আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও -আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও-যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে..আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে..এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও..আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান..তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও চাংমা অর্থাৎ চাকমা উপজাতিতের কাহন- সানজিদা রুমি ~ alokrekha আলোক রেখা
1) অতি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না, কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায় -এডওয়ার্ড হল । 2) অবসর জীবন এবং অলসতাময় জীবন দুটো পৃথক জিনিস – বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন । 3) অভাব অভিযোগ এমন একটি সমস্যা যা অন্যের কাছে না বলাই ভালো – পিথাগোরাস । 4) আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও , আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট । 5) আমরা জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না বলে আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না – শিলার । 6) উপার্জনের চেয়ে বিতরণের মাঝেই বেশী সুখ নিহিত – ষ্টিনা। 7) একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি কে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী । 8) একজন দরিদ্র লোক যত বেশী নিশ্চিত , একজন রাজা তত বেশী উদ্বিগ্ন – জন মেরিটন। 9) একজন মহান ব্যাক্তির মতত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যাক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে – কার্লাইন । 10) একজন মহিলা সুন্দর হওয়ার চেয়ে চরিত্রবান হওয়া বেশী প্রয়োজন – লং ফেলো। 11) কাজকে ভালবাসলে কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় – আলফ্রেড মার্শা
  • Pages

    লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে

    চাংমা অর্থাৎ চাকমা উপজাতিতের কাহন- সানজিদা রুমি


    চাংমা অর্থাৎ চাকমা বাংলাদেশের রাঙামাটি,বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসরত অন্যতম প্রধান উপজাতি।আঠারো শতকের শেষের দিকে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলই নয় বরং আজকের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকা গুলিতেও তাদের বিক্ষিপ্তভাবে তারা অবস্থিত।
    ১৮৬০ সালে সরকার পার্বত্য অঞ্চলের নিম্ন এলাকায় জুমচাষ নিষিদ্ধকরলে চাকমা চাষির ও অন্য পাহাড়ি চাষি যেমন,মারমা সম্প্রদায়ের লোকেরাও পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলে সরে যায়।
     ব্রিটিশ আমলের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের কোনো প্রদেশের অংশ ছিলনা,যদিও উত্তরে ত্রিপুরা,দক্ষিণে আরাকান পশ্চিমে বাংলার বিভিন্ন রাজশক্তির শাসনের কেন্দ্রগুলিতে ক্ষমতার টানাপোড়েনে অঞ্চলটি নানাভাবে প্রভাবিত হয়।আর আদিবাসী মধ্যস্থদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন চাকমা প্রধান,যার নিবাস ছিল কর্ণফুলি নদীর তীরে।চট্টগ্রামের সমতল ভূমিতেও চাকমা প্রধানের বেশ বড় আকারের পারিবারিক ভূ-সম্পত্তি ছিল।তিনি সেখানেই তথা আজকের চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ায় বাস করতে থাকেন।




    মোগল সরকার শুধু সুতার ওপর কিছু শুল্ক ছাড়া তাদের ওপর আর কোনো রাজস্ব আরোপ করত না ও তাদের সম্পুর্ণ স্বায়ত্তশাসনসহ নিজস্ব জীবন-পদ্ধতি অনুসরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ১৭৩৩ সনে চাকমা প্রধান শেরমাস্ত খান চাকলা রাঙ্গুনিয়া এলাকার জন্য জমিদারি সনদ লাভ করেন।এই এলাকাটি পাহাড়ি এলাকা হলেও চাষাবাদযোগ্য ছিল।জমিদার হওয়ায় চাকমা প্রধান সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।পুরাতন স্বায়ত্তশাসন নীতি পরিবর্তন করে উপনিবেশিক সরকার চাকমাদের সরা সুয়া তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেরাঙ্গুনিয়া জমিদারি এলাকায় খাজনা-হার বৃদ্ধি করা হয়।তাদেরকে নগদ অর্থে রাজস্ব প্রদান করতে  বলা হয়।চাকমা রাজা জুয়ানবক্স বর্ধিত খাজনা দিতে অস্বীকার করে।রাঙ্গুনিয়া তালুক কলকাতার এক বেনিয়ার নিকট ইজারা দেওয়া হয়।রাজার খাজনা-মুক্ত এলাকা পুনরায় চালু করা হয়।এসব পদক্ষেপ পাহাড়ি লোকদের সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তারা ১৭৭৬ সালে রাজার দেওয়ান"রানু খানে"র নেতৃত্বে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করে।পাহাড়ি এলাকা থেকে কোম্পানিকে উৎখাত করার জন্য গেরিলা রানু খান"আঘাত কর এবং পালিয়ে যাও" ছিল তাদের যুদ্ধের কৌশল। রানু খান ছিলেন সর্বোচ্চ সামরিক নেতা। তার অধীনে ছিল বেশকিছু কমান্ডার।এই কমান্ডারদের অধীনে ছিল সেনাবাহিনী।এই সেনাবাহিনীর সৈনিকদের বলা হতো পালওয়ান বলা।এদের অধিকাংশ ছিল কুকি সম্প্রদায়ের।সরকারি নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, জুয়ান বক্স ও রানু খান সম্পূর্ণ পাহাড়ি এলাকা ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন করেছিলেন।



    এছাড়া তারা সমগ্র রাঙ্গুনিয়া ও পার্শ্ববর্তী সমতল এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করতে চেষ্টা করেন।চাকমাদের প্রাক্তন জমিদারির অন্তর্ভুক্ত রাঙ্গুনিয়া এলাকাই ছিল তাদের আকস্মিক আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যস্থল।১৭৭৭ থেকে ১৭৮১ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তাদের অধীনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তিনটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান চালানো হয়কিন্তু তাদের দমনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।বিদ্রোহী চাকমাদের দমনে ব্যর্থ সামরিক অভিযানের প্রতিবেদন তুলে ধরে চট্টগ্রামের প্রশাসক গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসকে লেখেন: ‘‘ রান (রানু খান) নামের লোকটি যেহেতু কখনোই তেমন কোনো পদমর্যাদাধারী বা বিবেচনায় নেওয়ার মতো ব্যক্তি ছিলেন না,তাই আশাবাদী ছিলাম তার লোকজনকে ধরা সম্ভব হবে এবং সে সঙ্গে তার অপকৌশল এবং কর্মকান্ডও বন্ধ হবে। কিন্তু এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।লোকটি তার নিয়মিত আস্তানা থেকে পালিয়ে যায়আর তাঁর বিরুদ্ধে পাঠানো ৫০ জন সিপাহি প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। তারা শত্রুদের ধরার জন্য তাড়া করে,যে দুই-তিনটি পাহাড়ি এলাকা এবং গ্রামে তারা লুকিয়েছিল সেগুলি দখল করে পুড়িয়ে ফেলা হয়।কিন্তু তাকে দমন করতে এ সব যথেষ্ট ছিল না।সে আরো প্রচুর সংখ্যক লোক জমায়েত করেপর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও তারা অভিযানরত সিপাহিদের ঝামেলায় ফেলতে সক্ষম হয়।পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন এলারকার গতকাল সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন। বর্তমানে সেখানে ১১৫ জন সিপাহি বিপুল সংখ্যক কুকিদের সঙ্গে লড়াই করছে। রুনো কন (রানু খান)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে আসা এই কুকিরা পাহাড়ের গভীরে বসবাস করেতারা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার জানে নাকাপড়-চোপড়ও পরিধান করে না।


    সিলেট অঞ্চলের মতোই চাকমাদের প্রতিরোধ দমনেও প্রথমে পাহাড়ি লোকদের তাদের নিয়ন্ত্রিত সমতল ভূমির পরগনাগুলি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে মীমাংসার জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেওয়া হয়।কিন্তু চাকমাদের নেতা কোম্পানির সঙ্গে কোনো প্রকার আপোস-মীমাংসায় রাজি না হওয়ায় আরো কঠোর ও অমানবিক কৌশল গ্রহণ করা হয়। তা হলো-শুটকি মাছ,লবণ,মাটি ও লোহার তৈরি তৈজস পত্র,মুদিখানার জিনিসপত্র,মসলা ইত্যাদি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।পাহাড়ি লোক জন এসব দ্রব্যসামগ্রীর জন্য সমতল ভূমির পরগনার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল।তবে এই অবরোধ তেমন সফল হয় নি, কারণ বিদ্রোহীরা ভিন্ন পথে এসব দ্রব্যের বিকল্প সরবরাহের ব্যবস্থা করে নেয়। তারপর সিলেটের দৃষ্টান্ত অনুসরণে চট্টগ্রামের প্রশাসন বিদ্রোহী নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করে।তাদের মধ্যে একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে অন্য পক্ষকে পরাজিত করার উদ্যোগ নেয়।গুপ্তচরের মাধ্যমে চাকমা রাজা জুয়ান বক্সের মনে এমন ধারণা সৃষ্টি করা হয় যে, যুদ্ধের পর রানু খান ধীরে ধীরে আরো শক্তিশালী হবে এবং রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইবে। তাদের এই কৌশল কার্যকর হয়।রানু খানকে না জানিয়ে জুয়ান বক্স সরকারের সঙ্গে গোপনে আলোচনার উদ্যোগ নেন। ফলশ্রুতিতে গভর্নর জেনারেল জুয়ান বক্সকে আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতায় আসার আমন্ত্রণ জানান এবং রাজনৈতিকভাবে এই বিরোধের নিষ্পত্তির আহবান জানান।



    ১৭৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জুয়ান বক্স কলকাতায় যেয়ে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হন।চুক্তিতে কোম্পানি সরকার তাকে পাহাড়ি এলাকার প্রকৃত প্রধান হিসেবে স্বীকার করে নেয় এবং পাহাড়ি এলাকায় স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা প্রদান করে।জুয়ান বক্সকে রাঙ্গুনিয়া পরগনায় জমিদারিও ফিরিয়ে দেওয়া হয় এই শর্তে যে,তিনি কোম্পানি সরকারের জমিদার হিসেবে অন্যান্য জমিদারদের মতো দেশের স্বাভাবিক নিয়মের অধীনে থাকবেন।এর ফলে দীর্ঘ প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রধান সামরিক নেতা রানু খানের সঙ্গে রাজা সম্পর্কচ্ছেদ করেন এবং রানু খান অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তার সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় না।



    আঠারো শতকের মধ্যভাগে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের সমতল ভূমি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে আসার পরও সেখানে তখনকার বিরাজমান ব্যবস্থাই বহাল থাকে। আরও এক শতক পর চট্টগ্রামের (বর্তমান বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের) পাহাড়ি অঞ্চলও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হলে চাকমা উপজাতীয় প্রধানকে পার্বত্য ভূখন্ডের মধ্যাঞ্চলের কর আদায়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। দুই আদিবাসী প্রধানকেও (দক্ষিণাঞ্চলে মগ প্রধান ও উত্তরাঞ্চলে বম প্রধানকে) অনুরূপ দায়িত্ব প্রদান করা হয়। উপনিবেশ কর্তৃপক্ষের একজন প্রথম শ্রেণির মর্যাদাসম্পন্ন  অমাত্য হিসেবে চাকমা প্রধান ‘রাজা’ খেতাব লাভ করে,তাকে পরোক্ষ শাসন পরিচালনার কিছু আনুষ্ঠানিক সুবিধা প্রদান করা হয়।এ সময় চাকমাপ্রধান নতুন পার্বত্য জেলার সদর রাঙ্গামাটিতে চলে যান।ব্রিটিশ এই জেলার নাম দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম।উপনিবেশিক"কর"ব্যবস্থার আওতায় স্থানীয় পর্যায়ের কার্যনির্বাহক কর্মকর্তাদেরকে (তালুকদার, দীউয়ান, খীসা) নতুন নতুন ক্ষমতা প্রদান করা হয়। আর এদের নিয়েই গড়ে ওঠে চাকমা ভদ্রসমাজ। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবিধানের আওতায় এ ব্যবস্থাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয় ও যুগপৎ-এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয় যে,অঞ্চলটি কলকাতা থেকে শাসিত হলেও তা বাংলাদেশের কোনো সাধারণ অঙ্গ নয়। এ অঞ্চলের প্রশাসনিক পদ্ধতি, জমির মালিকানা এবং এখানে বহিরাগতদের বসতি স্থাপনে বাধা প্রদান ইত্যাদি বিষয় অঞ্চলটিকে বাংলার অবশিষ্ট অঞ্চল থেকে একান্তই পৃথক হিসেবে চিহ্নিত করে।



    ১৯৩০-এর দশকে ভারত সরকারের আইনে এ অঞ্চলকে মূলভূমি-বহির্ভূত অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানে যুক্ত হয় এবং এ সুবাদে ১৯৭১-এ তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানাভুক্ত হয়। তবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদা বহাল থাকে। ১৯০০ সালের প্রবিধান কখনও স্পষ্টত বাতিল করা হয় নি, যদিও তাতে ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন পরিবর্তন ঘটানো হয়।এ কারণে, চাকমা প্রধানের পদ আজও অস্তিত্বশীল।১৯০৬ কর্ণফুলি নদীর পানিপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। তবে সেটির বাস্তবায়ন ১৯৫০-এর দশকে এসে সম্ভব হয়।এ সময়ে রাঙ্গামাটির কাছে নদীর তীরবর্তী গ্রাম কাপ্তাইয়ে এক বিরাট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।১৯৬০-এ কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে কর্ণফুলি নদীর উপত্যকা এলাকায় এক বিরাট হ্রদের সৃষ্টি হয় আর তার ফলে বহু গ্রাম জলপ্লাবিত হয়।এর প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় সেখান থেকে চাকমাদের বড়রকমের দেশান্তর বা অন্যত্র গমন যাকে চাকমারা বড় পারাং বলে থাকে।আনুমানিক ১,০০,০০০ লোক কর্ণফুলির এ কৃত্রিম প্লাবনের কারণে অন্যত্র চলে যায়। এদের অধিকাংশই ছিল চাকমা জনগোষ্ঠীর লোক। কাপ্তাই প্রকল্প চাকমা জাতির ইতিহাসে রীতিমতো এক মহা কালবিভাজিকা হয়ে ওঠে।এভাবে স্থানচ্যুত অনেকেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এবং জেলার অন্যত্র বসতি স্থাপন করে। তবে ১৯৬৪ সালে হাজারও চাকমা ভারতে আশ্রয় নেয়। প্রথমে পাকিস্তান আমলে ও পরে বাংলাদেশে চাকমাদের মাঝে এমন ধারণা গড়ে ওঠে যে, তাদের অভাব-অভিযোগের প্রতি কর্তৃপক্ষ আন্তরিক নন।এ থেকেই সূত্রপাত ঘটে।পি.সি.জে.এস.এস বা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিএর সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সংঘাতের।পরবর্তী সময়ে প্রধানত চাকমা নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এক শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে।



    ঐতিহ্যগতভাবে চাকমা জীবনধারা জুম বা জায়গা বদল চাষের সঙ্গে সম্পর্কিত।স্থায়ীভাবে গ্রামের অধিবাসী চাকমারা তাদের আশপাশের পাহাড়ে কয়েক বছরের জন্য জমি চাষ করে, তারপর ওই  জমি তারা ফেলে রাখে পুনরায় উর্বর ও আবাদযোগ্য হয়ে ওঠার অপেক্ষায়।সমতলবাসীদের সঙ্গে চাকমাদের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। প্রাচীন পর্যবেক্ষকদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাষিদের জীবনযাত্রার মান তুলনামূলকভাবে উন্নত ছিল। সেখানে তখন ধান, তুলা ও সবজি উৎপন্ন হতো। বাঁশ অত্যন্ত জরুরি নির্মাণসামগ্রী। অন্যান্য কাজেও বাঁশের ব্যবহার এত বেশি ও বিচিত্র যে চাকমাদের জীবনধারাকে বাঁশের সভ্যতা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। উপনিবেশিক আমলে শিক্ষা লাভ করে ও সরকারি রাজস্বের একটা অংশবিশেষে পুষ্ট হয়ে সেখানকার সমাজ ক্রমেই বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত হয়ে ওঠে ও তাদের মধ্যে একটি অভিজাত শ্রেণির সৃষ্টি হয়। বিশ শতকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাহাড়ি চাষাবাদ সমস্যাগ্রস্ত হয়। এর প্রধান কারণ, তখন থেকে জুমচাষে মধ্যবর্তী যে মেয়াদটিতে জমি স্বাভাবিক কারণে পতিত রাখতে হয় সেটা কমিয়ে আনতে হয়। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চাকমা- দেরকে আরও বেশি করে কৃষি-বহির্ভূত কাজ খুঁজে নিতে হয়। এ সমস্যা সরকারের জনসমষ্টি স্থানান্তরের নীতির কারণে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিক থেকে নিম্নভূমিতে আবাদে অভ্যস্ত হাজার হাজার গরিব বাঙালিকে সামরিক নিরাপত্তায় পার্বত্য চট্টগ্রামে আনা হয়।এতে জমির অভাব আরও তীব্রভাবে বেড়ে যাওয়ায় চাকমা ও অন্যান্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এ ঘটনাটিকে তাদের জীবনধারার জন্য আরও বিপজ্জনক বলে গণ্য করে। এদের অনেকে সস্তাদরের মজুরে পর্যবসিত হতে বাধ্য হয়, অনেকে নতুন রাবার বাগানগুলিতে শ্রমিকের কাজ খুঁজে নেয়। প্রায় ৫০,০০০ চাকমা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় নেয়।সেখানে ১৯৮৬ সাল থেকে তাদেরকে শরণার্থী হিসেবে রেশননির্ভর হয়ে কাটাতে হয়। তাদের এ অবস্থা চলতে থাকে ১৯৯৮ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত।


    চাকমারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের ভাষাগত বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার। যদিও এমন ইঙ্গিত রয়েছে যে, চাকমারা এক ধরনের তিববতি-বর্মি ভাষায় কথা বলত, তবে তাদের বর্তমান ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয়। এখনকার চট্টগ্রামের বাংলা বুলির নির্মিতিগত কাঠামোর সঙ্গে চাকমাদের ভাষার নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়।তবে একান্ত আলাদা ধরনের কিছু শব্দসম্ভারের কারণে চাকমাদের ভাষা চট্টগ্রামের সমতলের বিশেষ ধরনের বাংলা থেকে স্বতন্ত্র। অধিকাংশ চাকমাই দ্বি ভাষিক। চাকমা ও বাংলা ভাষায় তারা কথা বলতে পারে। অনেকে অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাতেও কথা বলতে সক্ষম। চাকমা ভাষার নিজস্ব লিপি থাকলেও এ লিপি আজকাল আর ব্যবহার করা হয় না। চাকমা ভাষা এখন সাধারণত বাংলা লিপিতেই লেখা হয়। গেংখুলি গায়কদের ঐতিহ্যিক কণ্ঠস্থ বুলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাহিত্যপত্র (যার প্রথম সূচনা হয় ১৯৩৬-এ গৈরিকা-র প্রকাশের মাধ্যমে) ও আধুনিক কবিতার মধ্য দিয়ে চাকমা সাহিত্যের ধারা প্রবাহিত। আরও যে একটি আধুনিক শিল্প আঙ্গিকে চাকমারা উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে তা হলো চিত্রাঙ্কন কলা।


    ১৮৬০ সালে সরকার পার্বত্য অঞ্চলের নিম্ন এলাকায় জুমচাষ নিষিদ্ধ করলে চাকমা চাষিরা (আরও অন্যান্য পাহাড়ি চাষি যেমন,মারমা সম্প্রদায়ের লোকেরাও) পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলে সরে যায়। ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম কোনো রাষ্ট্রের অংশ ছিল না,যদিও উত্তরে ত্রিপুরা,দক্ষিণে আরাকান পশ্চিমে বাংলার বিভিন্ন রাজশক্তির শাসনের কেন্দ্রগুলিতে ক্ষমতার টানা পোড়েনে অঞ্চলটি নানাভাবে প্রভাবিত হয়। সতেরো আঠারো শতকে মুগল রাজশক্তি এদের কাছ থেকে স্থানীয় মধ্যস্থদের হাত দিয়ে নজরানা হিসেবে তুলা আদায় করত। আর এসব আদিবাসী মধ্যস্থদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন চাকমা প্রধান, যার নিবাস ছিল কর্ণফুলি নদীর তীরে।চট্টগ্রামের সমতল ভূমিতেও চাকমা প্রধানের বেশ বড় আকারের পারিবারিক ভূ-সম্পত্তি ছিল। সম্পত্তি ছিল মুগল এলাকার অভ্যন্তরে। তিনি সেখানেই তথা আজকের চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ায় বাস করতে থাকেন।চলবে ....................

    সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com

    0 comments:

    Post a Comment

    অনেক অনেক ধন্যবাদ