আমার মন বলছিল এবারের বইমেলা অন্য রকম হবে। সেই সবুর খাঁর
আমলের মত "লেখার" ভাষার ওপর বিধিনিষেধ আসবে।কারণ
আমি গত সাত এত মাস ধরে প্রতিটি প্রকাশকের কাছে এমন কি আমার আগের বইগুলো যারা প্রকাশ করেছেন
তাদের দ্বারে দ্বারে আমার লেখা দুটো উপন্যাস পাঠিয়েছি কিন্তু তারা কেউ কিছুতেই আমার বই প্রকাশ করতে রাজি হননি। আমার বন্ধু স্বাতী
ও বাচ্চাদের বললাম কথাটা
ওরা ভাবলো বয়স হয়েছে ,তাছাড়া এতো ওষুধপত্র খাই তার "সাইড এফেক্ট " তাই আবোল তাবোল বকি।এদিকে প্রকাশকরা বলছেন একই কথা "দিদি সময়টা ভালো না" আমি অবাক আরে আমি কি জর্দার কৌটা,বোমা তৈরী বা কিভাবে সন্ত্রাসী উগ্রপন্থী হওয়া যায়তার উপর বই লিখেছি?একজন নারীর জীবনের কথা -- সত্য ইতিহাস।একটি উপন্যাস ১৯৪০ থেকে ১৯৭৫ সাল আরেকটি ১৯৭৫ থেকে ২০১৫।
আমি আমাদের প্রকাশকদের দোষ দিচ্ছি না। তাঁরা হয়তো আগে
থেকেই জানতেন। তাদেরকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। একুশে বই মেলা আমাদের চেতনা ও মুক্ত
মনের কথা ভাণ্ডারের উদ্ভাস ও প্রকাশ পীঠ । ৫২'র "ভাষা আন্দোলন" এ
আমরা রক্তের বিনিময় অর্জন
করেছি আমাদের মাতৃ ভাষা "বাংলা"।তাই আমরা অনিমিখ আগ্রহে থাকি এই বই মেলার জন্য।
প্রতিটি লেখক, পাঠক আপামর বাংলার মানুষ। লেখক তাঁর কলম আর কালিতে আঁকে তাঁর মুক্ত মনের
ছবি।স্বৈরাচারী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে অর্জিত নির্ভিক শব্দ এবং বাক স্বাধীনতা।
অদৃষ্টক্রমে হঠাৎ সংবাদ প্রতিবেদনে ঘোষণা দেওয়া হয় এই বছরের(২০১৭) একুশে
বইমেলায় প্রতিটি বই যাচাই বাছাই করে খুঁটিয়ে তল্লাশি করা হবে। কোন
বইয়ে কোন উত্তেজক শব্দ বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মতো কোন উপাদান আছে কিনা। লেখক ও প্রকাশকের উপর পাহারার
নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় আর এই পাহারাদার
হবে "পুলিশ"। যারা দেশের চোর চোট্টা আর সন্ত্রাসীদের ধরে- মারে। হায়রে রফিক জব্বার
!! তোমরা কি শুনছো, যে ভাষার জন্য প্রাণ
দিলে সেই ভাষায় লেখকরা আজ চোর ছেঁচড় আর
সন্ত্রাসীদের কাতারে?
এই পাহারাদার বাহিনীর সঙ্গে কি লেখাপড়ার যোগাযোগ আছে ? পড়াশোনা করে,
বিসিএস বা নানা পরীক্ষায় পাস করেই একজন পুলিশ বাহিনীতে ঢোকেন। একাডেমিক লেখাপড়ার বাইরে ‘বই পড়া’ বলতে যা বোঝায় সে অভ্যাস পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের কি
আছে? অনেক পাহারাদার আছেন যারা
লেখালেখি বা ‘সাহিত্যসেবা’ করেন কিন্তু এমন ক'জন পুলিশ সদস্যকে আমরা পেয়েছি?
তাছাড়া লেফট রাইট আর চোর পুলিশের খেলায় মন ও মননের চর্চার সময় কোথায় ? আর
এই বেচারারা কত টাকাই বা মাইনে পায় ? তাদের দিকেও তো আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।
শুধু শুশু এই সময়টুকু উত্কোচ না না থুক কু উপরি আয় থেকে বঞ্চিত করা কেন বাপু ?
তাই আমার একটা উত্তম পন্থা মাথায় এলো। কেন না সিনেমার আগে বা সিগারেটের মোড়োকে যেমন সতর্কিকরন দেওয়া থাকে তেমনি আমরা আমাদের বইয়ের মোড়োকেও সতর্কীকরণ ছাপালেই গোল মিটে যায়। তাতে সাপ মরে লাঠিও ভাঙে না।
তাই আমি এক সতর্কীকরণ লিখেছি। দয়া করে পড়ে জানাবেন কেমন হলো। যদি ভালো ভয় তবে সরকারের কাছে এই প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে।
সতর্কিকরন: এই বইয়ের মধ্যে শক্তিশালী ভাষা আছে যা দুর্বল,অবরুদ্ধ মানসিকতা বা অতি সংবেদী ধর্মীয় চিত্তের
জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এই বইয়ের স্বাভাবিক ও আপেক্ষিক
উচ্চমার্গের হাস্যরস কিছু
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জুতসই
নাও হতে পারে। বইটির উন্নত গণিত ,বিজ্ঞান , উদার শিল্পকলা ও
শব্দ বিন্যাসের ধকল কিছু পাঠক বা গোষ্ঠীর হঠাৎ হৃদপিন্ডে
আক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই নিজ দায়িত্বে ও
বুদ্ধি বিবেচনার সাথে পড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
আমি সব সময় তোমার লেখার সমালোচনা করি কিন্তু এই লেখাটার প্রশংসা না করে পারলাম না। দারুন লিখেছে।
ReplyDeleteবিশেষ সতর্কীকরণ- এই বই খুব কুঁজে, গোবর ভরা মাথা খুঁজে । যারা চোখ থাকিয়া অন্ধ সাজে, তাদের জন্য এই বই বাজে ।
ReplyDelete*** এমন যদি লেখা হয় তবে কেমন হয় ?
Ashu Ranjan Shil khub bhalo bolechen
ReplyDelete