মানবকল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার মধ্য রয়েছে ত্যাগের অনন্ত মহিমা। আর এ ত্যাগের মধ্যেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত সুখ। শুধু নিজের কল্যান কামনা মানুষকে শুধু লোভী করে তোলে, সুখী করতে পারে না।পৃথিবীর মানুষ স্বভাবতই প্রবৃত্তির দাস। প্রবৃত্তির শৃঙ্খল মোচনের মাধ্যমেই মানুষের আত্মমুক্তি ঘটে । আর এ আত্মমুক্তির মাধ্যমেই পাওয়া যায় জীবনের আস্বাদ।ভোগে আসক্তি জন্ম নেয়, আসক্তির দ্বারা ভোগের আকাঙ্ক্ষা বাড়ে। মানুষ তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হয়ে সে যন্ত্রণাময় জীবনযাপন করে। প্রচুর ধনসম্পদ থাকা সত্ত্বেও মনের দিক দিয়ে সে হয় দরিদ্রের চেয়েও দরিদ্র। তার দ্বারা পৃথিবীর মানুষের জন্য কোনো মহৎ কাজ করা সম্ভব হয় না। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার স্মৃতি মানুষের কাছে হয়ে যায় ম্লান। অপর পক্ষে ত্যাগের মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই স্বীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল হতে পারে। ত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে, পৃথিবীর মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পায়। ত্যাগেই মানবজীবনের সার্থকতা প্রতিপন্ন হয়, মানুষ প্রকৃত সুখ লাভে সক্ষম হয়। তাই ত্যাগই আমাদের চরিত্রের সর্বোচ্চ আদর্শ হওয়া উচিত। ত্যাগই মহাশক্তি।
শুধু ত্যাগের দ্বারাই মানবজীবন সার্থক করা সম্ভব। মানুষ যদি অপরের কল্যাণে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে, তাতে তার চরিত্রে মহত্ত্বেরই প্রকাশ ঘটে। এখানেই জীবনের যথার্থ গৌরব, প্রকৃত সুখ।ভোগের বশবর্তী লোক নিজেদের স্বার্থচরিতার্থেই মশগুল থাকে। জীবনের সুন্দর বিকাশের জন্য স্বার্থত্যাগ বাঞ্ছনীয়। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ।: দুঃখের অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়েই মানুষের মন হয়ে ওঠে শুচিশুভ্র। মানুষ লাভ করে মহিমান্বিত জীবন। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মেঘের অন্তরালে সূর্য ঢাকা পড়লে তাতে বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা ক্ষণিক বাধা ছাড়া আর কিছুই নয়। একসময় আলোকিত সূর্য স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হবেই।
মানুষের জীবন হলো সুখ ও দুঃখ দিয়ে
গাঁথা এক বিচিত্র মালার মতো। নিরবচ্ছিন্ন সুখ কিংবা দুঃখ কোনো মানুষের জীবনে
স্থায়ী হয় না। তার জীবনে যখন আসে দুঃখের অমারাত্রি, দুঃখ-বেদনা তখন অসহ্য বোধ হয়। মনে হয়,
সেই
দুঃখ রজনীর বুঝি শেষ নেই। কিন্তু একসময় তার দুঃখ-বেদনার সেই অমারাত্রির অবসান হয়।
পূর্ব দিগন্তে উদিত হয় সুখের সূর্য। কিন্তু সেই সুখও তার ভাগ্যে চিরস্থায়ী হতে
পারে না। নদীর জোয়ার-ভাটার মতো তার জীবনে আবার আসবে দুঃখ, দুঃখের পর সুখ। কখনো কখনো আবার মানুষের
জীবনের আকাশে জমাট বাঁধে দুঃখ এবং আপদ-বিপদের ঘন কালো মেঘ। দুঃখের স্পর্শে মানুষের
স্বীয়সত্তা ও অন্তর্গত শক্তি জাগ্রত হয়। দুঃখের মধ্য দিয়েই মানুষ সত্যিকার
মনুষ্যত্ব লাভ করে। দুঃখের পরশেই মানুষের বিবেক মহান হয়। দুঃখ-কষ্টের অভিজ্ঞতার
মধ্য দিয়েই মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় প্রজ্ঞা ও মহত্ত্বের। দুঃখের করুণ দহন শেষে যে
সুখ আবির্ভূত হয়, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখের আগুনই মানুষের মনুষ্যত্ব ও বিবেককে
খাঁটি সোনায় পরিণত করে। পৃথিবীর সব মূল্যবান সম্পদ দুঃখের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে।
দুঃখ ছাড়া প্রকৃত সুখ অর্জন সম্ভব নয়। মনীষীরা দুঃখকে পরশ পাথরের সঙ্গে তুলনা
করেছেন। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় লোহা যেমন সোনায় পরিণত হয়, তেমনি দুঃখরূপ পরশ পাথরের ছোঁয়ায়
মানুষের সব গ্লানি দূর হয়ে যায়। ফলে মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা। জগতের সব
সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সীমাহীন দুঃখের মর্মান্তিক ইতিহাস। কথিত আছে—‘কষ্ট ছাড়া
কেষ্ট মেলে না।’ দুঃখ-কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে সাফল্যের
স্বর্ণশিখরে আরোহণ অসম্ভব। মূলত দুঃখই জগতে একমাত্র সব পদার্থের মূল। দুঃখ মানুষের
সব জড়তা ও দৈন্য দূর করে তাকে করে সুন্দর। দুঃখের ভেতর দিয়েই মানুষ জীবন সাধনায়
সিদ্ধি লাভ করে। সুতরাং জাগতিক সব প্রাপ্তির পূর্বশর্ত—দুঃখের পরশ। অসহায় মানুষ
সেই ঘোর বিপদের কালো মেঘ দেখে হয়ে পড়ে ভয়ে বিহ্বল।
কিন্তু সেই ঝটিকাসংকুল ভয়াল অন্ধকারের আড়ালে লুকিয়ে থাকে তার সুখের সূর্য।অচিরে সেই কৃষ্ণকুটিল কালো মেঘ কেটে
গিয়ে দেখা যাবে সূর্যের মুখ। বিপদ-বাধা কেটে গিয়ে দেখা দেবে নতুন দিনের সূর্যোদয়। মানুষের
দেহ নশ্বর কিন্তু কীর্তি অবিনশ্বর। মানুষের কল্যাণে কেউ যদি কাজ করে প্রতিষ্ঠা করে
অমর কীর্তি, তবে মৃত্যুর পরও কীর্তির মধ্য দিয়েই সে বেঁচে থাকে মানুষের হৃদয়ের
মণিকোঠায়। সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
খুব ভালো লিখেছো সমাজের এই অবক্ষয় কালে এমন জোরালো লেখার খুব প্রয়োজন
ReplyDelete