আরজ আলী মাতুব্বর একজন বাংলাদেশী দার্শনিক, আলোকিত ব্যক্তিত্ব ,মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ এবং লেখক আরজ
আলী মাতুব্বর তিনি ১৯০০ সালের
১৭ই ডিসেম্বর (বাংলা ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৩রা
পৌষ) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে বরিশাল জেলার অন্তর্গত চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক
পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম
এন্তাজ আলী মাতুব্বর। তার
মা অত্যন্ত পরহেজগার ছিলেন। পরিবারে তারা ছিলেন পাঁচ
ভাইবোন।তাঁর প্রকৃত নাম “আরজ
আলী”। আঞ্চলিক ভূস্বামী
হওয়ার সুবাধে তিনি “মাতুব্বর” নাম ধারণ করেন।
আরজ আলী নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিমের মসজিদ দ্বারা পরিচালিত মক্তবে সীতানাথ বসাকের কাছে 'আদর্শলিপি' পড়তেন।পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় লেখাপড়া শিখতে থাকেন। নিজের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তিনি বরিশাল লাইব্রেরির সমস্ত বাংলা বই একজন মনোযোগী ছাত্রের ন্যায় পড়েন।যদিও তিঁনি গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করেন, যেখানে শুধু কোরান ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের উপর শিক্ষা দেয়া হত। কিন্তু নিজ চেষ্টা ও সাধনায় জ্ঞান অর্জন করেন দর্শন ধর্ম,বিজ্ঞান ও ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর । তিনি তার ৮৬ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে। তিনি দর্শন ছিলো তাঁর প্রিয় বিষয়। কিন্তু পাঠাগারে পর্যাপ্ত বই ছিলো না। পরে বিএম মহাবিদ্যালয়ের দর্শনের এক শিক্ষক – কাজী গোলাম কাদির তাঁর জ্ঞানগর্ভ বিচার দেখে মোহিত হন এবং তিনি মহাবিদ্যালয়ের পাঠাগার থেকে বই ধার দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবেই তাঁর মানসিক আকৃতি গঠিত হয়। তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে, মাতুব্বর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স বা ডিগ্রী লাভ করতে পারেন নি।পৈতৃক পেশা কৃষিকাজ দিয়েই তাঁর কর্মজীবনের শুরু। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কৃষি ক্ষেতের জন্য এভাবে কিছু পুঁজি জমা করেন। নিজের শ্রম, মেধা, বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে তিনি আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেন এবং জমিদার ও মহাজনদের কাছে বন্ধককৃত জমিজমা উদ্ধার করেন।কৃষিকাজের অবসরে জমি জরিপের কাজ করে তিনি আমিনি পেশার সূক্ষ্ম গাণিতিক ও জ্যামিতিক নিয়ম সম্পর্কে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।
আরজ আলী নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিমের মসজিদ দ্বারা পরিচালিত মক্তবে সীতানাথ বসাকের কাছে 'আদর্শলিপি' পড়তেন।পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় লেখাপড়া শিখতে থাকেন। নিজের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তিনি বরিশাল লাইব্রেরির সমস্ত বাংলা বই একজন মনোযোগী ছাত্রের ন্যায় পড়েন।যদিও তিঁনি গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করেন, যেখানে শুধু কোরান ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের উপর শিক্ষা দেয়া হত। কিন্তু নিজ চেষ্টা ও সাধনায় জ্ঞান অর্জন করেন দর্শন ধর্ম,বিজ্ঞান ও ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর । তিনি তার ৮৬ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে। তিনি দর্শন ছিলো তাঁর প্রিয় বিষয়। কিন্তু পাঠাগারে পর্যাপ্ত বই ছিলো না। পরে বিএম মহাবিদ্যালয়ের দর্শনের এক শিক্ষক – কাজী গোলাম কাদির তাঁর জ্ঞানগর্ভ বিচার দেখে মোহিত হন এবং তিনি মহাবিদ্যালয়ের পাঠাগার থেকে বই ধার দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবেই তাঁর মানসিক আকৃতি গঠিত হয়। তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে, মাতুব্বর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স বা ডিগ্রী লাভ করতে পারেন নি।পৈতৃক পেশা কৃষিকাজ দিয়েই তাঁর কর্মজীবনের শুরু। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কৃষি ক্ষেতের জন্য এভাবে কিছু পুঁজি জমা করেন। নিজের শ্রম, মেধা, বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে তিনি আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেন এবং জমিদার ও মহাজনদের কাছে বন্ধককৃত জমিজমা উদ্ধার করেন।কৃষিকাজের অবসরে জমি জরিপের কাজ করে তিনি আমিনি পেশার সূক্ষ্ম গাণিতিক ও জ্যামিতিক নিয়ম সম্পর্কে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।
শৈশবে
তার মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের ছবি
তোলার দায়ে গ্রামের মানুষ তার মায়ের জানাজা
পড়তে রাজি
হয় নি। শেষে বাড়ির
কয়েকজন লোক মিলে তার
মায়ের সৎকার করেন। এই ঘটনা আরজ
আলীর ধর্মীয় গোঁড়ামী ও কুসংস্কার বিরোধিতার
এবং সত্যানুসন্ধিৎসু হয়ে উঠার পেছনে
কাজ করেছিল।
আরজ আলী মূলত বস্তুবাদী
দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি অনেক অজ্ঞতা,
কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির
বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। আরজ আলীর রচনায়
মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদী দার্শনিক
প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে। মানবকল্যাণ
ও বিশ্বধর্ম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দরিদ্র
ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রদান,
পাঠাগার স্থাপন ও রচনা প্রতিযোগিতার
ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়াও তিনি
নিজ দেহ ও চক্ষু
মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেন। মাতুব্বর বরিশালের অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদির,
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামসুল হক সহ অন্য
অনেক সংখ্যক সাম্যবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
বিরাজমান ছিলো। তাঁর বিশ্বাস ও
অভিজ্ঞতার কথা তিনি একাধিক
গ্রন্থে প্রকাশ করেন। তার লিখিত বইয়ের
মধ্যে ‘সত্যের সন্ধান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘সীজের ফুল’, ‘শয়তানের জবানবন্দী’ অন্যতম। আরজ আলীর রচিত
পাণ্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। এর
মধ্যে তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত
হয়েছিল ৪টি। এই বইগুলো
হলো- ‘সত্যের সন্ধান’ (১৯৭৩), ‘সৃষ্টি রহস্য’ (১৯৭৭), ‘অনুমান’ (১৯৮৩), ও ‘স্মরণিকা’ (১৯৮৮)। আরজ আলী
মাতুব্বর তাঁর প্রথম বইয়ের
প্রচ্ছদও আঁকেন। বইটি লিখেছিলেন ১৯৫২
সালে। প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে
‘সত্যের সন্ধানে’ শিরোনামে। বইটি তাঁকে এলাকায়
‘শিক্ষিত ব্যক্তি’ হিসেবে সুনাম এনে দিয়েছিল। মুখবন্ধে
তিনি লিখেছিলেনঃ “আমি অনেক কিছুই
ভাবছি, আমার মন প্রশ্নে
ভরপুর কিন্তু এলোমেলোভাবে। আমি তখন প্রশ্নের
সংক্ষেপণ লিখতে থাকি, বই লেখার জন্য
নয় শুধুমাত্র পরবর্তীকালে মনে করার জন্য।
অসীম সমুদ্রের মতন সেই প্রশ্নগুলো
আমার মনে গেঁথে আছে
এবং আমি ধীরে ধীরে
ধর্মীয় গণ্ডি হতে বের হতে
থাকি।”
সত্যের সন্ধানে এই বইটিতে তিনি দার্শনিক প্রশ্নগুলোর ৬টি শ্রেণীতে তার প্রশ্ন ও তাদের যৌক্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সেগুলো হলোঃপ্রথম প্রস্তাবঃ আত্মা বিষয়ক। এই অংশে ৮টি প্রশ্ন।দ্বিতীয় প্রস্তাবঃ ঈশ্বর বিষয়ক। এই অংশে ১১টি প্রশ্ন।তৃতীয় প্রস্তাবঃ পরকাল বিষয়ক। এই অংশে ৭টি প্রশ্ন।চতুর্থ প্রস্তাবঃ ধর্ম বিষয়ক। এই অংশে ২২টি প্রশ্ন।পঞ্চম প্রস্তাবঃ প্রকৃতি বিষয়ক। এই অংশে ১১ টি প্রশ্ন।ষষ্ঠ প্রস্তাবঃ বিবিধ। এই অংশে ৯টি প্রশ্ন।
প্রথম
আটটি প্রশ্নে তিনি নিজের ভাবভঙ্গি
ব্যক্ত করেন। যেমন - ১। আমি কে?
(নিজ) ২। জীবন কি
শরীরী বা অপার্থিব? ৩।
মন এবং আত্মা কি
একই জিনিস? ৪। জীবনের সাথে
শরীর বা মনের সম্পর্ক
কি? ৫। আমরা কি
জীবনকে চিহ্নিত করতে পারি? ৬।
আমি কি মুক্ত? ৭।
মরণোত্তর আত্মা শরীর বিহীন জ্ঞান
ধারণ করে? এবং সর্বশেষ,
৮। কিভাবে শরীররে আত্মা প্রবেশ করে ও বের
হয়?
পাকিস্তান
সরকার আমলে তার লেখালেখির
জন্য তিনি কঠোর অনুযোগ, সমালোচিত ও অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
সেসময় তার লেখা-লেখি
নিষিদ্ধ ছিল।
মরণোত্তর
কতিপয় কিছু অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি
আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাবলী
শিরোনামে প্রকাশিত হয়। তাঁর কিছু
লেখা ইংরেজীতে ভাষান্তর করা হয় এবং
পাঠক সমাবেশ কর্তৃক সেগুলো খন্ডাকারে আবদ্ধ করা হয়
প্রকাশিত
গ্রন্থ
·
সত্যের
সন্ধানে, (The Quest
for Truth) (১৯৭৩)
·
সৃষ্টির
রহস্য, (The Mystery of
Creation) (১৯৭৭)
·
অনুমান,
(Estimation) (১৯৮৩)
·
স্মরণিকা
(১৯৮২)
·
ম্যাকগ্লেসান
চুলা
বাংলা
একাডেমী কর্তৃক আজীবন সদস্যপদ প্রদান এবং বাংলা ১৩৯২
সালের ১লা বৈশাখ নববর্ষ
সংবর্ধনা জ্ঞাপন।হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার
(১৩৮৫ ব.) উদীচী শিল্পী
গোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা (১৩৯২ ব.)
আরজ
আলী মাতুব্বর ১৯৮৫ সালের ১৫ই
মার্চ (বাংলা সনের ১লা চৈত্র
১৩৯২) ৮৬ বছর বয়সে
বরিশাল শের-ই-বাংলা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরলোকগমন
করেন। তিনি মরণোত্তর চক্ষুদান
করেন।[১] মেডিকেলের ছাত্রদের
শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য শের-ই
বাংলা মেডিকেল কলেজ-এর এনাটমি
বিভাগে মরণোত্তর দেহদান করেন।
আরোজ
আলী মাতব্বরের বিশেষ উক্তি:
"বিদ্যাশিক্ষার
ডিগ্রী আছে জ্ঞানের কোনো
ডিগ্রী নেই; জ্ঞান ডিগ্রীবিহীন
ও সীমাহীন"
"জ্ঞানচর্চার
ক্ষেত্রে শুধু আপন বিশ্বাসই
নয়, সকল মতামতের প্রতি
শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সকল ধ্যান-ধারণা
সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা দরকার
প্রতিটি জ্ঞান পিপাসু মানুষের। শুধু সীমাবদ্ধ পরিমন্ডলে
আবদ্ধ হলে চলেনা। সীমানাকে
অতিক্রম করে যেতে হবে
ক্রমান্বয়ে। এর মধ্যেই ক্রমশ
অতিক্রম করা যাবে নিজেকে।"
তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
0 comments:
Post a Comment
অনেক অনেক ধন্যবাদ