আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও -আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও-যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে..আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে..এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও..আমার পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান-তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান..তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁইয়ে দাও বরেন্য সাংবাদিক আতাউস সামাদ ~ alokrekha আলোক রেখা
1) অতি দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না, কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায় -এডওয়ার্ড হল । 2) অবসর জীবন এবং অলসতাময় জীবন দুটো পৃথক জিনিস – বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন । 3) অভাব অভিযোগ এমন একটি সমস্যা যা অন্যের কাছে না বলাই ভালো – পিথাগোরাস । 4) আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও , আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট । 5) আমরা জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না বলে আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না – শিলার । 6) উপার্জনের চেয়ে বিতরণের মাঝেই বেশী সুখ নিহিত – ষ্টিনা। 7) একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তি কে জাগ্রত করতে পারে না- শেখ সাদী । 8) একজন দরিদ্র লোক যত বেশী নিশ্চিত , একজন রাজা তত বেশী উদ্বিগ্ন – জন মেরিটন। 9) একজন মহান ব্যাক্তির মতত্ব বোঝা যায় ছোট ব্যাক্তিদের সাথে তার ব্যবহার দেখে – কার্লাইন । 10) একজন মহিলা সুন্দর হওয়ার চেয়ে চরিত্রবান হওয়া বেশী প্রয়োজন – লং ফেলো। 11) কাজকে ভালবাসলে কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় – আলফ্রেড মার্শা
  • Pages

    লেখনীর সূত্রপাত শুরু এখান থেকে

    বরেন্য সাংবাদিক আতাউস সামাদ

    বরেন্য সাংবাদিক আতাউস সামাদ
    সানজিদা রুমি
    সাংবাদিক আতাউস সামাদ (১৯৩৭-২০১২) ১৯৩৭ সালের ১৬ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার সতের দরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম আবদুস সামাদ ও মা সায়েরা বানু। আতাউস সামাদের ছাত্রজীবন কেটেছে জলপাইগুড়ি, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী এবং ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের প্রচার-সম্পাদক হিসেবে হল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন।
    আতাউস সামাদের সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ১৯৫৬ সালে সচিত্র সন্ধানীতে। ১৯৫৯ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সাব এডিটার নিযুক্ত হন এবং ১৯৬১ সালে উক্ত পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকায় যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সালে প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭০-৭১ সময়কালে তিনি করাচির দি সান পত্রিকার পুর্ব পাকিস্তান শাখার ব্যুরো চিফ ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) যোগ দেন। তিনি দিল্লিতে বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি (১৯৭২-১৯৭৬) এবং বাংলাদেশ টাইমস-এর বিশেষ প্রতিনিধি (১৯৭৮- ১৯৮২) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


    তাছাড়া আতাউস সামাদ দীর্ঘ একযুগ (১৯৮২-৯৪) তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের বাংলাদেশ সংবাদাতা ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে (১৯৭৯-৭০) পুর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের (ইপিইউজে) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং এ সময় সভাপতি ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘ ২০ বছর। অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক এখন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে আতাউস সামাদ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় উপদেষ্টা-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং জীবন অবসান পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। উপদেষ্টা-সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ২০০৭ সালে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে তিনি নিয়মিত নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও কলাম লিখেছেন যথাক্রমে পাকিস্তানের দৈনিক মুসলিম, কুয়েতের দৈনিক আরব টাইমস্, লন্ডনের সাউথ ম্যাগাজিন ও ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর, এবং এদেশের সাপ্তাহিক যায়য়ায় দিন, দৈনিক প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকাল ও যুগান্তরসহ আরো অনেক পত্রিকায়। তাঁর লেখা গ্রন্থ এ কালের বয়ান, সব কালের বয়ান হিসেবেই পাঠকের কাছে সমাদৃত। পেশাগত কারনে তিনি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, তুরস্ক, কুয়েত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সেইন্ট লুশিয়া, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া মিশর, বার্মা প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন।


    আতাউস সামাদ রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন না করলেও রাজনীতিক ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী তিনি। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম রিপোর্টার ছিলেন। আতাউস সামাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা ভাসানীর মধ্যে প্রায়স যোগাযোগের মাধ্যম ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিক হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। এ সময় তিনি ঢাকাতেই আত্মগোপন অবস্থায় ছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নানা কাজে সহায়তা করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত থেকে দেশে ফেরার পথে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিমান-সঙ্গী ছিলেন, সে-সেময় তিনি তাঁর একটি মূল্যবান সাক্ষাৎকার নেন।
    আতাউস সামাদ বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস নিউজ-এর জন্য সংবাদদাতা হিসেবে ঢাকায় কাজ শুরু করেন মার্শাল ল’ চলাকালিন ১৯৮২ সালের অক্টোবর থেকে। এই সময় তাঁর প্রতিবেদন মানুষকে প্রকৃত তথ্য জানাতে সাহায়তা করে। তাঁর সাহসিক রিপোর্ট সামরিক সরকারকে অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রত করে তোলে। এসময় বিবিসি ‘হাসিনা অন্তরীণ: খালেদা আত্মগোপনে: জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি’ এবং ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারী’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করে। এ সময়ে নিরাপত্তার জন্য আরো অনেক সাংবাদিকের মতো আতাউস সামাদ আত্মগোপনে চলে যান এবং আত্মগোপনে থেকেও নিয়মিত বিবিসিকে গণঅভ্যুত্থানের ও সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেন। বস্ত্তনিষ্ঠ সংবাদ (এরশাদ-বিরোধী) পরিবেশনের কারণে ১৯৮৭ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৯৪-৯৫ সালে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসানোর চেষ্টায় তাঁর ভুমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
    সত্য প্রকাশে আপোষহীন আতাউস সামাদ সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের দাবি আদায়ের সংগ্রামেও নিজেকে যুক্ত করেছেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আজীবন লড়ে গেছেন। বস্ত্তনিষ্ঠ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক আতাউস সামাদ জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের যুদ্ধ ও গণহত্যা, ১৯৭৫-এ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জারিকৃত জুরুরি অবস্থা, ১৯৭৬-এর আগস্টে নিজদেশে জারিকৃত সামরিক শাসন, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসন, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৯২ সালে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল-বিরোধী-আন্দোলনসহ সব রকম সংকটময় পরিস্থিতিতে নিরলসভাবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করেন। অর্থাৎ যুদ্ধ, সেন্সরশিপ, সামরিক শাসন ও অগণতান্ত্রিক জরুরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনের প্রায় সবটা সময় কেটেছে।

    সাংবাদিকতায় গৌরবময় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯২ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ, বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুব উল্লাহ জনকল্যান ট্রাস্ট পুরস্কার, মহাকাল সৃষ্টি চিন্তা সংঘ কর্তৃক ভাষা শহীদ গোল্ড মেডেল, জাগৃতি চলচ্চিত্র পরিষদ কর্তৃক শিল্পী কামরুল হাসান স্মৃতি পদক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ কর্তৃক শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোল্ড মেডেল এবং ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিয়ন কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা রিপোর্টার্স পদকে ভূষিত হন। তাঁর মৃত্যু ঢাকায়, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২।
    বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদ শুধু নিরপেক্ষই ছিলেন না। ছিলেন মানুষের পক্ষে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় তিনি এ দেশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আতাউস সামাদের মতো দুর্লভ মানুষ এই সমাজে খুবই কম আছে।মাথা থেকে পা পর্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন আতাউস সামাদ।আতাউস সামাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ তাঁকে সৎ সাংবাদিকতা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। দেশের এখনকার অস্থির সময়ে তাঁর মতো সাহসী সাংবাদিকের খুব প্রয়োজন ছিল। অনুসন্ধানী ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় আতাউস সামাদের জুড়ি ছিল না। তাঁর কোনো প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক হয়নি, তিনি জীবনভর সুনাম বজায় রেখে সাংবাদিকতা করেছেন।
    আতাউস সামাদের শিক্ষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হিসেবে তাঁকে যেমন দেখেছিলাম, আমৃত্যু সেভাবেই দেখেছি। তবে আতাউস সামাদ আমার বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। যদিও আমি ছিলাম তাঁর অনুরাগী ও ভক্ত।’
    সাংবাদিকদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আতাউস সামাদকে অনুসরণ করে সাংবাদিকদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে
     সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com

    3 comments:

    1. মাহাত চৌধুরী খানNovember 1, 2017 at 2:23 PM

      সানজিদা রুমিকে বিশেষ ধন্যবাদ সাংবাদিক স্যার আতাউস সামাদকে নিয়ে মুল্যবান তথ্যসহ এই প্রতিবেদন লেখার জন্য।

      ReplyDelete
    2. আনিসুল হকNovember 1, 2017 at 4:39 PM

      আজ আমি যা কিছু -যা সামান্য সব স্যারের জন্য।তাঁর বেহেশত নাসিব হোক এই কামনা করি ।আর আলকরেখা আর সানজিদা রুমিকে আন্তরিক ধন্যবাদ এমন উদ্যোগ নেবার জন্য।

      ReplyDelete
    3. বিশেষ ধন্যবাদ সাংবাদিক স্যার আতাউস সামাদকে নিয়ে মুল্যবান তথ্যসহ এই প্রতিবেদন লেখার জন্য। শুভ কামনা।

      ReplyDelete

    অনেক অনেক ধন্যবাদ