উপেক্ষিতা মধুবালা।
- হাসান মীর
প্রতিবছর ৮ই মার্চ বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নানা দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয়। এই দিন সভা- সেমিনার ও সংবাদমাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্নক্ষেত্রে আলোচিত নারীদের নিয়ে আলোচনা- পর্যালোচনা হয়ে থাকে।
এবারও তেমনি হয়েছে এবং স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেলো, বিখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সেদিন অন্যান্য বিষয়ের সাথে বিশ্বজুড়ে কয়েকজন খ্যাত অথচ উপেক্ষিত (overlooked) চিত্র তারকার নামের তালিকা প্রকাশ করেছে যার মধ্যে হলিউডের মেরিলিন মনরো ( Marilyn Monroe, যার প্রকৃত নাম Norma Jeane Mortanson, শৈশব কেটেছে অনাথআলয় ও দত্তক পিতার সংসারে) আর বলিউড তথা তখনকার বোম্বাই চলচ্চিত্র জগতের মধুবালার নাম উল্লেখ করেছে। পত্রিকার বিচারে, এই দুই তারকাই জীবনে সংগ্রাম করে বিখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কিন্তু শেষ বিচারে অনেকের দৃষ্টিতে অবহেলিত ও উপেক্ষিত হয়ে অকালে ইহজগত থেকে বিদায় নেন।
দুজনেই মারা গেছেন ৩৬ বছর বয়েসে, যদিও মনরো ছিলেন সাত বছরের বড়। তিনি ব্যর্থ জীবনে হতাশ হয়ে বিষযুক্ত ঔষধপানে আত্মহত্যা করেন আর মধুবালা দীর্ঘদিন জটিল রোগে ভুগে আর জীবনের প্রতি একইরকম বিতৃষ্ণা নিয়ে মারা যান। মনরো মারা গেছেন ১৯৬২তে আর মধুবালা ১৯৬৯'এ, এখানেও ব্যবধান সাত বছরের। দুজনের কারুরই বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না, তবে মনরো সুখের সন্ধানে বিয়ে করেন তিনবার আর মধুবালা একবারই এবং তাও নাকি প্রাক্তন প্রেমিক দিলীপকুমারের প্রতি প্রতিশোধ নিতে কিন্তু ভাগ্য এদের সহায় ছিল না। মনরো আর মধুবালা দুজনেই নিঃসন্তান ছিলেন।এবারও তেমনি হয়েছে এবং স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেলো, বিখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সেদিন অন্যান্য বিষয়ের সাথে বিশ্বজুড়ে কয়েকজন খ্যাত অথচ উপেক্ষিত (overlooked) চিত্র তারকার নামের তালিকা প্রকাশ করেছে যার মধ্যে হলিউডের মেরিলিন মনরো ( Marilyn Monroe, যার প্রকৃত নাম Norma Jeane Mortanson, শৈশব কেটেছে অনাথআলয় ও দত্তক পিতার সংসারে) আর বলিউড তথা তখনকার বোম্বাই চলচ্চিত্র জগতের মধুবালার নাম উল্লেখ করেছে। পত্রিকার বিচারে, এই দুই তারকাই জীবনে সংগ্রাম করে বিখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কিন্তু শেষ বিচারে অনেকের দৃষ্টিতে অবহেলিত ও উপেক্ষিত হয়ে অকালে ইহজগত থেকে বিদায় নেন।
আজ আমার লেখার প্রধান বিষয় মূলত মধুবালা, সাথে N.Y. Times' এর প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এসে গেছেন মেরিলিন মনরো। আমি একসময় বলতাম এবং এখনও জানি, আমার সবচেয়ে প্রিয় চিত্রনায়িকা সুচিত্রা সেন। এরপর আছেন সেকালের মধুবালা আর একালের মাধুরী দীক্ষিত, যার মুখচ্ছবিতে আমি মিসেস সেনের ছায়া দেখতে পাই। আর মধুবালা তো কেবল নার্গিস - মীনাকুমারীদের যুগ বলেই নয়, অনেকের মতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক সুন্দর আর আকর্ষণীয় অভিনেত্রী। মধুবালার জন্ম ১৯৩৩'এর ১৪ই ফেব্রুয়ারী দিল্লীতে আর মারা গেছেন বোম্বাইয়ে ১৯৬৯'এর ২৩শে ফেব্রুয়ারি। তার বাবা আতাউল্লাহ খানের বাড়ি ছিল পেশোয়ারে, সামান্য বেতনের চাকরি করতেন। একসময় তাও চলে গেলে ভাগ্যান্বেষণে দিল্লী চলে আসেন। সেখানেই মধুবালার জন্ম এবং দিল্লীতে জন্ম বলে পিতৃদত্ত পুরো নাম মমতাজ জাবীন দেহলভী। মায়ের নাম ছিল আয়েশা বেগম। ( এই প্রসঙ্গেই আভাস দিয়ে রাখি, দিলীপকুমার, যার পৈত্রিক নাম মোহাম্মদ ইউসুফ খান, জন্মেছিলেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়ারে। তাঁর ফল ব্যবসায়ী বাবা গোলাম সারোয়ার আলী খান, ব্যবসায়ে উন্নতির আশায় এসেছিলেন মহারাষ্ট্রের পুনা আর ইউসুফ খানেরও মায়ের নাম আয়েশা। ইউসুফের নাম দিলীপকুমার আর মমতাজের নাম মধুবালা রাখা এবং এদের দুই জনকেই ফিল্মে ব্রেক দিয়েছিলেন সেকালের বিখ্যাত নায়িকা দেবিকা রাণী।)
মধুবালা মাত্র ১৪ বছর বয়েসে সিনেমায় আসেন মুলত সংসারে অভাব- অনটনের কারণে তার বাবার উৎসাহে। প্রথম ছবি ছিল কেদার শর্মার নীলকমল। সব মিলিয়ে ৭০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলা যায় মুঘল- এ- আজম ( ১৯৬০ ), নায়ক ছিলেন দিলীপকুমার। অন্যগুলি - মিস্টার অ্যান্ড মিসেস 55, মহল (অশোক কুমার) , বরসাত কি রাত, দুলারী, চলতি কা নাম গাড়ি, সাংদিল, তারানা ( দিলীপকুমার, ১৯৫১), জালওয়া, সাকি, অপরাধী, অমর ইত্যাদি। তারানা ছবিতে অভিনয়কালে দিলীপের সাথে মধুবালার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা বিয়ের সিদ্ধান্তও নেন। তবে যে কারণেই হোক, মধুর বাবা দিলীপকে পছন্দ করতেন না। তাছাড়া মেয়ের উপার্জনেই সংসার চলতো। হয়তো এজন্যে দিলীপকুমার বিয়ের আগে দুটি শর্ত দিয়েছিলেন - অভিনয় ছাড়তে হবে আর বাবার সংসারের সাথে সম্পর্ক রাখা চলবে না। মধুবালা প্রথমটি মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু দ্বিতীয় শর্তে রাজি হননি। শেষতক তাদের বিয়েটাও আর হয়নি। এরপর ১৯৫৮তে কিশোর কুমারের সঙ্গে চলতি কা নাম গাড়ি ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে ( এতে অশোক কুমারও ছিলেন) মধুবালার ঘনিষ্ঠতা হয়। কিশোর কুমার ছিলেন আমুদে মানুষ, যেমন অভিনয় তেমনি গান। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়েছিল , তিনি মধুবালাকে বিয়ে করলেন ( ১৯৬০ )। অনেকের ধারণা, দিলীপকুমারের ওপর শোধ নিতেই নাকি মধুবালা কিশোরকে বিয়ে করেন। তবে যে কারণেই হোক, বিয়েটা সুখের হয়নি। মধুবালা অনেক আগে থেকেই জটিল অসুখে ভুগছিলেন, তার হার্টে ছিদ্র ছিল, এখনকার ডাক্তারি ভাষায় রোগের নাম ভেন্ট্রিকুলার সেফটলি ডিফেক্ট ( VSD.) কিন্তু তখন দেশে এর চিকিৎসা ছিল না। বিয়ের পর তিনি লন্ডন গেলেন কিন্তু তখন দেরি হয়ে গেছে, চিকিৎসকরা খুব একটা ভরসা দিলেন না। দেশে ফিরে আবারও অভিনয়, কাজের চাপ এবং স্টুডিওর চড়া আলো আর রুদ্ধ পরিবেশ তাকে দ্রুত মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলো, ১৯৬৯'এর শুরুর দিকে তিনি চিরবিদায় নিলেন। বিখ্যাত মুঘল-এ- আজম করার সময় দিলীপকুমারের সঙ্গে তার সম্পর্ক একেবারে তলানিতে, ছবির সংলাপ ছাড়া তেমন কথাও হয় না, কেবল পরিচালক কে. আসিফের আর্থিক ক্ষতি আর মান বাঁচাতেই তিনি দিলীপকুমারের নায়িকা হতে রাজি হয়েছিলেন, যে ঐতিহাসিক কাহিনীভিত্তিক চলচ্চিত্রটি তাদের স্মৃতি অমর করে রাখবে।
পাদটীকা : দিলীপকুমার তথা ইউসুফ খান ( জন্ম ১৯২২ ) পরবর্তীকালে তাঁর চেয়ে বয়েসে ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুকে বিয়ে করেন ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে। মুম্বাইয়ের বাড়িতে তাঁরা বার্ধক্যজনিত অসুখবিসুখ নিয়ে এখনো সুখের ঘর করছেন।
কিশোর কুমার মারা গেছেন অক্টোবর ১৩, ১৯৮৭। তার প্রথম স্ত্রী রুমাগুহ ঠাকুরতা, এক সন্তান গায়ক অমিতকুমার। মধুবালার পর তিনি আরও দুজন অভিনেত্রী লীনা চন্দ্রাভারকর ও যোগিতাবলীকে বিয়ে করেছিলেন। (তথ্য ও মধুবালার ছবি দুটি উইকিপিডিয়া / গুগল থেকে নেয়া।)
http://www.alokrekha.com
লেখক হাসান মীরের "উপেক্ষিতা মধুবালা।" অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পারলাম জনপ্রিয় মধুবালা সম্পর্কে । এইভাবে অপূর্ব লেখনির সাথে সুগভীর অনুচিন্তন,ভাব,আশাবাদ,উপেক্ষিত বেদনার অভিব্যক্তি ছায়া দেখতে পাই । অপূর্ব শব্দশৈলী চমৎকার। অপরূপ-বহুবর্ণ ও ভাষার প্রকাশ। উত্কৃষ্ট ও চমৎকার সৃষ্ট লেখা "উপেক্ষিতা মধুবালা।"
ReplyDeleteজনপ্রিয় মধুবালা সম্পর্কে ।লেখক হাসান মীরের "উপেক্ষিতা মধুবালা।" লেখায় অনেক নতুন নতুন তথ্য আমাদের পরিচিত করিয়েছেন । অনবদ্য লেখনি শক্তি।আলকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ নতুন লেখকের নতুন নতুন লেখা দিয়ে আমাদের প্রজ্ঞার আলোকিত করার জন্য।অনেক ভালোবাসা !!!
ReplyDelete