কাঁদে বিস্তীর্ণ বনভূম
---মেহরাব রহমান
আমি যোগী সন্ন্যাসী
হবো।
বৈরী হাওয়ায় বিবাগী পুরুষ
;
আমি এক গৈরিক বুদ্ধ হবো
।
অন্ধকার কিংবা আলোকরেখার
কাছে
বিনম্র বিনয়ী হবো ।
কারও কারও অন্তর অতলে
উত্তপ্ত লাভা ;
তাই এতো বেদনা,
তাই এক প্রেম দুই হাওয়া;
এক নদী দুই চাওয়া ।
মেঘ জমে জমে, মেঘ জমে জমে
অপূর্ব আকাশ ছাই হয়
প্রতিদিন ।
মানুষেরা কথা শোনেনা,
অন্তর পড়েনা
কী কথা লোকেদের সাথে।
এখন শুদ্ধিকরণের পালা,
এখন পরিবর্তনের সঠিক
সময়।
আমি বধি বৃক্ষের নীচে বসে
দিলকোরান
পড়বো, যীশুর মর্মে দাঁড়িয়ে বাইবেল পাঠ,
আর মসজিদ অথবা মন্দিরে
অবনত চিত্তে ত্রিপিটক পড়বো।
আমি যীশু হবো ;
ক্রুশবিদ্ধ হবোনা,
রক্তে রক্তে প্লাবিত করবোনা
জেরুজালেম, গোলগোথার নির্জন প্রান্তর।
আমি অলৌকিক বাতাস,
অনন্ত যীশু হবো ।
বুদ্ধ,বুদ্ধ আমি অনির্বাণ গৌতম বুদ্ধ হবো ।
এই জপমন্ত্র হবে
হৃদপিণ্ডের অপূর্ব তাবিজ:
'বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি'
সমর্পিত হবো সর্বোত্তম
বুদ্ধিমত্তার কাছে।
বুঝবো কোনটা ন্যায় কোনটা
অন্যায়
'সংঘম শরণম গচ্ছামি '
সমাজের কাছে সমর্পন করবো
আপন সত্ত্বা।
নিজ সুখ বিসর্জনে তুলে
নেবো যন্ত্রণার কাঁটা।
'ধম্মম শরণম গচ্ছামি'
একমাত্র ধর্ম :
মানুষ হবো শুধুই মানুষ।
এই ত্রিবেণী বাণী নিয়ে
চলবো অন্তহীন আকাশলোকে।
আমি অমৃত লালন হবো;
আচানক পাগল হবো ।
নিজেকে চিনবো;
তারপর অচেনাকে ।
আমি অন্তর্লোকের অবিনশ্বর
রবীন্দ্রনাথ হবো ।
অস্থির অজগর গিলে খাচ্ছে
সভ্যতা ।
নষ্ট পোকামাকড়, ভ্রষ্ট সময়
কুরে খাচ্ছে প্রযুক্তির
মগজ ।
পুড়ছে শহর,নগর,বন্দর ।
সুন্দরী পৃথিবীর বন্ধনির
হুক ছিঁড়ে ফেলে
উত্তেজিত সূর্যপুরুষ ;
শাড়ীর আঁচল পোড়ায়
নির্লজ্জ রোদ্দুরে ।
খামচে ধরে নাকের নোলক,
উমুক্ত প্রাঙ্গনে
বস্ত্রহরণ করে,
এরপর দাবানল ধর্ষণ এবং
উন্মাদ নৃত্য ।
সত্যের লেবাস এঁটে ধর্মের
উগ্র মাস্তানরা
রক্তপতাকা উড়ায় ঝুলন্ত
আকাশে।
রাতের সুনসান শান্ত
অন্ধকার কাঁদে
নিরব যন্ত্রণায়।
কাঁদে বিস্তীর্ণ বনভূম,
সাগর,নদী,পাহাড়,
মানবিক মানব এবং প্রকৃতি
।
তাই আমি নিশ্চয়ই ভবের
পাগল হবো ;
লালন হবো ।
অমিয় যীশু হবো
অবশ্যই,অবশ্যই রবি রবীন্দ্রনাথ,
জ্ঞানতাপস গৌতম বুদ্ধ হবো
।
আমি প্রস্তুত;
প্রস্তুত এক নুতন অলৌকিক
যাত্রায় ।
শ্মশানের গনগনে আগুনে
পুড়িয়েছি দীর্ঘ অতীত ।
ছাই ভস্ম সব ডুবিয়েছি
গঙ্গায় ।
উপড়ে ফেলেছি ভবিষৎ ;
ভাসিয়েছি ভেলা নিরুদ্দেশ
যাত্রায় ।
এখন বর্তমানের এক বিন্দুতে
দাঁড়িয়ে
অনুভব করি
আমার আমির ভেতর ঈশ্বর ,
আরাধ্য প্রকৃতি,তুমি,তোমরা ;
সবাই বিশ্ব আমির মধ্যে
একাকার।
আমার গলায় রুদ্রাক্ষের
মালা;
তার প্রতিটি রক্তাভ
প্রকোষ্ঠে লেখা আছে
আমার গুরুর মন্ত্রবাণী;
নানা তারে বাজে,
নানা মূর্ছনায়,
নানা রাগে বাঁধা :
" আলোকের এই
ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও ।
আপনাকে এই লুকিয়ে রাখা
ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও
যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে
আছে ঘুমের জালে
আজ এই সকালে ধীরে ধীরে
তার কপালে
এই অরুণ আলোর সোনার কাঠি
ছুঁইয়ে দাও ।
বিশ্বহৃদয় হতে ধাওয়া
আলোয় পাগল প্রভাত হাওয়া,
সেই হাওয়াতে হৃদয় আমার
নুইয়ে দাও "
আমি অন্তর্লোকের
অন্তর্যামী রবীন্দ্রনাথের
এই অমৃত বাণীর দ্রাক্ষারস
ঢেলে দেব ঈর্ষার উত্তাপে।
যুদ্ধের আয়োজনে দেব
হিমশীতল চিকিৎসা জল ।
আমি শক্তি সঞ্চয় করবো ;
সেই জ্ঞান বৃক্ষ
অনির্বান গৌতম বুদ্ধের
কাছে।
নেভাবো সকল ক্রুদ্ধ
আগুনের লেলীহান শিখা।
আমার নীল ধমনীর প্রতিটি
রক্তকণায়,
যখন নিমগ্ন প্রার্থনা;
তখন দেহের কোনো ভার নাই
বুকের কোনো ব্যাথা নাই
বাতাসে ভাসছি আমি
বাহিরে ঝড় ভেতরে শান্ত
নদী
চলে নিরবধি।
জল পড়ে পাতা নড়ে
জল তরঙ্গ বাজে
টুং টাং
টাং টুং টাং
আরাধ্য আরাধনায় আমি তখন
অবিনশ্বর ঈশ্বর ।
পাঠ করি আমার গহন গহীনে
“বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি”
“ধম্মম শরণম গচ্ছামি”
“সংঘম শরণম গচ্ছামি”
“বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি”
“ধম্মম শরণম গচ্ছামি”
“সংঘম শরণম গচ্ছামি”
“বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি”
“ধম্মম শরণম গচ্ছামি”
“সংঘম শরণম গচ্ছামি”
সূচনা কাল :
২৩ মার্চ ২০১৭
সকাল ৮ টা
প্রকাশ কাল : রাত ১ টা ,৬ এপ্রিল ২০১৭
টরন্টো
কি আধ্যাত্মিকতা আর গভীরতা। দারুণ এই বয়সে এত পরিণত কবিতা । মেহরাব রহমান আমার বরাবরই খুব প্রিয়। আমি তার প্রকাশিত সব কবিতা পড়েছি। এটা পড়া হয় নি। মেহরাব রহমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ।
ReplyDeleteকবিতা যে কাঁদতে পারে এই কবিতা তার প্রমান। আমি অভিভূত। আত্ম শুদ্ধি ও যোগী সন্ন্যাসীর একাত্মতার সাথে মিশ্রিত এক অনুভূতি। কবিকে শতশ্রদ্ধ প্রণাম। আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ।
ReplyDeleteমন্তব্য করার ভাষা নেই মেহরাব। কি করে লিখলে এমন কবিতা ? এই বয়সে এতো অধ্যাত্মবাদ ও যোগ সাধনের অভিব্যক্তি । এতো সহজ নয় ! অনেক শুভ কামনা আর আলোকরেখাকে ধন্যবাদ তোমার এই কবিতাটা পড়ার সুযোগ করে দেবার জন্য।
ReplyDeleteকাঁদে বিস্তীর্ণ বনভূম--অধ্যাত্মবাদ ও যোগ সাধনের উদ্ভাস। এতো সহজ নয় ! অনেক শুভ কামনা- কবি মেহরাব রহমান আর আলোকরেখাকে ধন্যবাদ তোমার এই কবিতাটা পড়ার সুযোগ করে দেবার জন্য।
ReplyDeleteএমন কবিতা ?এতো অধ্যাত্মবাদ ও যোগ সাধন। আমাদের ভাবনা কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না। কবি কি করে এমন কবিতা লিখলেন। অনেক শুভ কামনা কবি মেহরাব রাহমান আর আলোকরেখাকে ধন্যবাদ এই কবিতাটা জন্য।
ReplyDeleteআমার একান্ত প্রিয় কবি মেহরাব রাহমান যেন আমাদের সাথে আমাদের নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর এই অনবদ্য কবিতা "কাঁদে বিস্তীর্ণ বনভূম " দিয়ে! ! আমরা সবাই আলোকিত হলাম আলোকরেখায় এসে ! একটা চমৎকার ভালোলাগা!
ReplyDeleteকাঁদে বিস্তীর্ণ বনভূম --এই জপমন্ত্র হবে হৃদপিণ্ডের অপূর্ব তাবিজ:'বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি''সংঘম শরণম গচ্ছামি''ধম্মম শরণম গচ্ছামি' আমার প্রিয় মন্ত্র -শুভ কামনা কবি মেহরাব রাহমান আর আলোকরেখাকে ধন্যবাদ এই কবিতাটা জন্য।
ReplyDeleteআমার প্রিয় কবি মেহরাব রাহমান-তাঁর "কাঁদে বিস্তীর্ণ বনভূম" অনবদ্য কবিতা !কি আধ্যাত্মিকতা আর গভীরতা। দারুণ পরিণত কবিতা ।মন্তব্য করার ভাষা নেই!আমার প্রিয় কবি মেহরাব রাহমান শুভ কামনা আর আলোকরেখাকে ধন্যবাদ এই কবিতাটা জন্য।
ReplyDelete