আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও -আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও-যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে..আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে..এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও..আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান..তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও 'আমেরিকার দিবস-রজনী' ~ alokrekha আলোক রেখা
1) অতি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না, কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায় -এডওয়ার্ড হল । 2) অবসর জীবন এবং অলসতাময় জীবন দুটো পৃথক জিনিস – বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন । 3) অভাব অভিযোগ এমন একটি সমস্যা যা অন্যের কাছে না বলাই ভালো – পিথাগোরাস । 4) আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও , আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট । 5) আমরা জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না বলে আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না – শিলার । 6) উপার্জনের চেয়ে বিতরণের মাঝেই বেশী সুখ নিহিত – ষ্টিনা। 7) একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি কে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী । 8) একজন দরিদ্র লোক যত বেশী নিশ্চিত , একজন রাজা তত বেশী উদ্বিগ্ন – জন মেরিটন। 9) একজন মহান ব্যাক্তির মতত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যাক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে – কার্লাইন । 10) একজন মহিলা সুন্দর হওয়ার চেয়ে চরিত্রবান হওয়া বেশী প্রয়োজন – লং ফেলো। 11) কাজকে ভালবাসলে কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় – আলফ্রেড মার্শা
  • Pages

    লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে

    'আমেরিকার দিবস-রজনী'



    'আমেরিকার দিবস-রজনী'
    ----নীপা  লায়লা 
    সাংসারিক কিছু দৈনন্দিন কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করতে পারলেই এখানকার জীবন নিঃসন্দেহে অতি সুন্দর, অতি চমৎকার এবং অতি লোভনীয় কিন্তু আমার মতন ষোলআনা খাঁটি বাঙালি একজন মানুষ
    যে কিনা নির্লজ্জের মতন প্রতি পদেপদে নিজের মাটির সাথে পৃথিবীর অন্যসব মাটির তুলনা করতে একবিন্দুও দ্বিধা করেনা তার কাছে এখানকার সুন্দর জীবন মোটেও লোভনীয় নয়।
    বেশী সুন্দর যেমন মানুষের মনকে বিষাদ এবং অতৃপ্তিতে ছেয়ে দেয় এখানকার অতিরিক্ত সুন্দর জীবন আমার কাছে একদম তেমন মনে হচ্ছে। এখানকার মানুষ বড় বেশী শান্ত,বড় বেশী সভ্য।এতো শান্তি আর সভ্যতা তৃতীয় বিশ্বের একজন হাউকাউ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে আদতেই মেনে নেয়া দুষ্কর। আমিও বোধকরি তাই এখানকার সুন্দরতা হজম করতে পারছিনা।
    খুব ভালো করেই জানি গতি এবং ব্যস্ততার নামই জীবন এবং বেঁচে থাকা তবুও এখানকার অতি গতি আর অতি ব্যস্ততা মনকে বিভ্রান্ত করে তোলে। এখানে আকাশ বড্ড বেশী পরিষ্কার, বাতাস বড্ড বেশী বিশুদ্ধ। এখানে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলে বুকের ভেতরে কেমন হিম হিম ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা একরকম অনুভূতি হয়। এই হিম ঠাণ্ডা অনুভূতি মনে করিয়ে দেয় এখানকার বাতাসের বিশুদ্ধতা কিন্তু এতো যে বিশুদ্ধ অক্সিজেনে ভরা বাতাস এখানে তবুও আমি প্রতি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে আমার প্রিয় শহরের বিষাক্ত সীসাযুক্ত গলা টিপে ধরা দম আটকে যাওয়া বাতাসকে খুঁজে বেড়াই।
    সারাদিন বারবার করে ঘরের লাইটগুলির দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবিইশ যদি একবার ইলেক্ট্রিসিটি চলে যেতো,কিন্তু নাহ্,আমার ভাবনাকে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিয়েই মনে হয়,এখানে ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাবার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা। একবারও কলের পানি যায়না এখানে।প্রতিটি বাড়িতে রান্নাঘর থেকে বাথরুম সব জায়গার কলেই গরম-ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা।প্রতিটি বাড়িই সেন্ট্রালি এয়ার-  কন্ডিশড এবং প্রতিটি বাড়িতেই ওয়াইফাই-এর সুবিধা। রাস্তায় যাবার সময় মিনিটে মিনিটে বিভিন্ন দোকানপাট থেকে ফ্রি ও ওপেন ওয়াইফাই এর সিগনাল ফোনে কানেক্ট হয়ে যায় তবে প্রতিটি বাড়ির ওয়াইফাই-ই নিরাপত্তার স্বার্থে গোপন পাসওয়ার্ড দিয়ে সিকিওরড করা।বেশীরভাগ বাড়িতেই ইলেক্ট্রিক চুলায় রান্নার ব্যবস্থা। কিছুকিছু এলাকায় ও কিছুকিছু বাড়িতে অবশ্য লাইনের গ্যাস দিয়েও চুলা জ্বলে তবে কোথাও কোনো অনিয়ম বা ব্যত্যয় নেই।কখনো গ্যাস বা ইলেক্ট্রিসিটির অপ্রতুলতার জন্য এখানে রান্নাবান্না বন্ধ করে রাখতে হয় না।রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এখানে ইলেক্ট্রিসিটি ফ্রি।এতো সুখের জীবন এখানে তবুও বারবার মনে পড়ে গায়ে মাথায় সাবান শ্যাম্পুর ফ্যানা নিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কলের পানি চলে যাওয়ায় অসহায়ের মতন বাথরুমে দাঁড়িয়ে থাকা আমার নিজের ঘরের কথা কিংবা একঘর মেহমান টেবিলে খেতে বসেছে অমনি ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাবার কথা মনে পড়ে মন অস্থির অস্থির করে ওঠে অথবা চুলায় ভাত রান্না চড়েছে আর হঠাৎ খেয়াল করলাম আস্তে আস্তে চুলার গ্যাস কেমন কমে গিয়ে টিমটিম কুপির মতন হয়ে একসময় দপ্ করে নিভে যাবার কথা মনে হয়ে প্রাণ কেমন করে ওঠে আমার।
    এখানকার ডাউনটাউন(আমাদের মতিঝিল কমার্শিয়াল এরিয়ার মতন) ছাড়া বাকি কোনো হাইরাইজ  বাড়ি নেই এবং কোনো ঘরবাড়িতে আমাদের মতন সমান ছাদ নেই। ডাউনটাউনের উঁচু উঁচু দালান-    কোঠা ছাড়া অন্যসব একতলা, দোতলা অথবা তিনতলা বাড়িঘর টালির ছাদ দেয়া একদম ইউরোপ এর মতন। ছবির মতন সাজানো গোছানো এই দেশ। যেমন প্রকৃতি উদার হয়ে দুই হাতে তার সৌন্দর্য দান করেছে তেমনি এখানকার মানুষজন নিজেদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই দেশকে সাজিয়েছে।চোখ জুড়ানো দারুণ সুন্দর দেখতে এখানকার বাড়িঘর,দোকানপাট অফিস,মার্কেট সবকিছু ।এখানে সাধারণত তিনতলার বেশী উঁচু আবাসিক ঘরবাড়ি তৈরি হয় না।
    আমাদের বিল্ডিং কমপ্লেক্সের ভেতরে অনেকগুলি বাড়িঘর কিন্তু আশেপাশে নিঝুম নীরবতা একবারের জন্যেও বলেনা যে এখানে এই কমপ্লেক্সের এতোগুলি বাড়ির ভেতরে নানান দেশের এতো অসংখ্য লোকের বাস।এখানকার ঘরবাড়ি প্রায় সবই কাঠের তৈরি তাও আবার আমার দেশের লোহার মতন শক্তপোক্ত ভারি ভারি কাঠ নয়, একদম সোলার মতন হালকা পাতলা কাঠ, যার এপাশে আঙুল দিয়ে আস্তে করে টোকা দিলেই ওপাশ থেকে একদম স্পষ্ট শোনা যায়।আমাদের পাশের চারটা এ্যাপার্টমেন্ট একদম গায়ে গায়ে লাগানো যেখানে একঘর ভারতীয় পরিবারও বাস করে তবুও আমি এই কদিনে একটি বারের জন্যেও সেখান থেকে কোনো মানুষের শব্দ পাইনি।এ্যার্টমেন্টের এসি চলার শব্দে আর সন্ধ্যার পরে ঘরে ঘরে আলো জ্বলতে দেখলেই কেবল বোঝা যায় যে এখানেও লোকজন বাস করে।নিচে পার্কিং লটে অসংখ্য গাড়ি নিঃশব্দে এসে পার্ক করে নিঃশব্দেই গাড়ির মালিক ঘরে চলে যায়।আমি সকাল বিকাল দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাঁটাচলা করা কথা বলতে থাকা মানুষ খুঁজি কিন্তু বেশীরভাগ সময়ই আমাকে আশাহত হতে হয়।মাঝেমধ্যে কাউকে দেখা যায় ঘরের জমানো আবর্জনা পলিথিনে নিয়ে ট্র্যাশ করতে বেরিয়েছে আর কুকুর বেড়ালকে মলত্যাগ করাতে বের হওয়া মানুষগুলিও কেবলমাত্র নিজেদের পোষা কুকুর বেড়ালের সাথে কথা বলা ছাড়া একদম নির্বাক থাকে।একদিন অবশ্য সামনের লনে এক মেয়েকে দেখেছি কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আরেকদিন দেখলাম দুই বয়স্ক মহিলা নিজেদের গাড়ি স্টার্ট করার আগে যারযার গাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে কিন্তু এইসবই হচ্ছে প্রায় নিঃশব্দে। এতো নিঃশব্দে মানুষ কিভাবে যে চলাফেরা করে তা কে জানে!
    সন্ধ্যার পরে মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি আর বেয়াইন সামনের লনে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। আধঘণ্টা মতন হেঁটে আমার হাঁপ ধরে যাওয়ায় আমি এক লেনের ওপর বসে বসে রাতের আমেরিকা দেখি আর বেয়াইন আমার সামনের লেনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। কালো ফ্রক পড়া এক চাইনিজ মেয়ে পাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ি লক করে গেলো। চারিদিক থেকে অগুনিত এসি চলার শব্দ ছাড়া বাদবাকি দুনিয়াদারি একদম পিনপতন নীরবতায় ছেয়ে আছে।আকাশ ভরা তারার মেলা।মাতাল করে দেয়া হিম হিম বসস্তের ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে।লিলি আর গুচ্ছগোলাপের অচেনা এক বুঁনো বুঁনো ঘ্রাণ বাতাসে ভাসছে।এখানকার রাতের এই অসহ্য সুন্দরতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা কোনো অলিক কল্পনা নয় কিন্তু তবুও আমার এতো সুন্দরের কিচ্ছুই ভালো লাগছেনা। আমার কেবল বৈশাখী গরমে হাঁশফাঁশ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠা প্রিয় ঢাকার নাগরিক ব্যস্ততম জীবনের কথা মনে পড়ে। কি করবো আমি!আমি যে প্রতি ক্ষণেক্ষণে আমার দেশটাকে চোখে হারাই!ঘরে ফিরে যেতে যেতে বারবার করে নিজের মনকে নিজেই বোঝাই- সুখে থাকলেই বাঙালিকে ভূতে কিলায়!
    মনের অহেতুক অস্থিরতা বাদ দিলে সবকিছু মিলিয়ে এখানে আমি বেশ ভালোই আছি!
    ভালো থেকো তোমরা!
    ভালো থেকো প্রিয় বাংলাদেশ!
    তোমাদের জন্য ভালোবাসা!
    প্ল্যানো,টেক্সাস
    ২১শে এপ্রিল '১৭

    (রাতের লিলিফুল)












    http://www.alokrekha.com

    3 comments:

    1. নীপা লায়লার 'আমেরিকার দিবস-রজনী'কি যে ভালো একটা লেখা পড়লাম। দেশের মাটিতে বসে বিদেশের আদল জানতে পারাটা অপূর্ব। আমি আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ নতুন গুণী লেখকের লেখার সাথে পরিচিত করিয়ে দেবার জন্য। লেখককে অনেক শুভেচ্ছা

      ReplyDelete
    2. নীপা লায়লার "আমেরিকার দিবস-রজনী'ভালো একটা লেখা পড়লাম। আপনার লেখায় সহজ জাদু আছে-তা পাঠককে আকৃষ্ট করে। ঠিক ভ্রমণ কাহিনী মনে হয় না যেন গল্প পড়ছি আলোকরেখাকে অনেক সাধুবাদ জানাই গুণী লেখকের সাথে পরিচিত করিয়ে দেবার জন্য। লেখককে অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা

      ReplyDelete
    3. নীপা লায়লার আমেরিকার দিবস-রজনী'সুন্দর প্রতিবিম্বন তার লেখা । অপূর্ব শব্দ ,ভাবাবেগ ও ভাষা ।অনেক ভালোবাসা।

      ReplyDelete

    অনেক অনেক ধন্যবাদ