সুনীতি দেবনাথ
সুনীতি দেবনাথ সুনীতি দেবনাথের জন্ম ২৮ শে জানুয়ারি, ১৯৪৫; পরাধীন অবিভক্ত ভারতের শ্রীহট্ট জেলার বিয়ানীবাজারের পঞ্চখণ্ডে।ভারত বিভক্তি ও স্বাধীনোত্তরকালে ১৯৫০ সালে উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসেন ত্রিপুরা রাজ্যে। সেই থেকে ত্রিপুরার বাসিন্দা। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে উচ্চশিক্ষার পাঠ শেষ করে তিনি শিক্ষকতা দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করেন। বর্তমানে অবসর নিয়েছেন। এখন পুরোপুরি ভাবে লেখা নিয়েই থাকেন।
থেকে উচ্চশিক্ষার পাঠ শেষ করে তিনি শিক্ষকতা দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করেন। বর্তমানে অবসর নিয়েছেন। এখন পুরোপুরি ভাবে লেখা নিয়েই থাকেন।
অবিভক্ত ভারতে জন্ম লাভ করা ও পাঁচ বছর বয়সে ছিন্নমূল হয়ে যাওয়া তার জীবনে এক গভীর প্রভাব ফেলে। তাই তার কবিতায় বার বার ফিরে ফিরে আসে দেশভাগের কথা।বামপন্থী ভাবধারায় বড় হয়েছেন তাই তার কলম ঝলসে ওঠে শ্রেণী শত্রুদের বিরুদ্ধে,জাতপাতের বিরুদ্ধে,সামজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক। আধুনিক বাংলা কবিতায় সুনীতি দেবনাথ আপন বৈশিষ্ট্যে বীক্ষিত। মানব মনের রহস্যের উন্মোচন এক মৌলিক কবির ব্রত। সমকালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কবি সুনীতি দেবনাথের নীরিক্ষণ মহাকালের বৈশ্বিক বিবর্তন, জীবন জিজ্ঞাসার আণবিক অন্ধকারের বিদ্যুৎ বিভাস, সামুদ্রিক স্বপ্নের ভৌগলিক ইতিহাস, জীবনের যাবতীয় পাওয়া না পাওয়ার সুদকষা তাঁর কবিতার নিত্য নৈর্মিত্তিক বিষয়।কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য সবই লেখেন। এযাবৎ একটি গদ্য ও একটি কবিতার বই বেরিয়েছে। তাঁর কবিতা ও লেখা আলোকরেখায় ক্রমশ প্রকাশিত হবে।
কালপুরুষ – সুনীতি দেবনাথ
কোন্ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছ তুমি
হে কালপুরুষ! কালের অতন্দ্র প্রহরী!
সেজেছো কী অদ্ভুত অলৌকিক সাজে,
তোমার ভয়াবহ প্রস্তুতি কাঁপিয়ে দেয়
আমাকে আমার লৌকিক এই জগতকে,
বিড়ম্বিত অস্তিত্ব নিয়ে আমি রুদ্ধশ্বাস!
নাক্ষত্রিক অত্যুজ্জ্বল দ্যুতি
তোমার চোখে
সারাটা অবয়বে কুচি কুচি কদম্বরেনু
নক্ষত্রের দানা সংখ্যাতীত নক্ষত্র সমাবেশে।
নক্ষত্রের ঢাল হাতে নাক্ষত্রিক তরবারি!
অন্ধকারে আলোর দৃষ্টিতে তবু নিরন্তর
মাটির পৃথিবী দেখো বিস্ময়ের দৃষ্টিতে,
যুগের পর যুগ চেয়েই আছো নিষ্পলক।
এই আমার গ্রহকে ঘিরে বহুকাল আগে
মোলায়েম সুস্নিগ্ধ নরম বাতাস চঞ্চল পায়ে
কেমন ঘুরে ঘুরে ঘুঙুরের মত বাজতো,
সফেন তরঙ্গে সমুদ্র খিলখিল হেসে
আকাশ দেখে ঈর্ষাতুর আক্রোশে ফুঁসে
ভীষণ গর্জনে উদ্বেলিত হয়ে উঠতো।
আজ সবই আছে তবু কিছুই তো নেই,
প্রেম ভুলে মানুষ আজ পাল্লা দিয়ে
আদিম পশুত্বের কাছে দাসত্বের এক
অভিনব খতনামা নির্বিচারে দিচ্ছে সঁপে
অরাজকতার এই বিষম কালে একটা
অনিবার্য যুদ্ধ দামামার ক্ষীণ ধ্বনি
ইথারে ইথারে কেবলই ঘুরছে ভীষণ,
এবার একটা যুদ্ধ হবেই হবে নিশ্চিত।
বিষম এই যুদ্ধে হে কালপুরুষ,
নির্ণিত হবেই পৃথিবীর অনাগত দিনের স্বরলিপি
মানুষ বিবেক মনুষ্যত্বে অধিষ্ঠান করবে
নাকি ধ্বংস হবে সব কিছু পুরোনো সব
মূল্যবোধ বোধোদয়ের প্রাথমিক পাঠ,
অতীতের ছায়াচ্ছন্ন ঐতিহ্যের ইতিহাস,
দর্শনের প্রাজ্ঞবাণীর সুমিত উত্তরাধিকার
আরো সবকিছু সঞ্চিত সভ্যতার সম্পদ,
এই যুদ্ধে স্থির হবে মানুষের পৃথিবীর
উত্তরাধিকারের জয়যাত্রা নাকি বিনাশ।
এই ভয়ঙ্কর ক্রান্তিকালে হে কালপুরুষ!
তোমার অক্ষয় আলোর দুর্দম তরবারি
দাও মানুষের হাতে, শীতল চেতনায়
মস্তিষ্কের কোষে জ্যোতিষ্কের কোলাহল,
ঐ উঁচু দেয়ালটা ভেঙ্গে চুরমার করবে
চৈতন্য পথিক জনতা আত্মাকে চিনে,
রক্তে আন্দোলিত হবে জরাজীর্ণ
সংকীর্ণ সংস্কারের সুউচ্চ মিনার ভাঙ্গার
প্রতিজ্ঞা প্রখর আর অবলুণ্ঠিত আত্মার
পুনরুত্থানের আলোকিত অভিনব পথ।
মানুষ আবার মহামানবাত্মার অভিযানে
উড়াবে জয়পতাকা অসীম সূর্যালোকে,
মহাকাশ থেকে চূর্ণ আলোক কণা কণা
অঝোর ধারায় ঝরে প্রাণের মহাপ্লাবণে
মহাকালের অবাধ স্রোতে আলোড়িত
স্পন্দিত হয়ে চল চঞ্চলতায় হাসবেই।
হে কালপুরুষ, সিঁড়ি ভেঙ্গে স্বপ্নের সেই
পুনরুত্থান দ্রোহের কুচকাওয়াজে
ক্ষুদ্রতা পেরিয়ে যুদ্ধ শেষে পৌঁছে যাবে
মানুষের কলোচ্ছ্বাসে মুখরিত সৈকতে।
http://www.alokrekha.com
সভ্যতার এই ধ্বংসলগ্নে
ReplyDeleteঅসম্ভব শক্তিশালী একটি কবিতা
আমার মন ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে
কবি সাধুবাদ আপনাকে
ধন্যবাদ সানজিদা রুমি
অনেক অনেক ধন্যবাদ কবি। আপনার মত উচ্চ মার্গের কবিদের উৎসাহ পেলে এমন আর আড়ালে থাকা নতুন ও অজ্ঞাত অপরিচিত লেখক ও কবিদের লেখা আলোকরেখায় প্রকাশ করতে পারবে। আবারো ধন্যবাদ কবি মেহরাব রহমান।
Deleteদারুন প্রচেষ্টা! আমরা অনেক অভিনন্দন জানাই! কালপুরুষ কবিতা এ কালের কালপুরুষ!
ReplyDeleteদারুন প্রচেষ্টা! আমরা অনেক অভিনন্দন জানাই! কালপুরুষ কবিতা এ কালের কালপুরুষ!
ReplyDeleteদারুন অনবদ্য দীপ্ত প্রয়াস। আলোকরেখাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ নতুন বা পরিচিতির আড়ালে থাকা স্বগুণ ধন্য লেখক,কবিদের লেখা ও তাঁদের জীবনী প্রকাশ করার জন্য। কালপুরুষ কবিতাটি দুর্দান্ত একখানা কবিতা যা আমাদের অগোচরেই থাকতো এত প্রকাশিত হত না । আজ হৃদপিণ্ড চিরে কান্নার মাতম!এই বলয় ভাঙ্গবে কবে? আসবে কালপুরুষ ?!কবির কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আপনি এমন কবিতা আরো লিখুন ।
ReplyDeleteআলোকরেখা পড়ে কখনও আলোকিত আবার কখনও চমকৃত হই। মাঝে মাঝে তেমন কিছু না পেয়ে হতাশ হই আবার । আলক্নরেখাকে সাধুবাদ জানাই নতুন বা পরিচিতির আড়ালে থাকা স্বগুণ ধন্য লেখক,কবিদের লেখা ও তাঁদের জীবনী প্রকাশ নেবার উদ্যোগকে। কবি সুনীতি দেবনাথের কালপুরুষ –পড়ে আমি সত্যি বিমোহিত। কবিকে অনেক অভিনন্দন
ReplyDeleteআলকরেখাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সুনীতি দেবনাথের কালপুরুষ – প্রকাশ করার জন্য।কবিতাখানি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এই কালপুরুষ কে এই অবক্ষয়ে আমাদের বিশেষ প্রয়োজন । প্রতিটি পংতি এক একটি শিহরন জাগায় । অনেক ধন্যবাদ
ReplyDeleteদিদি,নতুন ও অজ্ঞাত অপরিচিত লেখক,কবিদের লেখা প্রকাশ করা আলোকরেখায়দারুন অনবদ্য দীপ্ত প্রয়াস। আমি অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই আমাদের মত যাদের লেখা খাতার পাতায় রয়ে যায় বা দিস্তা কাগজে বিক্রি হয় পুরনো খবর কাগজের সাথে তাদের নিয়ে ভাবা এবং আলকরেখার মত একটা মঞ্চে আসীন করা। এ পরম পাওয়া। দিদি,কোথায় ও কি ভাবে লেখা পাঠাব জানালে উপকৃত হতাম। অনেক ভালবাসা
ReplyDeleteঅভিনন্দন জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। এ কেবল আলকরেখার একটি প্রয়াস মাত্র। জানি না কতটা উপকার হবে। তবে আপনাদের সহযোগিতা পেলে আশা রাখি ভাল কিছুই হবে। আপনাদের লেখা পাঠানোর ঠিকানা alokrekhaweb.gmail.com অথবা ঠিকানা লেখা পাঠাবার ঠিকানায় পাঠালেও হবে।
DeleteSanjida Rumi, মাননীয়া, আজ নেট সার্চ করতে গিয়ে হঠাৎ আপনার ব্লগ 'আলোকরেখা ' নজরে পড়লো। এতে আমার সম্পর্কে আলোচনা এবং আমার কবিতা 'কালপুরুষ 'উদ্ধৃত ' হয়েছে দেখে আনন্দিত হয়েছি। কিন্তু আলোচনার মধ্যে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে ,সেটি অপ্রাসঙ্গিক। কারণ ছবিটি ভারতের আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলার শিলচর স্টেশনে ভাষা আন্দোলনের শহীদ কমলা ভট্টাচার্যের। এটি বাদ দিয়ে দেবেন। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
ReplyDeleteঅনেক অনেক ধন্যবাদ আমার ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য। আমি ভুল ছবিটি সরিয়ে দিয়েছি। এভাবেই আপনাদের গঠনমূলক সমালোচনা ও মন্তব্য আলোকরেখাকে আরো সমৃদ্ধ করবে। ভালো থাকবেন! অনেক অনেক শুভেচ্ছা !
Deleteধন্যবাদ! এগিয়ে চলুন!
ReplyDeleteআজ আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃত ক্রান্তি কাল। হালতো আমাদের ধরতে হবে। তাই এই ওয়েব সাইট খোলার প্রয়াস। আপনার লেখা এত গুছাল অনবদ্য।প্রাণ ছুঁয়ে যায়।এখানে বরেণ্য অতিথিদের লেখা একটা আলাদা বিষয় আছে। আপনার যে কোন কিছুর ওপর লেখা প্রকাশ করতে পারলে আমার খুব ভাল লাগবে http://www.alokrekh.com/ এর মাত্র ক’ মাস হলো এর জন্ম। এরই মধ্যে বেশ জনপ্ৰিয়তা লাভ করেছে। । কিন্তু পাঠক সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষ ।বিনীত অনুরোধ যদি আলকরেখায়- এ কোন কিছু বিষয়ের ওপর লেখা দিলে আমি ধন্য হব।
ReplyDelete