মার্চ
আমাদের স্বাধীনতার চেতনা। হয়তো অনেকের ভাবনা
বা চিন্তাধারা শুধু মার্চ মাস আসলেই আমাদের
স্বাধীনরার চেতনা জাগে। সারা বছর কোথায় থাকে এই চেতনা? আমি তাদের সাথে একমত পোষণ করিনা। স্বাধীনতার চেতনা
অহর্নিশ আমরা বুকে ধারণ করে চলেছি। আমাদের চিন্তায় মননে সর্বদাই অবিরত। তার জন্য কোন
বিশেষ মাস বা দিনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু পালন
করার জন্য দিবস মাসের প্রয়োজনীয়তা হয়।আমাদের মা বাবা,সন্তান সন্তুতি,ভাইবোন,
আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধদের কি নিত্য অন্তরে ধারণ করি না ? কিন্তু একটি বিশেষ দিনে বিশেষ ভাবে তাদের জন্ম দিন পালন করি। ঠিক তেমনি মার্চ আমাদের স্বাধীনতার জন্মের মাস-- ২৬ শে মার্চ তার জন্ম দিবস।
মানুষের যতগুলো অনুভুতি আছে তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর অনুভুতি
হচ্ছে ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসা সবচেয়ে তীব্র
ও প্রগাঢ় হতে পারে শুধুমাত্র মাতৃভূমির জন্যে। আমাদের খুব সৌভাগ্য আমাদের মাতৃভূমির
জন্যে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল তার ইতিহাস হচ্ছে গভীর আত্মত্যাগের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য
সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস এবং বিশাল এক অর্জনের ইতিহাস।
১৯৭১
সালের মার্চ। বাঙালিরা মুক্তির নেশায় উন্মত্ত তখন। যে করে হোক পাকিস্তানিদের উৎখাত করতে হবে। চোখে শুধু কেবল স্বপ্ন—স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রতিটি ভোরের কোমল
সূর্যোদয় হবে স্বাধীন বাংলার জন্য। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। দেশের
আপামর জনতা সবাই যেন এক সূত্রে গাঁথা মালা
। ছাত্র-জনতা-কৃষক-শ্রমিক সমতল ও পাহাড়ী আদিবাসী মানুষ ঝাঁপিয়ে পরে এই যুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল না পায়ে জুতো কিংবা গায়ে কাপড়, প্রয়োজনীয় অস্ত্র
ছিল না এমনকি যুদ্ধ করার জন্যে প্রশিক্ষণ নেবার সময় পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু তাদের বুকে ছিল অকুতোভয় দুর্নিবার সাহস,দৃঢ়তা আর মাতৃভূমির জন্যে গভীর ভালবাসা ও মমতা।
তাই
নিয়েই এই বীর মুক্তি সেনা উচ্চ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত
পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাথে যুদ্ধ করেছে। গেরিলা বাহিনী দেশের ভেতরে থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার দলকে গুপ্ত আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। এই
মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা বলে কখনো শেষ করা যাবে না।কোন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েও
শত অত্যাচারেও নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধা মাতৃভূমির মাটিতে শেষবারের মতো চুমু খেয়ে বলেছে "আমি মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত। আমার রক্ত আমার প্রিয়
দেশটাকে স্বাধীন করবে" এই হচ্ছে দেশপ্রেম।বীরত্ব ও সাহস।মুক্তিযুদ্ধে নারীরা অস্ত্র
হাতে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরোচিত ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে
অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেনি "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র" প্রতিষ্ঠিত করে আমাদের
কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রকৃত যোদ্ধাদের মতোই বাংলাদেশের অবরুদ্ধ
জনগণ ও মুক্তি যোদ্ধাদের সাহস আর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে উজ্জীবিত করেছে ।
বাংলাদেশের
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় প্রবাসী বাঙালিরাও মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা
এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্যে টাকা তুলেছেন, পাকিস্তানের গণহত্যার কথা পৃথিবীকে জানিয়েছেন
এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত তৈরি করেছেন।
আমাদের মাতৃভূমির যে মাটিতে
আমরা দাঁড়িয়ে আছি,ওপরে তাকালে যে আকাশ আমরা দেখতে পাই কিংবা নিঃশ্বাসে যে বাতাস আমরা
বুকের ভেতর টেনে নেই,তার সবকিছুর জন্যেই আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঋণী।
সেই
উত্তাল মার্চ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি এখনও উৎকণ্ঠিত,উত্তেজিত ও বিচলিত করে।করে বিক্ষুব্ধ!অশান্ত!!মনে পড়ে যায় অমাবস্যার রাতের মত সেই দিনগুলি মনের শিলালিপিতে
গভীর দাগ কেটে আছে।সেই ভয়াল পাশবিক নির্মম ও বর্বরোচিত দৃশ্য,আকাশছোঁয়া আগুনের শিখা আর কালো
ধোঁয়া সব ছবি স্মৃতির পাতায় এমন ভাবে বন্দি হয়ে
আছে কখনো তা বিবর্ণ হবার নয় না।সে সময় যারা এই হত্যা যজ্ঞ আর নরপিশাচ বর্বর পাকবাহিনীর নির্মম তান্ডব প্রতক্ষ করেছে তাদের মন থেকে এই স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়ার নয়।বড় ভয়ংকর সে স্মৃতি।
মুক্তিযুদ্ধের
পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সেই
সব স্মৃতি মনে করিয়ে দেবার জন্য আমার প্রয়াস। এই প্রজন্মকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সত্যি
রূপটা তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। না হলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরে গিয়ে
লক্ষ্যচ্যুত হয়ে ভ্রান্ত ধারণায় বেড়ে উঠ্বে।এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এক্ষেত্রে যদি এই প্রজন্ম
আমাদের দোষারোপ করে, আমাদের ভুল বুঝে, তাহলে
ব্যর্থতা আমাদেরই।
তাই তাদের জানাতে হবে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস। এই প্রজন্মকে
মনে রাখতে হবে, যে মুক্ত জীবন তাদের দেয়া হয়েছে, যে মুক্ত পরিবেশ তারা ভোগ করেছে এর
পেছনে আছে অনেক নির্যাতন,অনেক রক্ত,অনেক আর্তচিৎকার।এসব কিছু যেন বৃথা না যায়।
কাজেই
এই প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে আলোকরেখায়
আজ থেকে নিয়মিত থাকবে "আমার স্বাধীনতার
স্মৃতি"-"মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস"-" শহীদ জননীর আখ্যান"- '৭১'রের
প্রেমের সত্য কাহিনী" -"একটি শহীদ পরিবারের জীবন গাঁথা" -কবিতা, ছবি ও ছায়া
চিত্র । আশা করি, আলোকরেখার যে প্রতিশ্রুতি
'দীপ্ত প্রজ্ঞার অন্বেষণে' কিছুটা হলেও চরিতার্থ হবে।
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
সানজিদা রুমি কে এমন একটি প্রয়াস নেওয়ার জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি। আলোকরেখা দীপ্ত প্রজ্ঞা ছড়াতে সফল হোক এই কামনা করছি
ReplyDeleteআমি ৭১ এর পরের প্রজন্ম। নিজেরাই জানিনা এর সঠিক ইতিহাস।আমার সন্তানদের কি শেখাবো? সানজিদা রুমিকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি কাজ করার জন্য
ReplyDeleteএই বিদেশে বসে স্বাধীনতার ইতিহাস জানার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আলোকরেখাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।সানজিদা রুমিকে অভিনন্দন।
ReplyDeleteবিদেশে থেকে দেশের ও নতুন প্রজন্মের জন্য এই মমতা প্রশাংসার দাবিদার। সানজিদা রুমিকে আন্তরিক ধন্যবাদ !
ReplyDeleteসানজিদা!ফেসবুক এ পোস্ট পড়ার পর থেকে অপেক্ষায় ছিলাম লেখাটা পড়ার জন্য।কাজ সেরেই বাসায় এসে পড়লাম।সত্যি এমন একটা প্রয়াস?অনবদ্য!ধন্যবাদ
ReplyDeleteখুব ভাল লেখাটা,বাকি লেখার অপেক্ষায় আছি।স্বাধীনতার ইতিহাস, স্মৃতি, শহীদ জননীর ও কথা প্রেমের গাঁথা।কবে বেরোবে?
ReplyDeleteসবাই বলে এই প্রজন্ম উচ্ছন্নে যাচ্ছে। কেন ? কারণ আমাদের যারা পথ দেখাবে তারাই বিভ্রান্ত। ধন্যবাদ আলোকরেখা আমাদের কথা ভাবার জন্য
ReplyDeleteআমি আর আমার বন্ধুরা আলোকরেখার নিয়মিত পাঠক।স্বাধীনতা নিয়ে লেখার ভাবনাটা উন্নত।অন্য লেখার অপেক্ষায় থাকলাম
ReplyDeleteএই লেখা পড়ে ভালোলাগার কোন দিকটা বলি! বিষয়টার কথা বলাটা কি প্রশংসা হবে? স্বাধীনতার কথা তো সবাই কম বেশী বলে। কিন্তু এমন আঙ্গিকে তো সবাই বলে না! এমন দায়িত্ববোধ নিয়ে তো সবাই বলে না ! প্রাণবন্ত লেখা মানুষের হৃদয়ে গিয়ে একটা তরঙ্গের সৃষ্টি করে অনেকটা সংগীতের শুদ্ধ note এর মত ! লেখায় মুন্সীয়ানার আরেকটি দিক হলো নিজের আবেগকে সংযত রেখে বিষয়বস্তুর দিকে খেয়াল রাখা এবং পরিমিতি বজায় রাখা। উপরের সব মাত্রাগুলো বিচারে এনে পাঠকরা কোনো লেখা পড়েনা ! তবে যখন এরকম একটা লেখা আমরা পড়ি তখন আমরা আলোড়িত সঙ্গত কারণেই ! এই লেখা পড়ে স্বাধীনতার মূল্যটা যে অনেক সেটা নতুন করে উপলব্ধিতে এলো ! সে জন্যে সানজিদা রুমিকে ধন্যবাদ ! পরবর্তী লেখাগুলোর জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteআজ ছুটির দিনে এমন একটা লেখা যা আমার দেশের অস্তিত্ব নিয়ে পেলাম আলোকরেখায় অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি অন্য প্রতিশ্রুত লেখার।
ReplyDeleteসানজিদা আমি কিন্তু তোমার নিয়মিত পাঠক এত ব্যস্ততার সময় করে চোখ বুলিয়ে নেই কোন ভালো লেখা আছে কিনা। সুনিকেত চৌধুরীর লেখা খুব ভালো লাগে মেহরাব তো আমার বরাবরই প্রিয়। কিন্তু আজকে তোমার লেখাটা অনবদ্য। স্বাধীনতাকে এমনিভাবে ছড়িয়ে দেবার প্রয়াস উন্নতচরিত চিন্তা।তোমার আলোকরেখার পথ সুগম ও নিস্কন্টক হোক। ভালো থেকো।
ReplyDeleteরুমিরে আমার যে কি ভালো লাগলো তোর এই প্রয়াস। খুব ভালো লিখেছিস রে। খালাম্মা মানে সাদেকা সামাদকে যে কথা দিয়েছিলি তা কবে লিখবি ? আমি অপেক্ষায় আছি। অনেক শুভ ভালোবাসা ও কামনা।
ReplyDeleteছুটির দিনে অনেক কাজের মধ্যে আলোকরেখা পড়াটাও যেন দিন দিন অভ্যেস হয়ে গেছে। দেশে এখন সর্বত্র শ্বাসহীনতার রং। সবাই সবগুলো চ্যালেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে কার থেকে বিজ্ঞ। কিন্তু সানজিদা রুমির এই প্রজন্মর জন্য ভেবেছেন আর তার নিজস্ব স্মৃতি ও শহীদ পরিবারের জীবন গাঁথা আমাদের সাথে শেয়ার করবেন এ অনেক বড় এক যোজনা। অনেক অনেক শুভ কামনা আলোকরেখা।
ReplyDeleteসানজিদা তোমাকে ও তোমার আলোক রেখায় সে দীপ্ত প্রজ্ঞার অন্বেষণ তাকে সুস্বাগতম জানাই। অনেক অনেক ভ্যালবাসা আর শুভ কামনা। যদি সম্ভব হয় স্বাধীনতার পুরো লেখাটা শেষহলে বই আকারে প্রকাশ কর। প্রজন্মের পর প্রজন্ম উপকৃত হবে। অনেক ভালোবাসা.
ReplyDeleteআমাদের এই প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সানজিদা রুমি আলোকরেখার মাধ্যমে। আজ আমরা তা পাইনি।অধীর অপেক্ষায় আছি। বাংলাদেশের মন্ত্রীদের মত যেন হয়। আলোকরেখার কাছে এই আশা করি।
ReplyDelete