে। দুয়োরানী কি চায়? কেবলই
বৈবাহিক সুবাদে
একজন সুয়ো রানী (স্ত্রী) রাজার একছত্র দাবিদার অংশীদার।সে রাজার অর্ধাঙ্গী।যেহেতু
সুয়ো রানী (স্ত্রী) আইনত, আইন দ্বারা এবং সমাজের নিয়মে আবদ্ধ তাই রাজার দেহ মন, আচার
আচরণ, বাধ্যবাধকতা অর্থাৎ একটি মানুষ তার অধিকারে। স্বত্বাধিকারী মালিক। রাজ্যের সকল
পরিচর্যা, সুযোগ সুবিধা পদবি এমন কি রাজার মালিকানার অধিকার তার।সেই রাজার তত্ত্বাবধায়ক।
রাজার জীবনের গতিবিধিও তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মনকে কি
করা যায়? তাইতো রাজার জীবনে আসে দুয়ো রানী।
একজন মানুষ যে বিবাহ বহির্ভূত সমাজ নিগৃহীত।দ্বিতীয়
নারী। আইনত অধিকার নেই বলে তার প্রতি রাজার কোন দায়বদ্ধতা নেই। গোপন রাখা, সমাজ পারিবার থেকে বিচ্ছিন্ন একজন মানুষ। যার ভালোবাসা আবেগময় হৃদয়গ্রাহী ,আত্মিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, অতি তীব্র প্রবল।
সে একজন প্রেমিকা একটি পতিতা নয়। রাজাকে এক নজর দেখতে পারলেই সে আনন্দিত। একটু হাসি, একটু কথা একটু স্পর্শ সূক্ষ্ম উষ্ণতা, রাজাকে আদরে যতনে নিশ্চিত করে তোলা, বিরহ লুকিয়ে আবার দেখা হওয়ার অপেক্ষায় থাকা। রাজার প্রতি প্রণয়,তাঁর ভালো লাগা শখ তার গান প্রজাপতির পাখার বা রংধেনুর সাত রঙে রাঙানো। সর্বপরি সমাজে গোপনীয়তা , তার গভীরতম ইচ্ছা, এবং সবকিছু তাঁর চিন্তা চেতনা, নিরাপদ প্রেম কোন ভালো কাজে তাকে উৎসাহিত করে দুয়োরানী। রাজাকে একগ্রহ চিত্তে শোনা চিন্তাধারা অনুধাবন করা তাঁকে প্রত্যাখ্যান বা নগণ্য, তুচ্ছ না করা ,বা বক্র কথা না বলা। রাজার উন্নতি সংক্রান্ত কল্পনা চরিতার্থ করার নিজেকে উৎসর্গ করা। তার বিনিময় কোন সে কোন ভোগ প্রত্যাশা না করে ,নিষ্পেষণ যন্ত্রণা হতাশা উত্থিত না করে ভালোবাসার বসন্ত ঋতুতে বারংবার ভরে দেয়। এই তো দুয়ো রানীর চাওয়া। সাত মহল বাড়ি বা সাত লরির হার কি প্রয়োজন ? তবুও প্রত্যেক সুয়ো রানীর (স্ত্রী) কাছে সে সবচেয়ে আতঙ্কজনক দুঃস্বপ্ন, কারণ। কেন সুয়ো রানী আত্মবিশ্বাসী নয়?
সে একজন প্রেমিকা একটি পতিতা নয়। রাজাকে এক নজর দেখতে পারলেই সে আনন্দিত। একটু হাসি, একটু কথা একটু স্পর্শ সূক্ষ্ম উষ্ণতা, রাজাকে আদরে যতনে নিশ্চিত করে তোলা, বিরহ লুকিয়ে আবার দেখা হওয়ার অপেক্ষায় থাকা। রাজার প্রতি প্রণয়,তাঁর ভালো লাগা শখ তার গান প্রজাপতির পাখার বা রংধেনুর সাত রঙে রাঙানো। সর্বপরি সমাজে গোপনীয়তা , তার গভীরতম ইচ্ছা, এবং সবকিছু তাঁর চিন্তা চেতনা, নিরাপদ প্রেম কোন ভালো কাজে তাকে উৎসাহিত করে দুয়োরানী। রাজাকে একগ্রহ চিত্তে শোনা চিন্তাধারা অনুধাবন করা তাঁকে প্রত্যাখ্যান বা নগণ্য, তুচ্ছ না করা ,বা বক্র কথা না বলা। রাজার উন্নতি সংক্রান্ত কল্পনা চরিতার্থ করার নিজেকে উৎসর্গ করা। তার বিনিময় কোন সে কোন ভোগ প্রত্যাশা না করে ,নিষ্পেষণ যন্ত্রণা হতাশা উত্থিত না করে ভালোবাসার বসন্ত ঋতুতে বারংবার ভরে দেয়। এই তো দুয়ো রানীর চাওয়া। সাত মহল বাড়ি বা সাত লরির হার কি প্রয়োজন ? তবুও প্রত্যেক সুয়ো রানীর (স্ত্রী) কাছে সে সবচেয়ে আতঙ্কজনক দুঃস্বপ্ন, কারণ। কেন সুয়ো রানী আত্মবিশ্বাসী নয়?
কোন মানুষের সাথে বসবাস করা যায় কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কি যায়? দুয়োরানীকে বনবাসে পাঠানো যায়, তাকে ঘুঁটে কুড়ানি বানানো যায়। কিন্তু তার স্বভাব শুদ্ধ গুন, মুগ্ধকর মোহিনী রূপ, কুহক আকর্ষণ, ঐন্দ্রজালিক সম্মোহনী শক্তি? তাকে বশ করবে কি করে। তাই সুয়োরানীর কথা' র আদলে আমার এই কবিতা কবি গুরুর চরণে। এ যুগের সুয়োরানীর কথা'
'সুয়োরানীর কথা' র আদলে আমার এই কবিতা কবি গুরুর চরণে। এ যুগের সুয়োরানীর কথা'
সুয়োরানীর মর্মযন্ত্রণা
সাত মহলার প্রাসাদ, রাজ্য, দাসী আর দাস
সোনার খাটে গা রুপোর দানে পা।
রাজা বাহুশালায় বন্দি অনুক্ষণ
সুয়ো রানী চোখে রাখে সারাক্ষন।
রাজার আঁখিতে খুঁজে ফেরে দুয়ো রানীর মায়া
বুক দুরু দুরু ক্লেশিত চিত্ত অশনি সংকেতের ছায়া।
রাজা আর চায় না দুয়ো রানীর পানে
কোথায় কেমন আছে তাও নাহি জানে।
তবুও বিমর্ষিত সুয়োরানী, চেয়ে দেখে বিষাদ নয়নে
প্রণয়িণীর প্রতিফলন প্রতিবিম্ব দেখে রাজার সুপ্ত স্বপনে।
যদিও রাজা তার অধিকারে তারই দাবিদার
সর্বত্র রানীর সেবায় রত সদাই উমেদার।
মুক্তা মনি মালা গলায় ভরপুর সংসার
রূপবতী রাজকুমারী গুণবান রাজকুমার।
রাজা, রাজ্য, সখি সবে জীবন, আনন্দ উৎসবে মুখর
তবুও কিছুই ভাল লাগে না রানীর অশান্ত দেহ অন্তর।
আরাম পায় না মন মুক্তা মনি মালায় নৃত্য বাদ্য বাজনে
রাজা ও তার লোকলস্কর সদা নিরত রানীর চিত্তরঞ্জনে।
বদ্যিও পারে না দিতে দু'দন্ড স্বস্তি,বিষাদ বিধুর মর্মযাতনা প্রাণে
সখি সবে শুধায় কি তার চাই, কিসে হবে শান্তি সুখ কিছু কি উপায় নাই
রানী বিমর্ষ কণ্ঠে বলে “দুয়োরানীর কাঁটার জ্বালা মনে অসুখ তাই।
সবাই হেসে বলে মাথা বিগড়েছে তার কোথায় গেছে দুয়ো রানী
এক ফুৎকারে নিভায়ে দিয়েছে সুয়ো রানী তার স্মৃতির প্রদীপখানি।
আইন করে বিতাড়িত করেছে রাজার জীবন ও রাজ্য হতে
বশে রাজা, নির্বাসিত দুয়োরানী, তবুও ভয় কেন তার চিত্বে।
রানী কেঁদে কয় "মিথ্যে সব নইলে কেন পাই দেখতে
দুয়োরানীর ছায়া রাজার আঁখিতে"।
আমি চাই না আমার এই রূপ চাই দুয়োরানীর সাজ সজ্জা
মোহিনী বিমোহক রূপে সাজিতে চাই, চাই দুয়ো রানীর লজ্জা।
যাও সবে চলে, পারোনা ভুলাতে আমার অন্তর ব্যথা
ডেকে দাও আমার রাজারে চাইব কিছু, বলবো কতেক কথা।
সভা ছেড়ে ভীত রাজা ত্রস্ত এসে শিয়রে বসে
শুধায় রানীর হাতটি ধরে "কি চাই তোমার?
গজমোতির মালা মনি মুক্ত দিয়ে দেব গড়ে? নতুন প্রাসাদ?
সবইতো তোমার যা কিছু আমার"।
"না-না, আমার এসব কিছু চাই না, চাইপরনে শাড়ি লাল পেড়ে
হাতে সাদা শাঁখা,ভিজে চুলে সিঁথিতে সিঁদুর তপস্বিনী যেন দেবমন্দিরে"।
রাজা এসে শুধায় "এতো দুয়োরাণী সাজ!তুমি রানী আঁকা চিত্র পটে এ কি তোমায় মানায় "?
রানী বলে " না তাই আমার চাই, শুনবো না কোন কথা
কথা দাও তুমি দেবে আমায়"।
রাজা তপস্বিনী, “আচ্ছা বেশ, তুমি যা চাও তাই হবে
তোমার কথার অবাধ্য হয়েছি কখন কবে?
ডেকে পাঠালেন নামি দামি সব পসারী বণিক
করিতে পূরণ রানীর ইচ্ছা অভিলাষ,
স্বয়ং রাজা সযত্নে যাচাই বাছাই করলেন
শ্রেষ্ঠ দামি পণ্যদ্রব্য মনে তাঁর আনন্দ উল্লাস।
কপালে লাল টিপ্, হাতে শাঁখা সাদা, সিঁথিতে সিঁদুর,
দামী লাল পেড়ে গরদের শাড়ি পরে
জুঁই ফুলের মালায় জড়ানো এলো চুলে
রাজার সামনে দাঁড়াল রানী দাম্ভিক অহংকারে।
রাজা সহজাত সুলভ হাসি দিয়ে জড়ায়ে ধরে বুকে
আহা এত সুখ এই সাজে, রানীর চোখ সজল হলো সুখে।
ক্ষণেক পরে মিলালো রানী আপন নয়ন রাজার আঁখি পাতায়
নিজেরে কোথাও পেলো না খুঁজে অবনমিত হলো লজ্জায়।
সোনার পালঙ্কে বসে সুয়োরানী মনের স্বস্তি নেই
রাজা এসে বলে , “ কী হয়েছে তোমার, কি চাই?”
রানী বললো " আমি শিখবো নাচ শিখবো ঠুমরি গান"
রাজা অবাক হয়ে বলে "না এতো দুয়োরাণী কাজ! বাঈজীদের বাসনা
তুমি রানী আঁকা চিত্র পটে. তোমায় এসব মানায় না।
রানী বলে "না তাই আমার চাই মানবো না কোন কথায়
রাজা বল্লে "বেশ যেমন তোমার অভিপ্রায়"।
আবার তলব করা হলো রাজ্যের সুপ্রসিদ্ধ, নৃত্য সংগীত গুরু
রানীর বিরামহীন অধ্যাবসায় ও অধ্যায়নের তালিম হলো শুরু।
তালিম শেষে জ্ঞানদীপ্ত রানী মধুবনে পূর্ণিমার জ্যোৎস্না রাতে
সমস্ত রাত নাচলো গাইলো রানী প্রাণময় রাজার সাথে।
বিস্ময় আনন্দিত রাজা! তাঁর কথা সরে না প্রশংসায়
রাজার চোখেতে চেয়ে আবার অবনমিত হলো লজ্জায়।
তার পরে সুয়োরানী কি জানি কি হল
উদাস একলা বসে থাকি, মুখে কথা নেই
রাজা রোজ এসে শুধায় , “ কী হয়েছে তোমার, কি চাই?”
সুয়োরানী উত্তরে বলে " স্বামী আমি দুয়োরানি হতে চাই
তার সবকিছু আমার থেকেও নাই।
দূর থেকে তোমার বুকে তোমার চোখে বাঁশীর যে সুর পারে বাজাতে
সোনার পালঙ্কে শুয়ে বুকে বুক মিশিয়েও আমিপারিনি সে সুর সাধতে।
তাই বরিঠাকুরের "সুয়োরানীর কথা: বলি
"ওর ঐ বাঁশের বাঁশীতে সুর বাজ্ল,
কিন্তু আমার সোনার বাঁশী কেবল বয়েই বেড়ালেম,
আগ্লে বেড়ালেম, বাজাতে পারলেম না।”
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
তোমার লেখাটা পড়ে এতো ভালো লাগলো। সত্যি কবিগুরু নিজেই সব কথা বলে গেছে আমরা আর কি বলবো।
ReplyDeleteবাহ্ সানজিদা তোমার কবিতাটি
ReplyDeleteআমার বেশ লাগলো
নূতনত্ব পেলাম
এখানেই কবির সার্থকতা