অনন্দিত উত্তরণ -২
-- সানজিদা রুমি
হঠাৎ মেয়ের চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পায়।
-মা আমি শাড়ি পড়তে পারছি না -কিযে ঝামেলা শোন্ তাড়াতাড়ি আসো।
আর যাই হোক সঞ্চিতার মনে একধরণের ভালোলাগা যে তার ছেলে মেয়েরা বাংলা কথা বলতে পারে -পড়তেও জানে একটু আধটু এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব কিন্তু সঞ্চিতার।
সেই ছোট থেকেই বাচ্চারা যেন বাংলা বলে তার জন্য কোন ত্রূটি রাখেননি সে ,আবার চিৎকার
সেই ছোট থেকেই বাচ্চারা যেন বাংলা বলে তার জন্য কোন ত্রূটি রাখেননি সে ,আবার চিৎকার
মা---------- ইউ আর টু মাচ -তাড়াতাড়ি আসো -এই ক্যান্ট ওয়েট ! কাম কুইকলি।
সঞ্চিতার হাতের কাজ
শেষ।
-এইতো আসছি মা
বলেই ঘরে ঢোকে।হাতের জিনিসগুলি ছেলেকে জায়গা মত রাখতে বলে মেয়ের
ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
-এতক্ষন লাগে ? কিভাবে এই শাড়ি ম্যনেজ
কর।আজব এক ড্রেস
-আজব হবে কেন এতাই ত আমার সংস্কৃতি
আমাদের পরিচয়
-প্লিস মা এখন আবার লেকচার দিতে শুরু
করে দিও না ।প্লিস হেল্প মি
সঞ্চিতা তাড়াতাড়ি হাত চালায় শাড়ি পরাতে।
-আচ্ছা মা সত্যি করে বলত সারাদিন শাড়ি
পরে থাক- কি করে কমফোর্টেবেল থাকো
নারে অভ্যেস হয়ে গেছে সেই বিয়ের পর
থেকে আই দেশে আসা অব্দি ২৪ ঘণ্টা শাড়ি পরে থাকতাম
--রাতেও ঘুমাতে !!! ইম্পসিবাল
--রাতে শুধু না –সৌগত হবার সময়ও শাড়ি
পরে থাকতাম। সৌগত সঞ্চিতার বড় ছেলে ভাল নাম ইশরাক চৌধুরী ।সঞ্চিতার চখের মনি - ওর খুব
ভাল বন্ধু ।সঞ্চিতাকে যদি কেউ বুঝে থাকে সে তার ছেলে সৌগত।
--মিন্স ইন উর প্রেগ্নেন্সি ? ওহ মাই
গড –শ্রেষ্ঠা অবাক হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে।
---আসলেও অনেক কষ্ট রে –তুই যখন এদেশে
জন্ম হলি --লাইফ ওয়াজ সো ইজি
বলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে ।থু থু!
চোখে ছাই! কি দারন লাগছে চোখ ফেরানো যায় না ।অনেক অনেক অবশ্য বলে মেয়ে দেখতে সঞ্চয়িতার
মত দেখতে হয়েছে।সেই টানা টানা মায়াবি চোখ সেই মুখচ্ছবি ।
মেয়েকে সাজিয়ে দ্রুত নিজে সাজতে চলে
যায়।সেজেগুজে ঘরের বাইরে সিঁড়ির গোঁড়ায় এসে দাঁড়ায়। পরনে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি , কপালে
লাল জ্বলজ্বলে টিপ এলো খোঁপায় সাদা ফুলের মালা। সাক্ষাৎ দেবির মূর্তি ।নিচে দাঁড়িয়ে
শাফকাত সম্মোহিত দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ ফেরান যায় না।
রোজই দেখে কোনদিন ভাল করে দেখেই নি
সঞ্চিতার সৌন্দর্য । মনের ভেতর অন্য এক অনুভুতি কাজ করে।অপলক তাকিয়ে থাকে । সঞ্চিতা
উপর থেকেই জিজ্ঞেস করে – এই বলনা কেমন লাগছে
শাফকাত একটু অপ্রস্তুত হয়ে দায়সারা
ভাবে উত্তর দেয়
ভালো! এবার উপরে না দাঁড়িয়ে থেকে মহারানী
নিচে নেমে মেহমান রিসিভ কর –বলেই সে বাইরে বিরিয়ে যায় ।
সঞ্চিতা কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে
ভাবে – শুধু ভাল? যাক তাও তো ভাল বলেছে। তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে অতিথদের অভ্যর্থনা জানাতে।
আজ প্রায় ১৫/ ১৬ বছর ধরে এই নববর্ষ পালন করে আসছে সাফকাত চৌধুরী নিজ বাসায়। সে যে খুব বাংলা সংস্কৃতি মননের তা নয়। কিন্তু এটা একটা স্ট্যাটাস বাঙলি ও বিদেশী সমাজে। সাফকাত চইধুরি ত বলেই খালাশ।সব করেতে হয় সঞ্চিতাকে । শাফকাত চৌধুরী তো বলেই খালাস। সব দায় সঞ্চিতার।
এমনিতেই জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠও ওকেই করতে
হয়। তার উপর এই ঝামেলা। মা দুগ্গার মত হাত
যদি ওর থাকতো। তবে কত ভাল হত।
যাই হোক অন্যান্য বছরের মত ভালই ভালই
সব মিটে গেল। সবার মুখে কেবল শুধু প্রশংসা আর প্রশংসা। শাফকাতের চোখে মুখে গর্বের হাসি।সঞ্চিতার আপেক্ষায় ক্লান্ত একটা
শব্দ শোনার জন্য শাফকাতের মুখ থেকে “ধন্যবাদ” ।ছেলে সৌগত মাকে জড়িয়ে বলেছে –
মা ইউ আর গ্রেট ! সুপার্ব ! কি অনুষ্ঠান করেছো সবার মুখ থেকে কোঠা সরে না -মুখ একেবারে হাঁ হতে গেছে মা ! আই এম সো প্রাউড অফ ইউ। বলে মার গলা জড়িয়ে ধরে।
-আহা ছাড় ছাড় হয়েছে হয়েছে ! আর মার্ ভুঁয়া প্রশংসা করতে হবে না ! আগে বল কি কিছু চাই ? বলেই সঞ্চিতা হাসতে থাকে -
-মা তুমি না -- সত্যি কথা বললাম আর তোমার মেয়েতো কিছুই বললো না -তবুও তুমি মেয়ে মেয়ে করবে -আসলেও তুমি ওকেই ভালবাসো -আমি যাই বলি না কেন -
-বাহ্ বললেই হল না ? শোন ! পাঁচটি আঙুলের যে কোন একটি এগুলি কাটলে একই ব্যথা লাগবে -নাকি কম বেশি বল -
-- না মা তুমি যতই বল আমি কিন্তু -
তোমাদের মা ছেলের বকবক বন্ধ কর আমার ঘুম পেয়েছে -শাফকাত ভারী গলায় চেঁচিয়ে ওঠে।
--এই যা যা -অনেক ধকল গেছে ঘুমুতে যা। আর বাবা যাবার সময় প্লিস চাচীমার ঘরে যেয়ে একটু দেখবি যে ওনার কিছু লাগবে না কি ?বেচারা অনেক কষ্ট করেছে।
গুড- নাইট মা রাতুল মার্ গালে চুমু দিয়ে চলে যায়।
সঞ্চিতা কানের ঝুমকা খুলতে খুলতে বলে
কি গো তুমি কিছু বললে না
কি ব্যাপারে -শাফকাত উত্তর দে
না সবাই অনুষ্ঠানের এত প্রশংসা করলো তুমি তো কিছু -
এটা আবার নতুন করে বলার কি হলো ! শাফকাত চৌধুরীর বাড়ীর পার্টি ভালো হতেই হবে। ঘুমাতে এস -লাইট নেভায় বড্ড ঘুম পেয়েছে। - বলেই পাশ ফিরে শোয়ে।
সঞ্চিতার অজান্তে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। তাড়াতাড়ি চেইঞ্জ করে ঘুমাতে যায়। স্বামীর ঘুমে ডিস্টার্ব হবে তাই আজ আর ডাইরি লেখা হলো না।
চলবে----
চলবে----
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
http://www.alokrekha.com
সানজিদা রুমির "অনন্দিত উত্তরণ" গল্পটি এত ইটারেস্টিং। গল্পের বিষয় , পাত্র পাত্রী ইত্যাদি মিলিয়ে অনবদ্য। কিন্তু পর্বগুলো এত দেরীতে প্রকাশিত হওয়ায় আমাদের ধৈর্যের ও গল্পের ম্যান ক্ষুন্ন হয় বলে আমার মনে হয়। আশা করি সানজিদা রুমি এ বিষয়ে সজাগ হবেন।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির "অনন্দিত উত্তরণ" গল্পটির প্রতিটি চরিত্র খুব জীবন্ত জর্ন আমারদের আসে পাশের মানুষগুলি বিশেষ করে আমরা যারা বিদেশে থাকি তাদের কাছে। খুব ভাল লাগছে গল্পটি পড়তে। বাকিটার অপেক্ষায় রইলাম
ReplyDeleteসানজিদা রুমির "অনন্দিত উত্তরণ" গল্পটির প্রধান চরিত্র সঞ্চিতার জীবন মেয়েদের জীবনের প্রতিফলন। দেশ বদলায় সমাজ সভ্যতা বদলায় মেয়েদের জীবন বদলায় না। খুব আবেগস্পর্শী লেখা। বাকিটা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির "অনন্দিত উত্তরণ" গল্পটির জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি । প্রতিটি চরিত্র যেন আমারদের পাশের জন। সঞ্চিতা আর শাফকাতের সম্পর্ক আমাদের মনে করিয়ে দেয় আজো স্ত্রী তার স্বামী দ্বারা নিগৃহীত প্রতি পদে। সঞ্চিতার জার চরিত্র অতি মজার করে লেখন অঙ্কিত করেছেন।.বিদেশের জীবনযাত্রার তুলে এনেছেন অনবদ্য ভাবে। তাছাড়া মন ও মননের সুগভীর অনুচিন্তন,ভাব,আশাবাদ,প্রেরণার অভিব্যক্তি ছায়া দেখতে পাই । অপূর্ব শব্দশৈলী চমৎকার। অপরূপ-বহুবর্ণ ও ভাষার প্রকাশ। উত্কৃষ্ট ও চমৎকার বিষয় বস্তু,ভাষাভাব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য সৃষ্ট গল্প ।
ReplyDelete