অথঃ ক্যান্সার ভাবনা!
- আশরাফ আলী।
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের চারপাশে অর্থনীতির যে বিষয়টা আমরা প্রতিনিয়ত দেখি তা অনুধাবন করতে আমাকে একজন অর্থনীতিবিদ না হলেও চলে।চাহিদা এবং সরবরাহ নির্ধারণ করে অর্থের গতিবিধি !গুলিস্তানের মোড়ে কিংবা সেই আগের ফুলছড়ি ঘাটে সাধারণ ক্রেতার কিংবা দূর যাত্রা পথের যাত্রীদের দুর্দশা সৃষ্টি হলেই হবে আমার সেবার চাহিদা! সাধারণ ক্রেতারা যদি যখন যা প্রয়োজন তা সহজভাবে পেয়ে যায়,
যে যাত্রীদের গন্তব্য অনেকদূরে তাদের যাত্রা যদি ক্লান্তিকর ও দুর্গম না হয় - এবং সেই দুর্দশাগ্রস্থ যাত্রীদের জন্যে সেবা সরবরাহের্ কারণে সৃষ্ট সুযোগে যদি এক শ্রেণীর মানুষের হাতে অর্থ না আসে তাহলে তো সমাজপতিদের মতে অর্থনীতির উন্নতি নির্দেশক কাঁটাটি নিম্নমুখি থেকে যায়!
যে যাত্রীদের গন্তব্য অনেকদূরে তাদের যাত্রা যদি ক্লান্তিকর ও দুর্গম না হয় - এবং সেই দুর্দশাগ্রস্থ যাত্রীদের জন্যে সেবা সরবরাহের্ কারণে সৃষ্ট সুযোগে যদি এক শ্রেণীর মানুষের হাতে অর্থ না আসে তাহলে তো সমাজপতিদের মতে অর্থনীতির উন্নতি নির্দেশক কাঁটাটি নিম্নমুখি থেকে যায়!
আমি Conspiracy Theory এ সম্মন্ধে একটু-আধটু শুনে থাকলেও এই বিষয়টা বিস্তারিত কিছুই জানিনা।তবে বহু বছর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থায় কাজ করার সুবাদে একটা ব্যাপার বেশ পরিষ্কার যে, যে পৃথিবীর মানুষের সমস্ত দুর্দশা ও দুর্ভোগ কে দূর করার জন্যে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে জড়িত সব মানুষ হঠাৎ করেই বেকার হয়ে যাবে যদি এই দুর্দশা এবং দুর্ভোগ প্রলম্বিত না হয়! পৃথিবী জুড়ে খাদ্যাভাব যদি না থাকে এবং ক্ষুধার্থ মানুষ যদি না থাকে তাহলে এই দুঃখ লাঘবের কাজে নিয়োজিত কত লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে যাবে ভেবে দেখুন! এই লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বভাবতই চাইবে না এই খাদ্যাভাব দূর হয়ে যাক আর তারা কর্মহীন হয়ে পড়ুক। প্রতিদিন যখন তারা তাদের কর্মস্থলে যাবে তারা একনিষ্ঠভাবে চেষ্টা করবে যাতে করে এই খাদ্যাভাব প্রলম্বিত হয় ! এভাবেই তারা নিশ্চিত কবে তাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত Job Security.
ঠিক একইভাবে আজ সারা পৃথিবীতে ক্যান্সার এর ওপর গবেষণা এবং চিকিৎসার জন্যে যত তহবিল বরাদ্দ এবং সংগ্রহ হয় তা যেখানে যেখানে খরচ হয় আর যারা এর ফলশ্রুতিতে অর্থশালী হয় বা যাদের চাকুরীর স্থায়ীত্য নিশ্চিত হয় তারা এই ক্যান্সার পরাজিত হোক, নির্মূল হোক তা চাইতেই পারে না !
জীবনের অনেকটা পথ হেঁটে এসে জীবনকে বিভিন্ন কোণ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে বলে এবং মানুষের (নিজের সহ) রোগ-দুর্ভোগ-দুর্দশা নিয়ে যখন ভাবতে বসি তখন একটা চরম সত্য একেবারে নাকের সামনে এসে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে আমার দিকে!ওই সত্যটা হলো এই যে, একমাত্র মানুষই মানুষের সব চেয়ে বেশী ক্ষতি করতে সক্ষম!প্রকৃতির মাঝে যদিও এই সত্যটাই বিরাজ করে।প্রায় সব ক্ষেত্রেই একের অসহায়ত্ব অন্যের জীবন ধরণের অবলম্বন হয় ! যেমন এক (শক্তিশালী) পশু অন্য পশুকে বধ করে তার মাংস খেয়ে নিজে বাঁচে ! কিন্তু আমাদের ধারণা ছিল এই যে মনুষ্য জাতি এই সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্যে উঠতে পারে এবং সেখানেই প্রকৃতিতে তার শ্রেষ্ঠত্ব!এই শ্রেষ্ঠত্ব এই কারণে যে বেঁচে থাকার জন্যে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী মানুষের অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষকে অসহায় অবস্থায় নিয়ে এসে বধ করে তার মাংস খাবার প্রয়োজন হয় না !কিন্তু আজ আমাদের এই পৃথিবীতে চারদিকের অবস্থা দৃষ্টে শ্রেষ্ঠত্বের সেই দাবীটাকে কিছুতেই শক্ত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হিসেবে দেখতে পাইনা !
আমার সাধারণ জ্ঞানে আমি জেনেছি পৃথিবী থেকে শুধু হাতে গোনা কয়েকটি রোগ (যেমন Smallpox ও Typhoid) নির্মূল হয়েছে ! এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না ! এই রোগ বা দুর্ভোগগুলো জিইয়ে রেখে তেমন কোনো অর্থলাভ হচ্ছিলো না বলে এবং ইতিমধ্যে অন্য রোগ,দুর্ভোগ, দুর্দশা অনেকবেশী অর্থকরী হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিল বলে অপেক্ষাকৃত কম অর্থকরী এগুলোকে নির্মূল করে অপেক্ষাকৃত বেশী অর্থকরী কিছতে মনোনিবেশ করা একান্ত যুক্তিযুক্ত হয়ে উঠেছিলো !
তাই আমার পরিবারও এই ক্যান্সার এর শিকার হয়েছে বলে আমি সরাসরি আক্রান্ত একজন হিসেবে এই কথাটা ধারণা করতে পারি যে যেদিন নতুন কোনো রোগ-দুর্ভোগ-দুর্দশা এই ক্যান্সার এর চাইতে বেশী অর্থকরী সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করবে একমাত্র তখনই সমস্ত ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্র, সমস্ত ডাক্তার আর সমস্ত ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানী তাদের ড্রয়ার এ লুকিয়ে রাখা ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত পদ্ধতি ও ঔষধগুলো (যা সম্ভবত অনেক আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে) বের করে এনে ক্যান্সার কে পরাজিত ঘোষণা করে বিপুল উদ্দমে ঝাঁপিয়ে পড়বে নতুন সম্ভাবনাময় নতুন অর্থকরী সেই রোগ-দুর্ভোগ-দুর্দশা নিরসনের যুদ্ধে !
http://www.alokrekha.com
আজ সারা পৃথিবীতে ক্যান্সার এর ওপর গবেষণার জন্য তহবিল বরাদ্দ ওঃ সংগ্রহ করা তা একটা কর্পোরেট বাণিজ্য । যত দিন এই ক্যান্সারের সঠিক চিগিৎসা ও নিরাময় না হয় তত দিন এই ব্যবসা রমরমা।দারুন একটা বিষয়ের উপর লেখার জন্য লেখক আশরাফ আলীকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আলোকরেখার জনপ্রিয়তার কারণ বিভিন্ন সামাজিক ও সাম্প্রতিক লেখা। যা আমাদের প্রনিয়ত মোকাবেলা করতে হয়।
ReplyDeleteক্যান্সার পরাজিত হোক, নির্মূল হোক তা চাই ! এটা খুবই মনকে নাড়া দেবার মত লেখা। অনেক অনেক ধন্যবাদ আলোকরেখাকে এই ধরণের লেখা প্রকাশ করার জন্য। লেখকের গবেষণা করে লেখা যা সমসাময়িক ভীষণ সমস্যা।
ReplyDeleteজ্বী আশরাফ আমি আপনার সাথে একমত
ReplyDeleteআমার বাবাকেও ফুসফুসের ক্যান্সারে প্রাণ দিতে হয়েছে
তবে এখেলা যারা খেলছে তারা নব্য শিল্পপতির দল বর্তমানে তাদের নুতন নাম Neoliberal
ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের ঔষধ আবিষ্কৃত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পশ্চিমা বিশ্বের ঔষধ কোম্পানিগুলো এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলো
বড় অংকের চাঁদা আর মিলবেনা
তাই এই নব্য শিল্পপতিগণ কিছুতেই চায়না এর সমাধান হোক
তারাই জিয়িয়ে রাখছে ক্যান্সার রোগ
একমাত্র সমাধান সমাধান দিতে পারে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যদি তারা পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব মুক্ত হয়ে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে এবং বাজেটের বড়ো একটা অংশ ব্যয় করে ক্যান্সার গবেষণায়
সেই শুভদিনের প্রতীক্ষায় থাকলাম
যেমন Smallpox ও Typhoid) নির্মূল হয়েছে ,আশা করি ক্যান্সারও একদিন সমূলে নির্মূল হবে। এই জোচ্চোরদের হাত থেকে মুক্ত হবে মানব জাতি।লেখক আশরাফ আলীকে অনেক সাধুবাদ এমন এক বিষয়ে লেখা জন্য।
ReplyDelete