প্রভু!মেটে নি কি সাধ?আর-কিছু
চাও?এই সুললিত সুগঠিত নবনী কোমল সৌন্দর্যের যত গন্ধ যত মধু ছিল সকলি দিয়েছি!আর-কিছু বাকি আছে? আমার যা কিছু ছিল-ভালো হোক!মন্দ হোক!সব হয়ে গেছে শেষ? প্রভু!আরো কিছুই নেই কি বাকি?
এ সৌন্দর্য-পুষ্পরাশি চরণকমলে নন্দনকানন হতে তুলে নিয়ে এসে বহু সাধনায় করেছি নিবেদন।যদি রিক্ত হল পূজা তবে আজ্ঞা করো প্রভু!নির্মাল্যের ডালি ফেলে দিই মন্দির বাইরে।
এ সৌন্দর্য-পুষ্পরাশি চরণকমলে নন্দনকানন হতে তুলে নিয়ে এসে বহু সাধনায় করেছি নিবেদন।যদি রিক্ত হল পূজা তবে আজ্ঞা করো প্রভু!নির্মাল্যের ডালি ফেলে দিই মন্দির বাইরে।
যে ফুলে করেছি পূজা।নই আমি কভু সে ফুলের মত প্রভু!এত সুমধুর,এত সুকোমল,এত সম্পূর্ণ সুন্দর দোষ আছে,গুণ আছে,পাপ আছে,পুণ্য আছে,কত দৈন্য আছে,আছে আজন্মের কত অতৃপ্ত পিয়াষা- সংসার পথের পান্থ,ধূলিলিপ্তবাস,বিক্ষতচরণ।কোথায় পাবো কুসুম লাবণ্য,দুদণ্ডের জীবনের অকলঙ্ক শোভা? কিন্তু আছে অক্ষয় অমর এক
রমণীহৃদয়।দুঃখ-সুখ আশা-ভয় লজ্জা-দুর্বলতা,ধূলিময়ী ধরণীর কোলের সন্তান তার কত ভ্রান্তি,তার কত ব্যথা,তার কত ভালোবাসা,মিশ্রিত জড়িত হয়ে আছে এক সাথে।অাছে এক সীমাহীন অপূর্ণতা,অনন্তমহৎ। কুসুমের সৌরভ মিলায়ে থাকে যদি এইবার প্রসন্ন নয়নে সেই জন্মজন্মান্তের সেবিকার পানে চাও।
হয়তো পড়বে
মনে সেই একদিন সেই সরোবরতীরে,শিবালয়ে,দেখা দিয়েছিল এক নারী চিত্রাঙ্গদা! বহু আবরণে ভারাক্রান্ত করেছিল তার
রূপহীন তনু।কী জানি কী বলেছিল নির্লজ্জ মুখরা। করেছিল পুরুষ প্রথায়
আরাধনা প্রত্যাখ্যান করেছিলে তারে।ভালোই করেছ।সামান্য সে নারীরূপে
গ্রহণ করতে যদি তারে।অনুতাপ বিঁধতো তার বুকে আমরণ কাল।তারপরে পেয়েছিল বসন্তের বরে বর্ষকাল
অপরূপ রূপ।দিয়েছিল শ্রান্ত
করে বীর অর্জুনের হৃদয় ছলনার ভারে।সে চিত্রাঙ্গদা!রাজেন্দ্রনন্দিনী
!
প্রভু আমি সেই নারী নই!নই চিত্রাঙ্গদা!নই আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী!
ভক্তি সাধিকা মিরা বাঈ আরাধনায় কৃপালাভ করেছিল পরমমপতি কৃষ্ণকে।কৃষ্ণ প্রেমে পার করেছিল জীবন পরম কৃষ্ণ-ভক্ত
মীরাবাঈ।মীরা একজন রাজপুত রাজকুমারী।তাঁর পিতা ছিলেন যোধপুর শহরের প্রতিষ্ঠাতা
মান্দোরের রাও যোধার পুত্র তথা রাঠোর
বংশীয় যোদ্ধা রতন সিংহ রাঠোর।রাজ কুমারী মীরা এক পরিব্রাজক সন্ন্যাসীর দ্বারা
আরাধিত কৃষ্ণর বিগ্রহের প্রতি আকৃষ্ট হয়।কিশোরী কাঁচা বয়সেই প্রেম-ভক্তির উতপত্তি।তাইত বিগ্রহটি
নিজের কাছে রেখেছিলেন।শৈশবেই চিতোর-রাজ রানা প্রতাপ সিংহ জ্যেষ্ঠ পুত্র ভোজ রাজের সাথে
মীরার বিয়ের হয়।মীরা
প্রকৃতই শ্রীকৃষ্ণের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এবং শ্রী কৃষ্ণই হলেন তার
একমাত্র প্রভু।শ্বশুরবাড়ীর লোকজন তার ঈশ্বর ভক্তি নিয়ে অনেক গঞ্জনা সয়েও কৃষ্ণ
প্রেম-আবেগ আর ভালবাসাই সব্কিছু।কৃষ্ণপ্রেমে মত্ত মীরা শহরের অলি-গলিতে কৃষ্ণের
প্রেম-কথা নেচে গেয়ে বলে বেড়াত। তার দেবর ও চিতোরগড়ের নতুন শাসক বিক্রমাদিত্য
মীরা'র
কৃষ্ণ ভক্তিকে লজ্জাহীনতা বলে কতবার বিষ দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছে। ভালবাসার এই কণ্টকময় পথে ননদ উদাবাঈ মীরাবাঈ'র দূর্নাম রটায়।এমনকি বানারাসিতে মীরা'র সাথী ভক্ত কবীরের সাথে ঘনিষ্ঠতা সামাজিকভাবে
প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল।কোন কিছুই পারেনি মীরাকে আটকে রাখতে।তুমিও কি পেরেছিলে প্রভু
?কেউ পারেনি।কৃষ্ণনাম
করতে করতে চলে যায় মীরাবাঈ বৃন্দাবনে।তিনি যে,পূর্বজন্মে কৃষ্ণ প্রেমে পাগল গোপী ললিতাবারাই বিনোদিনী ছিলেন।মীরাবাঈ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র পরমপ্রেম প্রভু শ্রীকৃষ্ণ।সেই শক্তিতেই
সন্ন্যাসব্রত ও নৃত্যসহযোগে উত্তর
ভারতের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে বেড়াতে লাগল।।শেষ বারের মত সন্ন্যাসীনি হয়ে গুজরাটের
দ্বারকায় মীরাকে দেখা গিয়েছিল তারপর মীরাবাঈ বিলিন হয়ে গেল প্রভুর প্রেমে।রেখে
গেছে তার প্রেম ভক্তি কীর্তি।সে হার মানেনি।সেতো লেগেই রইলো তার ভালোবাসার সাথে।আর এই লেগে থাকাই বেঁচে থাকাই প্রেম-- ভক্তি ও ভালোবাসায়।মীরাবাঈও তো আমারই মতই নারী ছিল।
তবু আমি সেই নারী নই
-সেই নারীর মতই হীন ছদ্মবেশ।দেবী নহি, নহি আমি সামান্যা রমণী।পূজা করি রাখিব মাথায় সে ভক্তি আমার কই
? প্রভু! অবহেলা করি পুষিয়া
রাখিবে পিছে সেও ক্ষমতা নেই। আমিও বেঁচে আছি আমার ভালোবাসার মাঝেই এটুকু আমার
ক্ষমতা। দুরূহ চিন্তার সংকটের পথে
পার্শ্বে রেখে অন্তরে ধরেছি তোমায়।
তবে,যদি
অনুমতি কর কঠিন ব্রতের তব প্রয়নী হতে,মোরে যদি অংশ দাও,যদি সুখে দুঃখে!মোরে কর সহচরী,আমার পাইবেতবে পরিচয়।তোমার আরাধনায় নিজেরে আজন্ম উৎসর্গ করে দ্বিতীয় মিরাবাঈ হব তব চরণে—তখন জানিবে মোরে
প্রিয়তম।হে আমার প্রভু !
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
সান জিদা রুমির লেখা বরাবরই অন্য ধাঁচের।যা মন মননের প্রজ্ঞা দান করে। প্রেমের এই আকিঞ্চন সত্যিই প্রশংসার দাবীদার । অনেক ভালবাশা ও শুভকামনা আরও ভাল লিখুন।মেখলা স্যান্নাল
ReplyDelete"যদি অনুমতি কর কঠিন ব্রতের তব প্রয়নী হতে,মোরে যদি অংশ দাও,যদি সুখে দুঃখে!মোরে কর সহচরী,আমার পাইবেতবে পরিচয়।তোমার আরাধনায় নিজেরে আজন্ম উৎসর্গ করে দ্বিতীয় মিরাবাঈ হব তব চরণে—তখন জানিবে মোরে প্রিয়তম।হে আমার প্রভু !" সান জিদা রুমির লেখাই এই বিশেষত্ব দান করে। প্রেমের এই আত্মকথা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার । অনেক শুভকামনা আরও ভাল লিখুন।
ReplyDeleteমীরাবাঈ বিলিন হয়ে গেল প্রভুর প্রেমে।রেখে গেছে তার প্রেম ভক্তি কীর্তি।সে হার মানেনি।সেতো লেগেই রইলো তার ভালোবাসার সাথে।আর এই লেগে থাকাই বেঁচে থাকাই প্রেম-- ভক্তি ও ভালোবাসায়।
ReplyDeleteঅনেক ভালো লাগলো
ReplyDeleteশক্তিশালী বুনন
সই পড়তে পড়তে তোর মুখখানা ছোঁয়ে দিতে মন চাইছে... অসাধারন লেখা৷
ReplyDelete