জীবনানন্দ দাশের কবিতা/বোধ
পথে চ’লে পারে –পারাপারে
উপেক্ষা করিতে চাই তারে;
মড়ার খুলির মতো ধ’রআছার মারিতে চাই, জীবন্ত মাথার মতো ঘোরে
তবু সে মাথার চারিপাশে,
তবু সে চোখের চারিপাশে,
তবু সে বুকের চারিপাশে;
আমি চলি, সাথে সথে সেও চ’লে আসে।
উপেক্ষা করিতে চাই তারে;
মড়ার খুলির মতো ধ’রআছার মারিতে চাই, জীবন্ত মাথার মতো ঘোরে
তবু সে মাথার চারিপাশে,
তবু সে চোখের চারিপাশে,
তবু সে বুকের চারিপাশে;
আমি চলি, সাথে সথে সেও চ’লে আসে।
আমি থামি
সেও থেমে যায়;
সকল লোকের মাঝে ব’সে
আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা ?
আমার চোখেই শুধু ধাঁধা ?
আমার পথেই শুধু বাঁধা ?
জন্মিয়াছে যারা এই পৃথিবীতে
সন্তানের মত হ’য়ে –
সন্তানের জন্ম দিতে-দিতে
যাহাদের কেটে গেছে অনেক সময়,
কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয়
যাহাদের; কিংবা যারা পৃথিবীর বীজখেতে আসিতেছে চলে
জন্ম দেবে - জন্ম দেবে ব’লে;
তাদের হৃদয় আর মাথার মতন
আমার হৃদয় না কি ?
-তবু কেন এমন একাকী ?
তবু আমি এমন একাকী !
হাতে তুলে দেখিনি কি লাঙল ?
বালটিতে টানিনি কি জল ?
কাস্তে হতে কতোবার যাইনি কি মাঠে ?
মেছোদের মতো আমি কতো নদী ঘাটে
ঘুরিয়াছি;
পুকুরের পানা শ্যাওলা – আঁশটে গায়ের ঘ্রান গায়ে
গিয়েছে জড়ায়ে ;
-এই সব স্বাদ ;
-এ-সব পেয়েছি আমি; বাতাসের মতন অবাধ
বয়েছে জীবন,
নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমিয়েছে মন
একদিন;
এই সব সাধ
জানিয়াছি একদিন – অবধ – অগাধ;
চলে গেছি ইহাদের ছেড়ে ;
ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
অবহেলা ক’রে আমি দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
ঘৃনা করে দেখিয়াছি মেয়মানুষেরে ;
আমারে সে ভালোবাসিয়াছে,
আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে,
ঘৃণা করে চলে গেছে – যখন ডেকেছি বারে-বারে
ভালোবেসে তারে ;
তবুও সাধনা ছিলো একদিন – এই ভালোবাসা ;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা করে গেছি ; যে-নক্ষত্র-নক্ষত্রের দোষ
আমার প্রমের পথে বার-বার দিয়ে গেছে বাধা
আমি তা ভুলিয়া গেছি ;
তবু এই ভালোবাসা- ধুলো আর কাদা ।
মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়-প্রেম নয়-কোন এক বোধ কাজ কর ।
জীবনানন্দের বোধ কবিতা নতুন করে প্রকাশের করার জন্য আলোকরেখাকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
ReplyDeleteসাধারণত : এই কবিতাটা সচরাচর পড়া হয় না। এতো সুন্দর কবিতাটিকে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ। আলোকরেখা আমাদের এভাবে আলোকিত করুক এই কামনায় করি সর্বদাই।
ReplyDelete