সংসার ভাবনা
আকতার হোসেন
ভাবনা ১
দুই ভাইবোন মিলে বাংলাদেশে গিয়েছিল নানুর সাথে দেখা করতে। মা-বাবা সাথে যায় নি বা যেতেও হয় নি। দুজনের বয়সই আঠারোর ওপর।তখন বাংলাদেশে হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল।
একদিন হাতির পুলের কাছে একটা বোমা পড়ার খবর অস্ট্রেলিয়ার এক টেলিভিশনে দেখানো হলো। তারপর থেকেই ওদের মা বাবা ফোনের পর ফোন করতে থাকে বাংলাদেশে।
এদিকে নানু বলেছে ওরা যে কোথায় গেছে জানি না।
সাথে ফোন নিয়ে যায় নি। অবশেষে দুই ঘণ্টা পর তাদের পাওয়া গেল। রাস্তা ফাঁকাপেয়ে রিক্সায় করে ঘুরতে গিয়েছিল ভাইবোন। অনেক ছবি তুলে এনেছে।একদিন হাতির পুলের কাছে একটা বোমা পড়ার খবর অস্ট্রেলিয়ার এক টেলিভিশনে দেখানো হলো। তারপর থেকেই ওদের মা বাবা ফোনের পর ফোন করতে থাকে বাংলাদেশে।
এদিকে নানু বলেছে ওরা যে কোথায় গেছে জানি না।
কান্না জড়ানো কণ্ঠে মা বললো, আমরা চিন্তায় মরে যাচ্ছিলাম আর তোরা কি না... মেয়েটি বললো, মা নানুর বাসা তো উত্তরায় আর বোম পড়েছে সেই হাতিরপুল। তুমি এতো অস্থিরহলে কেন? আমরা ভাল আছি মা। এ কথা শুনে মা হেসে দিয়ে বললো, ‘কি বোকা ছেলেমেয়ে আমার। ভাল থাকা না থাকা নিয়ে কিআমারা চিন্তা করি। তোরা বেঁচে আছিস এই যথেষ্ট। ভাল মন্দ দিয়ে কি করবো, চোখের সামনে থাকলেই হলো।
ভাবনা ২
ওরা একই মেডিক্যাল কলেজে পড়তো। বিয়ের পর ডালাস শহরের একই হাসপাতালে স্বামী-স্ত্রীর চাকুরী হয়েছে। দু’তিনদিন পরপর লন্ডন থেকে মা ফোন করে তার মেয়েকে। কথা শেষ হলে প্রতিবার মেয়েটি বলে ‘লাভ ইউ মা’। ওটাই মেয়েটির বিদায়সম্ভাষণ। ওর মা কিছু বলে না। মনে মনে হাসতে থাকে আর অনেকক্ষণ টেলিফোনটা হাতের মধ্যে ধরে রাখে। একদিন মেয়েটির বাবা জিজ্ঞেস করলো কি ব্যাপার! মেয়ের সাথে কথা শেষ করে প্রতিবার হাসতে থাকো কেন। মা উত্তর দেয়, আরে জানো না তোমার মেয়ে কত পাঁজি। ছোট বেলায় ওকে আমি যেভাবে বলতাম ‘লাভ ইউ মা’ এখন সে ঠিক সেই ভাবে আমাকে বলে ‘লাভ ইউ মা’। মনে হয় আমি যেন ওর মেয়ে আর ও আমার মা।
ভাবনা ৩
বাবার সাথে ছেলেটিও গেল বাজার সদাই করতে। বাবার বয়স পঞ্চাশের বেশি না কিন্তু দেখলে মনে হয় তার থেকেও বেশি।ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি ওর বাবার ঘাড়ে উঠে বাজারে আসতো। আগামী কাল সে ঢাকা চলে যাচ্ছে। একটা প্রাইভেটবিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চান্স পেয়েছে। আজ বাড়ির দশজন মিলে ভাল মন্দ কিছু খাবে। হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটি তার বাবার একটিব্যাগ নিজ হাতে তুলে নেয়। আরে না না কি করছিস, তোর হাতে তো এমনিতেই দুইটা ব্যাগ, আমি পারবো তো। বাবা বললো কথাটা। বাড়ির কাছে আসতে একটা উঁচু জায়গা পড়ে। উঠতে খুব কষ্ট হয়। ছেলেটি তখন বাকি ব্যাগটিও চেয়ে নিলো। এবারোবাবার আপত্তি শুনলো না। হাসতে হাসতে বাবা সোজা চলে এলো রান্না ঘরের কাছে। ওর মা চিৎকার দিয়ে বললো, কি আক্কেলতোমার! ছেলের হাতে সব বোঝা তুলে দিয়ে হাসতে হাসতে ফিরলে যে। বাবা বললো, তোমার ছেলে জোর করে নিয়ে নিলো। জোরকরে মানে? স্ত্রীর কানের কাছে এসে সে বললো, আরে বোঝ না- তোমার ছেলে চেষ্টা করছে আমার কাঁধের ওপর থেকে বোঝা সরাতে।
ভাবনা ৪
কয়েকদিন ধরে থেকে থেকে হাল্কা স্নো পড়ছে। ছেলেটির মা জানালার পাশে বসে স্তূপ করা বরফের দিকে চেয়ে আছে। ছেলেটির বাবা লক্ষ্য করলো তার স্ত্রী বিড়বিড় করে কি যেন পড়ছে। কাছে এসে বলল, কি ব্যাপার তুমি কি দোয়া দরুদ পড়ে কানাডার স্নো পড়া বন্ধ করতে পারবে। ছেলেটির মা মলিন মুখে বললো, তোমার ছেলে বাইরে গেছে। কখন আসবে কে জানে? ঐ দেখ জমা বরফের ওপর ওর পায়ের ছাপ। হাল্কা হাল্কা স্নো আমার ছেলের পায়ের ছাপ মুছে দিতে চাইছে। হয় আমাদের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক। না হলে স্নো পড়া বন্ধ হোক। হোক না পায়ের ছাপ তবুও তো চোখে চোখে আছে।
এই হলো আমাদের সংসার।
http://www.alokrekha.com
0 comments:
Post a Comment
অনেক অনেক ধন্যবাদ