মুক্তিযোদ্ধা-ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আর নেই। প্রিয়জন, প্রিয়মুখ যখন ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে তখন জীবন তন্ত্রীর যে তার ছিঁড়ে যায় তা আর সেই সুরে বাজে না। ফেরদৌসী আপা জানি তুমি বেঁচে থাকবে বাংলার মানুষের মনে- তোমার কর্মে আর তোমার ঋণ বাংলার মানুষ কোনদিন সিঁধ করতে পারবে না তার স্পর্ধাও নেই -তোমার কষ্ট তোমার ত্যাগ তিতিক্ষায় পেয়েছি একটি দেশ!একটি মানচিত্র!তোমাকে স্যালুট হে বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী —
মুক্তিযোদ্ধা-ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আর নেই। প্রিয়জন, প্রিয়মুখ
যখন ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে তখন জীবন তন্ত্রীর যে তার ছিঁড়ে যায় তা আর সেই সুরে
বাজে না। ফেরদৌসী আপা জানি তুমি বেঁচে থাকবে বাংলার মানুষের মনে- তোমার কর্মে আর তোমার
ঋণ বাংলার মানুষ কোনদিন সিঁধ করতে পারবে না তার স্পর্ধাও নেই -তোমার কষ্ট তোমার ত্যাগ
তিতিক্ষায় পেয়েছি একটি দেশ !একটি মানচিত্র! তোমাকে স্যালুট হে বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী —
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী (জন্ম: ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ মৃত্যু: ৬ মার্চ, ২০১৮ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ভাস্কর।[২] তাঁর শিল্পকর্ম বেশ জনপ্রিয়। মূলত ঘর সাজানো এবং নিজেকে সাজানোর জন্য দামী জিনিসের পরিবর্তে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে কিভাবে সাজানো যায় তার সন্ধান করা থেকেই তাঁর শিল্পচর্চার শুরু। নিম্ন আয়ের মানুষেরা কিভাবে অল্প খরচে সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে পারে সে বিষয়গুলো তিনি দেখিয়েছেন। ঝরা পাতা, মরা ডাল, গাছের গুড়ি দিয়েই মূলত তিনি গৃহের নানা শিল্প কর্মে তৈরি করতেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান। [জন্ম ও শিক্ষাজীবন
ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, খুলনায় নানার বাড়িতে। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ মাহবুবুল হক এবং মায়ের নাম রওশন হাসিনা।[৪] বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে প্রিয়ভাষিণী সবার বড়। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর নানা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম কংগ্রেস করতেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের শাসনকালে স্পিকার হয়েছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালে তার নানা সুপ্রিম কোর্টে কাজ করার জন্য ঢাকা চলে আসেন। প্রিয়ভাষিণীও নানার পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। ভর্তি হন টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে। পরবর্তীতে নানা মিন্টু রোডের বাসায় চলে এলে প্রিয়ভাষিণী ভর্তি হন সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে। তখন শহীদ জাহানারা ইমাম ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তিনি খুলনার পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা গার্লস স্কুল থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন।
কর্মজীবন
১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। মাঝে কিছুদিন স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি ইউএনডিপি, ইউএনআইসিইএফ, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। শেষ বয়সে এসে নানা শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন এবং তা অবিরামভাবে অব্যাহত রাখেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[৫][৬][৭] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।[৮] এছাড়াও তিনি
হিরো বাই দ্যা রিডার ডাইজেস্ট ম্যাগাজিন (ডিসেম্বর ২০০৪);
চাদেরনাথ পদক;
অনন্য শীর্ষ পদক;
রৌপ্য জয়ন্তী পুরস্কার (ওয়াইডব্লিউসিএ);
মানবাধিকার সংস্থা কর্তৃক মানবাধিকার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
পারিবারিক জীবন
১৯৬৩ সালে প্রথম বিয়ে করেন এবং ১৯৭১ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর। ১৯৭২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তাঁর দ্বিতীয় স্বামী আহসান উল্লাহ আহমেদ ছিলেন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। তার ছয় সন্তান কারু তিতাস, কাজী মহম্মদ নাসের, কাজী মহম্মদ শাকের (তূর্য্য), তিন মেয়ে-রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী, রত্নেশ্বরী প্রিয়দর্শিনী ও ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী।
প্রখ্যাত ভাস্কর-মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আর নেই ।মঙ্গলবার (৬ মার্চ) দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।ল্যাবএইড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা লেনিন বাংলানিউজকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।পরে প্রিয়ভাষিণীর বড় ছেলে কারুতিতাস সাংবাদিকদের বলেন, আজ মরদেহ হাসপাতালে থাকবে। কাল (৭ মার্চ) ছোট ভাই কাজী সসাক তূর্য অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরলে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোথায় সমাহিত করা হবে।
তিনি দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও লিভার, কিডনি, ইউরিন ও থাইরয়েডের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এছাড়া গত ৮ নভেম্বর বাথরুমে পড়ে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পান। সেসময় হাসপাতালে নিয়ে কয়েক দফা তার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রয়াতের পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহাম্মদ সামাদ বাংলানিউজকে জানান, দুপুরের পর প্রিয়ভাষিণীর মরদেহ পিংক সিটির বাসায় নেওয়া হবে। সেখান থেকে গোসলের পর ল্যাবএইড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। এরপর তার দুই ছেলে বিদেশ থেকে আসার পর বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত প্রিয়ভাষিণীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ওইদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে বলে জানান মোহাম্মদ সামাদ।জানা যায়, আগামী শনিবার (১০ মার্চ) বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রিয়ভাষিণীর স্মরণে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে।তিন ছেলে ও তিন মেয়ের জননী প্রিয়ভাষিণী বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় নতুন ধারার সন্ধান দেন। ঘর সাজানো ও নিজেকে সাজানোর জন্য দামি জিনিসের পরিবর্তে চারপাশে পাওয়া ডাল, পাতা প্রভৃতি উপকরণ ব্যবহার প্রচলন করেন তিনি। ভাস্কর্য শিল্পে তার কাঠের কাজ খুবই দৃষ্টিগ্রাহ্য।
তথ্যসূত্র --- উইকিপিডিয়া
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
http://www.alokrekha.com
মুক্তিযোদ্ধা-ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে নিয়ে এমন তথ্য বহুল লেখা লেখার জন্য আলকরেখাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।অনেক অজানা ব্যক্তিগত জানা হল এই মহান মানুষটির সম্পর্কে। আবারো ধন্যবাদ !
ReplyDeleteমুক্তিযোদ্ধা-ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে নিয়ে এমন তথ্য বহুল লেখা লেখার জন্য সানজিদা রুমিকে ধন্যবাদ ।ভিডিওগুলি দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। এমন লক্ষ নারীর বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীনতা। আমরা কি তার মূল্য দিতে পারছি ? আলোকরেকে অনেক ধন্যবাদ এই বরেণ্য মানুষটিকে স্মরণ করার জন্য।
ReplyDeleteআলোকরেখা শুধু যে একটা সাহিত্য বিষয়ক নয় সাম্প্রতিক বিষয় ও আলোকিত ব্যক্তিত্বদের লেখা জ্ঞানের পরিধি উজ্জ্বল করে প্রজ্ঞা আলোকিত করে। মুক্তিযোদ্ধা-ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে নিয়ে এমন তথ্য বহুল লেখা লেখার জন্য সানজিদা রুমিকে ধন্যবাদ । লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীনতা। অপূর্ব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য ও অনিন্দ্য এক লেখা।
ReplyDelete