কৃষ্ণা
সব্যসাচী দেব
আমার
কোন শোক নেই, আমার
কোন বিষাদ নেই।
হে কুরুবৃদ্ধগণ, আপনাদের নীরবতায় আমার কোন ক্ষোভ নেই
হে কুরুবৃদ্ধগণ, আপনাদের নীরবতায় আমার কোন ক্ষোভ নেই
পিতামহ
ভীষ্ম, ক্ষমা করবেন,
আপনাকে প্রণতি জানাবার স্থিরতা আজ নেই।
আর কর্ণ, তোমার জন্য ঘৃণাও বড় বেশি মনে হয়।
আপনাকে প্রণতি জানাবার স্থিরতা আজ নেই।
আর কর্ণ, তোমার জন্য ঘৃণাও বড় বেশি মনে হয়।
আর হে আমার পঞ্চস্বামী,
আর্যাবর্ত বিজয়ী বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুন,
শক্তিমান ভীম, নকুল, সহদেব আর আপনি ধর্মপুত্র-
আপনারা আমার কৃতজ্ঞ অভিবাদন গ্রহণ করুন।
আমি সর্বজ্ঞা নই। যজ্ঞভূমের অগ্নি থেকে আমার জন্ম,
ধর্মাধর্মের ক্ষুরধার পথ আমার অজানিত;
শক্তিমান ভীম, নকুল, সহদেব আর আপনি ধর্মপুত্র-
আপনারা আমার কৃতজ্ঞ অভিবাদন গ্রহণ করুন।
আমি সর্বজ্ঞা নই। যজ্ঞভূমের অগ্নি থেকে আমার জন্ম,
ধর্মাধর্মের ক্ষুরধার পথ আমার অজানিত;
আর্যপুত্র, আপনার বিচার তাই আমার পক্ষে
ধৃষ্টতা।
আপনার কোন বিচলন নেই, আপনার ধর্ম আপনাকে
রক্ষা করেছে বিকার থেকে- কৃতজ্ঞতা জানান সেই ধর্মকে!
ভীমসেন, তোমাকে আমি ভালবাসা দিই নি কখনও,
তাই তা ফিরেও চাইনি।
আপনার কোন বিচলন নেই, আপনার ধর্ম আপনাকে
রক্ষা করেছে বিকার থেকে- কৃতজ্ঞতা জানান সেই ধর্মকে!
ভীমসেন, তোমাকে আমি ভালবাসা দিই নি কখনও,
তাই তা ফিরেও চাইনি।
শুধু তোমাকে আমার জিজ্ঞাসা ছিল
ফাল্গুনী,
উর্ধ্বচারী মৎস্যের ছায়ালীন চোখের থেকেও দুর্লক্ষ্য কি
দুর্যোধনের বুক; বল সত্য করে, প্রেম নয়,
শুধু পৌরুষের আস্ফালনই ছিল পাঞ্চালী বিজয়ের পটভূমি!
দুর্যোধনের বুক; বল সত্য করে, প্রেম নয়,
শুধু পৌরুষের আস্ফালনই ছিল পাঞ্চালী বিজয়ের পটভূমি!
কিন্তু
মিথ্যা প্রশ্ন; আমি জানি তোমার
কোন
উত্তর নেই, যেমন নেই কোন ভালবাসা।
উত্তর নেই, যেমন নেই কোন ভালবাসা।
তোমার
শুধু আশা আছে; কৈশোর
থেকে তুমি
জেনে এসেছ বীরভোগ্যা পৃথিবী আর রূপমুগ্ধা নারী;
জেনেছ একদিন ধার্তরাষ্ট্রের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে হবে
কৌরব-উত্তরাধিকার; জেনে এসেছ যেখানে যা কিছু সর্বোত্তম
সেখানেই পৌঁছতে হবে তোমাকে। শুধু এই কুমারী-লক্ষ্যের
দিকেই তোমার দৃষ্টি, ধনঞ্জয়। তাই অনায়াসে তুমি সরে যাও
এক নারী থেকে অন্য রমণীতে; তোমার পূর্বপুরুষেরা যেমন একদা
এক তৃণপ্রান্তরকে নিঃশেষ করে চলে যেতেন বনান্তরে।
এই দ্যূত সভায় দাঁড়িয়ে আমাকে জানতে হল
নারী শুধু কয়েক প্রহরের বিলাস-সঙ্গিনী।
জেনে এসেছ বীরভোগ্যা পৃথিবী আর রূপমুগ্ধা নারী;
জেনেছ একদিন ধার্তরাষ্ট্রের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে হবে
কৌরব-উত্তরাধিকার; জেনে এসেছ যেখানে যা কিছু সর্বোত্তম
সেখানেই পৌঁছতে হবে তোমাকে। শুধু এই কুমারী-লক্ষ্যের
দিকেই তোমার দৃষ্টি, ধনঞ্জয়। তাই অনায়াসে তুমি সরে যাও
এক নারী থেকে অন্য রমণীতে; তোমার পূর্বপুরুষেরা যেমন একদা
এক তৃণপ্রান্তরকে নিঃশেষ করে চলে যেতেন বনান্তরে।
এই দ্যূত সভায় দাঁড়িয়ে আমাকে জানতে হল
নারী শুধু কয়েক প্রহরের বিলাস-সঙ্গিনী।
মণিময় হার, শত সহস্র
তরুণী দাসী, দান্ত মাতঙ্গ
গন্ধর্বপ্রেরিত অশ্বযূথ আর আমি পান্ডুপুত্রবধূ-
এক পংক্তিতে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই অপেক্ষায়;
পিতৃগৃহে যেমন দেখেছিলাম, আহারিনীরা দূর গ্রাম থেকে
নিয়ে আসে তাদের পসরা- আর তার ওপর ঝুঁকে পড়ে
লুব্ধ ক্রেতার দল- আমাদের ব্যবহার করার জন্য
তেমনই উন্মুখ হয়ে আছে, যাঁরা আমার পতির আত্মীয়;
গন্ধর্বপ্রেরিত অশ্বযূথ আর আমি পান্ডুপুত্রবধূ-
এক পংক্তিতে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই অপেক্ষায়;
পিতৃগৃহে যেমন দেখেছিলাম, আহারিনীরা দূর গ্রাম থেকে
নিয়ে আসে তাদের পসরা- আর তার ওপর ঝুঁকে পড়ে
লুব্ধ ক্রেতার দল- আমাদের ব্যবহার করার জন্য
তেমনই উন্মুখ হয়ে আছে, যাঁরা আমার পতির আত্মীয়;
আর আমাকে, আমাদের বিলিয়ে দিচ্ছে যাঁরা,
তাঁরা আমার পঞ্চস্বামী বিবাহের মঙ্গলসূত্র হাতে বেঁধে যাঁরা
একদিন আমার ওপর নিয়মসিদ্ধ করেছিলেন তাঁদের অধিকার।
তাঁরা আমার পঞ্চস্বামী বিবাহের মঙ্গলসূত্র হাতে বেঁধে যাঁরা
একদিন আমার ওপর নিয়মসিদ্ধ করেছিলেন তাঁদের অধিকার।
না,
শুধু এই রতমন্ডিত সভাগৃহেই
নয়-
আরও আগে আমাকে জানতে হয়েছিল
আমার কোন বাসনা নেই, নেই কোন নিজস্ব ইচ্ছা;
অর্জুন, প্রথম দেখার মুহূর্তে আমার হৃদয় দিয়েছিলাম তোমাকে;
অথচ আমার শরীরকে প্রথম আলিঙ্গন করলেন
ঐ মহাভাগ, যাঁর খ্যাতি ধর্মপুত্র বলে।
আরও আগে আমাকে জানতে হয়েছিল
আমার কোন বাসনা নেই, নেই কোন নিজস্ব ইচ্ছা;
অর্জুন, প্রথম দেখার মুহূর্তে আমার হৃদয় দিয়েছিলাম তোমাকে;
অথচ আমার শরীরকে প্রথম আলিঙ্গন করলেন
ঐ মহাভাগ, যাঁর খ্যাতি ধর্মপুত্র বলে।
ইন্দ্রপ্রস্থ’র সৌধশিখরে যখন
আছড়ে পড়ত
নববর্ষার জলধারা, যখন আমার কামনা ছুঁতে চাইত তোমাকে,
আমার অনুৎসুক দেহকে তখন আকর্ষণ করত অন্য কেউ,
যে আমার স্বামী। বসন্তরজনীতে কিংশুকের প্রমত্ত উল্লাস-মুহূর্তে
তোমার ব্যাকুল বাহু টেনে নিত, আমাকে নয় অন্য কোন যুবতীকে।
বারে বারে আমাকে সন্তানবতী করেছে পুরুষ, কিন্তু
তারা প্রত্যেকেই আমার আকাঙ্খিত নয়।
নববর্ষার জলধারা, যখন আমার কামনা ছুঁতে চাইত তোমাকে,
আমার অনুৎসুক দেহকে তখন আকর্ষণ করত অন্য কেউ,
যে আমার স্বামী। বসন্তরজনীতে কিংশুকের প্রমত্ত উল্লাস-মুহূর্তে
তোমার ব্যাকুল বাহু টেনে নিত, আমাকে নয় অন্য কোন যুবতীকে।
বারে বারে আমাকে সন্তানবতী করেছে পুরুষ, কিন্তু
তারা প্রত্যেকেই আমার আকাঙ্খিত নয়।
কোন
প্রার্থনা নেই আমার। কুরুবৃদ্ধরা
বিলাপ করুন
জ্যেষ্ঠ পান্ডব, প্রহর গুনুন কোন পুণ্যলগ্নে
ধর্মরাজ্য নেমে আসবে মাটিতে; ভীম, অনুগ্রহ করে স্তব্ধ হও,
নকুল, সহদেব, বিচ্যুত হয়ো না অগ্রজের প্রতি অটল বিশ্বাসে;
আর অর্জুন, অন্তঃপুরে যাও, সেখানে তোমার জন্য
স্নিগ্ধ শরীর সাজিয়ে রেখেছে তোমার কোন প্রেয়সী।
জ্যেষ্ঠ পান্ডব, প্রহর গুনুন কোন পুণ্যলগ্নে
ধর্মরাজ্য নেমে আসবে মাটিতে; ভীম, অনুগ্রহ করে স্তব্ধ হও,
নকুল, সহদেব, বিচ্যুত হয়ো না অগ্রজের প্রতি অটল বিশ্বাসে;
আর অর্জুন, অন্তঃপুরে যাও, সেখানে তোমার জন্য
স্নিগ্ধ শরীর সাজিয়ে রেখেছে তোমার কোন প্রেয়সী।
শোক
নয়, লজ্জা নয়; এই রাজগৃহে
দাঁড়িয়ে
আমি জানলাম, প্রেম নয়, অধিকার নয়,
নারী শুধু প্রয়োজনের। জানলাম, এখানে কোন
ভেদ নেই ধর্মপ্রাণ যুধিষ্ঠির, শক্তিমান ভীম, প্রেমিক অর্জুন
আর লোলুপ ধৃতরাষ্ট্র-নন্দনদের মধ্যে।
নারী শুধু প্রয়োজনের। জানলাম, এখানে কোন
ভেদ নেই ধর্মপ্রাণ যুধিষ্ঠির, শক্তিমান ভীম, প্রেমিক অর্জুন
আর লোলুপ ধৃতরাষ্ট্র-নন্দনদের মধ্যে।
প্রতিকার
চাইছি না।
যা শুধু বিলাসের, সেই
বস্ত্র ছিনিয়ে নেয় যদি
কোন দুঃশাসন-নিক্। আমি কাঁদছি না।
চারপাশে ভাসানের ডিঙ্গায় পশুদের উদ্দাম নাচের ভঙ্গি
আমি দেখছি না।
চারপাশে ক্লীবদের অক্ষম বিলাপ
আমি শুনছি না।
ধনুর্বাণ নেই।
কোন দুঃশাসন-নিক্। আমি কাঁদছি না।
চারপাশে ভাসানের ডিঙ্গায় পশুদের উদ্দাম নাচের ভঙ্গি
আমি দেখছি না।
চারপাশে ক্লীবদের অক্ষম বিলাপ
আমি শুনছি না।
ধনুর্বাণ নেই।
আমি ফিরিয়ে আনছি আমার জন্মের স্মৃতি, যজ্ঞের আগুন।
দ্রৌপদী
নই, নই পাঞ্চালী, নই
ভরতকুলবধূ,
আমি কৃষ্ণা, যজ্ঞাগ্নি -সম্ভূতা, শুধু নারী এক।
আমি কৃষ্ণা, যজ্ঞাগ্নি -সম্ভূতা, শুধু নারী এক।
আলোকরেখাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এই কবিতা প্রকাশ করার জন্য। দ্রৌপদী হলেন মহাভারত মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র । ইনি পঞ্চপাণ্ডবের সহধর্মিনী । সে মহাভারতের বীরাঙ্গনাদ্রৌপদী পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের অযোনিসম্ভবা কন্যা । দ্রুপদের কন্যা বলে তাঁর নাম দ্রৌপদী । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে যুধিষ্ঠির যখন হস্তিনাপুরের রাজা হন তখন তিনি পুনরায় ইন্দ্রপ্রস্থের রাণী হন । তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিতা । পাঞ্চালের রাজকুমারী বলে তিনি পাঞ্চালী, যজ্ঞ থেকে তিনি উৎপন্ন হয়েছিলেন বলে যাজ্ঞসেনী, ভরতবংশের কুলবধু বলে তিনি মহাভারতী- কৃষ্ণা--কবিতায় সব্যসাচী দেব অনন্যতা দেন করেছেন এই বলে " দ্রৌপদী নই, নই পাঞ্চালী, নই ভরতকুলবধূ,আমি কৃষ্ণা, যজ্ঞাগ্নি -সম্ভূতা, শুধু নারী এক"।
ReplyDeleteমহাকাব্য ‘মহাভারত’-এর মূল ঘটনাগুলোই ঘটত না দ্রৌপদী না থাকলে। তিনি এমন এক নারী, যাকে পেতে পুরুষ যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত। দ্রৌপদীর বহু নাম। পাঞ্চাল রাজপুত্রী দ্রৌপদী পাঞ্চালী নীমেই সমাধিক পরিচিতা। তিনি যজ্ঞকুণ্ড-জাতা। সেকারণে তাঁরা নাম যাজ্ঞসেনী। অজ্ঞাতবাস পর্বে তাঁর নাম ছিল সৈরিন্ধ্রী।কিন্তু কবি এখানে তাঁকে একজন নারী রূপে উপস্থাপন করেছেন এখানেই কবির সার্থকতা।
ReplyDeleteKrishna, by Shobbochachi Dev,
ReplyDeletereally enjoyed reading.
thanks to Alokrekha
ধন্যবাদ
ReplyDelete