আজ ২৫শে মার্চ!!
আজ শহীদ জননী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাদেকা সামাদের জন্মদিন।
যিনি স্বাধীনতা,দেশপ্রেম মুক্তিযুদ্ধের ও বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করেছেন।মুক্তিযুদ্ধের পর নিজেকে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিবেদিত করেন।যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচারে আনার জন্য তাঁর
প্রচেষ্টা ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। আজ তুমি পৃথিবীতে নেই কিন্তু নিশ্চয় তুমি সব
দেখতে পাচ্ছ। আমি তোমাকে কষ্ট দেখেছি , দেখেছি তোমার আহাজারি …যখন মুজাহিদের গাড়িতে
উড়েছে তোমার ছেলে শহিদ লেঃ আশফাকুশ সামাদের রক্তে ভেজা পতাকা। এই সেই মোজাহিদ মা
যে আব্বাকে ড্রাম ফ্যাক্টারির টর্চার সেল এ অমানবিক ও অমানুষিক অত্যাচার করেছিল.
তুমি যাদের কাছে আঁচল পেতে আব্বার প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলে.সেই সময় ওরা
তোমাকে লাঞ্ছিত উপহাস করেছিল. তুমি বলতে, যখন তুমি ওদের দাপট দেখতে তখন তোমার মনে হত কেউ যেন তোমার শরীরটা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে। মা আমি তোমাকে দেওয়া কথা এখনও বাস্তবায়ন করতে পারিনি ।
তোমাকে লাঞ্ছিত উপহাস করেছিল. তুমি বলতে, যখন তুমি ওদের দাপট দেখতে তখন তোমার মনে হত কেউ যেন তোমার শরীরটা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে। মা আমি তোমাকে দেওয়া কথা এখনও বাস্তবায়ন করতে পারিনি ।
আজ তোমার জন্মদিন এবং বিধির
অমোঘ বিধান দেখো তুমি আমাদের ছেড়ে তমার ছেলের কাছে চলে গেলে ঠিক ২৬শে মার্চ সেই সময়টায়
যখন ১০৭১ সালে ২৬শে মার্চ পাক হানাদার বাহিনী তাণ্ডব চলছিল । মা ,হয়তো একটু দেরি হয়ে
গেল । কিন্তু আমি আমার প্রতিশ্রুতি ভুলিনি মা । সেই যেদিন আমি বউ হয়ে আসলাম তখন থেকেই
দেখছি তোমার পুত্র হারানোর আর্তনাদ গর্জন।
বেয়োনেটে গাঁথা শিশু ও ধর্ষিতা নারীর
ক্রন্দন শুনিনি কিন্তু তোমার অকারণে দলিত রোষ। ক্রোধের আগুন দেখেছি ষোড়শী এক নব
পুত্রবধূর দাহন হতে দেখেছি মা।তুমি কি ভাবছো আমি কষ্ট পেয়েছি না মা আমি তোমার
ব্যথায় ব্যথিত হয়েছি ।তোমার হাতে হাত দিয়ে বসেছি ঘন্টা পর ঘণ্টা। দেখেছি আগুনে পোড়া
এক বিধ্বস্ত বাংলাদেশের স্তূপে একটি
পরিবার ধিকি ধিকি জ্বলে প্রতিনিয়ত। আমিও নির্বিণ্ণ
পুড়েছি সেই চাপা আগুনে অনুক্ষণ মা।
শুনেছি ঘুমন্ত স্বামীর বুকে মাথা রেখে মেশিনগান
আর বুলেটের স্পন্দন। শুনেছি স্বাধীনতার যুদ্ধের গল্প
সারা রাত বাসর রাতে উত্তেজনায় শিহরণে দেখেছি তাকে বারংবার কাঁপতে।না মা , সে
নব বধূর চুলের সোঁদা সুরভী বা লজ্জা পুলকিত হৃদয় স্পন্দনে না ফেলে
আসা যুদ্ধের স্মৃতি কামান আর বারুদের ঝাঁঝালো
গন্ধে। আজও যখন সে কাছে আসে চোখ বোঝে নিবীড় আলিঙ্গনে অধর
রাখে অধরে ক্ষণিকে চমকে ওঠে গলিত লাশ আর নিজ হাতে মারা পাক সৈন্যের মুখ মনে পোড়ে। এভাবেই
পেরুচ্ছে জীবন আজ পয়তাল্লিশ ধরে । তখন
বুঝতে পারিনি এই নিকৃতি অশোভন আচরণের অন্তর্নিহনে
অর্থ। আজ আমি সব বুঝি। তোমার ছেলের রক্তে অর্জিত পতাকা। রাজাকারদের গাড়ির বহরে উড়তে
দেখে কি কষ্টই তুমি পেয়েছ। একটি স্বাধীনতা যুদ্ধ
বিদ্ধস্ত পরিবার সঙ্গে করে ।তোমার সংসার আগলে রেখেছি আজ- যে ভালবাসায় তুমি আমাকে পরিপূর্ণ করেছো তার ঋণ আমি কি করে শোধাবো।তাই যে গুরু দায়িত্ব তুমি আমায় দিয়েছ ,আজ থেকে তার সুচনা। এ কোন ইতিহাস নয় দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের কথোপোকথন। এই লেখা সবাই পড়বেরবে। সবাই জানবে এই বাংলাদেশের মানচিত্রের কতটা বুকের রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। তোমার প্রতিটি বলে যাওয়া কথা আমি হুবহু লিখবো মা।
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
এরকম কঠোর সত্য কাহিনী পড়লে বুকের পাঁজর ভেঙে যায়
ReplyDeleteচোখে অতি সাধারণ জল আসেনা
এক বালিয়াড়ি ঝড়ের কষ্টে চোখ থেকে
পাথরকণা অশ্রু হয়ে গড়ায়
শহীদ জননী সাদেকা আপার যন্ত্রণা ব্যথা ও দুঃখ নিয়ে লিখছে ওঁর সবচেয়ে প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ ছোট বউ। এই পরিবারটাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এই লেখায় তা খুব সুন্দর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় ,রুমি তুমি অপার শেষ দিনের কথা পর্যন্ত লিখবে। আমার একটি অনুরোধ তুমি এই লেখাটা বই আমাকে প্রকাশ করবে যাতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস-এ দলিল হয়ে থাকবে।অনেক দোয়া।
ReplyDeleteএকজন শহীদ জননী। তাঁর দুঃখের কথা সুখের কথা এক জন ছেলের বৌয়ের কাছ থেকে জানতে পারা সচারচর দেখা কি যায় ? আমরা কেবল তাঁদের খুনসুটির কথা জানি ,কে কাকে টেক্কা দেবে ? সানজিদা রুমির লেখা পড়ে মনটা ভারী হয়েছে ঠিক -ই । কিন্তু ওদের সম্পর্কটা যে খুব সহজ ছিল না লেখাটায় তা বিদ্যমান ,কিন্তু পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সব কিছুকে জয় করে গেছে। বাকি লেখা অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা
ReplyDeleteএটাও সাদেক নানুর একটা পাওয়া বলবো। আজকাল মানুষ নিজেকে নিয়ে এত ব্যস্ত অন্যের কথা লেখাতো দূরের কথা ভাবেও না ,তার ওপর আবার শাশুড়ির ব্যথা ? এত সহজ না রুমি। তোমাকে অনেক আদর আর দোয়া। তুমি লেখা সারা বাঙলী জাতি তোমার সাথে আছে। শবনম রহমান
ReplyDeleteশহীদ জননীর অনেক পাওয়ার ছিল এই বাঙালি'র কাছ থেকে। হতভাগ্য আমরা যে ওঁনার শেষ অবধি সাথে থাকতে পারিনি। সানজিদা রুমি কে আন্তরিক ধন্যবাদ এই মহা উদ্যোগ নেবার জন্য। সানজিদা রুমির লেখার মাধ্যমে শুধু একজন শহীদ জননী নয় একজন মানুষ সাদেক সামাদকে জানতে পারবো। অপেক্ষায় রইলাম
ReplyDeleteশহীদ জননী সাদেকা আপার যন্ত্রণা ব্যথা ও দুঃখ নিয়ে লিখছে ওঁর সবচেয়ে প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ ছোট বউ। এই পরিবারটাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এই লেখায় তা খুব সুন্দর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় ,রুমি তুমি আপার শেষ দিনের কথা পর্যন্ত লিখবে। আমার একটি অনুরোধ তুমি এটা বই আমাকে প্রকাশ করবে। একজন শহীদ জননী ও মুক্তি যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণের একটা দলিল হয়ে থাকবে।অনেক দোয়া।
ReplyDeleteশহীদ জননী সাদেকা খালাকে বিনম্র শ্রদ্ধা। যে মা বলতে পারে আমার চার ছেলেকে আমি দেশের জন্য উৎসর্গ করলাম। সে মা কত মহান কত দেশপ্রেমী। কিন্তু আমরা কজন তাঁর কথা জানি ? এই প্রথম ওঁনার সবচেয়ে আদরের ও ঘনিষ্ঠ ছোট বউ তাঁর যন্ত্রণা ব্যথা ও দুঃখ নিয়ে লিখছে । এই পরিবারটাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এই লেখায় তা খুব সুন্দর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। আমারো অনুরোধ এটা যেন বই আকারে প্রকাশ করা হয়। নুতুন লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteকয়েবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বারংবার কলম থেমে গেছে। এমন সুদর্শন যুবক ছেলে হারানোর এই ব্যথা আমি বুঝি। হয়তো নিজেকে নিজের কাছ থেকে আড়াল করতে চেয়েছি।তাই তাই আর আপাকে নিয়ে লেখা হয়ে উঠেনি। সানজিদা তোমায় অনেক আদর তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করছো যা আমরা তথা বাংলাদেশ পারেনি।এগিয়ে যাও আমরা তোমার সাথে আছি।
ReplyDeleteযন্ত্রণা ব্যথা দুর্বিপাক এবং দুঃখ সাথে স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দ। সানজিদা রুমি একজন শহীদ জননীকে নিয়ে লিখছেন। সম্পর্কে সে তার চেচের বৌ। মহান উদ্যোগ। প্রশংসার দাবিদার। কিন্রু এই লেখাটা কি পক্ষপাতদুষ্ট হবে নাকি নিরপেক্ষ হবে? আগামী লেখায় তা বোঝা যাবে। কারণ অনেকের দাবি এই লেখাটি স্বাধীনতার দলিল হিসাবে বই আকারে প্ৰকাশ করার।
ReplyDelete