কবি গুরু ও কিছু কথা
হাফিজ ইফতেখার
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর (৭ই মে, ১৮৬১- ৭ই আগস্ট,
১৯৪১)(২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি,
ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে
বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। এ ছাড়া
মানব জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে তাঁর অবদান অপরিমেয়।
তিনিই প্রথম সনাতন শিক্ষা পদ্ধতিকে challenge করেন এবং ১৯২১ সালে পশ্চিম বাংলার
বীরভূমের শান্তিনিকেতনে বিশ্ব ভারতী আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১
সালে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। মুলত রবীন্দ্রনাথ তার
নোবল প্রাইজ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের
খোলা আকাশের নিচে ,গাছের তলায় লেখাপড়া হয়। এখানে
শিক্ষা দেয়া হয় সনাতন পদ্ধতিতে নয় ,এখানকার শিক্ষার ভিত্তি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ও ভৌগোলিক সীমারেখার ও গন্ডির বাইরে। সত্যিকারের
শিক্ষা যার প্রধান ভিত মনুষ্যত্ব ও মানবতার । ,
রবীন্দ্রনাথের
জন্ম তারিখ নিয়ে বাংলা ও ইংরাজিতে কিছু মতবিরোধ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭
ই মে , বাংলা ২৫ এ বৈশাখ। এ বছর ২৫ এ বৈশাখ ৯ ই মে।২৫ এ
বৈশাখ বাঙালিরা রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করে।
ইউরোপীয়দের
বাইরে রবীন্দ্রনাথই প্রথম যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। উল্লেখ্য যে, রবীন্দ্রনাথ একমাত্র কবি যিনি তিনটি দেশের
জাতীয় সংগীত রচনা করেন। ভারত ,বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা ।
আরো
উল্লেখ্য যে,রবীন্দ্রনাথ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও বিশ্ব বিখ্যাত বৈগানিক আলবার্ট
আইনস্টাইনের বিশেষ বন্ধু ছিলেন।১৯১৫ সালে
রবীন্দ্রনাথ গান্ধীকে মাহাত্মা উপাধি দেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের
সাথে আইনস্টাইনের ৪ বার দেখা হয়।
আইনস্টাইনের
কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন ,"আইনস্টাইন খুব ই সাবলীল ও জড়তা
বিহীন একজন মানুষ। আমরা একে অপরের মানুষ ও
জগতের উপর আমাদের অবদান নিয়ে খুব কৌতহলী ছিলাম। সত্যকে অনুসন্ধান করা ও সংগীতের প্রতি
ভালোবাসা আমাদের বন্ধুতের শিকড় ও ভিত্তি
ছিল।"আইনস্টাইন আর রবীন্দ্রনাথের এই বন্ধুত্বের কথা আমরা অনেকেই জানি
না।
পাঞ্জাবে
জালিয়ানওলা বাগে ইংরেজদের হাতে ভারতীয়দের গণহত্যার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ”knight” উপাধি প্রত্যাখান করেন।
রবীন্দ্রনাথ
মোট ২২৩০ টি গান রচনা করেন ও সুর দান করেন। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ,৩৮টি নাটক,১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও
অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর
সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত
হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে
রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ
খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি
এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে
গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ
করেন।
জীবনের
শেষ দশকে (১৯৩২-১৯৪১) রবীন্দ্রনাথের মোট পঞ্চাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।তাঁর এই সময়কার কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), শ্যামলী ও পত্রপুট (১৯৩৬) – এই গদ্যকবিতা সংকলন তিনটি।জীবনের এই পর্বে সাহিত্যের নানা শাখায়
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।তাঁর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল হলো
তাঁর একাধিক গদ্যগীতিকা ও নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬),শ্যামা(১৯৩৯) ও চণ্ডালিকা (১৯৩৯) নৃত্যনাট্যত্রয়ী।এছাড়া রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষ তিনটি
উপন্যাসও (দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায়
(১৯৩৪)) এই পর্বে রচনা করেছিলেন।তাঁর
অধিকাংশ ছবি জীবনের এই পর্বেই আঁকা।এর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের শেষ বছরগুলিতে বিজ্ঞান
বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর
বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়।এই গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আধুনিকতম
সিদ্ধান্তগুলি সরল বাংলা গদ্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান
সম্পর্কে তাঁর অর্জিত জ্ঞানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তাঁর কাব্যেও।সে (১৯৩৭),
তিন সঙ্গী (১৯৪০) ও গল্পসল্প (১৯৪১) গল্পসংকলন
তিনটিতে তাঁর বিজ্ঞানী চরিত্র-কেন্দ্রিক একাধিক গল্প সংকলিত হয়েছে।
জীবনের
এই পর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্রতম প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক
মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি "ঈশ্বরের রোষ" বলে অভিহিত করলে,
রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে
চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেন।কলকাতার সাধারণ মানুষের
আর্থিক দুরবস্থা ও ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের দ্রুত আর্থসামাজিক অবক্ষয় তাঁকে
বিশেষভাবে বিচলিত করে তুলেছিল। গদ্যছন্দে রচিত একটি শত-পংক্তির কবিতায় তিনি এই
ঘটনা চিত্রায়িতও করেছিলেন।
জীবনের
শেষ চার বছর ছিল তাঁর ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। এই সময়ের মধ্যে দুইবার
অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাঁকে।১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য
হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির।সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার
পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি।এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল
মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা।মৃত্যুর সাত দিন আগে
পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন।দীর্ঘ রোগভোগের পর ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর
বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
http://www.alokrekha.com
কবি গুরুর জন্মদিনে তাঁর উপর এই লেখা সত্যি প্রশংসনীয়।খুব ভাল লাগলো পোড়ে। অনেক বিষয় জানতে পারলাম যা আমার অজানা ছিল। লেখককে অনেক অভিনন্দন।
ReplyDeleteকবি গুরুর জন্মদিনে তাঁর উপর এই লেখা জীবনের এমন গভীর ভাবনা, প্রতিফলন ও তার অভিব্যক্তির প্রকাশ।যেমন বিষয় বস্তু, তেমনি চমৎকার ভাষাভাব অপূর্ব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য ও অনিন্দ্য । বড্ডো ভালো। অনেক ভালোবাসা লেখককে ।
ReplyDeleteকবি গুরুর জন্মদিনে তাঁর উপর এর উপর লেখাটা থেকে অনেক কিছু জানলাম। আলোক রেখাকে ও লেখককে ধন্যবাদ
ReplyDeleteকবি গুরুর জন্মদিনে তাঁর উপর এর উপর লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগলো। থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। অপূর্ব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য। আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে এমন একজন গুনি লেখককে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।
ReplyDeleteচমৎকার রচনাশৈলী ও স্বতন্ত্র ভাব ও ভাষা প্রয়োগে চমৎকার রচনা শৈলী মিলিয়ে লেখক হাফিজ ইফতেখারের "কবি গুরু ও কিছু কথা" অনবদ্য।খুব ভাল লাগলো। কবিগুরুর জন্মদিনে এই লেখাতা অত্যন্ত প্রজয্য।আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে এমন একজন গুনি লেখককে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।
ReplyDeleteকবিগুরুর রবীন্দ্রনাথের উপর লেখাটা অনিন্দ্য অনবদ্য । আমরা অপেক্ষায় থাকি একটা সুন্দর লেখার জন্য। এই" কবি গুরু ও কিছু কথা" হাফিজ ইফতেখাররের লেখাটা মনটা ভরিয়ে দিল। দারুন অনুভূতি বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। ! আলোকরেখাকে ও লেখক হাফিজ ইফতেখারকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
ReplyDelete