মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গাঁথা তৃতীয় পর্ব
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
আন্দোলনের তীব্রতার মুখে ১৫ মার্চ খাজা নাজিমুদ্দিন সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আবুল কাশেম, কামরুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমূখ অংশগ্রহণ করেছিলেন।
আলোচনাসাপেক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে ৮টি বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ নমনীয় আচরণের প্রধান কারণ ছিল ১৯ মার্চ জিন্নাহ্'র ঢাকা আগমন। তার আসার পূর্বে নাজিমুদ্দিন চুক্তিতে রাজি হয়েছিল পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত করার তাগিদে । কিন্তু বাঙলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিটি তখন পর্যন্ত মেনে নেওয়া হয়নি। চুক্তিতে বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম ও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া,আন্দোলনের সময় গ্রেফতারকৃত বন্দিদের মুক্তি, পুলিশের অত্যাচারের নিরপেক্ষ তদন্ত, সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এতদ্বসত্ব চুক্তিতে বাঙলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিটি তখন পর্যন্ত মেনে নেওয়া হয়নি।
এতদ্বসত্ব চুক্তিতে বাঙলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিটি তখন পর্যন্ত মেনে নেওয়া হয়নি।
পাকিস্তানের স্থপতি ও গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্১৯ মার্চ ১৯৪৮-এ ঢাকায় এসে পৌঁছান । ভারত বিভাগের পর এটাই ছিল তার প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সফর।২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ও সেখানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভাষণ দেন।ভাষণে তিনি ভাষা আন্দোলনকে পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। এবং দ্ব্যর্থহীন চিত্তে ঘোষণা করেন - “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয়” তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “জনগণের মধ্যে যারা ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে, তারা পাকিস্তানের শত্রূ। তাদের কখনোই ক্ষমা করা হবে না”।
তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত ছাত্র-জনতা জিন্নাহ্'র "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ".এ বিরূপ মন্তব্যে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে গিয়েও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ একই বক্তব্য রাখে। উর্দুর ব্যাপারে অবস্থান অটল তা পুনরুল্লেখ করার সাথে সাথে উপস্থিত ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে সমস্বরে মানি না, মানি না বলে চিৎকার করে ওঠে। ওই একই দিনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল জিন্নাহ্'র সাথে সাক্ষাৎ করে ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়।কিন্তু খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একপেশে এবং চাপের মুখে সম্পাদিত বলে জিন্নাহ প্রত্যাখ্যান করেন। অনেক তর্ক-বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে সভা শেষে ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জিন্নাহ্'র নিকট স্মারকলিপি পেশ কর। ২৮ মার্চ জিন্নাহ্ ঢাকা ত্যাগ করেন।সেদিন সন্ধ্যায় রেডিওতে ভাষণে তার পূর্বেকার অবস্থানের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন ।
১৯৪৮ সালে ১৭ নভেম্বর তারিখে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের এক সভায় আজিজ আহমদ,আবুল কাশেম, শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, আবদুল মান্নান, তাজউদ্দিন আহমদ প্রমুখ একটি স্মারক লিপি প্রণয়ন করেন এবং সেটি প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের কাছে পাঠানো হয়। ১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসে। ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে এক ছাত্রসভায় ভাষণ দেয়। ঐ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে প্রদত্ত মানপত্রে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপিত হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান এক্ষেত্রে কোনো সাড়া দেননি।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মুসলিম লীগের প্রতি আস্থা হারাতে থাকে। এ সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতৃত্বে সংকট দেখা দেয় এবং দলের যুব-সদস্য ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। মুসলিম লীগের ক্ষুব্ধ সদস্যরা ঢাকায় ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন এক কর্মী সম্মেলন আহবান করে। এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে। প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ প্রতিনিধি যোগদান করেন।২৪ জুন ১৯৪৯ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয় ।পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল -এর সভাপতি হন মওলানা ভাসানী,এবং টাঙ্গাইলের শামসুল হক হন সাধারণ সম্পাদক।
পূর্ব পাকিস্তানে বঞ্চনা ও শোষণের অনুভূতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জায়গায় পশ্চিম পাকিস্তানিদের নতুন ধরনের আরেক উপনিবেশবাদ আরোপিত হয়। এর
কিছুদিন পরই, পূর্ব বাংলা
সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা
সমস্যার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা
জানতে মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠনকরা
হয়, এবং এই বিষয়টি
নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি
করতে বলা হয়। ১৯৫০
সালের ৬ ডিসেম্বর তারিখের
মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে এটি ১৯৫৮
সালের আগে প্রকাশ করা
হয়নি। এখানে ভাষা সমস্যার সমাধানের
লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি
কার্যকর ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়, যেখানে
বাংলাকে আরবি অক্ষরের মাধ্যমে
লেখার সুপারিশ করেছিলেন। এর বিরুদ্ধেও তীব্র
প্রতিবাদ জানানো হয়।
১৯৫২ সালের শুরু থেকে ভাষা আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে থাকে। এ সময় জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান উভয়েই পরলোকগত। লিয়াকত আলী খানের জায়গায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন খাজা নাজিমুদ্দীন। রাজনৈতিক সংনীভূত হওয়ার সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থারও অবনতি ঘটে। খাজা নাজিমুদ্দীন ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বলেন যে, প্রদেশের সরকারি কাজকর্মে কোন ভাষা ব্যবহূত হবে তা প্রদেশের জনগণই ঠিক করবে। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে কেবল উর্দু। সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় এবং ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করেন।৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়।
৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের এক সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়, যার আহবায়ক ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি ( একুশে ফেব্রুয়ারি) সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।পাকিস্তান সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশ-শোভাযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৪৪ ধারা অমান্য করা হবে কিনা এই নিয়ে ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা হয়। এ প্রশ্নে সভায় দ্বিমত দেখা দিলেও ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সঙ্কল্পে অটুট থাকে।পরদিন সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাংশে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের সভা হয়।সভা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ উপাচার্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার জন্য ছাত্রদের অনুরোধ করেন। তবে ছাত্র ও নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে আবদুল মতিন এবং গাজীউল হক নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। ঢাকা শহরের স্কুল-কলেজের হাজার হাজার ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হয়।
ছাত্রছাত্রীরা পাঁচ-সাতজন করে ছোট ছোট দলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসলে পুলিশ তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে ও পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেও বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে। গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসররত মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে রফিক উদ্দিন আহমদ, আবদুল জববার, আবুল বরকত (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ শ্রেণীর ছাত্র) নিহত হয়।বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন আবদুস সালাম মারা যায়। অহিউল্লাহ্ নামে আট/নয় বছরের এক কিশোরও সেদিন নিহত হয়।এ সময় গণপরিষদের অধিবেশন বসার প্রস্ত্ততি চলছিল। পুলিশের গুলি চালানোর খবর পেয়ে গণপরিষদ সদস্য মওলানা তর্কবাগীশ এবং বিরোধী দলের সদস্যসহ আরও কয়েকজন সভাকক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান। অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন বাংলা ভাষার দাবির বিরোধিতা অব্যাহত রেখে বক্তব্য দেন।পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল গণবিক্ষোভ ও পুলিশি নির্যাতনের দিন।
জনতা নিহতদের গায়েবানা জানাজার নামায পড়ে ও শোকমিছিল বের করে। মিছিলের উপর পুলিশ ও মিলিটারি পুনরায় লাঠি,
গুলি ও বেয়োনেট চালায়। এতে শফিউর রহমানসহ কয়েকজন শহীদ হন এবং অনেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। ছাত্ররা যে স্থানে গুলির আঘাতে নিহত হয় সেখানে ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
১৯৬৩ সালে এই অস্থায়ী নির্মাণের জায়গায় একটি কংক্রীটের স্থাপনা নির্মিত হয়। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন অব্যাহত ছিল। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অনুমোদনের মাধ্যমে এই আন্দোলন তার লক্ষ্য অর্জন করে।১৯৫৬ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদে বিষয়টি নিয়ে বাদ প্রতিবাদ করে ও জাতীয় পরিষদের সদস্য ফরিদপুরের আদেলউদ্দিন আহমদের দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের এক সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়, যার আহবায়ক ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি ( একুশে ফেব্রুয়ারি) সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।পাকিস্তান সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশ-শোভাযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৪৪ ধারা অমান্য করা হবে কিনা এই নিয়ে ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা হয়। এ প্রশ্নে সভায় দ্বিমত দেখা দিলেও ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সঙ্কল্পে অটুট থাকে।পরদিন সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাংশে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের সভা হয়।সভা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ উপাচার্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার জন্য ছাত্রদের অনুরোধ করেন। তবে ছাত্র ও নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে আবদুল মতিন এবং গাজীউল হক নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। ঢাকা শহরের স্কুল-কলেজের হাজার হাজার ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হয়।
ছাত্রছাত্রীরা পাঁচ-সাতজন করে ছোট ছোট দলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসলে পুলিশ তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে ও পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেও বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে। গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসররত মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে রফিক উদ্দিন আহমদ, আবদুল জববার, আবুল বরকত (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ শ্রেণীর ছাত্র) নিহত হয়।বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন আবদুস সালাম মারা যায়। অহিউল্লাহ্ নামে আট/নয় বছরের এক কিশোরও সেদিন নিহত হয়।এ সময় গণপরিষদের অধিবেশন বসার প্রস্ত্ততি চলছিল। পুলিশের গুলি চালানোর খবর পেয়ে গণপরিষদ সদস্য মওলানা তর্কবাগীশ এবং বিরোধী দলের সদস্যসহ আরও কয়েকজন সভাকক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান। অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন বাংলা ভাষার দাবির বিরোধিতা অব্যাহত রেখে বক্তব্য দেন।পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল গণবিক্ষোভ ও পুলিশি নির্যাতনের দিন।
১৯৫২ সালের পর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাঙালিদের সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করে দিনটি উদ্যাপন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনকে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে।ভাষা আন্দোলনকে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং ৬ দফা আন্দোলন,৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গণপরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়ে একটি বিল পাস করে।ভাষা আন্দোলনকে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
"মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গাঁথা" আমার প্রতিশ্রুত লেখা প্রকাশ করলাম ।জানিনাকরতা ভাল লাগবে ? আমি আমার সাধ্যমতে সততার সাথে গবেষণা করে লেখার চেষ্টা করেছি। নতুন করে ফরম্যাট তৈরি করাতে টাইপে একটু গোলমাল আছে।অতি শিঘ্রই তা ঠিক হয়ে যাবে। ভাল থাবেন।
ReplyDeleteএত বিস্তারিত মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস লাখার জন্য সানজিদা রুমি কে অনেক ধন্যবাদ! অনেক অজানা কথা জানতে পারছি । অনেক শুকামনা
ReplyDeleteমুক্তি যুদ্ধের ও স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা অনেক কঠিন । তাও এত বিস্তারিত ও দুর্লভ ছবিসহ। সানজিদা রুমির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই ।
ReplyDeleteসকালের প্রথম প্রহর শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস দিয়ে। আমার বাংলাদেশ আমার মাতৃ ভাষা নিয়ে গর্ব করি অথচ আজ পর্যন্ত সঠিক ও নিরেপেক্ষ ইতিহাস লেখা হয়নি ,আশা করবো সানজিদা রুমি আমদের সঠিক ও নিরেপেক্ষ ইতিহাস উপহার দেবেন । অনেক শুভেচ্ছা !! সেলিম আল দীন
ReplyDeleteদেশের এই ক্রান্তিকালে মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস লাখার জন্য সানজিদা রুমি কে অনেক ধন্যবাদ! এই প্রজন্ম অনেক অজানা কথা জানতে পারছে । অনেক শুকামনা মহিম দত্ত
ReplyDeleteপ্রথমেই অনেক শুকামনা আমরা বাংলাদেশ আমার মাতৃ ভাষা নিয়ে বর বর বুলি কপচাই কিন্তু এই কষ্টসাধ্য করার সাহস করি কজন ? সানজিদা রুমি কে অনেক ধন্যবাদ! আলক রেখার চলার পথ সুললিত হক এই কামনা করি ।
ReplyDelete।মুক্তি যুদ্ধের ও স্বাধীনতার ইতিহাস উপহার দেবার জন্য সানজিদা রুমি কে অনেক ধন্যবাদ! আমরা সঠিক ও নিরেপেক্ষ ইতিহাস চাই ।কন দল বা গোষ্ঠী ভিত্তিক নয় ।জানি অনেক কষ্টসাধ্যজ সাহসিকতার প্রয়োজন। আমাদের বিশ্বাস সানজিদা রুমির তা আছে । সানজিদা রুমির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই ! আলক রেখার জন্য অনেক ভালবাসা
ReplyDeleteআমি খুব আনন্দিত তুমি স্বাধীনতার দিকপাল মহান নেতা মওলানা আব্দুল হক ভাসানীর অবদানের কথা লিখেছো। আজকাল তাঁর কথা বিস্মৃত। আমি তোমার এই মহৎ উদ্দেশ্য হোক তোমাকে কলমে বেরিয়ে আসুক সত্য। কোন গোষ্ঠীর ফাঁদে পড়ে যেও না
ReplyDeleteআপনি দেখতে এতো সুন্দর আপনি নায়িকার সুচিত্রা সেনের মত দেখতে । আপনি যৌবনের দূত... আপনাকে দেখলে ইতিহাসবিদ মনেই হয় না । তারা হয় কঠিন বলিষ্ঠ চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। আর আপনি দেখতে মাধবী লতার মত মায়াময় টানা টানা হরিনের মত চোখ আপনার। আপনাকে কবিতা মানায় ইতিহাস নয়। অনেক অনেক ভালবাসা
ReplyDeleteআশীর্বাদ করি তুমি সফল হও।সানজিদা তোমার চলার পথ কন্টকহীন হোক! এখনো স্বাধীনতার শত্রুরা সচল। তারা কিন্তু চেষ্টা করেই যাবে বা যাচ্ছে তোমাকে থামাতে। তোমার বই বের করতে পারোনি। তখন আনন্দ নৃত্য করেছে। দিলাম তো কি করতে পারলো? কিন্তু ওরা কি চেনে না বঙ্গ নারীদের ? তুমি অন্য পথ ধরে ঠিকই বাঙলার গান গাইছো। এখন ওরা তোমার কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চাইবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তোমাকে কেউ রুধতে পারবে না। জয় নিশান তুমি উড়াবেই। ভালো থেক ! সাবধানে থেকে !
ReplyDeleteআমি একজন নারী হিসাবে গর্বিত | প্রথম এক নারী বাংলাদেশের ইতিহাস লিখছে|সানজিদা রুমী hats of ' to You |এমন সাহসিকার কাজ প্রশংসার দাবীদার | অনেকে ভালবাসা সানজিদা আপনাকে
ReplyDeleteসানজিদা আমার আশির্বাদ আর শুভাশিস তোমার সাথে সর্বদাই। তুমি যে ব্রত নিয়েছি অনেক কঠিন। তবে এ ব্রত মহান। এই বিপদসংকুল কণ্টকময় পথ মসৃণ হক। তুমি তোমার লক্ষ্যে অভীষ্ট লাভ কর এই প্রার্থনা করি।ভাল থেকো ! অনেক ভালবাসা
ReplyDeleteভাল লাগলো বাংলা দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রথম পর্ব দিকের লেখা অপেক্ষা এই লেখা কোনদিকে মোড় নেয় আমরা আশাকরি পক্ষপাতিত্ব দুষ্ট হবেনা
ReplyDeleteএকজন ছাত্রলীগের সাবেক সংস্কৃতি সম্পাদিকা ও বর্তমানে আওয়ালীগে সক্রিয় সদস্য তার কাছে কি নিরপেক্ষতা আশা করা যায় ?এখন সবারই অপেক্ষা সানজিদা রুমী আসলে কি ভবিষ্যৎ লেখায় প্রমানিত হবে-
ReplyDelete