আমার আজকের লেখাটা হয়তো অনেকের মনপুত না হতে পারে কারন এই বিষয়টি আমরা লুকিয়ে রাখতে পছদ করি। "দ্বিতীয় নারী" অর্থাৎ দুয়োরানী যার স্থান সামাজিক ভাবে হেয় নিন্দিত ও লুকায়িত। আর সুয়োরানী অর্থাৎ আইন কানুন বিধি সম্মত সামাজিক ভাবে যে নন্দিত । রাজার মাথার মুকুট। তার স্থান সমাজের সব থেকে উপরে।তার বাহুশালায় বন্দি রাজা অনুক্ষণ। চোখে চোখে রাখে রাজাকে সারাক্ষন।তবুও কেন রাজা রানীর আঁখিতে খুঁজে ফের দুয়োরানীর ছায়া। কোথায় নেই দুয়োরানী।এক ফুৎকারে রানী ও সমাজের দণ্ড বিধি দিয়েছে নিভিয়ে "দ্বিতীয় নারীর" স্মৃতির প্রদীপখানি।আইন করে বিতাড়িত করেছে রাজার জীবন ও রাজ্য হতে বশে রাজা, নির্বাসিত দুয়োরানী, তবুও ভয় কেন সুয়োরানীর ? বুক দুরু দুরু ক্লেশিত চিত্ত।।
নিঃস্ব হয়েও সেই দ্বিতীয় নারী সব কিছুই তার । দূর থেকে রাজার বুকে বাঁশীর যে সুর পারে বাজাতে ।সোনার পালঙ্কে শুয়ে বুকে বুক মিশিয়েও পারে না রানী সে সুর সাধতে।ওর ঐ বাঁশের বাঁশীতে সুর বাজ্ল, কিন্তু সুয়োরানীর সোনার বাঁশী কেবল বয়েই বেড়ালো, আগলে রাখলো, বাজাতে পারল না।
আজ এই নারী দিবসের প্রাক্কালে আশা করি এই " দ্বিতীয় নারী"দের নিয়ে লেখাটা পাঠকরা পড়বেন আর তাদের নিন্দিত নয় নন্দিত দিষ্টিতে দেখবেন ।
দুয়োরানী
সানজিদা রুমি
রাজার কেন এই মর্ম যাতন? কি চায়? কিসের অভার? সাত মহলার প্রাসাদ,রাজ্য,দাসী দাস সোনার খাটে গা রুপোর দানে পা। রানীর বাহুশালায় বন্দি অনুক্ষণ। রানী চোখে
চোখে রাখে রাজাকে সারাক্ষন। তবুও রাজা কেন রানীর চোখেতে আঁখিতে খুঁজে ফের দুয়োরানীর মায়া
? কোন এক বসন্তের রঙে রাঙিয়েছিল এক সামান্য নারী। রাজা গেয়ে উঠেছিলে "রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো এবার যাবার আগে ।আপন রাগে , গোপন রাগে ,তরুণ হাসির অরুণ রাগে ,অশ্রুজলের করুণ রাগে ।রঙ যেন মোর মর্মে লাগে— আমার সকল কর্মে লাগে সন্ধ্যা দীপের আগায় লাগে-গভীর রাতের জাগায় লাগে ।যাবার আগে যাও গো আমায় জাগিয়ে দিয়ে ,রক্তে তোমার চরণদোলা লাগিয়ে দিয়ে ।আঁধার নিশার বক্ষে যেমন তারা জাগে ,পাষাণগুহার কক্ষে নিঝর-ধারা জাগে ,মেঘের বুকে যেমন মেঘের মন্দ্র জাগে ,বিশ্বনাচের কেন্দ্রে যেমন ছন্দ জাগে—তেমনি আমায় দোল দিয়ে যাও যাবার পথে আগিয়ে দিয়ে কাঁদন বাঁধন ভাগিয়ে দিয়ে "।
রাজাতো আর চায় না দুয়োরানীর পানে কোথায় কেমন আছে কেমন আছে তাও নাহি জানে।তবুও কেন বুক দুরু দুরু ক্লেশিত চিত্ত। দেখে অশনি সংকেতের ছায়া।বিমর্ষিত রাজা,বিষাদ নয়নে বিম্বিত প্রতিফলিত রাজার সুপ্ত স্বপনে। যদিও রানীর অধিকারে রাজা তারই দাবিদার।মুক্তা মনি মালা গলায় ভরপুর সংসার।রূপবতী রাজকুমারী গুণবান রাজকুমার।রাজা রাজ্য, সখি সবে জীবন, আনন্দ উৎসবে মুখর তবুও কিছুই ভাল লাগে না রাজার অশান্ত দেহ অন্তর।আরাম পায় না মন মুক্তা মনি মালায় নৃত্য বাদ্য বাজনে বদ্যিও পারে না দিতে দু'দন্ড স্বস্তি,বিষাদ বিধুর মর্মযাতনা প্রাণে শুধায় সবে তার চাই, কিসে হবে শান্তি সুখ কিছু কি উপায় নাই ? রাজা জানে, কোথায় নেই দুয়োরানী।
এক ফুৎকারে নিভায়ে দিয়েছে রানী তার স্মৃতির প্রদীপখানি।আইন করে বিতাড়িত করেছে রাজার জীবন ও রাজ্য হতে বশে রাজা, নির্বাসিত দুয়োরানী,
তবুও ভয় কেন তার চিত্বে।
তবু রাজার হৃদয় কেঁদে মরে "কেন খুঁজে ফিরি দুয়োরানীর ছায়া
রানীর আঁখিতে।আমি চাই না এই রূপ চাই দুয়োরানীর সাজ সজ্জা মোহিনী বিমোহক রূপ। চাই দুয়ো
রানীর লজ্জা যাও সবে চলে, পারোনা ভুলাতে আমার
অন্তর”
রাজা এসে দুহাত ধরে শুধায় রানীকে " চাই পরনে শাড়ি লাল পেড়ে হাতে সাদা শাঁখা,ভিজে চুলে সিঁথিতে সিঁদুর তপস্বিনী যেন দেবমন্দিরে"। রানী হেসে কুটিকুটি
বলে” এতো সাধারন সাজ! আমি রানী আঁকা চিত্র পটে এ কি " তোমায় মানায় "? রাজা বলে " না তাই আমার চাই, শুনবো না কোন কথা। কথা দাও তুমি দেবে আমায়"। “আচ্ছা বেশ, তুমি যা চাও তাই হবে তোমার কথার অবাধ্য হয়েছি কখন কবে?” রানি বলে। ডেকে পাঠানো হল নামি দামি সব পসারী বণিক করিতে পূরণ রাজার ইচ্ছা অভিলাষ,স্বয়ং রাজা সযত্নে যাচাই বাছাই করলেন শ্রেষ্ঠ দামি পণ্যদ্রব্য মনে তাঁর আনন্দ উল্লাস।কপালে লাল টিপ্, হাতে শাঁখা সাদা, সিঁথিতে সিঁদুর, দামী লাল পেড়ে গরদের শাড়ি পরে জুঁই ফুলের মালায় জড়ানো এলো চুলে রাজার সামনে দাঁড়াল রানী দাম্ভিক অহংকারে।রাজা সহজাত সুলভ হাসি দিয়ে জড়ায়ে ধরে বুকে আহা এত সুখ এই সাজে, রানীর চোখ সজল হলো সুখে।ক্ষণেক পরে মিলালো রানী আপন নয়ন রাজার আঁখি পাতায় নিজেরে কোথাও পেলো না খুঁজে দুয়োরাণীর ছায়া
অবনমিত হলো লজ্জায়।
সোনার সিংহাসনে আসীন রাজা স্বস্তি নেই মনে। রানী এসে বলে “ কী হয়েছে তোমার, কি চাই? রাজা বললো " তুমি আমায় নাচ দেখাবে ? গা-ন - -গান শোনাবে?ঠুমরি ? অবাক হয়ে বলে রানী "না না এতো ! বাঈজীদের কাজ কেন এই মন বাসনা ? আমি রানী আঁকা চিত্র পটে. আমায় এসব মানায় না। রাজা বলে "না তাই আমার চাই মানবো না কোন কথায়। রানী বললে "বেশ যেমন তোমার অভিপ্রায়"।আবার তলব করা হলো রাজ্যের সুপ্রসিদ্ধ, নৃত্য সংগীত গুরুরানীর বিরামহীন অধ্যাবসায় ও অধ্যায়নের তালিম হলো শুরু।তালিম শেষে জ্ঞানদীপ্ত রানী মধুবনে পূর্ণিমার জ্যোৎস্না রাতে সমস্ত রাত নাচলো গাইলো রানী প্রাণময় রাজার সাথে।বিস্ময় আনন্দিত রাজা! তাঁর কথা সরে না প্রশংসায়। রাজার চোখ রানীর চোখেতে চেয়ে আবার অবনমিত হলো লজ্জায়। কোথাও খুঁজে পেল না দূয়োরাণীর মায়া। তার পর কি জানি কি হল উদাস একলা বসে থাকি, মুখে কথা নেই রাজা'র। রানী রোজ এসে শুধায়, “ কী হয়েছে তোমার, কি চাই?” উত্তরে কিছুই বলে না রাজা। মনে মনে বলে " রানী আমি দুয়োরানি'কে চাই। সবকিছু আমার থেকেও নাই। দূর থেকে আমার বুকে আমার চোখে বাঁশীর যে সুর পারে বাজাতে সোনার পালঙ্কে শুয়ে বুকে বুক মিশিয়েও রানী পারেনি সে সুর সাধতে।ওর ঐ বাঁশের বাঁশীতে সুর বাজ্ল, কিন্তু আমার সোনার বাঁশী কেবল বয়েই বেড়ালেম আগলে বেড়ালেম, বাজাতে পারলেম না।”
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
http://www.alokrekha.com
আমার বলার ভাষা নেই
ReplyDeleteদারুন দারুন দারুন
অতুলোনীয়
কি অপূর্ব বিষয় বস্তু, কি চমৎকার ভাষাভাব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য লেখা।সমাজে লুকিয়ে রাখা অবহেলিত নারীদের কথা ও সমাজে তাদের বিষয়ে লেখা প্রশংসার দাবিদার। সানজিদা রুমিকে অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।
ReplyDelete" অপূর্ব বিষয় বস্তু, কি চমৎকার ভাষাভাব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য লেখা।" এ নিয়ে কথা বলবো না এই সাহসিকতা পূর্ণ লেখা সত্যি প্রশংসার দাবিদার সানজিদা রুমি তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ও সর্বদা এই সাহসিকতার জন্য শুভেচ্ছা
ReplyDeleteআমি একজন নারী। সমাজে আমি আমার মর্যাদা পাইনি। আমার ভালোবাসা নিয়ম অনুযায়ী কিন্তু আইনি ভাবে নয় বলে আমায় চুপি চুপি থাকতে হয় সমাজের আড়ালে। সানজিদা রুমিকে জানি না কি বলে ধন্যবাদ দেব।
ReplyDelete