দাম্পত্য সম্পর্ককে সুন্দর এবং শান্তিময় রাখতে আমরা কি করি?
নীপা লায়লা
চেহারা থেকে বয়সের ছাপ মুছে ফেলতে আমরা এইজ মিরাকেল ক্রিম মাখি।সূর্যের প্রখর তাপ থেকে গায়ের চামড়া পুড়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করতে মাখি সানস্ক্রিন। কালো চামড়া ফর্সা এবং ফর্সা চামড়া আরও ফর্সা করতে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে আমরা নিয়মিত ঘষাঘষি করি ফেয়ার এণ্ড লাভলী।
মুখটাকে ঝকঝকে তকতকে রাখতে নানান জাতের ফেইস ওয়াশ আর ক্রিম অথবা লোশন তো আমাদের অত্যাবশ্যকীয় দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মধ্যে অন্যতম।আর ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে নিয়মিত বিউটি পার্লার এবং বিউটি সেলুনে যাওয়া তো আমাদের বর্তমান জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এ সবই করি আমরা আমাদের দৈহিক সৌন্দর্য্যের অগ্রিম প্রোটেকশনের জন্য।কিন্তু আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ককে সুন্দর এবং শান্তিময় রাখতে আমরা কি করি? কিচ্ছুই করিনা।
করিনা, কারণ বিয়ে হয়ে গেলেই আমরা ধরে নেই এটি একটি অবধারিত সম্পর্ক, তাকে আবার কিসের যত্ন আত্তি!আসলেই কি তাই?তাহলে চারিদিকে এতো এতো বিবাহ বিচ্ছেদ কেন?কেনই বা গুমরে কাঁদে অসংখ্য দাম্পত্য সম্পর্ক? ঐযে! সংসারের তেল নুন আর বাচ্চাকাচ্চার ক্যাঁচরম্যাচরের চাপে নিজেদের সম্পর্ককে ঘষামাজার অভাব!গাছ লাগাবো কিন্তু তার নিয়মিত পরিচর্যা করবোনা অথচ হরেক রকমের ফুল চাই আমাদের,ব্যাপারটা তেমন হয়ে গেলো না? আলু নামের এক সবজিকে কতো ভাবে সুস্বাদু উপায়ে আমরা গপগপ করে খাই অথচ এক বিবাহিত জীবনে কোনো রঙ, রূপ বা বৈচিত্র্য নেই। তাই একে একেক সময় ক্লান্তিকর, বিরক্তিকর এবং বিষের মতো মনে হয়।কেন জানেন?ঐ ঘষামাজা হয় না বলে।দেহের, রূপের যেমন নিয়মিত পুষ্টি প্রয়োজন, পরিচর্যা করা প্রয়োজন তেমনি দাম্পত্য সম্পর্কেও অতি মাত্রায় পুষ্টি এবং পরিচর্যা করা প্রয়োজন। নয়ত তা একসময় হয় বিষময় হয়ে বিচ্ছেদ অবধারিত হয়ে যায় নয় অপুষ্টি নিয়ে ধুঁকেধুঁকে কোনোরকমে বেঁচে থাকে।মুখের বা দেহের পরিচর্যার জন্য কতো কি লোশন, ক্রিম, ফেইস ওয়াশ,বডি ওয়াশ লাগাই অথচ দাম্পত্য সম্পর্কের পরিচর্যার জন্য এক টিউব মলম লাগানোর সময় নেই আমাদের।তা করলে কি চলবে?সুন্দর এবং শান্তিময় জীবনের জন্য দাম্পত্য সম্পর্কে মাঝেমাঝেই ঝান্ডু বাম জাতীয় তীব্র ঝাঁঝালো ভালোবাসার নরম মোলায়েম মলম লাগাতে হয়! কিভাবে? দুনিয়াদারি ভুলে কিছুক্ষণের জন্য দু'জনে একা হয়ে যেতে হয়।কোনো কথা না বলেও হাতে হাত রেখে চুপচাপ খানিকক্ষণ বসে থাকতে হয়।কোনো রকম প্ল্যানিং ছাড়াই ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হয়।সামর্থ্যানুযায়ী মাঝেমাঝে ঘরের বাইরে গিয়ে খেয়ে আসতে হয়।রাস্তার ধার থেকে একটা বেলিফুলের মালা কিনে দিতে হয়।অন্তরে বিষ চেপে হাসিমুখে পছন্দের এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দিতে হয়।সারাক্ষণ এটা নাই, সেটা নাই কিংবা কই ছিলা এতক্ষণ? ঘরে আসতে ইচ্ছা করেনা?যেখানে ছিলা সেখানে বুঝি থাকার জায়গা নাই, তাই ঘরের কথা মনে পড়ছে? এই জাতীয় নিম্নশ্রেণীর কথাবার্তা বন্ধ রাখতে হয়।দীর্ঘদিনের কিংবা অল্পদিনের, সকল দাম্পত্য সম্পর্কেই দৈনন্দিন নানান পদের চাওয়া পাওয়ার হিসেব কষতে গিয়ে ছোট বড় বিভিন্ন জাতের ক্ষত সৃষ্টি হয় যেখানে নিয়ম করে এইসব ঝান্ডু বাম মার্কা ঝাঁঝাল কিন্তু নরম মোলায়েম মলম লাগাতে হয় তবেই না শান্তি আসবে!সারাক্ষণ ক্যাঁচরম্যাচর ক্যাঁচক্যাঁচানি খ্যাঁচখ্যাঁচানি কার ভাল্লাগে, বলুন? মলম লাগান! নিজেদের দাম্পত্য সম্পর্কে নরম মোলায়েম মলম লাগান তারপর দেখুন ফলাফল। একদম বিয়ের প্রথম দিককার অভিজ্ঞতা ফিরে আসবে নিশ্চিত। আজ সকালে আমরাও আমাদের বুড়িয়ে যাওয়া ক্ষতবিক্ষত দাম্পত্য সম্পর্কে মলম লাগাতে বেরিয়েছিলাম।অকারণেই!কোনো আগাম প্ল্যানিং ছাড়াই।কিন্তু মাঝপথে সুযোগ পেয়ে নরম মলমের জায়গায় বিখাউজ মলম লাগিয়ে ফেলেছি।ভুজুংভাজুং দিয়ে মাস্টার সাহেবকে এক সুপার শপে নিয়ে ঢুকিয়েছি।বাজার সদাই করা ওনার জীবনে বিষের মতো তাই সুপার শপে ঢোকার সময়ই চেহারা ওনার বিখাউজ হয়ে গিয়েছিলো কারণ জানেন তিনি,তাঁর স্ত্রী বাজারে গেলে মাথা আউলা হয়ে যায়।তবুও সারাক্ষণ ভ্রু কুঁচকে,মুখ শুকিয়ে আমার পেছন পেছন ঘুরেছেন আর আমি তিন ট্রলি বোঝাই করে যাচ্ছেতাই বাজার করে ফেলেছি।অথচ আমার ভ্যানিটিব্যাগ গড়েরমাঠ।নিজের ক্রেডিট কার্ড খানাও ব্যবহারের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই।অগত্যা মাস্টার সাহেব তিতামুখে বিল পে করে বললেন- ছুটির দিনে আমার সাথে এমন একটা বিশ্রী বিহেইভ কিভাবে করলে তুমি? আমি ভুবনজয়ী এক হাসি দিয়ে অপরাধী অপরাধী চেহারা নিয়ে চুপ করে থাকলাম।তারপর ফেরার পথে সারাটাক্ষণ ওনার হাতে হাত রেখে চুপচাপ বসে থাকলাম।এছাড়া আর উপায় নেই!অতি সাধারণ ঝান্ডু বাম জাতীয় ঝাঁঝালো মলমে আজ আর কাজ হবেনা! বুঝে গেছি ওনার এখন এন্টিবায়োটিক ট্রিটমেন্ট লাগবে তাই অন্তরে বিষ তবুও একমুখ হাসি দিয়ে বললাম-জ্যামে বসে থাকতে কার কতক্ষণ ভাল্লাগে! এসি বন্ধ করে গ্লাস নামিয়ে দেই, তুমি বরং একটা সিগারেট ধরাও।শুনে এমন খুশী হলেন যে মনে হোলো ডাবল ডোজ এন্টিবায়োটিক পেয়ে বাজারের পেমেন্ট করতে দিয়ে সৃষ্ট হওয়া দগদগে ক্ষত একবারেই হাওয়ায় উড়ে গেছে। ভালোবাসার ঘরের চালা কোনোভাবেই যায়না দলা যদি দু'জনের হয় সুন্দর পথচলা!মুখটাকে ঝকঝকে তকতকে রাখতে নানান জাতের ফেইস ওয়াশ আর ক্রিম অথবা লোশন তো আমাদের অত্যাবশ্যকীয় দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মধ্যে অন্যতম।আর ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে নিয়মিত বিউটি পার্লার এবং বিউটি সেলুনে যাওয়া তো আমাদের বর্তমান জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এ সবই করি আমরা আমাদের দৈহিক সৌন্দর্য্যের অগ্রিম প্রোটেকশনের জন্য।কিন্তু আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ককে সুন্দর এবং শান্তিময় রাখতে আমরা কি করি? কিচ্ছুই করিনা।
http://www.alokrekha.com
খুব ভাল লাগলো পড়ে।অন্য রকম লেখা।জিবনের বাস্তবতা।
ReplyDeleteখুবি ভাল লাগলো । সত্যি বিবাহিত জীবনকে আমরা "গ্র্যান্টেড" ধরে নেই.আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটা লেখা প্রকাশ করার জন্য।
ReplyDelete