আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও -আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও-যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে..আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে..এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও..আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান..তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও আমি ক্রীতদাস ----- মেহরাব রহমান ~ alokrekha আলোক রেখা
1) অতি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না, কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায় -এডওয়ার্ড হল । 2) অবসর জীবন এবং অলসতাময় জীবন দুটো পৃথক জিনিস – বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন । 3) অভাব অভিযোগ এমন একটি সমস্যা যা অন্যের কাছে না বলাই ভালো – পিথাগোরাস । 4) আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও , আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট । 5) আমরা জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না বলে আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না – শিলার । 6) উপার্জনের চেয়ে বিতরণের মাঝেই বেশী সুখ নিহিত – ষ্টিনা। 7) একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি কে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী । 8) একজন দরিদ্র লোক যত বেশী নিশ্চিত , একজন রাজা তত বেশী উদ্বিগ্ন – জন মেরিটন। 9) একজন মহান ব্যাক্তির মতত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যাক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে – কার্লাইন । 10) একজন মহিলা সুন্দর হওয়ার চেয়ে চরিত্রবান হওয়া বেশী প্রয়োজন – লং ফেলো। 11) কাজকে ভালবাসলে কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় – আলফ্রেড মার্শা
  • Pages

    লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে

    আমি ক্রীতদাস ----- মেহরাব রহমান

     






    আমি ক্রীতদাস

    মেহরাব রহমান 

    উত্তর গোলার্ধ। ঘন বসতিঅস্থির এক দেশ।
    আমি ক্রীতদাস। বৈরী সময়ের মধ্যে আমার বসবাস।
    কোনো কোনো রাতে,
    রৌদ্রজ্জ্বল  প্রাতেযখন আফ্রিকার প্রগাঢ় জঙ্গলে
    বুনো হাতির পাল ছুটে চলেদলে-দলে।
    আমি কান পেতে শুনি।
    শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি।

    কবিতা  গীত
    মহনীয় সংগীত।
    র‍্যাটেল স্নেইকের করকর শব্দ আদিগন্ত চুমি
    নূপুরের ঘুঙুরিয়া দ্যোতনায় প্লাবি করে বনভুমি
    বিপন্ন  সময় থেকে ঢেউয়ের তোড়ে
    উপচে পড়ে আমার র্পূবপুরুষের কান্নার স্বর। 
    নিঃসীম বেদনায় কেঁপে ওঠে অন্তর

    কালো নেকাবেকালো ওড়নায় ঢাকা ছিল
    আফ্রিকার ঘোর কালো মানুষেরা। সেই কবে এসেছিল
    মানুষ-শিকারির দল। সুকৌশলে বেড়ি পরাল পায়ে। 
    লোহার  হাতকড়া হাতে। অতঃপর নিলাম।
    মানুষ পণ্যমানুষ নামের জীব চড়া দামে
    বিক্রি    আমেরিকায়ল্যাটিন আমেরিকায়,
    ইংল্যান্ডে, দেশান্তরে চাবুকরে  আঘাতে
    জ্বলে পুড়ে সেইসব ক্রীতদাস  মনিবের ইচ্ছা পূরণে সদা
    ছিল ব্যস্ত কর্তার  একান্তে ইচ্ছায় নির্বাসিত   ওদের 
    কামনা,স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা।
    আমিও আমার বন্ধুরা সুযোগ্য উত্তরসূরিরা
    আজও রয়ে গেছি ইথওপিয়ায়ল্যাটিন আমেরিকায়
    আফগানিস্তনেকাশ্মীরেইরাকেভারতেপাকিস্তানে
    বাংলাদেশ এবং তৃতীয় বিশ্বের বিশাল ভূখণ্ড  জুড়ে।

    র্পূবপুরুষরে  কষ্টে আমার হৃদয় পুড়ছে।
    তন্দুরের গনগনে আগুনে পোড়-খাওয়া রুটির মতন।
    কথায় কথায় মহাজনের চাতুরীর মার খেতে খেতে
    আমি ফসল ফলাই উত্তাল সমুদ্র থেকে নানাপদ মাছ ধরি ;
    সুরম্য অট্টালিকা গড়ি। আমি ক্রীতদাস ক্রীতদাসের বংশধর।
    আমি আধপেটা খাই। সন্তারের জন্য যৎসামান্য পাই।
    সিয়ামে, নিরন্তর কাটে দিন। ওরা বলে ভুমিহীন।
    এই দেশেএইখানেএই গোলার্ধে আমার সম্ভ্রম ছিল,
    ভুমি ছিল একদিন।
    সুশীল মানুষেরা শোনোভূমি আমার লুণ্ঠিত আজনই
    আমি ভুমিহীন।

    আফ্রিকার সেই মানুষ-ধরার দলতেমনি আদলসেই চেহারা
    শুধু পালটেছে ভোলএঁটেছে মুখোশ
    বহুমাত্রিক মানুষ-শিকারে আজ দিল খোশ।
    ইহাদের বক্তচক্ষুর পদতলে আমার নিবাস
    আমি এক অত্যাধুনিক  ক্রীতদাস ।
    জ্বলন্ত চাবুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে স্বঘোষিত
    বোধহীন বুদ্ধিজীবী,সামন্তবাদী আমলা,
    ভণ্ড রাজনীতিবিদরক্তচোষা ব্যবসায়ী,
    ধর্মান্ধ ধর্মনেতা এবং মধ্যস্বত্ব লোলুপ দালাল।
    ভীষণ আকাল। সর্বগ্রাসী দাদনের ভারে
    জর্জরিত আমি ক্রীতদাস। আমার সর্বনাশ।
    অন্যদিকে জাতিসংঘের পোষ্য  চামচিকারা
    অস্ত্রবাজযুদ্ধবাজ টনি ব্লে­য়ারবুশের দল
    ভয়ংকর আণবিক চাবুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকে।
    বোমা কিংবা কার্তুজের মতো নিষ্ঠুর জ্বলন্ত
    লাভায় দগ্ধ হয়ে আমার বোনের সুকুমার চোখ গলে
    যায় ইরাকে, আফগানিস্তানে অথবা প্যালেস্টাইনে।
    ভাইয়ের সক্ষম হাত উড়ে যায়মায়ের আর্তনাদে
    পৃথিবী কাঁপে। আমার শিশুর মাথার
    খুলি উড়ে যায় কামানের দোর্দণ্ড গোলার প্রতাপে।
    উহ্বাতাসে তীব্র বারুদরে  ঝাঁজ।
    রৌদ্রদগ্ধ মৃতের গন্ধ পেয়ে
    ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে
    শকুনিরা। খুবলে খায় লাশের
    মাংস  খুলির মগজ।

    আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে
    আমি অসহায় পড়ে থাকি ফুটপাতে,
    শীর্ণ বস্তিতেরেলস্টেশানের নগ্ন প্ল্যাটফর্মে ,
    মহাপৃথিবীআত্মার গভীরতম বোধ থেকে শোনো ;
    আমি ক্রীতদাস এক। আমি তোমাদের নব্য ক্রীতদাস।

    রাত্রি নেমে আসে,
    অসীম অন্ধকারে
    ভয়ংকর ত্রাসে কেঁপে উঠি বারে বারে
    বর্বর মনিবের পদতলে উবু হয়ে পড়ে থাকি 
    সমস্ত বিষণ্ণতা ঢেকে রাখি।
    ক্রীতদাসের উচ্চকতি হাসির শব্দ
    ক্রমশঃ ডুবে যায়।
    রক্তাভ হৃদপিণ্ড চিরে কান্নার মাতম ওঠে হায়হায়!
    মিশে যায় ঘোর কালো অমাবস্যার অশেষ আঁধারে।

     http://www.alokrekha.com



    10 comments:

    1. ফজলে রাব্বিAugust 3, 2017 at 7:57 PM

      "আমি ক্রীতদাস" এই কবিতাটা এতদিন পড়ি নি বলে খুব আফসোস হচ্ছে। এখন নিজেকে বাংলা একাডেমির ডিজি ছিলাম বলে ভাবতে কষ্ট পাচ্ছি। এমন এক বিশ্বমানের কবি মেহরাব রহমান প্রতিভা কেন বাংলা কবিতায় ১০ নম্বরের মধ্যে থাকবে না। এই কবিতাটা বারংবার পড়েছি ,যতবার পড়েছি শিহরিত হয়েছি। আমাদের আদি অনন্তের ধারা ও বর্তমান অনুপম ও দৃঢ় শব্দ ভাষায় অংকিত করেছেন। সানজিদা তোমাকে ধন্যবাদ যে তুমি আমার অজ্ঞতাকে আলোকিত করলে এমন কিংবদন্তি কবির সন্ধান দিয়ে। আলোক রেখায় প্রকাশিত এই অসামান্য কবির সব কবিতায় পড়লাম। আমাকে তাঁর কবিতার বই কোথায় পাবো জানালে কৃতার্থ হব। অনেক শুভাশীষ কবি মেহরাব রহমান !

      ReplyDelete
      Replies



      1. আমার বিনীত শ্রদ্ধা জানবেন ভাই
        আপনার মন্তব্য আমাকে সুখী করেছে
        আমিযে আমার মনের অতলান্তের ভাবনা বা ঝড়
        ওঠাটুকু বোঝাতে পারছি সেটাই আমার তৃপ্তি
        আর কিছু নয় তৃষ্ণা মিটাতে চাই
        কারও ভালো লাগে কারও না
        সব জল তো সকলের তেষ্টা মেটাতে পারেনা
        আপনি আমার বই পাবেন পারিজাত প্রকাশনীর কাছে
        প্রকাশক: শওকত হোসেন লিটু
        ফোন নাম্বার : 01711-906040
        আমার কথা বলবেন
        ওর কাছে আমার অন্য প্রকাশকেরও বই আছে
        গল্পগ্রন্থ , কলাম এবং সম্পাদিত বইও পাবেন
        অনেক কৃতজ্ঞতা

        Delete
    2. আমি ক্রীতদাস ----- মেহরাব রহমান বিশ্বমানের কবিতা।এই কবিতা আমাদের শিহরিত করেছে যতবার। মানুষ পণ্য নিয়ে অনেক কবিতা রচিত হয়েছে । কিন্তু এই কবিতার দৃঢ় বক্তব্যের সাথে প্রতিটি শব্দ যেন হেনরির হাতুড়ি। আমারদের রক্ত ধমনীতে এখনও প্রবাহিত ক্রীতদাস। আলকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ এই অসামান্য কবিতা প্রকাশিত করার জন্য। কবিকে জানাই শুভেচ্ছা! আমাদের আলোচ্য কবিতা হিসাবে এই কবিতা নির্বাচিত হয়েছে।

      ReplyDelete
    3. অনিমেষ রেজাAugust 4, 2017 at 12:45 AM

      আমাদের ক্রীতদাস র্পূবপুরুষ শৃঙ্খলিত কষ্টে পোড়র সাথে তন্দুরের গনগনে আগুনে পোড়-খাওয়া রুটির মতন তুলনা এত নিবিড় ও বাস্তব জা আমাদের বুকটা ন্যাথায় টনটন না করে পারেত না ।আর একখানেই কবির সার্থকতা । মেহরাব রহমান প্রীতিটি উপমা শব্দ বাক্য দিয়ে কবি অনুভব করেছেন এই ক্রীতদাস ব্যথা। হ্যাটস অফ কবি !

      ReplyDelete
    4. পাবলো --শাহবাগAugust 4, 2017 at 1:16 AM

      আমি ক্রীতদাস অনন্য কবিতা নিষ্ঠ।দারুন ও চমৎকার সৃষ্ট কবিতা ।কবি মেহরাব রহমান প্রচণ্ড দৃড়তার অপ্রত্যাশিত ক্রীতদাসের বেদনা প্রকাশ করেছেন। কবি বলছেন তিনিও ক্রীতদাস ।কবির কাছের প্রশ্ন আপনি কি সত্যিই তাদের নিবিড় কষ্ট অনুভব করেছেন ? নাকি এ কেবল কবির ভাবনা ? উত্তর দিলে খুশি হব।

      ReplyDelete
      Replies
      1. ভাই আমি ঈশ্বরের কেরাণী
        তিনি হাসান আমি হাসি
        তিনি কাঁদালে আমি কাঁদি
        আমি ছোটবেলা থেকেই নির্যাতিত মানুষের দুঃখে কেঁদেছি বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়েছে
        আজও যেমন হয়
        আমি তাঁদের প্রতিনিধি
        আর এই রক্তক্ষরণ থেকে কান্নার জলে এ লেখা
        আমার বাবা সম্পন্ন মানুষ ছিলেন কিন্তু আমি তাদের লোক কখনোই হয়ে উঠিনি
        এখন বিশ্বাস অবিশ্বাস আপনার ব্যাপার
        আপনার ভালো লেগেছে
        আপনি জানিয়েছেন তাই আমি কৃতজ্ঞ

        Delete
    5. ডঃ মলয় সেন ,বেহালা, কোলকাতাAugust 4, 2017 at 1:36 AM

      প্রথমেই আমি মেহরাব রহমানের আমি ক্রীতদাস প্রকাশ করার জন্য ,নিলে এমন একখানি কবিতা পড়া থেকে বঞ্চিত হতুম। মেহরাব রহমান কত বড় মাপের কবি এই কবিতা্য তা প্রতফলিত হয়েছে। না পড়লে আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে অসহায় পড়ে থাকে ফুটপাতে,শীর্ণ বস্তিতে, রেল স্টেশানের নগ্ন প্ল্যাটফর্মে আমরা তা দেখি আবার লিখিও ।কিন্তু কবিবর মেহরাব রহমানের মত বলতে পারি না পৃথিবী, আত্মার গভীরতম বোধ থেকে শোনো ;
      আমি ক্রীতদাস এক। আমি তোমাদের নব্য ক্রীতদাস।অনেক ভালোবাসা আর প্রার্থনা ঈশ্বর আপনাকে শক্তি দিন আরও বড় কিছু লেখার। আপনি যেন হতে পারেন এযুগের বৈতরণী।

      ReplyDelete
    6. কৌশিক ও চূর্ণই গাঙ্গুলিAugust 4, 2017 at 1:46 AM

      আলকরেখাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মেহরাব রহমানের আমি ক্রীতদাস প্রকাশ করার জন্য।কবিতাখানি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এ জেন আমি ছায়াছবি দেখতে বসেছি । প্রতিটি পংতি এক একটি শিহরন জাগান দৃশ্য । ছবিঘরে যেমন করে কাঁদি ঠিক চখের জল ঝরিয়েছেন কবি মেহরাব রহমান তাঁর আমি আমি ক্রীতদাস কবিতা পড়িয়ে ।

      ReplyDelete
    7. আমাদের ক্রীতদাস র্পূবপুরুষ শৃঙ্খলিত তন্দুরের গনগনে আগুনে পোড়-খাওয়া রুটির মতন তুলনা এত নিবিড় ও বাস্তব আমাদের বুকটা টনটন না করে পারেত না ।আর একখানেই কবির সার্থকতা । মেহরাব রহমান প্রীতিটি উপমা শব্দ বাক্য দিয়ে কবি অনুভব করেছেন এই ক্রীতদাস ব্যথা।

      ReplyDelete

    অনেক অনেক ধন্যবাদ