'সুয়োরানীর কথা' র আদলে আমার এই কবিতা কবি গুরুর চরণে। এ যুগের সুয়োরানীর কথা'
সুয়োরানীর মর্মযন্ত্রণা
সাত মহলার প্রাসাদ,রাজ্য,দাসী দাস
সোনার খাটে গা রুপোর দানে পা।
রাজা বাহুশালায় বন্দি অনুক্ষণ
সুয়ো রানী চোখে রাখে সারাক্ষন।
রাজার আঁখিতে খুঁজে ফেরে দুয়ো রানীর মায়া
বুক দুরু দুরু ক্লেশিত চিত্ত অশনি সংকেতের ছায়া।
রাজা আর চায় না দুয়ো রানীর পানে
কোথায় কেমন আছে তাও নাহি জানে।
তবুও বিমর্ষিত সুয়োরানী, চেয়ে দেখে বিষাদ নয়নে
প্রণয়িণীর প্রতিফলন প্রতিবিম্ব দেখে রাজার সুপ্ত স্বপনে।
যদিও রাজা তার অধিকারে তারই দাবিদার
সর্বত্র রানীর সেবায় রত সদাই উমেদার।
মুক্তা মনি মালা গলায় ভরপুর সংসার
রূপবতী রাজকুমারী গুণবান রাজকুমার।
রাজা, রাজ্য, সখি সবে জীবন, আনন্দ উৎসবে মুখর
তবুও কিছুই ভাল লাগে না রানীর অশান্ত দেহ অন্তর।
আরাম পায় না মন মুক্তা মনি মালায় নৃত্য বাদ্য বাজনে
রাজা ও তার লোকলস্কর সদা নিরত রানীর চিত্তরঞ্জনে।
বদ্যিও পারে না দিতে দু'দন্ড স্বস্তি,বিষাদ বিধুর মর্মযাতনা প্রাণে
সখি সবে শুধায় কি তার চাই, কিসে হবে শান্তি সুখ কিছু কি উপায় নাই
রানী বিমর্ষ কণ্ঠে বলে “দুয়োরানীর কাঁটার জ্বালা মনে অসুখ তাই।
সবাই হেসে বলে মাথা বিগড়েছে তার কোথায় গেছে দুয়োরানী
এক ফুৎকারে নিভায়ে দিয়েছে সুয়ো রানী তার স্মৃতির প্রদীপখানি।আইন করে বিতাড়িত করেছে রাজার জীবন ও রাজ্য হতে
বশে রাজা, নির্বাসিত দুয়োরানী, তবুও ভয় কেন তার চিত্বে।
রানী কেঁদে কয় "মিথ্যে সব নইলে কেন পাই দেখতে
দুয়োরানীর ছায়া রাজার আঁখিতে"।
মোহিনী বিমোহক রূপে সাজিতে চাই, চাই দুয়ো রানীর লজ্জা।
যাও সবে চলে, পারোনা ভুলাতে আমার অন্তর ব্যথা
ডেকে দাও আমার রাজারে চাইব কিছু, বলবো কতেক কথা।
সভা ছেড়ে ভীত রাজা ত্রস্ত এসে শিয়রে বসে
শুধায় রানীর হাতটি ধরে "কি চাই তোমার?
গজমোতির মালা মনি মুক্ত দিয়ে দেব গড়ে? নতুন প্রাসাদ?
"না-না, আমার এসব কিছু চাই না, চাইপরনে শাড়ি লাল পেড়ে
হাতে সাদা শাঁখা,ভিজে চুলে সিঁথিতে সিঁদুর তপস্বিনী যেন দেবমন্দিরে"।
রাজা এসে শুধায় "এতো দুয়োরাণী সাজ!তুমি রানী আঁকা চিত্র পটে এ কি তোমায় মানায় "?
রানী বলে " না তাই আমার চাই, শুনবো না কোন কথা
কথা দাও তুমি দেবে আমায়"।
রাজা তপস্বিনী, “আচ্ছা বেশ, তুমি যা চাও তাই হবে
তোমার কথার অবাধ্য হয়েছি কখন কবে?
ডেকে পাঠালেন নামি দামি সব পসারী বণিক
করিতে পূরণ রানীর ইচ্ছা অভিলাষ,
স্বয়ং রাজা সযত্নে যাচাই বাছাই করলেন
শ্রেষ্ঠ দামি পণ্যদ্রব্য মনে তাঁর আনন্দ উল্লাস।
কপালে লাল টিপ্, হাতে শাঁখা সাদা, সিঁথিতে সিঁদুর,
দামী লাল পেড়ে গরদের শাড়ি পরে
জুঁই ফুলের মালায় জড়ানো এলো চুলে
রাজার সামনে দাঁড়াল রানী দাম্ভিক অহংকারে।
রাজা সহজাত সুলভ হাসি দিয়ে জড়ায়ে ধরে বুকে
আহা এত সুখ এই সাজে, রানীর চোখ সজল হলো সুখে।
ক্ষণেক পরে মিলালো রানী আপন নয়ন রাজার আঁখি পাতায়
নিজেরে কোথাও পেলো না খুঁজে অবনমিত হলো লজ্জায়।
সোনার পালঙ্কে বসে সুয়োরানী মনের স্বস্তি নেই
সোনার পালঙ্কে বসে সুয়োরানী মনের স্বস্তি নেই
রাজা এসে বলে , “ কী হয়েছে তোমার, কি চাই?”
রানী বললো " আমি শিখবো নাচ শিখবো ঠুমরি গান"
রাজা অবাক হয়ে বলে "না এতো দুয়োরাণী কাজ! বাঈজীদের বাসনা
তুমি রানী আঁকা চিত্র পটে. তোমায় এসব মানায় না।
রানী বলে "না তাই আমার চাই মানবো না কোন কথায়
রাজা বল্লে "বেশ যেমন তোমার অভিপ্রায়"।
আবার তলব করা হলো রাজ্যের সুপ্রসিদ্ধ, নৃত্য সংগীত গুরু
রানীর বিরামহীন অধ্যাবসায় ও অধ্যায়নের তালিম হলো শুরু।
তালিম শেষে জ্ঞানদীপ্ত রানী মধুবনে পূর্ণিমার জ্যোৎস্না রাতে
সমস্ত রাত নাচলো গাইলো রানী প্রাণময় রাজার সাথে।
বিস্ময় আনন্দিত রাজা! তাঁর কথা সরে না প্রশংসায়
রাজার চোখেতে চেয়ে আবার অবনমিত হলো লজ্জায়।
তার পরে সুয়োরানী কি জানি কি হল
তার পরে সুয়োরানী কি জানি কি হল
উদাস একলা বসে থাকি, মুখে কথা নেই
রাজা রোজ এসে শুধায় , “ কী হয়েছে তোমার, কি চাই?”
সুয়োরানী উত্তরে বলে " স্বামী আমি দুয়োরানি হতে চাই
তার সবকিছু আমার থেকেও নাই।
দূর থেকে তোমার বুকে তোমার চোখে বাঁশীর যে সুর পারে বাজাতে
তাই বরিঠাকুরের "সুয়োরানীর কথা: বলি
"ওর ঐ বাঁশের বাঁশীতে সুর বাজ্ল,
কিন্তু আমার সোনার বাঁশী কেবল বয়েই বেড়ালেম,
আগ্লে বেড়ালেম, বাজাতে পারলেম না।”
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
সুয়ো রানীর মর্ম যাতনা সবাই দেখে। দুয়ো রানীর যাতনা কি লেখা হয় ? শুধু বঞ্চনা ও অবহেলা। তাতেও সুয়োরানীদের সুখ নেই ;;;;
ReplyDeleteসুয়ো রানীর সব কিছু থাকা সত্ত্বেও মন উদাসীন। সব পেয়েও না পাবার হাহাকার। ওপর পক্ষে সমাজে অবহেলিত অবাঞ্ছিত দুয়ো রানীরা। এত কষ্টের মাঝে থেকেও তারা পরিতৃপ্ত। কারণ ভালোবাসাই তাদের সম্বল। সানজিদা রুমি এই চিত্র খুব সুন্দরভাবে অংকিত করেছেন তার কবিতায়। প্রতিটি কথা সত্য। কবিতাটি হৃদয়ের কাছাকাছি। খুব ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
ReplyDelete