কর্কট রোগ মানে"ক্যান্সার"শব্দটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত মৃত্যুভয়!সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশের যুগেও চিকিৎসা-বিজ্ঞান অসহায় ও পরাস্ত এই ঘাতক ব্যাধির কাছে।ক্যান্সার নিক্ষেপ করছে শত লক্ষ হাজার প্রাণ মৃত্যুর অতলকালো গহ্বরে ।
ক্যান্সার রোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। বাস্তবিক অর্থে এই পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের "চিকিৎসা পদ্ধতি"প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে ও এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
ক্যান্সার রোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। বাস্তবিক অর্থে এই পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের "চিকিৎসা পদ্ধতি"প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে ও এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
এখন প্রশ্নে হচ্ছে,কেন ক্যান্সার হয়?ক্যান্সার কি একটি আধুনিক রোগ?এর কোনো বংশগত কারণ আছে কি? এর লক্ষন কি কি ? কত প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতি? পরিবেশ,জীবনযাপন পদ্ধত বা তীব্র মানসিক চাপ-এর সাথে ক্যান্সারের যোগসূত্র কি আছে? এসব বিসয়ে আলকপাতের করার উদেশ্যে আকজের এই লেখা।
আমাদের অনেকের ধারণা এটি একটি আধুনিক রোগ।প্রাচীন মিসর ও প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসকরা 'ক্যান্সারের' উপসর্গ বর্ণনা করে গেছেন।তাছাড়া,প্রায় তিন হাজার বছর আগের মানব জীবাশ্ম থেকে ক্যান্সারের লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন আধুনিক বিজ্ঞানীরা। ক্যান্সার আধুনিক রোগ নয়,এর ইতিহাস মানবজাতির মত সুদীর্ঘ কালের। প্রাচীনকালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না।অনেক তথ্য লিপিবদ্ধও হতো না।তাই বলে এটা মনে করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই যে,সুদূর অতীতের মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো না।
আমাদের অনেকের ধারণা এটি একটি আধুনিক রোগ।প্রাচীন মিসর ও প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসকরা 'ক্যান্সারের' উপসর্গ বর্ণনা করে গেছেন।তাছাড়া,প্রায় তিন হাজার বছর আগের মানব জীবাশ্ম থেকে ক্যান্সারের লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন আধুনিক বিজ্ঞানীরা। ক্যান্সার আধুনিক রোগ নয়,এর ইতিহাস মানবজাতির মত সুদীর্ঘ কালের। প্রাচীনকালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না।অনেক তথ্য লিপিবদ্ধও হতো না।তাই বলে এটা মনে করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই যে,সুদূর অতীতের মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো না।
ক্যান্সারের ইতিহাস
যা-ই হোক, কেন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়? তা জানতে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান চেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। কারণটা জানা গেলে তার প্রতিরোধের
ব্যবস্থাও করা যেত। আমরা শুধু বলতে পারি,কিছু কিছু কারণে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা বাড়ে।
অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত সকল রোগের সমষ্টিই ক্যান্সার নামে পরিচিত। এই রোগে- মৃত্যুর হার অন্য রোগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সাধারণত প্রতি চারজন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এক জন ব্যক্তি মারা যায়।
ক্যান্সার কি বংশগত ভাবে ছড়াতে পারে?ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে পরিবারের কেউ যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন,তবে তার উত্তরসূরিদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কিছুটা হলেও বাড়ে।তবে পিতার ক্যান্সার হলে,পুত্রেরও ক্যান্সার হবে,এমন কোনো কথা নেই।বিরল হলেও,এমন ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে যে, একই পরিবারের বেশ কয়েকজন ক্যান্সার আক্রান্ত।স্তন ক্যান্সারে মা আক্রান্ত হলে,মেয়েরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে।এক্ষেত্রে আশঙ্কা তুলনামূলক ভাবে বেশি।তবে স ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।মোদ্দা কথা, ক্যান্সারের বংশগত বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট নয়।
ক্যান্সার কি বংশগত ভাবে ছড়াতে পারে?ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে পরিবারের কেউ যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন,তবে তার উত্তরসূরিদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কিছুটা হলেও বাড়ে।তবে পিতার ক্যান্সার হলে,পুত্রেরও ক্যান্সার হবে,এমন কোনো কথা নেই।বিরল হলেও,এমন ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে যে, একই পরিবারের বেশ কয়েকজন ক্যান্সার আক্রান্ত।স্তন ক্যান্সারে মা আক্রান্ত হলে,মেয়েরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে।এক্ষেত্রে আশঙ্কা তুলনামূলক ভাবে বেশি।তবে স ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।মোদ্দা কথা, ক্যান্সারের বংশগত বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট নয়।
রাসায়নিক পদার্থের
সাথে ক্যান্সারের অনেক বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, মেসোথেলিওমিয়া-তে (এক ধরনের
দূর্লভ ক্যান্সার, এতে ফুসফুসের চারপাশ এবং পেটের দিকের কোষগুলো আক্রান্ত হয়) আক্রান্তদের
১০ জনের মধ্যে ৯ জনই এসবেস্টস ধাতুর সংস্পর্শে আসার কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন।
সাধারণত জাহাজ তৈরির শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদের এই ধাতুর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। অনেক দেশে এই ধাতুর ব্যবহার নিষিদ্ধ। একইভাবে রঙের কারখানা, রাবার
বা গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত তারা এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার
কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।পরবর্তীতে অনেক দেশে এসব রাসায়নিক পদার্থের
ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে
বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তার
কারণেও বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা (WHO)-র ২০০৮ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, ক্যান্সারে আক্রান্তদের ১৯ শতাংশই
বিরূপ পরিবেশের কারণে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে প্রতিবছর ১৩ লাখ লোক প্রাণ হারান।
হু'র আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণালয় ১০৭টি বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ চিহ্নিত করেছে,
যেগুলো মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।এসবেস্টসের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। স্টিল
কাস্টিং,অ্যালুমিনিয়াম,চামড়ার গুড়া ইত্যাদিও এ তালিকায় আছে। যদি আপনি এসব রাসায়নিক
পদার্থ নিয়ে কাজ করেন বা আপনার পেশার সাথে যদি এসব পদার্থে সংশ্লিষ্টতা থাকে,তবে আপনি
ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, এমন আশঙ্কা বেশি। অতএব সাবধাণতা অবলম্বন করুন। প্রয়োজনে
পেশা পরিবর্তন করুন, বা বাসস্থান পরিবর্তন করুন।
গবেষকরা আমাদের প্রতিদিনের
খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাপন পদ্ধতির সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। ধূমপান ও মদ্যপান ফুস্ফুস,মুখ,কণ্ঠনালী ও যকৃতের ক্যান্সারের কারন হতে পারে।পান-সুপারি,জর্দা,রেডমিট(গরু,ভেড়া,ছাগল ও শূকরের মাংস) বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের সাথেও গভীর যোগসূত্র রয়েছে।যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন তাদের হবার ক্যান্সারের প্রবণতাটা বেশি।আবার ক্যান্সারের
সাথে বয়সেরও একটা সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে।কারণ এই সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে
ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
ক্যান্সার
বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের সমন্বয়ে গঠিত। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়।সাধারণভাবে বলতে গেলে, যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়।একেই টিউমার বলে।টিউমার দুই প্রকার হয়ে থাকে -যেমন বিনাজেম ও ম্যালিগন্যান্ট। বিনাইন টিউমার (ক্যান্সারমুক্ত) একটি পরিমিত টিউমার। একটি ভর কোষ (টিউমার) যা চারপাশের টিস্যু বা মেটাস্টিজাইজ আক্রমণ করে না। যা ক্যান্সার টিউমারের বৈশিষ্ট্য।ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে।অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিয়োপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে এবং সেরকম ক্রিয়াযুক্ত কোষকে নিয়োপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করে না-তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার ও তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়,পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (ভেদকক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিছু বিনাইন টিউমারসদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবশ্যম্ভাবী - এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাত নিরীহ হলেও, বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্টাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র (Lymphatic
System) ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।
benign tumors are non-cancerous
টিউমার মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয়। স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের
সচেতনতা দিনদিন বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা রকম রোগের ভীতি যোগ হচ্ছে।আজকাল অনেকেই ছোট একটি
টিউমার হলেই ক্যান্সার হল ভেবে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।চিকিৎসক বুঝিয়ে বলার
পরও ভয় কাটতে চায় না।আমাদের টিউমার বা ক্যান্সার সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা না থাকার
কারনে অনেক পরীক্ষার পরও ভয় থেকে যায়, রিপোর্টে সঠিক আছে কিনা?
তাই টিউমার বা ক্যান্সার সম্বন্ধে প্রাথমিক কিছু
তথ্য জেনে নি। টিউমার হল শরীরের অস্বাভাবিক টিস্যু পিণ্ড, যার কোষ অতি দ্রুত এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
কোষের ধরন ও আচরণভেদে টিউমার সাধারনত দুই ধরনের হয়ঃ ১.বিনাইন (Benign):
এটি বিপজ্জনক নয়; ২.ম্যালিগনেন্ট (Malignant): এটি বিপজ্জনক টিউমার। ক্যান্সার হচ্ছে এক ধরনের
ম্যালিগনেন্ট টিউমার। অতএব, শরীরে পিণ্ড বা টিউমারের
আচরণ যদি ম্যালিগনেন্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্যের মতো না হয় কিংবা রোগীর যদি
ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণসমূহের কোনটাই না থাকে, তাহলে এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
ক্যান্সারের কারণ
সুনির্দিষ্টভাবে ক্যান্সারের কারণ এখনও জানা যায়নি তবে নানান কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। ক্যান্সার বৃদ্ধির জন্য আমাদের বদলে যাওয়া জীবনযাপন অনেকাংশে দায়ী। উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার, যেমন ফাস্টফুড এবং খাদ্যতালিকায় ফাইবার জাতীয় খাবার কম পরিমাণে থাকার কারনে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত পরিমানে মিষ্টি জাতীয় খাবারের কারনে বয়স্ক ব্যক্তি এমনকি বাচ্চাদের মধ্যেও স্থূলতার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাও ক্যান্সারের একটি বড় কারণ। এ ছাড়াও ধূমপানসহ বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্য গ্রহন এবং পরিবেশ দূষণ ক্যান্সার বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে দায়ী।ক্যান্সারের কারণ ঠিক কি কারণে ক্যান্সার হয় সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।
বয়স সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে, কারণ এ সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের ওপর। ক্যান্সার কি বংশগতভাবে ছড়াতে পারে? হ্যা, ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে
বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে পরিবারের কেউ যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তবে তার
উত্তরসূরিদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খানিকটা হলেও বাড়ে। তবে পিতার ক্যান্সার
হলে, পুত্রেরও ক্যান্সার হবে, এমন কোনো কথা নেই। আবার বিরল হলেও, এমন ঘটনাও ঘটতে দেখা
গেছে যে, পরিবারের বেশ কয়েকজন ভাইবোন একে একে ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেছেন।
মার স্তন ক্যান্সার হলে মেয়েরও
স্তন ক্যান্সার হতে পারে। এক্ষেত্রে আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে বেশি। অবশ্য,স্তন ক্যান্সার
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।মোদ্দা কথা, ক্যান্সারের বংশগত বৈশিষ্ট্য
স্পষ্ট নয়।
রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্যান্সারের
অনেক বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, মেসোথেলিওমিয়া-তে (এক ধরনের দূর্লভ ক্যান্সার,
এতে ফুসফুসের চারপাশ এবং পেটের দিকের কোষগুলো আক্রান্ত হয়) আক্রান্তদের ১০ জনের মধ্যে
৯ জনই এসবেস্টস ধাতুর সংস্পর্শে আসার কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত
জাহাজ তৈরির শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদের এই ধাতুর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাটা বেশি
থাকে। এ কারণেই অনেক দেশে এই ধাতুর ব্যবহার নিষিদ্ধ। একইভাবে রঙের কারখানা, রাবার বা
গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত তারা একধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার
কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে অনেক দেশে এসব রাসায়নিক পদার্থের
ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে
বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তার
কারণেও বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ২০০৮
সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, ক্যান্সারে আক্রান্তদের ১৯ শতাংশই বিরূপ পরিবেশের
কারণে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে প্রতিবছর ১৩ লাখ লোক প্রাণ হারান। হু'র আন্তর্জাতিক
ক্যান্সার গবেষণালয় ১০৭টি বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ চিহ্নিত করেছে, যেগুলো মানবদেহে
ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এসবেস্টসের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। স্টিল কাস্টিং, অ্যালুমিনিয়াম,
চামড়ার গুড়া ইত্যাদিও এ তালিকায় আছে। যদি আপনি এসব রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করেন বা
আপনার পেশার সাথে যদি এসব পদার্থে সংশ্লিষ্টতা থাকে, তবে আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত
হতে পারেন, এমন আশঙ্কা বেশি। অতএব সাবধাণতা অবলম্বন করুন। প্রয়োজনে পেশা পরিবর্তন করুন,
বা বাসস্থান পরিবর্তন করুন।
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস এবং
জীবনযাপনপদ্ধতির সাথেও ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যেমন, ধুমপান
বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং যকৃত বা লিভারের ক্যান্সারের সম্পর্ক
রয়েছে। তেমনিভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও
ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করেন তাদের মধ্যেও ক্যান্সারের
প্রবণতাটা বেশি।
আবার ক্যান্সারের সাথে বয়সের একটা সম্পর্কও
খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার
ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে। কারণ এ সময়ে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
এক হিসেবে দেখা যায় যত মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স
৬০ বছরের ওপর।
খাবার এবং জীবনযাপনের ধারা
খাবার এবং জীবনযাপনের ধারার সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে গবেষকরা। যেমন, ধুমপান বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং যকৃৎ বা লিভারের ক্যান্সারের যোগাযোগ রয়েছে। তেমনই ভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করে তাদের মধ্যেও ক্যান্সারের প্রবণতাটা বেশি।
পারিবারিক ইতিহাস
ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।
পরিবেশ এবং পেশাগত কারণ
রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্যান্সারের অনেক বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, মেসোথেলিওমিয়া-তে (এক ধরনের দূর্লভ ক্যান্সার, এতে ফুসফুসের চারপাশ এবং পেটের দিকের কোষগুলো আক্রান্ত হয়) আক্রান্তদের ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই এসবেস্টস ধাতুর সংস্পর্শে আসার কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত জাহাজ তৈরির শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদের এই ধাতুর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এই কারণেই অনেক দেশে এই ধাতুর ব্যবহার নিষিদ্ধ। একইভাবে রঙের কারখানা, রাবার বা গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত তারা এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে অনেক দেশে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তার কারণেও বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ
· একেক ক্যান্সারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছে:
·
খুব ক্লান্ত বোধ করা
·
ক্ষুধা কমে যাওয়া
·
শরীরের যে কোনজায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া
·
দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙ্গা
·
মলত্যাগে পরিবর্তন আসা (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া)
·
জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
·
অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা
·
অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
·
ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া
তাছাড়া নিম্ন লিখিত লক্ষণগুলো বিশেষ উল্লেখ যোগ্য।
খুসখুস কাশি, ভাঙ্গা কণ্ঠস্বর, সহজে ঘা না শুকালে, স্তনে বা শরীরের কোথাও কোনো চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি হলে, মল ত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন হলে, ঢোক গিলতে কোনরকম অসুবিধা বা হজমে অসুবিধা হলে, তিল কিংবা আচিলের কোনো সূক্ষ পরিবর্তন হলে। সাধারণভাবে এই সাতটি বিপদ সংকেতের কথা সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচার হলে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সারকে অনেকাংশে নির্মূল করা সম্ভব হয় কিন্তু ক্যান্সার সহজে ধরা না পড়ার কারনে, এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। যদিও ক্যান্সার সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকলে এবং একটু সচেতন হলে ক্যান্সার থেকে বেচে থাকা যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে জ্বর ও কাশিঃ ঋতু পরিবর্তনের কারনে, অথবা নানান রকম ভাইরাস জ্বরে আমরা সবাই কম বেশি আক্রান্ত হই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে জ্বরে আক্রান্ত থাকলে এবং জ্বরের সাথে কাশি থাকলে, অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এছাড়াও ঘন ঘন জ্বর উঠাকেও কোনভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। কারন দীর্ঘমেয়াদে জ্বর এবং জ্বরের সাথে কাশি, ব্লাড ক্যান্সার, লিম্ফোমা অথবা লিউকোমিয়ার লক্ষণ। এক্ষেত্রে অতিদ্রুত ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
রক্তপাতঃ কফ অথবা কাশির সাথে রক্ত আসলে এটি ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। প্রস্রাব অথবা পায়খানার সাথে রক্ত বের হলে এটি ব্লাডার ক্যান্সারের কারন হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন থেকে রক্ত বের হলে এটি স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও মহিলাদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অথবা মাসিকের সময় ব্যতিত অন্য কোনো সময়ে রক্তক্ষরণ হলে এটিও ক্যান্সারের লক্ষণ। এইসকল লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
ক্ষুধামন্দা এবং ওজন হ্রাস পাওয়াঃ অনেকসময় আমাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায় অর্থাৎ ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা এটাকে তেমন গুরুত্ত দেই না। আর এসময় আমাদের ওজন যদি হ্রাস পায়, সেটাকেও আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই নেই। ক্ষুধামন্দা এবং ওজন হ্রাস পাওয়া এই দুটোই কিন্তু ক্যান্সারের লক্ষন। তাই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষুধামন্দা হলে এবং ওজন হ্রাস পেলে, অবশ্যই অতি দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।
শরীরে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হলেঃ ঠাণ্ডা লাগলে অথবা অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে প্রায়ই আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা অনুভূত হলে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত মাথা ব্যথা ব্রেইন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়াঃ অনেক বেশি পরিশ্রম করলে অথবা সারাদিন কাজের শেষে ক্লান্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অল্প পরিশ্রমে অথবা খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়লে, অথবা অল্প পরিশ্রমেই দুর্বল হয়ে পড়লে এটি ক্যান্সারের লক্ষন হতে পারে।
চামড়ায় কোন ধরনের পরিবর্তনঃ চামড়ায় ছোট ছোট দানার মত হলে, চামড়ার রঙের কোন পরিবর্তন হলে অথবা কারণ ছাড়াই শরীরের কোন অংশে জখমের মত ক্ষত তৈরি হলে এটি স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও, শরীরের কোনো স্থানের ঘা সহজে না সারলে অথবা শরীরের কোনো স্থানে শক্ত চাকার মত অনুভূত হলে এটিও ক্যান্সারের লক্ষন হতে পারে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে মুখগহ্বর ও ফুসফুসের
ক্যান্সার এবং এগুলি মূলত ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য গ্রহনের ফলে হয়। অপরদিকে
মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয়। বর্তমানে
পিত্তথলির ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অতিরিক্ত এবং প্রায়ই মাথা ব্যথা এবং মেরুদণ্ড ব্যথা হওয়া
মাইগ্রেনের কারণে অনেকেই মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। ঠাণ্ডা লেগেও অনেকের মাথা ব্যথা হয়। কিন্তু একটানা অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য চেকআপ করান। কারণ অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হতে পারে ‘ব্রেইন ক্যান্সারের’ লক্ষণ। আবার একটানা বসে থাকলে পিঠ না মেরুদণ্ড ব্যথা হয় বলে আমরা মেরুদণ্ড ব্যথাকে পাত্তা দেই না। কিন্তু এটিও হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ। সুতরাং অবহেলা না করে চেকআপ করান।
চামড়ার নিচে ফোলা বা দলা ভাব
ক্যান্সারের প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হচ্ছে শরীরের চামড়ার নিচে গুটি গুটি হয়ে ফুলে ওঠা বা দলা পাকানো গোটার মতো অনুভব করা। তবে এই গুটি গুলো বুক বা বুকের আশে পাশে অথবা যৌনাঙ্গে দেখা দিলে ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন হাত, পায়ে দেখা দিলে ভয়ের কিছু নেই।
অস্বাভাবিক রক্তপাত
কফ বা কাশির সাথে রক্ত যাওয়া ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া পস্রাব-পায়খানার সাথে রক্ত পরাও হতে পারে ব্লাডার ক্যান্সারের কারন। স্তন থেকে রক্ত পরা স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ। এইসব লক্ষণ দেখার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
শরীরের চামড়ায় পরিবর্তন
চামড়ায় ছোট ছোট দানা হওয়া কিংবা শরীরের চামড়ার মাঝে মাঝে রঙের পরিবর্তন, কোন কারণ ছাড়াই জখমের মত দাগ হওয়া সবই মেলানোমার লক্ষণ। অর্থাৎ চামড়ার ক্যান্সারের লক্ষণ। এইসব দাগ কিংবা পরিবর্তনের দিকে লক্ষ রাখুন। চামড়ায় কোনো ধরনের পরিবর্তনে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
খুব দ্রুত ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়া
অনেক সময় কাজের ব্যস্ততায় কিংবা কাজের মধ্যে থাকলে আমরা ক্লান্তি বোধ করি। এমনকি মাঝে মাঝেই ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্থ থাকি বলে এই নিয়েই কাজ করি। অনেক সময় বিস্রাম নেয়ার পরও এই ক্লান্তি দূর হয় না বলে আমরা ভাবি আমাদের পরিমিত বিশ্রাম হচ্ছে না। কিন্তু আমরা ভাবতেও পারি না এটিও হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ। সামান্যতেই ক্লান্ত এবং অবসাদবোধ হওয়াকে অবহেলা না করে চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে যান।
ক্যান্সারের চিকিৎসা
ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
অস্ত্রোপচার
যে জায়গাটি ক্যান্সার আক্রান্ত হয় সেটির ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো এবং তার আশেপাশের কোষগুলোকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। ক্যান্সার যদি অল্প একটু জায়গা জুড়ে থাকে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে এ ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়।
রেডিওথেরাপি
নিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরের অংশবিশেষে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে সেই জায়গার কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
কেমোথেরাপি
এই ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক) ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০টিরও বেশি ধরনের কেমিওথেরাপি ওষুধ রয়েছে। এগুলোর কোনকোনটা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সাথে বা অন্য কোনভাবে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেয়া হয়। রক্তের সাথে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যান্সার কোষ রয়েছে সেখানে গিয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে।
হরমোন থেরাপি
শরীরের কিছু হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই চিকিৎসা করা হয়। শরীরের বৃদ্ধির সাথে হরমোনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কোন কোন ক্যান্সার এই হরমোনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। ফলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হয়।
সহায়ক চিকিৎসা
এসব ছাড়া, বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন ক্যান্সারের চিকিৎসায় অব্যর্থ ওষুধ আবিস্কারের। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে এ ধরনের ওষুধ তৈরির ব্যাপারে এখন গবেষণা চলছে। এছাড়াও ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো এগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
ক্যান্সার থেকে বাঁচতে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা ও কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ। গবেষণায় দেখা গেছে যে,এভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমানো যায়।নিয়মিত ব্যায়াম: প্রত্যেক দিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা; যেমন-দৌড়ানো, সাইকেল চালনো, নাচ করা, হাঁটা।
খাদ্যভ্যাস: ধূমপান বা মদ্যপান ছেড়ে দেওয়া বা পরিমাণে কমিয়ে আনা।পান-সুপারি জর্দা,তামাক- পাতা খাওয়া বন্ধ করা। চর্বি জাতীয় পদার্থ কম খাওয়া।সম্ভব হলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া অথবা কমিয়ে দেওয়া। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া।
সচেতনতা: বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন মেখে বের হওয়া। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো। সেটা সম্ভব না-হলে শরীরে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করানো।
ক্যান্সারের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে এখন জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীরা বেশ মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যান, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পরেন। এই কারণে অনেক সময়ে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর না হলেও অনেকে দ্রুত মারা যান। ফলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা এবং উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজও করে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্তদের একটি গ্রুপ গঠন করা, যেখানে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে পারেন। এর পাশাপাশি যোগ, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার শিক্ষা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি মানসিক স্বস্তির জন্য কেউ যদি ধর্মীয় বা সামাজিক কোন কাজে নিয়োজিত হতে চান সে ব্যাপারেও তাদেরকে উৎসাহ দেয়া হয়।
বিশেষ করণীয়:
ক্যান্সারের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে এখন
জোর দিচ্ছেন চিকিত্সকরা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীরা বেশ মানসিক কষ্টের মধ্যে
দিয়ে যান, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পরেন। এ কারণে অনেক সময় তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর
না হলেও অনেকে দ্রুত মারা যান। ফলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করার
পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা এবং উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠন
কাজও করে যাচ্ছে। এর মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তদের গ্রূপের মধ্যে আলোচনা ও মত বিনিময়
করতে দেখা যায় তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেন।পাশাপাশি যোগ,
মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার শিক্ষা দেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি মানসিক স্বস্তির জন্য কেউ যদি ধর্মীয় বা সামাজিক কোনো কাজে নিয়োজিত হতে
চান সে ব্যাপারেও তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া উচিত।
সব থেকে প্রয়োজনীয় পারিবারিক ভালবাসা,স্নেহআদর,মমতা,সমর্থন,মানসিক সহায়তা ও সাহস দেওয়া।
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
ক্যান্সার রোগ অর্থাৎ কর্কট রোগ নিয়ে লেখাটা চমৎকার,তথ্যবহুল শিক্ষাপ্রদ। ক্যান্সার একটি বিশাল সমস্যা আজ বিশ্বময়। এই সময় সানজিদা রুমির এই লেখাটা সত্যি প্রশংসনীয়।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির ক্যান্সার বিষয় লেখাটি দারুন। এটা পড়ার আগে ক্যান্সার সম্বন্ধে কত কিছু জানতাম না। কত রিসার্চ রিসার্চ করতে হয়েছে উনাকে। সানজিদা রুমিকে ধন্নবাদ।
ReplyDeleteক্যান্সারের উপরে লেখাটা খুবি চমৎকার ও তথ্যবহুল।খুব ভাল লাগলো।কিন্তু লেখাটা শব্দ গুলো ফাকা ফাকা সুবিন্যস্ত নয় ।এটা আলকরেখার একটা সমস্যা । শুধু এই লেখাটা নয় ,প্রায় অনেক লেখায় এই অবিন্যস্ততা দেখা যায় । পড়তে সমস্যা না হলেও দৃষ্টি নন্দক নয় । আশা করি এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন ।
ReplyDeleteকর্কট রোগ নিয়ে লেখাটা চমৎকার,তথ্যবহুল শিক্ষাপ্রদ। ক্যান্সার একটি বিশাল সমস্যা আজ বিশ্বময়। এই সময় সানজিদা রুমির এই লেখাটা সত্যি প্রশংসনীয়।
ReplyDelete