কবি
অমিতাভ দাশগুপ্ত
–
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত জন্মগ্রহণ
করেন অবিভক্ত
বাংলার ফরিদপুরে।ফরিদপুরে ঈশান স্কুলে
তাঁর শিক্ষা
জীবন শুরু
হয়।
১৯৪৪ সালে
কবিকে কলকাতার
‘টাউন’স্কুলে
ভর্তিকরে দেওয়া
হয়।
১৯৫৩ সালে
তিনি স্কটিশ
চার্চ কলেজ
থেকে আই.এ.পাশকরেন
এবং ১৯৫৪
সালে সিটি
কলেজে ভর্তি
হন।তিনি,কলকাতায়,ক্রিকেটার হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করে ছিলেন।তিনি বরানগর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে কলকাতার ফার্স্ট
ডিভিশন সি.এ.বি.
লীগ ট্যুর্নামেন্টে
ন্যাটা (বাঁহাতি)স্পিনার হিসেবে
খেলেছেন।১৯৫৬ সালে
তিনি রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ে
শিক্ষক হিসেবে
যোগ দেন।তিনি
ভারতের কমিউনিস্ট
পার্টির সদস্যতা গ্রহণ করেন
এবং কারাবরণ
করেন।আজীবন তিনি
এই পার্টিরই
(C. P .I.)সদস্য থেকে গিয়েছিলেন।
দেশ
পত্রিকায় তাঁর
কবিতা সর্বপ্রথম
ছাপা হয়।তিনি
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে
তাঁর শেষ
উপন্যাস “হলুদ নদী' 'সবুজ বন’ লিখতে সাহায্য
করেছিলেন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা এমন ছিল
যে তিনি
নিজে লিখতে
পারছিলেন না।
১৯৫৭
সালে তিনি
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে এম.এ. পাশ
করেনএবং
অনুরাধা দেবীর
সঙ্গে বিবাহ
সূত্রে আবদ্ধ
হন।এরপর তিনি
জলপাইগুড়িতে গিয়ে আনন্দচন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা
শুরু করেন
এবং সেখানকার
চা শ্রমিকদের
বামপন্ঙী আন্দোলনে
যোগদান করতে
উদ্বুদ্ধ করেন।১৯৬৮
সালে আবার
তাঁকে কারাবরণ
করতে হয়।১৯৬৯
সালে তিনি
কলকাতার সেন্ট
পল কলেজে
অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হন এবং
কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র “কালান্তর” পত্রিকার
সম্পাদক মণ্ডলীতে
যোগ দিয়ে
কাজ করা
শুরু করেন। ১৯৮৬
সালে তিনি
“পরিচয়” পত্রিকার
সম্পাদক হিসেবে
নিযুক্ত হন।
তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে একশ প্রেমের কবিতা।মৃত্যুর অধিক খেলা,নীল সরস্বতী,জলে লেখা কবিতার নাম ,সমুদ্র থেকে আকাশ,কাকে ক্ষমা?প্রেম পদাবলী,"মধ্যরাত ছুঁতে আর সাতমাইল স্বনির্বাচিত কবিতা কাছে দূরে কলকাতা কলকাতার মুখ অমিতাভ দাস গুপ্তর শ্রেষ্ঠ কবিতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাত কাহন এসো স্পর্শ করো” ভালো আছো কলকাতা? বারুদ আমাকে সম্পূর্ণ করে নাও,কমলা লেবুর অশ্রু,কবি বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়ের রচিত তাঁর-
বিশেষ কবিতা মুখোমুখি দুই কবি”,“ছিন্নপত্রনয় ছেঁড়াপাতা এতযে পাতাল খুঁড়ছি” প্রভৃতি।
তাঁর অনুদিত কাব্য গ্রন্থের
মধ্যে “মাওসেতুং-এর কবিতা”,উইলিয়াম শেক্সপিয়রের Venusand Adonis.পদ্যের রূপান্তর “ভেনাস
ও অ্যাডোনিস”।শক্তি
চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনুবাদ করেন।স্পেন -এর কবি
Federico GarcíaLorca কবিতা লোরকার কবিতা”।“কবিতা বাসর” ও
“শিলী ন্ধ্র” পত্রিকা তাঁর উপর বিশেষ
সংখ্যা প্রকাশিত
করে।
কবি নিজে
সম্পাদনা করেছেন
“পরিচয়”,“কবিতার পুরুষ”, “সরণি” প্রভৃতি
পত্রিকা।
আজকাল পত্রিকার
তিনি একজন
নিয়মিত কলামিস্ট
ছিলেন।তাঁর কবিতা
সম্বন্ধে ডঃ
শিশিরকুমার দাশ লিখেছেন,“যে বলিষ্ঠ
প্রত্যয় ও
ঋজু ভাষাভঙ্গি
বামপন্থী কাব্য ধারা বৈশিষ্ঠ্য,অমিতাভের কবিতায় তা পূর্ণ
বিকশিত। তাঁর
নিজস্বতা প্রতিমা
নির্মাণের সৌন্দর্যে।”বিভিন্ন সময়ে
এই কবি
বিবিধ সম্মান
ও পুরস্কারেভূষিতহয়েছেন। আকাশবাণীর
সুবর্ণ জয়ন্তীর জাতীয় কবি
সম্মেলনে,তিনি নির্বাচিত কবি হিসেবে
পশ্চিমবঙ্গকে প্রতিনিধিত্ব করে ছিলেন।১৯৭৯
সালে কবিতার
উত্কর্ষের জন্য ভূষিত হয়ে ছিলেন নক্ষত্র
পুরস্কার এবং
প্রসাদ পুরস্কারে। ১৯৮৩
সালে তিনি
নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন পূর্ব জার্মান সরকার
দ্বারা অনুষ্ঠিত
জার্মান কবি
গেটে-র
জন্ম জয়ন্তীতে,
কিন্ত ব্যক্তিগত
কারণ বশতঃ সেখানে
তাঁর যাওয়া
হয়ে ওঠে
নি।
১৯৮৯ সালে
ইন্দো-সোভিয়েত
কবি সম্মেলনে
ভারতের প্রতিনিধি
হিসেবে যোগদান
করেছিলেন।
১৯৯২ সালে
যোগ দেন
সার্ক (সাউথ
এশিয়ান এসোসিয়েশন
ফর রিজিওনাল
কোঅপারেশন) কবি সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি
হয়ে।
১৫ই অগাস্ট
১৯৯৪ তে
বাবরী মসজিদ
ধ্বংসের বিরুদ্ধে
অযোদ্ধায় গিয়ে
কবি তাঁর
কবিতা পাঠ
করে এসেছিলেন। “আমার
নীরবতা আমার
ভাষা”কাব্যগ্রন্থের
জন্য ১৯৯৯
সালে পেয়েছেন
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার।
আমার নাম ভারতবর্ষ –
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত
স্টেন
গানের বুলেটে
বুলেটে
আমার
ঝাঁঝরা বুকের
উপরে ফুটে
উঠেছে যে
মানচিত্র—
তার
নাম ভারতবর্ষ।
আমার
প্রতিটি রক্তের
ফোঁটা দিয়ে
চা-বাগিচায় কফি
খেতে,
কয়লা-খাদানে, পাহাড়ে-অরণ্যে
লেখা
হয়েছে যে
ভালোবাসা—
তার
নাম ভারতবর্ষ।
আমার
অশ্রুর জলসেচে
আর হাড়ের
ফসফেট-এ
খুনীর
চেয়েও রুক্ষ
কঠোর মাটিতে
বোনা
হয়েছে যে-অন্তহীন ধান
ও গানের
স্বপ্ন—
তার
নাম ভারতবর্ষ।
আমার
ঠাণ্ডা মুখের
ওপর
এখন
গাঢ় হয়ে
জমে আছে
ভাক্
রা নাঙ্গালের
পাথুরে বাঁধের
গমেভীর ছায়া।
ডিগবয়ের
বুক থেকে
মায়ের
দুধের মত
উঠে আসা
তোলো ভেসে
যাচ্ছে
আমার
সারা শরীর।
কপাল
থেকে দাঙ্গার
রক্ত মুছে
ফেলে
আমাকে
বুকে ক’রে তুলে
নিতে এসেছে
আমেদাবাদের
সুতোকলের জঙ্গী
মজুর।
আমার
মৃতদেহের পাহারাদার
আজ
প্রতিটি
হাল বহনকারী
বলরাম।
প্রতিটি
ধর্ষিতা আদিবাসী
যুবতীর
শোক
নয় ক্রোধের
আগুনে
দাউ
দাউ জ্বলে
যাচ্ছে আমার
শেষ শয্যা।
ভরাট
গর্ভের মত
আকাশে
আকাশে কেঁপে
উঠছে মেঘ।
বৃষ্টি
আসবে।
ঘাতকের
স্টেনগান আর
আমার মাঝবরাবর
ঝরে
যাবে বরফ-গলা গঙ্গোত্রী।
আর
একটু পরেই
প্রতিটি মরা
খাল-বিল-পুকুর
কানায়
কানায় ভরে
উঠবে আমার
মায়ের চোখের
মত।
প্রতিটি
পাথর ঢেকে
যাবে উদ্ভিদের
সবুদ চুম্বনে।
ওড়িশির
ছন্দে ভারতনাট্যমের
মুদ্রায়
সাঁওতালী
মাদলে আর
ভাঙরার আলোড়নে
জেগে
উঠবে তুমুল
উত্সবের রাত।
সেই
রাতে
সেই
তারায় ফেটে
পরা মেহফিলের
রাতে
তোমরা
ভুলে যেও
না আমাকে
যার
ছেঁড়া হাত,
ফাঁসা জঠর,
উপড়ে আনা
কল্ জে,
ফোঁটা
ফোঁটা অশ্রু,
রক্ত, ঘাম
মাইল-মাইল অভিমান
আর ভালোবাসার
নাম
স্বদেশ
স্বাধীনতা
ভারতবর্ষ॥
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
http://www.alokrekha.com
কবি কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত কে নিয়ে সানজিদা রুমির লেখাটি পড়লাম ,
ReplyDeleteবরাবরের মতো এবার অনেক লেখাপড়া আর রিসার্চ করে লিখেছেন।
চমত্কার লাগলো ,অনেককিছু শিখলাম। সানজিদা রুমিকে ধন্নবাদ।
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত ও তার লেখা নিয়ে এতো কিছু জানতাম না।
ReplyDeleteলেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। সানজিদা রুমির লেখা গুলো এতো informative থাকে যে পড়লে একটা feeling of completeness অনুভব করি।
সানজিদা রুমিকে ধন্নবাদ
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত কে নিয়ে এতো বিস্তারিত
ReplyDeleteজানতাম না। লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো।
সানজিদাকে ধন্নবাদ। শুভেচ্ছা রইলো
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত ও তাকে নিয়ে বিশাল ,বিশদ ,বিস্তারিত লেখাটি পড়লাম। অনেক জানলাম। সানজিদা রুমিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা
ReplyDeleteকবি অমিতাভ দাশগুপ্ত ও সানজিদা রুমি কর্তৃক
ReplyDeleteগৃহীত লেখাটি পড়ে মনে হলো এই জন্নই আলোকরেখাকে
এতো ভালো লাগে। অনেক ধন্নবাদ
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত কে নিয়ে প্রবন্ধ ,very ineresting.Thanks to
ReplyDeletealokrekh
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত কে নিয়ে এতো বিস্তারিত জানতাম না। লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। সানজিদাকে ধন্নবাদ। শুভেচ্ছা রইলো
ReplyDeleteকবি কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত কে নিয়ে সানজিদা রুমির লেখাটি পড়লাম , বরাবরের মতো এবার অনেক লেখাপড়া আর রিসার্চ করে লিখেছেন। চমত্কার লাগলো ,অনেককিছু শিখলাম।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো অনেক অজানা কথা জানার জন্য। তাই আলোকরেখা আমাদের এতো প্রিয়
ReplyDelete