মঞ্চনাটক
সানজিদা রুমি
মঞ্চনাটক
(ইংরেজি: Theater বা Theater) দর্শকের সম্মুখে স্থাপিত মঞ্চে বা পটে অভিনীত
নাটক। এটি শিল্পমাধ্যমের (পারফর্মিং আর্ট) একটি শাখা। দর্শক বা শ্রোতার জন্য
যেকোনো পরিবেশনাকে (পারফর্মেন্সকে) মঞ্চনাটক হিসেবে বিবেচনা করা
গেলেও পারফর্মিং আর্ট হিসেবে মঞ্চনাটক বিশেষভাবে জোর দেয় সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা সৃষ্ট একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নাটকের ওপর।
একটি পরিবেশনাকে নাট্যধর্মী বা নাটকীয় বলা যেতে পারে যদি তা একটি বাস্তবানুগ মায়া বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এই দুইটি বিস্তারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী বলা যায় যে মঞ্চনাটকের অস্তিত্ব ছিল মানবসভ্যতার প্রত্যূষকালেও, কারণ গল্প বলার একটি স্বাভাবিক প্রকৃতিগত প্রবণতা প্রতিটি মানুষে বিদ্যমান। সূচনাকাল থেকেই মঞ্চনাটক অনেকরকম রূপ বা প্রকার ধারণ করেছে; প্রয়োগ করেছে অনেক রকম কথা, দেহভঙ্গি, গান, নাচ, দৃশ্য বা ঘটনা।
দৃশ্যগ্রাহ্য কলাসহ (চিত্রাঙ্কণ, ভাষ্কর্য ইত্যাদি) অন্যান্য পারফর্মিং আর্টগুলোকে মঞ্চনাটক একত্রিত করেছে একটিমাত্র সমন্বিত শিল্পের প্রকারে। যদিও বেশিরভাগ আধুনিক মঞ্চনাটক দল একটি করে নাটক অনুশীলন ও পরিবেশন করে এবং শেষে ঐ নাটকটিকে তুলে নিয়ে অপর একটি নতুন প্রদর্শনীর জন্য অনুশীলন করে, সেখানে রেপাটরি গোষ্ঠি একই সাথে একাধিক প্রদর্শনীর অনুশীলন করে থাকে। এই রেপাটরি কোম্পানিগুলো অনুরোধ সাপেক্ষে বিভিন্ন প্রদর্শনীর পরিবেশন করতে পারে এবং সেই নাটকগুলো তুলে নেয়ার আগে বছরব্যাপী প্রদর্শনী করে থাকে। অনেক নৃত্যদলই রেপাটরি পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। লন্ডনের রয়েল ন্যাশনাল থিয়েটার এই রেপাটরি পদ্ধতিতেই প্রদর্শনী করে থাকে।
গেলেও পারফর্মিং আর্ট হিসেবে মঞ্চনাটক বিশেষভাবে জোর দেয় সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা সৃষ্ট একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নাটকের ওপর।
একটি পরিবেশনাকে নাট্যধর্মী বা নাটকীয় বলা যেতে পারে যদি তা একটি বাস্তবানুগ মায়া বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এই দুইটি বিস্তারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী বলা যায় যে মঞ্চনাটকের অস্তিত্ব ছিল মানবসভ্যতার প্রত্যূষকালেও, কারণ গল্প বলার একটি স্বাভাবিক প্রকৃতিগত প্রবণতা প্রতিটি মানুষে বিদ্যমান। সূচনাকাল থেকেই মঞ্চনাটক অনেকরকম রূপ বা প্রকার ধারণ করেছে; প্রয়োগ করেছে অনেক রকম কথা, দেহভঙ্গি, গান, নাচ, দৃশ্য বা ঘটনা।
দৃশ্যগ্রাহ্য কলাসহ (চিত্রাঙ্কণ, ভাষ্কর্য ইত্যাদি) অন্যান্য পারফর্মিং আর্টগুলোকে মঞ্চনাটক একত্রিত করেছে একটিমাত্র সমন্বিত শিল্পের প্রকারে। যদিও বেশিরভাগ আধুনিক মঞ্চনাটক দল একটি করে নাটক অনুশীলন ও পরিবেশন করে এবং শেষে ঐ নাটকটিকে তুলে নিয়ে অপর একটি নতুন প্রদর্শনীর জন্য অনুশীলন করে, সেখানে রেপাটরি গোষ্ঠি একই সাথে একাধিক প্রদর্শনীর অনুশীলন করে থাকে। এই রেপাটরি কোম্পানিগুলো অনুরোধ সাপেক্ষে বিভিন্ন প্রদর্শনীর পরিবেশন করতে পারে এবং সেই নাটকগুলো তুলে নেয়ার আগে বছরব্যাপী প্রদর্শনী করে থাকে। অনেক নৃত্যদলই রেপাটরি পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। লন্ডনের রয়েল ন্যাশনাল থিয়েটার এই রেপাটরি পদ্ধতিতেই প্রদর্শনী করে থাকে।
মঞ্চ নাটকের ইতিহাস
মঞ্চনাটক শব্দটির মানে হলো দর্শনের জন্য যে স্থান। ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরে একটি ধর্মীয় নাটক অনুষ্ঠিত হয়। নাটকটির কাহিনী নেয়া হয়েছিল বিখ্যাত মিশরীয় মিথলজি "মিথ অভ ওসিরিস অ্যান্ড আইসিস" থেকে। আর এটাই ছিলো নাট্য-সম্পর্কিত প্রথম কোনো ঘটনা যার তথ্য নথিপত্রে পাওয়া যায়। সেসময় প্রতি বছর প্রতিটি জনপদে বিভিন্ন উৎসবে পরিবেশিত হতো গড ওসিরিসের এই গল্প, ফলস্বরূপ মঞ্চনাটক আর ধর্মের মাঝে দীর্ঘ এক সম্পর্কের সূচনা হয়।
প্রাচীন গ্রিকরা মঞ্চনাটককে একটি নির্দিষ্ট আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে শুরু করে। তারা ট্র্যাজেডি, কমেডিসহ মঞ্চনাটকের অন্যান্য রূপগুলোর, যেমন স্যাটায়ার এর, সুস্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞা গঠন করে। গ্রিকদের কাছ থেকেই প্রথম নাটকের সমালোচনার ধারণা পাওয়া যায়।এমনকি পেশা হিসেবে অভিনয়কে বেছে নেয়ার ধারণাও গ্রিকদের থেকেই পাওয়া গিয়েছে।। তারা মঞ্চনাটক নির্মাণের কৌশলেরও উন্নতি সাধন করে। আধুনিক দুনিয়ায় সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগুলোকেই অভিযোজিত করা হয়েছে, ব্যাখ্যা করা হয়েছে হাজারো রকমের পন্থায়। উদাহরণস্বরূপ অ্যান্টিগোনে নাটকটির কথা বলা যেতে পারে, ১৯৪৪ সালে ফরাসি নাট্যকার জাঁ আনউই একে ব্যবহার করেছিলেন নাজি বাহিনীর ফ্রান্স দখল নিয়ে বক্তব্য প্রকাশের জন্য, আবার ১৯৪৮ সালে এই নাটকটিই ব্যবহার করেছিলেন জার্মান নাট্যকার ব্রেশ্ট, যেখানে তিনি সাদৃশ্য দেখিয়েছিলেন মিশরের প্রাচীন নগরী থিবির শাসক ক্রেওনের সাথে হিটলারের আর থিবির সাথে সাদৃশ্য দেখিয়েছিলেন পরাজিত জার্মানির। গ্রিক মঞ্চনাটকে ব্যবহৃত মুখোশ ব্যাপকভাবে পরিগৃহীত হয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতকের রোমে। শোভাবর্ধক হিসেবে এই মুখোশের ব্যবহার শুরু হয় রোমানদের বাসভবনে ও সরকারি স্থানগুলিতে ।
রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডে পশ্চিমা মঞ্চনাটক বিকাশ লাভ করে। এরপর স্পেনে, ইতালিতে, ফ্রান্সে এবং রাশিয়ায় পর্যায়ক্রমিকভাবে অনেকরকম রূপ ধারণ করে মঞ্চনাটক সমৃদ্ধি লাভ করে ষোল, সতের এবং আঠার শতকে। এই শতকগুলিতে মঞ্চনাটকের বিকাশ প্রক্রিয়ার একটি সাধারণ প্রবণতা ছিল রেনেসাঁ এবং গ্রিকদের কাব্যধর্মী নাটক থেকে সরে গিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি বাস্তবধর্মী শৈলী, বিশেষ করে শিল্প-বিল্পবকে অনুসরণ করা। আমেরিকার (দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড বা পনের শতকের পশ্চিম গোলার্ধ) উপনিবেশায়নের সাথে সাথে একটি উত্তর আমেরিকান মঞ্চনাটকও প্রকাশিত হয়।
পূর্বদেশীয় (প্রাচ্য) মঞ্চনাটকের ইতিহাস ও আদি উৎসের সন্ধান পেতে চাইলে ফিরে তাকাতে হবে ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃত মঞ্চনাটকে।চীনা মঞ্চনাটকও একই সময় থেকে বিদ্যমান।জাপানি মঞ্চনাটক কাবুকি, নোহ এবং কিয়োহজেন রয়েছে সতেরশ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। চীন, কোরিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে সম্প্রসারিত হয়েছে পূর্বদেশীয় অন্যান্য মঞ্চনাটক।
ইসলামের মধ্যযুগে (সপ্তম খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে তের খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগ) সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলো পাপেট মঞ্চনাটক (এর মধ্যে ছিলো হ্যান্ড পাপেট, শ্যাডো প্লে বা শ্যাডো পাপেট্রি এবং ম্যারিওনেট প্রোডাকশন থেকে পাপেট পরিবেশনা ) এবং তাজিয়া নামে এক ধরণের আবেগঘন নাটক (প্যাশন প্লে)। তাজিয়ার অভিনেতারা ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের ঘটনাবলীকে যেন পুনরুজ্জীবিত করে তুলতেন তাদের অভিনয়ের মাধ্যমে। বিশেষতঃ, ইসলামের শিয়া সম্প্রদায়ের নাটক বা পরিবেশনাসমূহ আবর্তিত হয়েছে খলিফা (নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান) আলী'র পুত্র হাসান ইবনে আলী এবং হুসাইন ইবনে আলীকে ঘিরে।
মঞ্চ নাটকের ধরন
নাটক
নাটক (ড্রামা) হলো থিয়েটারের একটি শাখা যেখানে বাচন (স্পীচ) বা বাচনভঙ্গিই প্রধান। এই স্পীচ আগে থেকেই লিখে নেয়া হতে পারে। অথবা অভিনেতারা অভিনয়ের সময় তাৎক্ষণিকভাবেও রচনা করতে পারেন। নাটকের চিরায়ত রূপ আজও পরিবেশিত হয়। এই চিরায়ত রূপ পাওয়া যায় গ্রিক ও রোমান নাটকে, ক্ল্যাসিক ইংরেজি নাটকে, উইলিয়াম শেকসপিয়র ও ক্রিস্টোফার মার্লোর কিছু উল্লেখযোগ্য রচনায় এবং ফরাসি নাটকে। উদাহরণস্বরূপ ফরাসী নাট্যকার মঁলিয়ের এর কিছু রচনার কথা উল্লেখ করা যায়।
নাটক (English: Drama) সাহিত্যের একটি বিশেষ ধরণ। সাধারণত একটি লিখিত পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করে অভিনয় করে নাটক পরিবেশিত হয়ে থাকে। নাটক লেখা হয় অভিনয় করার জন্য। তাই নাটক লেখার আগেই তার অভিনয় করার যোগ্য হতে হয়। নাটকে স্থান, সময় ও পরিবেশের বর্ণনা ছাড়াও সংলাপ লেখা থাকে। সংলাপ বলেই একজন অভিনতা নাটকের বিভিন্ন বিষয়ে বলে থাকেন। তবে সংলাপই শেষ কথা নয়। সংলাপবিহীন অভিনয়ও নাটকের অংশ।
সংস্কৃত আলঙ্কারিকগণ নাট্যসাহিত্যকে কাব্য সাহিত্যের মধ্যে স্থান দিয়েছেন। তাঁদের মতে কাব্য দুই প্রকার - দৃশ্য কাব্য ও শ্রব্য কাব্য। নাটক প্রধানত দৃশ্য কাব্য এবং এটি সকল প্রকার কাব্য সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ - কাব্যেষু নাটকং রম্যম্। নাটক দৃশ্য ও শ্রব্যকাব্যের সমন্বয়ে রঙ্গমঞ্চের সাহায্যে গতিমান মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি আমাদের সম্মুখে মূর্ত্ত করে তোলে। রঙ্গমঞ্চের সাহায্য ব্যতীত নাটকীয় বিষয় পরিস্ফুট হয় না। নাট্যোল্লিখিত কুশীলবগণ তাদের অভিনয়-নৈপুণ্যে নাটকের কঙ্কালদেহে প্রাণসঞ্চার করেন, তাকে বাস্তব রূপৈশ্বর্য্য দান করেন। নাটকে অনেক সময় পাত্র-পাত্রীদের কথায় নাট্যকার নিজের ধ্যান-ধারণার কথাও সংযোগ করে দেন। এইজন্য এটি সম্পূর্ণরূপে বস্তুনিষ্ঠ বা তন্ময় বা অবজেকটিভস্ না-ও হতে পারে। কিন্তু শ্রেষ্ঠ নাট্যকার নিজেকে যথাসাধ্য গোপনে রাখেন এবং তাঁর চরিত্র-সৃষ্টির মধ্যে বিশেষ একটি নির্লিপ্ততা বর্তমান থাকে।
নাটকের শ্রেণীবিভাগ কোনো বিশেষ বিষয়কে ভিত্তি করে করা হয়নি। নানারকম বিষয়বস্তু অনুসারে নাটককে নানাভাবে শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। নাটকের শ্রেণীবিভাগগুলো এরকম: ক) ভাব সংবেদনা রীতি অনুসারে (০১) ট্রাজেডি (০২) কমেডি (০৩) ট্রাজি-কমেডি (০৪) মেলোড্রামা ও (০৫) ফার্স।
খ) বিষয়বস্তুর উৎসরীতি অনুসারে (০১) পৌরাণিক (০২) ঐতিহাসিক (০৩) ঐতিহাসিককল্প চরিত্রমূলক (০৪ ) সামাজিক (০৫) পারিবারিক (০৬) উপকথাশ্রয়ী ও (০৭) কাল্পনিক
গ) বিষয়বস্তুর প্রকৃতি অনুসারে (০১) ধর্মমূলক (০২) নীতিমূলক (০৩) আধ্যাত্মিক (০৪) রাজনৈতিক (০৫) অর্থনৈতিক (০৬) প্রেমমূলক (০৭) দেশপ্রেমমূলক (০৮) সমাজরীতিমূলক (০৯) ষড়যন্ত্রমূলক (১০) রোমাঞ্চকর দুঃস্বাহসমূলক ও (১১) অপরাধ আবিষ্কারমূলক প্রভৃতি
ঘ) উপাদানযোজনা বৈশিষ্ট্য অনুসারে (০১) গীতিনাট্য বা অপেরা (০২) যাত্রা (০৩) নৃত্যনাট্য (০৪) নাটক বা ড্রামা
ঙ) আয়তন বা অঙ্কসংখ্যা অনুসারে (০১) মহানাটক (০২) নাটক (০৩) নাটিকা (০৪) একাঙ্কিকা
চ) গঠন রীতি অনুসারে (০১) ক্লাসিক্যাল (০২) রোমান্টিক (০৩) দৃশ্যাবলী
ছ) রচনারীতি অনুসারে (০১) পদ্যনাটক (০২) গদ্যনাটক (০৩) গদ্য-পদ্যময় নাটক
জ) উপস্থাপনারীতি অনুসারে (০১) বাস্তবিক নাটক (০২) ভাবতান্ত্রিক নাটক (০৩) রূপক নাটক (০৪) সাংকেতিক নাটক (০৫) এক্সপ্রেশানিস্টিক নাটক
ঝ) উদ্দেশ্য অনুসারে (০১) ঘটনামূখ্য (মোলোড্রামা) (০২) চরিত্রমূখ্য (চরিত্রনাট্য) (০৩) রসমূখ্য (রসনাট্য) ও (০৪) তত্ত্বমূখ্য (তত্ত্বনাটক)
সঙ্গীতধর্মী মঞ্চনাটক
সঙ্গীতশাস্ত্র ও মঞ্চনাটকের মধ্যে সবসময়ই একটি নিকট সম্পর্ক ছিলো। সঙ্গীতধর্মী মঞ্চনাটক হলো এমন এক ধরণের মঞ্চনাটক যা সুর, গান, নাচ এবং সংলাপকে সম্মিলিতভাবে পরিবেশন করে। আধুনিক সঙ্গীতধর্মী মঞ্চনাটক উদ্ভূত হয়েছে উনিশ শতকের শেষ দিকের এবং বিশ শতকের প্রথম দিকের নাট্যধর্মী বিনোদনের দুইটি প্রকার থেকে। এ দুইটি প্রকার হলো ভদেভিল
(vaudeville) এবং মিউজিক হল। এই ধরনের মঞ্চনাটক জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনীও করে থাকে। যেমন, সমকালীন ব্রডওয়ে মিউজিকল প্রায়ই মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে অপর্যাপ্ত পোশাক ও মঞ্চনাটক সজ্জা ব্যবহার করে।
কমেডি
গল্প বা বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে হাস্যরস ব্যবহার করে থাকে যে মঞ্চনাটক প্রোডাকশন, তাকে বলা হয় কমেডি। আর যে সমস্ত থিয়েটার পরিবেশনা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে হতাশাজনক, বিতর্কিত, ধর্মে ও লোকাঁচারে অনুচ্চার্য অথবা নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু হাস্যরসাত্মকভাবে প্রকাশ করে তাকে বলে ব্ল্যাক কমেডি।
একটি নাটক সৃষ্টির অনেকরকম তত্ত্ব, নাট্যসম্বন্ধীয় দৃষ্টিকোণ এবং শৈল্পিক প্রক্রিয়া রয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটার সাথে সংযোগ আছে রাজনৈতিক অথবা আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার, আবার কোনো কোনো তত্ত্ব বা প্রক্রিয়ার ভিত্তি সম্পূর্ণরূপে শিল্পসম্বন্ধীয়। আবার কিছু প্রক্রিয়া কেন্দ্রীভূত হয় একটি গল্পকে ঘিরে এবং কিছু তত্ত্ব বা দৃষ্টিকোণ মঞ্চনাটককে তুলে ধরে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে। এরিস্টটলের নাট্যতত্ত্ব বিষয়ক সমালোচনামূলক নিবন্ধ "পোয়েটিকস" থেকে মঞ্চনাটকের জন্য ছয়টি অপরিহার্য উপাদান চিহ্নিত করা যায়। এগুলো হলোঃ প্লট (পরিকল্পনা বা রূপরেখা), চরিত্র, আইডিয়া (ভাব বা কল্পনা), ভাষা এবং দৃশ্য বা ঘটনা।[১৩] নাটক সম্পর্কে স্পেনীয় নাট্যকার Lope de Vega লিখেছেন যে, মঞ্চনাটকের জন্য একজন ব্যক্তির প্রয়োজন "three boards, two actors, and one passion"।[১৪] এছাড়াও মঞ্চনাটক তত্ত্ববিদ্যায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রুশ অভিনেতা ও মঞ্চনাটক পরিচালক কনস্ট্যান্টিন স্তানিস্লাভস্কি, ফরাসী কবি, অভিনেতা, নাট্যকার ও মঞ্চনাটক পরিচালক অ্যান্টনি আরটড, জার্মান নাট্যকার, কবি ও মঞ্চনাটক পরিচালক বের্টোল্ট ব্রেশ্ট, আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও মঞ্চনাটক পরিচালক অরসন ওয়েলস, ইংরেজ ও ফরাসী চলচ্চিত্র পরিচালক, মঞ্চনাটক পরিচালক পিটার ব্রুক এবং পোলিশ মঞ্চনাটক পরিচালক ও পরীক্ষামূলক মঞ্চনাটকের প্রবর্তক জর্জিও গ্রোটভস্কি।
কনস্ট্যান্টিন স্তানিস্লাভস্কিকে বিবেচনা করা হয় মঞ্চনাটক কলা-কৌশলের জনক হিসেবে, যেহেতু তিনিই প্রথম এ বিষয়ে লিখেছিলেন। আধুনিক পশ্চিমা মঞ্চনাটকের অধিকাংশ তত্ত্বই বিভিন্ন রূপে উদ্ভূত হয়েছে স্তানিস্লাভস্কির "পদ্ধতি" থেকে।[১৫] তবে স্তানিস্লাভস্কির অনেক ছাত্রই তাঁর "পদ্ধতি” প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সৃষ্টি করেছিলেন তাঁদের নিজস্ব রীতি। এই প্রাথমিক নতুন রীতি বা পদ্ধতিই ভবিষ্যৎ তাত্ত্বিকদের পথ আলোকিত করতে সাহায্য করেছে, শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছে, এগিয়ে নিয়ে গেছে বহু বিস্তীর্ণ ও বিচিত্র পদ্ধতির দিকে। অভিনয় পদ্ধতির বহু বিস্তৃত সীমানা জুড়ে থাকা সেই সব রীতি ও পদ্ধতিই আজকের এই সময়ে পঠিত হয় এবং ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মাইযনার, স্তানিস্লাভস্কি, স্ট্রাসবার্গ এবং হ্যাগেন অভিনয় পদ্ধতির কথা।
একটি নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য একটি মঞ্চনাটক দল ও মঞ্চনাটকের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান এ দুই এরই প্রয়োজন হয়। যদি কোনো মঞ্চনাটক দল কোনো একটি থিয়েটার ভেন্যুর (মঞ্চনাটক প্রদর্শনের জন্য নির্দিষ্ট স্থান, সংক্ষেপে নাট্যশালা) জন্য নিয়োজিত একমাত্র দল হয় এবং তারা যদি বিভিন্ন থিয়েটার ভেন্যুতে নাটক পরিবেশন না করে ঐ একই ভেন্যুতে নাটক মঞ্চস্থ করে, তাহলে সেই থিয়েটার বা মঞ্চনাটক দলকে বলা হয় রেজিডেন্ট থিয়েটার অথবা প্রযোজনাকারী থিয়েটার, কারণ এক্ষেত্রে ঐ থিয়েটার ভেন্যুটি তার নিজস্ব নাটক বা পরিবেশনাকেই প্রযোজনা করছে। নৃত্যদল সহ অন্যান্য মঞ্চনাটক দলগুলোর নিজস্ব থিয়েটার ভেন্যু থাকে না। এই সমস্ত নাট্যদল তাদের নাটক পরিবেশন করে থাকে ভাড়া করা নাট্যশালায় (রেন্টাল থিয়েটার) অথবা সেইসব নাট্যশালায় যেগুলো শুধুমাত্র দর্শকের সামনে নাটক উপস্থাপনের কাজটিই করে (প্রেজেন্টিং থিয়েটার)। এই ধরনের নাট্যশালার কোনো পূর্ণকালীন রেজিডেন্ট থিয়েটার কোম্পানি বা নাট্যদল থাকেনা। বরং কখনো কখনো তাদের এক বা একাধিক খণ্ডকালীন রেজিডেন্ট কোম্পানির সাথে অন্যান্য স্বতন্ত্র অংশীদার কোম্পানি থাকে, যারা নাট্যশালায় স্থান খালি পাওয়া সাপেক্ষে তা ব্যবহার করে। স্বতন্ত্র নাট্যদলগুলো রেন্টাল থিয়েটার খুঁজে বের করে নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য, অপরপক্ষে প্রেজেন্টিং থিয়েটার স্বতন্ত্র নাট্যদলগুলোকেই খুঁজে বের করে এবং তাদের নাটক মঞ্চস্থ করতে সাহায্য করে।
অনেক নাট্যদলই সুনির্দিষ্ট অভিনয়ের স্থানে নাটক প্রদর্শনকে অস্বীকার করে (সাধারণত) নাটক প্রদর্শন করা হয়না এমন সব স্থানে তাদের পরিবেশনা উপস্থাপন করে আসছে। এই পরিবেশনাগুলো হতে পারে ভেতরে বা বাইরে, তবে সনাতন নয়, প্রথাবিরোধী সব জায়গায় এবং এর মধ্যে পড়ছে পথনাটক ও নির্দিষ্ট স্থানের সাথে সম্পর্কযুক্ত নাটক।
একটি ভ্রমণকারী নাট্যদল বা নৃত্যদল হলো স্বতন্ত্র দল যারা, প্রায়ই আন্তর্জাতিকভাবে, ভ্রমণ করে এবং প্রতিটি শহরের বিভিন্ন রঙ্গালয়ে তাদের পরিবেশনা উপস্থাপন করে।
নাটকের মূল হচ্ছে মঞ্চনাটক। মঞ্চনাটক-এর মাঝে আমাদের আত্ম প্রকাশ ও প্রত্যয় বাড়ে। সানজিদা রুমির এই লেখাটিতে চমৎকার ভাবে "মঞ্চনাটক" উপস্থাপন করেছেন। আমি মুগ্ধ তার এই গবেষণাধর্মী লেখা পড়ে।
ReplyDeleteসকালে উঠে খবরের কাগজের সাথে আলোকরেখা পড়াও কিছুটা অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়ে।যেহেতু আমরা মঞ্চের মানুষ তাই সানজিদা রুমির মঞ্চ নাটক বিষয়ক লেখাটা দারুন। ও থিয়েটার ও মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে তার আত্ম প্রকাশ তাই আত্মার সাথে গাঁথা ,অপূর্ব ভাষা,বিস্তারিত তথ্যবহুল ,বিশেষভাবে গবেষণামূলক। অনেক অনেক শুভেচ্ছা তোমাকে। আরো লেখা এসব লেখা এখন আমাদের খুব বেশি প্রয়োজন। ভাল থেকে !
ReplyDelete