আলো সবার মনে থাকতে হবে
----রোকসানা লেইস
আকাশ এত অন্ধকার আজ। কাল
রাত থেকে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে আর ঘটছে অদ্ভুত সব ঘটনা। হুট করে এটা ওটা নষ্ট হয়ে যাওয়া
ধুপ করে পরে যাওয়া। বা হারিয়ে যাওয়া। কিন্তু এসব
ছাপিয়ে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে অনেক দূরের অনেক ক্ষেত ভরা ফসল জলের নিচে তলিয়ে
যাওয়া দেখে। কয়েক মাসের কঠিন পরিশ্রমের শেষে মুখের হাসি ফোটার আগে হারিয়ে গেল সকল সম্পদ।
যার উপর নির্ভর করেছিল বছর জুড়ে ভালো থাকা। প্রতিদিনের খাবার নিত্য প্রয়োজন মিটানো।
যার উপর নির্ভর করেছিল বছর জুড়ে ভালো থাকা। প্রতিদিনের খাবার নিত্য প্রয়োজন মিটানো।
মহাজনের দাদন শোধ। ছেলের
লেখাপড়া, মেয়ের বিয়ে। নাইয়র যাওয়া। নতুন শাড়ি। নবাবান্ন
উৎসব হওয়ার আগেই হাহাকার ক্রন্দন জমে গেল কৃষকের বুক জুড়ে।
হাওয়র এলাকা শুকনো মৌসুমে
আবাদ হয়। বর্ষায় ভরা হাওয়র সমুদ্রের ঢেউ তুলে নাচে। মাছ আসে। সব কিছুই মানুষ সুখে ভোগ
দখল করে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির নিয়মের সাথে মানুষের জীবন ধারা বয়ে চলে ।
কিন্তু দিনে দিনে প্রকৃতিকে
ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক বেশী তার গতি প্রকৃতির উপর নজর না দিয়েই। তার বয়ে যাওয়ার জায়গা
না দিয়ে শহরায়ন হয়েছে যথেচ্ছা ভাবে। পরিকল্পিত কোন নিয়ম নাই। আর যদি বা কোন কাজ হয়েছে
সেখানে নিয়মের চেয়ে অনিয়ম হয়েছে বেশী।
সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার
চেয়ে নিজের পকেট ভরার তাল করেছে বেশীর ভাগ সংশ্লিষ্ট মানুষ।
ফসল ভেসে গেলে কিছু পরিবার
পথে বসে গেলে, তাদের কিছু যায় আসে
না। তারা অর্থ দিয়ে সম্পদ কিনবে নিজের জীবনের জন্য। এক জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় পাড়ি
দিয়ে নিজেকে বঁচাবে। কিন্তু ভাববে না এক সময় তার পরবর্তি প্রজন্মর জন্য বাঁচার আর জায়গা
থাকবে না।
বিদেশে দেখেছি বাড়িতে,একটি
বাড়তি ঘর, বাথরুম তৈরি করতে হলে শহর কতৃপক্ষের পার্মিশন
নিতে হয়। পরিকল্পনার আওতার বাইরে হলে অনুমোদন দেয়া হয় না।
কেউ ন জানিয়ে কোন ঘর নিজের
বাড়িতে তুললে তার জন্য বিশাল খেসারত দিতে হয়। যেটুকু লুকানো হলো খরচ বাঁচাতে তার অনেক
বেশী পরিমাণ বেড়িয়ে যায় গচ্ছা দিতে। এই গচ্ছার
টাকা শহর উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়।কারো ঘরে
যায় না।
শহর পরিকল্পনার বাইরে কোন
কিছু তৈরি করা সম্ভব না। এমন কি কী ধরনের মেটেরিয়াল ব্যবহার করা হবে এবং ভাঙ্গচুর করতে
গেলে বিল্ডিংয়ে ব্যবহৃত কোন ধরনের বস্তু মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এ সবের হিসাব
নিকাশ, পরিদর্শন যথাযথ করার জন্য বিশাল একটা সময় এবং
টাকার প্রয়োজন হয়। এবং সবশেষে সব কিছু ঠিকঠিক থাকলে বাড়িতে আলাদা একটা ঘর বা নতুন তৈরির
অনুমতি পাওয়া যায়। এখানে টাকা পয়সা বা পরিচয়ের জোড় খাটিয়ে কোন কাজ হয় না। বাংলাদেশে
যার সবটাই উল্টো। নিজের জায়গায় নিজের পয়সায় বাড়ি করব। কারো কথার ধারধারব না। এমন একটি
শক্তিমান চিন্তা সবার মনে কাজ করে। সরকারের নির্দারিত নিয়ম অনুযায়ী অনুমতি নিয়ে তার
কাছে মাথা নুইয়ে ছোট হওয়ার চেয়ে দুচার পয়সা এদিক সেদিক করে, এর
ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে কাজ আদায়ের চিন্তা অনেক বেশী যথাযথ মনে করাকে কোন ভাবেই খারাপ মনে
হয় না দেশের বিজ্ঞ বেশঅর ভাগ জনগনের।
আমার ছোটবেলা যে খোলা প্রান্তর
ঘিরে চারপাশ বেষ্টিত ডুবা, খাল,
নদী দেখেছি। তারপরও বর্ষার সময় মাঠ উঠান ঘর, বাড়ি
ডুবে যেত বন্যার জলে। এখন সে সব ডুবা খাল, বীল খানাখন্দ সব ভরাট হয়ে গেছে। শহর গ্রাম উন্নয়নের
কোন ছক আছে কি নেই জানি না। তবে অনেক পদবী এবং পদ সৃষ্টি হয়েছে, বিভিন্ন শহর উপশহরে এখন নানারকম পরিকল্পনা এবং দেখে শুনে রাখার। তবে কতটুকু
যত্ন নিয়ে কাজ হয় তা জানানাই। আর যে যার মতন নিজের থাকার বাড়ি তৈরি করছে এখন। বিশাল
অট্টালিকা। ঘরে ঘরে বাথরুম এয়ারকণ্ডিশন এখন গ্রামে গঞ্জে বিরল নয়। কিন্ত এসব অট্টালিকার শৌচাগারের পানি কোথায় যাবে তার কোন সংযোগ
শহর গুলো জুড়ে কি আছে।
অনেক বছর পর দেশে গিয়ে
দেশের উন্নয়নের জোয়ার দেখে অস্থির লেগেছিল। বিশাল বিশাল অট্টালিকা ঢাকা শহর জুড়ে নয়
শুধু গ্রাম গঞ্জেও। কিন্তু সাথে বিস্তৃত কোন রাস্তা নেই। অথচ অনেক বেশী গাড়ি এখন মানুষের
ঘরে ঘরে, রাস্তায়।
সে সব চলাচলের জন্য সঠিক
পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দিয়ে কেউ বাড়ি বানায় না। যতটুকু পারা যায় নিজের ঘরে টেনে নেয়া যায়
সে ভাবেই চিন্তা এবং সে ভাবেই তৈরি করা হয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না জেনেই।
বিদেশে দালান তৈরির সাথে
পাশে সুবিধা মতন অনেক জায়গা রাখা হয় যে কোন সময়ে বিপদের জন্য। আগুন লাগলে বা অন্য কোন
দূর্ঘটনা ঘটলে যেন সহজে অগ্নিনির্বাপক গাড়ি, পুলিশ এবং এ্যম্বুলেন্স এসে পার্ক করতে পারে তার ব্যবস্থা থাকে সাধারন সময়েও
ঐ সব জায়গায় কেউ গাড়ি পার্ক করলে চড়া পার্কিং টিকেটসহ ড্রাইভিং লাইসেন্সের কয়েক পয়েন্ট
বাতিল করে দেয়া হয়। রাস্তায় কোন জরুরী বিভাগের গাড়ির এর্লাম শোনলে সাথে সথে সরে গিয়ে তাদের আগে যাওয়ার জায়গা করে দিতে
হয়।
অথচ দেশে দেখলাম ক্রমাগত
এর্লাম বাজছে পিছনে আর ড্রাইভাররা আরাম করে গাড়ি চালাচ্ছে রাস্তা জুড়ে। পথ ছেড়ে দিতে
বললে ওদের উত্তর ও রোগী না। বিয়ের যাত্রী।
যেন ড্রাইভিং আসনে বসে
জরুরী গাড়ির ভিতরটা তারা দেখতে পায়। এই যে মানসিকতা। এই যে আমাদের কোন কিছুকে গুরুত্ত
না দেওয়া। সব কিছুতে নিজের গুরুত্ব দেয়া এই মজ্জাগত ভাবনার ফল ফসল তলিয়ে যাওয়া।
যে জায়গা গুলো ভরাট হয়ে
গেল সেখানে যে বৃষ্টির জল জমা হতো সে বৃষ্টির জল যাওয়ার কোনা জায়গা এখন নেই। শহর জুড়ে
দারুণ সব অট্টালিকা কিন্তু তাদের উচ্ছিষ্ট ফেলার জায়গা রাস্তার মোড়। প্রতিদিন আমি হাঁটতাম। আর রাস্তার কোনায় কোনায়
দেখতাম প্রতি বাড়ির খাবার থেকে বাথরুমের উচ্ছিষ্ট পঁচে গলে র্দূগন্ধে পচিয়ে ফেলছে আস
পাশ। পোকা মাছি ইঁদুরের আখঁড়া। কাক, শকুন নোংরা তুলে নিয়ে ফেলছে সাজানো বাড়ির আঙ্গিনায়।
গাছের মাথায়।
এভাবে একদিকে সাজানো সুদৃশ্য
জীবন যাপনের পাশে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা। কিন্তু সেদিকে কারো নজর নেই। এই সব সঠিক ব্যবস্থা
নেয়ার জন্য কোন নগরপালের মাথা ব্যথা নেই। প্রচলিত বাক্য মনে পরে যায়, "ভিতরে পিলপিলে পোকা উপরে তোর ঢালুয়া খোপা"।ভিতরে
অস্তি সার শূন্য হয়ে উপরে স্বযত্নে প্রলেপ দিয়ে সুন্দর দেখানোর মনোভাবের অবস্থা কাটিয়ে
উঠার কোন চেষ্টা নেই।
নৌকা নিয়ে নদীতে ঘুরেছি
অনেক, নদীর দেশ বাংলাদেশের নদীগুলো হয়ে গেছে খালের
মতন। প্রমত্তা পদ্মা ধু ধু বালু চড়।যমুনা শুখিয়ে গেছে। আর সব নদী নাব্য যেন বৈশাখ মাসের
হাটুজল সব খানে। অথচ ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা রক্ষা করার দায় নেই। তাই আজকাল একটু বৃষ্টি
হলে বাড়ি ঘরে পানি উঠে যায়।
নৌকায় ঘুরতে বেরিয়ে প্রথমে
মন খারাপ হলো ইঞ্জিন নৌকার শব্দে এবং তেল ভাসা নদীর জল দেখে। তার পরই দেখলাম গ্রামের
মানুষের শহুরে হওয়া চিপস, বিস্কিট,
কোক, পানি সিগারেট টেনে সব উচ্ছিষ্ট প্যাকেট,
ক্যান বোতল রাঙতা, মহা আনন্দে জলের গভীরে ছূঁড়ে
দেয়া হচ্ছে।
কিছুদিন আগে একটা খবর দেখলাম মাছের শরীরে
প্লাস্টিক আবিস্কার করছে গবেষক। আর পাখিদের পেটে লাইটার থেকে লিপিষ্টিক হেন বস্তু নাই
যা মানুষ যত্রতত্র ফেলছে আর তারা গিলে ফেলছে।
কোটি কোটি র্নিলিপ্ত মানুষ
নষ্ট করছে পরিবেশ, আর দুচারজন ভলান্টিয়ারি করে সাগর তল থেকে তুলে
আনছে টন টন মানুষের ঢেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট। যা ক্ষতি করছে জলজ প্রাণীর জীবন।
কিন্ত প্রতিটি শহর রক্ষা
করার জন্য নানা রকম পদ আছে বেতনের বিনিময়ে যারা কাজ করেন। তারা যদি নিয়ম রক্ষা করে
সঠিক ভাবে কাজ গুলো করতেন। এবং জনসাধারনের সে নিয়ম মেনে দালানকোঠা ড্রেজিং বাধ, রাস্তা তৈরি করার অনুমোদন দিতেন। পরিকল্পিত
ভাবে যদি সব কিছু হতো। সঠিক ভাবে দ্বায়িত পালন করে নিজের জীবনের সাথে প্রকৃতির ভাড়সাম্য রক্ষা করা খুব একটা কঠিন
কাজ নয়। শুধু প্রয়োজন সচেতনতা এবং সততা।
অনিয়মের কারণে যেমন ভেঙ্গে
পরেছিল রানা প্লাজা। তেমন অনিয়ম অনেক কিছুতে। একদম চরম ক্ষতি না হলে আমাদের চোখে পরে
না। যেমন অনিয়মের কারণে ফসল ডুবছে এখন। কিন্তু বহুদিন ধরে এর প্রস্তুতি চলেছে। কেউ
বুঝেনি কতটা ভয়াবহ হতে পারে ফলাফল। এখন চোখে পরছে। তবে এক অঞ্চল বলে অন্য সবাই এড়িয়ে যেতে কুণ্ঠা বোধ করে না। আমার নয় তো ওর এই মনোভাব
বেশী কাজ করে। যখন নিজের উপর আসবে তখন দেখা যাবে।
আসলে এসব না দেখা বা এড়িয়ে
যাওয়ার জন্য কারো দোষ না দিয়ে দোষ দিতে হবে অলপ কিছু মানুষকে যারা সংলিষ্ট দ্বায়িত্বের
সাথে। তাদের এড়িয়ে যাওয়া যে কোন কিছুর দায় ভাড় বহন করতে হবে তাদেরকেই।
নেদারল্যান্ড
জলের নিচের একটি দেশকে মানুষ কি অদ্ভুত সুন্দর ভাবে রক্ষা করে উন্নত জীবন যাপন
করছে। দেখে এলাম কয়েক মাস আগে। বাংলাদেশে এখনই তেমন একটা পরিকল্পনা নেয়া জরুরী মনে
করি। http://www.alokrekha.com
আগে দর্শন ,আলোকিত ব্যক্তিত্ব সাহিত্য ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে লেখা আলোকরেখায় প্রকাশিত হত। অনেক দিন যাবৎ কেবল কবিদের কবিতা প্রকাশিত হচ্ছিল। যেন কবিদের কবিতার খাতা। আমরা আলোকরেখা পড়ি কারণ এর প্রতিশ্রুতি দীপ্ত প্রজ্ঞার অন্বেষণে। আজ "আলো সবার মনে থাকতে হবে" সমাজ সচেতন সম্পর্কে লেখা। লেখক রোকসানা লেইসকে অনেক ধন্যবাদ
ReplyDeleteঅনবদ্য এক লেখা । সচেনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। খুব ভালো লাগলো অন্য রকম লেখা পড়ে। ধন্যবাদ ---রোকসানা লেইস ও আলোকরেখা
ReplyDeleteঅনবদ্য এক লেখা অন্য রকম লেখা । সচেনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। খুব ভালো লাগলো । ধন্যবাদ ---রোকসানা লেইস ও আলোকরেখা
ReplyDelete