বঁধু হে! একা বসে থাকি...।
ঋতু মীর
অবশেষে জেনেছি মানুষ একা !
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও
ভীষণ অচেনা ও একা !
দৃশ্যের বিপরীত সে পারেনা একাত্ম হতে
এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন।
এই উপাখ্যান একা, একাকীত্ব আর অনেক মানুষের ভিড়ে থেকেও অন্তরে নিরন্তর নির্জন হয়ে যাওয়ার সাতকাহন। মানুষ মুলতঃ একা! এই কথার অন্তর্নিহিত দার্শনিক অর্থটা বুঝতে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। স্কুলে পড়া সমাজ পাঠের প্রারম্ভিক বাক্যটাই ছিল-‘মানুষ সামাজিক জীব’। বয়সন্ধিকালের সেই বয়সে ভালভাবেই বুঝেছিলাম-মানুষ যুথবদ্ধ ভাবে বাস করে, এটাই সামাজিক নিয়ম আর এভাবেই সমাজের জন্ম। সেই সাথে মানুষ যে আসলে একা- এই উপলব্ধি, এই বোধ বয়সের পরিপক্কতায়, অভিজ্ঞতায় এখন আর ততটা দুর্বোধ্য নয়।‘একা’ থাকা ব্যাক্তিক পছন্দের দিক আর ‘একাকীত্ব’ একটা বোধ, মানুষের মানসিক অবস্থা। মানুষ ইচ্ছা করলে তার একা থাকার বাহ্যিক অবস্থাটা দূর করতে পারে কিন্তু অনেকের মাঝে থেকেও ‘একাকীত্ব’ নামে বিমূর্ত কোন বোধের জন্ম- মানুষ চাইলেই হয়তো তা দূর করতে পারে না।
১
বাসার খোলা বারান্দায় ঘুরে ফিরেই বসে থাকা আমার প্রিয় কাজ। কখনো ভোরের শান্ত পবিত্র স্নিগ্ধতায়, সোনালি আলোর পড়ন্ত বিকেল আর গোধূলির সন্ধিলগ্নে, কখনওবা গভীর রাতের সুনসান নীরবতায়। আমার মুগ্ধ চোখ খুঁটিয়ে দেখে সীমানাহিন উন্মুক্ত আকাশ,
লেক ওন্টারিওর দিগন্ত ছোঁয়া নীল জলের আবছা তটরেখা, নাম না জানা পাখিদের উড়াউড়ি । মোহগ্রস্ত চোখ বিস্ময়ে মখমল মসৃণ ঘন সবুজ গালিচার গলফ মাঠ, মাঠের বুক চিরে হীরের কুঁচির মত ঝিকমিকে পানির উৎসটা ছুঁয়ে এসে মরশুমি ফুলের বিচিত্র রঙ বাহার বাগানে চঞ্চল হয়ে ঘোরাফেরা করে।
কখনোওবা শেষরাতের
হেলে পড়া ম্লান চাঁদ আর মিটমিটে তারার সাথে একাত্ম
চরাচরের নীরব নিথর রুপটাই দেখি। বিশাল আকাশে অগুনিত গ্রহ নক্ষত্রের রহস্যময় চলাচল- ছড়িয়ে, ছিটিয়ে, মিলেমিশে ভাসমান, অথচ সবই নিজ কক্ষপথের ঘূর্ণনে কেমন একক, স্বতন্ত্র! অবিমিশ্র কিছু ভাবনায় ডুবে যায় মন।
নিজেকে উপলব্ধির, আবিস্কারের এমন নিবিড় সময় খুব কম মেলে। নিজের ভিতরে তুমুল লণ্ডভণ্ড আর বদলে যাওয়া এক সত্ত্বার বসবাস টের পাই। নিজের পরিবর্তনে বিস্মিত হই। অস্থিরতায় জুড়ি না মেলা, অল্পতেই ভয় পাওয়া, আর কোন পরিস্থিতিতেই বাসায় একা থাকতে না পারা এই আমি এখন বেশ বদলে গেছি। আপাদমস্তক সামাজিক, বাকপ্রিয় আর খোলামেলা স্বভাবের আমি প্রায়শই যেন গুহবাসী আদিম কোন মানবী! এক অন্তর্মুখী স্বনির্ভর সত্ত্বা! একা বা বিচ্ছিন্নতায়ই বুঝি আমার নিরন্তর মুক্তি! একাকীত্বেই আত্মা যেন এখন এক নির্মল প্রশান্তির সন্ধান পায়! জীবনের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যগুলো নির্বাসিত নীরবতায় একা হলেই বুঝি সম্পূর্ণতায় অনুভব করা যায়! আত্মবিশ্লেষণ আর প্রতিফলণের প্রতিবিম্বে মন অমলিন শুদ্ধতায় পূর্ণ হয়। চারপাশের অনাকাঙ্খিত কোলাহল, শব্দ আর মানুষে মানুষে বিভেদ, ঘৃণা, বিদ্বেষ, হীনমন্যতা আর ভুল বোঝাবুঝির দৈন্যতাকে পাশ কাটিয়ে ‘একা’ সময়টা কি ভীষণ নিরাপদ আর নির্ভার লাগে! এক আশ্চর্য দক্ষতায় দিনে দিনে আমি যেন এই ‘একা’ থাকা উপভোগ করতে শিখে গেছি!
২
একা থাকা এবং ভয় পাওয়ার বিড়ম্বনার বহু ঘটনার স্মৃতি আমাকে নস্টালজিক করে প্রায়ই। ‘একা আছি’- এমন ভাবনায় আমার মনে অজানা, অদেখা সব ভয়ের চিন্তা দল বেঁধে ঢুকতে থাকে। সেগুলো অলৌকিক ক্ষমতাধর কিছু অথবা ভুত, প্রেত, হ্যলুসিনেসন যাই হোকনা কেন তা আমাকে অনেক সময়েই বেশ নাজেহাল করে, বিপাকে ফেলে।
দেশে চাকরি সুত্রে আমাকে প্রায়ই মফস্বলে থাকতে হতো । ঢাকায় নিজ সংসার আর
হই হট্টগোল রেখে একপ্রকার চিরতা তীতা মন নিয়েই চাকরী স্থলে যাত্রা করতাম। একা বাসায় থাকতে হবে- এমন অনুভুতিতে এক ধরণের দুশ্চিন্তা শুরুতেই আমাকে গ্রাস করে ফেলত।‘ঢাকার ম্যাডাম’ বলে পরিচিত আমি চাকরীগত স্ট্যাটাস আর প্রফেসনালিসম বিসর্জন দিয়ে একপ্রকার দ্বিধাহীনভাবে এ্রর ওর বাড়ি খুঁজে থাকার বন্দোবস্তটা করে নিতাম। হাসিখুশি স্বভাব আর খুব সহজেই মানুষের সাথে মিশতে পারার ক্ষমতাটা আমার বিপদে ভাল সহায়ক হতো । বিপত্তিও ঘটে যেতো মাঝে মাঝেই । চেনা বা স্বল্প চেনা কারও কাছে নির্দ্বিধায় চলে যাওয়া, অন্যের সংসার, অন্দরমহল এবং দাম্পত্যের প্রাইভেসির মধ্যে একপ্রকার অনধিকার প্রবেশ বিশেষ করে বিবাহিতা অথচ দৃশ্যত ‘একা’ এই তকমা আঁটা একজন মহিলার অনির্দিষ্ট ঠিকানায় এখানে ওখানে রাত্রি যাপনের বিষয়টা সামাজিক প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট ‘স্পর্শকাতর’ হলেও অবস্থাদৃষ্টে আমি ছিলাম মরীয়া, নিরুপায়। বিশেষ করে আমার অসহায়ত্বে বিপরীত লিঙ্গের আগ্রহের আতিশয্য এবং সমলিঙ্গের আমার প্রতি সহানুভুতির বদলে বিজাতীয় মেয়েলী ঈর্ষা পোষণ- এসবই ছিল একপ্রকার অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। মানব চরিত্রের
এইসব সুক্ষ মনোজাগতিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া উপেক্ষা করে আশ্রয় প্রার্থনা করাটা ছিল যথেষ্ট অবমাননার। সর্বোপরি বয়স অনুপাতে চরিত্রের এই বালখিল্যতায় আমার স্বামীও যে এক বিব্রতকর মানসিক অস্বস্তির টানাপড়েনে পড়ে যেতো তা বলাই বাহুল্য। একটা ঘটনা এখনো খুব মনে পড়ে । মফস্বলে ছাত্রী হোস্টেলে আমার রুমমেটের অনুপস্থিতিতে আমি এক সহকর্মীর বাসায় প্রায়ই চলে যেতাম। ভদ্রমহিলা ছেলেকে নিয়ে ক্যাম্পাস কোয়াটারে থাকেন,
স্বামী চাকরী সুত্রে বাইরে।
চেহারায় অটুট গাম্ভীর্য, চোয়ালে পাথরের কাঠিন্য আর ঠোটে সূক্ষ্ম দুর্বোধ্য এক হাসি
ফুটিয়ে একদিন হটাত একপ্রকার ঘোষণা দেয়া সূরে তিনি বলে বসেন-‘আজতো আপনি আমার এখানে থাকতে পারবেননা, আমার হাসব্যান্ড আসবে।‘ প্রায়ান্ধকার সেই সন্ধ্যায় আকস্মিক এই ঘোষণায় বিশেষ করে ‘হাসব্যান্ড’ শব্দটা অনাবশ্যক
জোর দিয়ে বলায় আমি এক অপ্রস্তুত লজ্জায় মরমে মরে যাই। অপমানবোধ, অভিমান আর সেই সাথে ঘরে একা থাকার শঙ্কায় তোলপাড়
রাতটা একপ্রকার বিনিদ্রই কেটে যায়।
৩
আরেকটা ঘটনা এখনও স্মৃতিতে স্থায়ী হয়ে আছে। আমার কর্মস্থল তখন আবার ঢাকার বাইরে একটা কলেজে। থাকার বন্দোবস্ত যথারীতি ছাত্রী হোস্টেলে।
ঘরের আশে পাশে ছাত্রীরা ঘুর ঘুর করে, উঁকি ঝুঁকি দেয়, দর্শনীয় বস্তুর মত ঢাকার নতুন ম্যাডাম দেখে যায়। ‘একা নই’ এই অনুভূতির আনন্দে আছন্ন আমি ছাত্রীদের উৎপাতে প্রাইভেসি নষ্ট হওয়ার বিষয়টা মোটেই আমলে আনিনা।
আমার সহকর্মী রুমমেট আমার
চেয়ে বয়সে ছোট এবং অবিবাহিত। আমাকে শ্রদ্ধা করে, ছায়া হয়ে আগলে রাখে, বলে –ম্যাডাম! আমি বরিশালের মেয়ে, মনে তেমন ভয় ডর নাই । ওর সান্নিধ্যে আমি যেন এক লতানো গাছ। ওর প্রশ্রয়ে গা এলানো নিশ্চিন্ত হাসিমুখ আমার। বলি- তুমি বিয়ে করলে আমিও কিন্তু তোমার সাথে যাবো! নির্বিঘ্নেই দিন গড়ায়। যাওয়া আসার কষ্টকে তুচ্ছ করে পুরো সপ্তাহের ক্লাশ দুইদিনে শেষ করেই পাখির মত উড়াল দেই ঢাকায়। আবারও বিপত্তি ঘটে । হোস্টেলে ছাত্রী সংকুলান না
হওয়ায় আমাদের রুম ছাড়তে হয়। থাকার ব্যবস্থা হয় কলেজ ক্যাম্পাসে প্রায় পরিত্যক্ত, বিচ্ছিন্ন একটা বাড়িতে। এই পরিস্থিতিতে আমার ভয়ডরহীন রুমমেটও যেন একটু বিমর্ষ হয়ে যায়। বলাই বাহুল্য আমার অবস্থা ওর চাইতেও করুণ । বড় বিপত্তি ঘটে যখন পরের সপ্তাহে
ঢাকা থেকে এসে দেখি আমার রুমমেট নেই, ঢাকা চলে গেছে। ভরা বর্ষায় চারদিক জল থৈ থৈ, সন্ধ্যার ঘন অন্ধকারে আঙ্গিনার বিশাল গাছগুলো কি ভীষণ ভৌতিক ভাবে
দাঁড়িয়ে! ব্যাঙের ডাক আর এলোমেলো বাতাসের হিসহিসানি শব্দে চারদিকের স্তব্ধতা মাঝে মাঝেই ভেঙ্গে চুরমার। নানাবিধ জলজ প্রাণীর নিঃশঙ্ক চলাচলে আমি ভয়ে কণ্টকিত, দিশেহারা। বাতিবিহিন একতলা বাসাটার বারান্দা ছুঁই ছুঁই হাঁটু সমান পানি ডিঙিয়ে কোনমতে ভেতরে ঢুকে যাই। কলেজ প্রাঙ্গনে থাকা পিয়ন ব্যাগ ঘরে পৌঁছে দিয়েই উধাও। আমি এদিক ওদিক মানুষ খুঁজি । একা থাকার সাহস অর্জনের ব্যর্থতায় মনটা হতাশায় কুঁকড়ে যায়। একাকিত্বের এক বোধ জগদ্দল পাথরের মত বুকে চেপে বসে থাকে। হটাত স্বল্প পরিচিত দু’জন মহিলা আসেন আমার খোঁজে। হোস্টেল বিল্ডিঙে আমাকে না পেয়ে পানি ডিঙ্গিয়ে একেবারে ঘরের দরজায়। যেন মূর্তিমান কোন দেবদূত! দুইজনই স্থানীয় চাকরিজীবী, বাসাও কলেজের কাছাকাছি। আমার হতবিহবল চেহারা দেখে ব্যাগ তুলে নিয়ে বলে- চলেন আপা! আপনাকে এখানে এভাবে কিছুতেই রেখে যাবোনা। আমি যেন মহাসমুদ্রে ভাসমান খড়কুটো ধরে বাঁচার মত কিছু একটা পেয়ে যাই। থাকার ব্যবস্থা হয় যার বাসায় তিনি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা। সারাদিনের ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তায় আমি অবসন্ন। নিচ্ছিন্ত এক প্রশান্তিতে দুচোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে। পরিপাটী বিছানায় গা এলাতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই। নারী পুরুষের চাপা গলায় টুকটাক কথাবার্তার আওয়াজে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন মধ্যরাত। আমার ঘুম চোখ বিস্ফোরিত হয়ে যায়। ঘরের আধখোলা দরজার পর্দার ফাঁক দিয়ে তাকাতেই দেখি বেশ সমর্থ গোছের একজন পুরুষ হোন্ডা ঠেলে বাড়ীর ভেতর ঢুকছে । দরজায় দাঁড়ানো আরও একজন। অন্যরকম এক ভয়ে কাঁপতে থাকি- কি সিন্ধান্তে কোথায় এলাম! একি দুঃস্বপ্ন ! সন্ধ্যায়তো শুনেছিলাম শিক্ষিকা মহিলা ডিভোর্সড এবং মেয়ে নিয়ে একা থাকেন। আমি আসার পর আশে পাশের আরও কতোগুলো মেয়েকেও যেন দেখেছিলাম। সবাই মিলে হারমোনিয়াম বাজিয়ে বেশ গান গাইছিল আর আমি অচেনা সেই পরিবেশে গান শুনতে শুনতে কেমন শিশুর নির্ভরতায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কোনটাই তো বেঠিক মনে হয়নি, তবে কি সত্যি কোন বেকায়দার ঝামেলায় পড়ে গেলাম! আমাকে উঠে বসে থাকতে দেখে শিক্ষিকা মহিলা ঘরে ঢোকেন । বাতি জ্বেলে দিয়ে শান্ত দরদী গলায় বলেন- ‘আপা আপনি ভয় পেয়েছেন? সন্ধ্যায় আপনাকে বলা হয়ে ওঠেনি যে বাসার একটা রুম আমি হোন্ডা রাখার কাজে ভাড়া দিয়েছি।‘ আতঙ্কগ্রস্থ মনের আগের অবস্থা লুকানোর বিষম তাগিদে বলে উঠি- আমি আসলে পানি খেতে উঠেছিলাম!
৪
ধীর পায়ে বারান্দায় এসে বসি। হাঁটু ভাঙ্গা ক্লান্তির দুরারোগ্য এক অবসাদ যেন শরীর জুড়ে!
রাতের গভীরতার ব্যাপ্তি বাড়ে। নক্ষত্র আর ছায়াপথের স্বর্গীয় কোন আলোয় দূরে মাঠের অন্ধকার হাল্কা দেখায়। স্তব্ধতার গভীরে কান পেতে থাকি- মনে হয় এই বুঝি শিশির ঝরার শব্দ শুনবো ! নিজের সাথেই কথোপকথন চলে- একা থাকার তাড়িয়ে নেয়া আগের ভয়টা কি আর আছে আমার? মনের মধ্যে কারনে অকারণে যখন তখন এই যে অতল গহীন শূন্যতা- সেই কি ‘একাকীত্ব’? ‘একা’ থাকলেই মানুষ ‘একাকীত্বে’ ভোগে সেওতো প্রমাণিত সত্য নয়! মানুষকে বিশ্বাস, ভালবাসার যাদুকরী ক্ষমতাটাতো আমার রন্ধ্রে।মানুষের মিছিলেই যে আমার নিত্য বসবাস, কাঁধেকাঁধ, গলাগলি, ভালবাসার আদান প্রদান। নিঃশর্ত, নির্মল প্রানের জোয়ারে ভাসা সব সম্পর্ক-অনেক লম্বা সময় ধরে পুড়ে পুড়ে খাদহীন খাটি সোনা যেন! আমি তো কোনভাবেই একা নই!
তাহলে মনের মধ্যে অদৃশ্য অচেনা এ কিসের
ভয়? অদ্ভুত জোড়ালো তারে বাঁধা সম্পর্কের নিরবিচ্ছিন্ন সুরে তাল কেটে মাঝে মাঝেই এ কেমন ছন্দপতন!
আমি বুঝি এখন সত্যিই এক বদলে যাওয়া ভিন্ন মানুষ । জন্ম জন্মান্তর ধরে পরিবর্তিত, রুপান্তরিত এক শিলা যেন আমি! যেন বুঝেই গেছি বিশ্ব ব্রম্মানডে মানব জীবনের সেই অনন্ত রহস্য- একা শুরু এবং শেষটাও যে একাতেই! আগমন আর প্রয়াণের এই মহাযাত্রায় কেউ কারও সঙ্গী নয়! মনে পড়ে মফস্বলে গৃহস্থালি কাজ এগিয়ে দেয়া মেয়েটাকে। কাজ করতে করতে কেমন ঠকাস ঠকাস কথা বলতো – এত ছোটেন ক্যান? এই যে আপনি এহন এইহানে, একটু পরইতো থাইকবেন ঢাকা।মানুষ আসলে পাখিগো !এই জ্ঞানগর্ভ কথায় মুগধ হতাম। প্রবল অন্যমনস্কতায় বলে উঠতাম -না ! মানুষ আসলে একা! ভাবি সময় কত কিছু বদলে দেয়, বদলে যায় মানুষ, বদলায় মন। একা বাসায় এখনো ভয় পাই, আচমকা কোন শব্দে শিশুর মত চমকে উঠি, কখনো দুঃস্বপ্নে জেগে উঠি ভয়ে। শুধু আগের মত মন এখন দিশেহারা হয়ে এদিক ওদিক ছোটেনা। এখন অনুভবে, বোধে শাশ্বত সেই সত্য ঘুরে ফিরেই নির্ভীক উচ্চারণ করে- মানুষ আসলে একা! মূলতই একা!
http://www.alokrekha.com
সমাজ বদলায় -বদলায় দেশ সভ্যতা সচেতনতা কিন্তু একাকীত্ব বদলায় না। হাজারো মানুষের ভিড়ে একা আমরা তেমনি নিজের মাঝে শত কলেবরে একা। লেখক রিতু মীরের "বঁধু হে! একা বসে থাকি" লেখায় একাকিত্বের যে রূপরেখা ফুটে উঠেছে তা অনবদ্য অপূর্ব। লেখককে আন্তরিক অভিনন্দন। আলোকরেখার কাছে আমাদের বিনীত নিবেদন এই রকমের আরো লেখা প্রকাশ করার জন্য।
ReplyDeleteলেখক ঋতু মীরের "বঁধু হে! একা বসে থাকি" লেখায় "চারপাশের অনাকাঙ্খিত কোলাহল, শব্দ আর মানুষে মানুষে বিভেদ, ঘৃণা, বিদ্বেষ, হীনমন্যতা আর ভুল বোঝাবুঝির দৈন্যতাকে পাশ কাটিয়ে ‘একা’ সময়টা কি ভীষণ নিরাপদ আর নির্ভার লাগে! এক আশ্চর্য দক্ষতায় দিনে দিনে আমি যেন এই ‘একা’ থাকা উপভোগ করতে শিখে গেছি!" এই কতক শব্দ পুরো লেখনীর এক অপরূপ কারুকার্য। লেখাটা পড়ে নিজেকে যেন আরশিতে আরো একবার দেখার সুযোগ পেলাম। লেখক ঋতু মীরকে এক রাশ আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। অনেক ভাল থাকবেন আরো ভাল ভাল লেখা লিখে আমাদের পড়ার সুযোগ দেবেন এই কামনা করি।
ReplyDeleteলেখক ঋতু মীরের "বঁধু হে! একা বসে থাকি" অনবদ্য শব্দ চয়ন,অনিন্দ্য সুন্দর শৈল্পিক বুনন হৃদয় আন্দোলিত করে ।" একা" এমন এক বিষয় যা হাজার লোকের মাঝেও মানুষ একা। আর এই বিষয়টি লেখক তার লেখনীতে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা লেখককে ও আলোকরেখারকে অনেক ধন্যবাদ এমন একজন গুণী লেখককের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
ReplyDelete