চিত্তে ঋতুপর্ণ
রবীন্দ্রনাথের ১০০ বছরে তাঁকে নিয়ে সরকারি তথ্যচিত্র বানানোর
ভার পেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়।১৫০ বছরে ঋতুপর্ণ ঘোষ।রবীন্দ্রনাথের উপর তথ্যচি্র বানানোর
আগে সত্যজিৎ রায় 'চারূলতা' বা 'ঘরেবাইরে 'করেন নি। সেক্ষেত্রে ঋতু 'চোখেরবালি ও 'নৌকাডুবি
' করা করা হয়েগিয়েছিল। ঋতুর প্রিয় বিশয় ছিল রবীন্দ্রনাথ ও 'মহাভারত'। সারাটা জীবন ঋতু
রবীন্দ্রনাথের লেখার সঙ্গে জীবন কাটিয়েছে । তাঁর লেখা ঋতুকে বিশ্বাস যুগিয়েছে, ভরসা
দিয়েছে ।
ছবিটা যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে বানানোর কথা হয়েছিল ঋতুর
ধারনা ছিল সব রকম আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে। হয়ত কিছু কিছু দৃশ্যের ছবি কোলকাতার বাইরে
যেমন ডালহৌসি, বা লন্ডন থেকে করতে পারবে। মনে সেই রকম একটা আশা নিয়ে খুবই আগ্রহের সঙ্গে
শুটিং শুরূ করেছিল।
জোড়াসাঁকোর ৬ নম্বর বাড়িটাতে কিছু দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল ।সেখানে
শুটিং করার সময় ঋতু খুব নষ্টালজিক হয়ে যেত। ঋতু মনে মনে তাঁর 'প্রেম' রবীঠাকুরকে অনুভব
করতে পারত। ছবি টা দেখার সময় তাই বার বার আমরা ঋতুর উপস্থিতি টের পাই (যেটা অনেক সমালোচক
পছন্দ করে নি)
যাইহোক 'জীবনস্মৃতি'র শুটিং শুরু হবার সময় থেকেই ঋতুর অসুস্থতা
শুরূ হয়ে গেছে।সারা শুটিং জুড়ে মাথাব্যাথা, জ্বর, চোখের সমস্যা, হাতে পায়ে টান ধরা
প্রভৃতি নানা সমস্যার মধ্যেও পরিচালনার কাজ কর গেছে ।
ইছামতী নদীর বুকে খুব সুন্দর একটা বজরা তৈরী করা হয়েছিল কিছ
দৃশ্য গ্রহনের জন্য। নদীর সঙ্গে ভাব পাতাতে যে এতটা সময় লেগে যাবে সেটা কেউ ভাবেনি।
বজরা থেকে নামার জন্য একটা কাঠের পাটাতন রাখা হয়েছিল।সেটা থেকে মাটিতে নামতে হত। সবাই
নেমে যেত অনায়াসে ''কেবল আমি ক্যাবলাকেষ্টর মতো কারও একটা হাত ধরে নামতাম" এই
লাইনট ঋতু লিখে গেছে।'ঠাকুরের' আসনে বসা রবীকে উপলব্ধি করেছে ঋতু মনে প্রানে ।আর তাই
এই জীবন স্মৃতি অন্য রকম। যে মানুষটা জীবনে সব কাছের প্রিয়জনকে হারিয়েও রেখে গেছেন
সাহিত্যের এক বিপুল সম্ভার, তাঁর জীবনের প্রিয়জনকে হারানোর উপলব্ধির কিছু ছায়া পাই।
জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ডর এক ঝলক ভেসে আসে অন্যভাবে।
ঋতুর এই জীবন স্মৃতি দেখলে মনে হয় ছোট্ট রবীর হাত ধরা যায় ,কথা
বলা যায়- প্রশ্ন করা যায়-ওগো তুমি কেমন আছো?
রবীর ভুমিকায় চারজন কে দেখতে পাওয়া যায়-শাশ্বত ,ঋষী, সমদ্শী
ও সঞ্জয় নাগ। কাদম্বরীর চরিত্রে রাইমা।আমি এই পরিসরে কারো অভিনয় নিয়ে কিছু লিখছি না
।কারন এটা একটা তথ্যচিত্র। অভিনয়ের খুব একটা মাহাত্ম্য নেই।ছবিটা শেষ হবার পর অনেক
দিন পর্যন্ত ন্যাশনাল ফিল্ম ডিভিশন রেখে দেয় নিজেদের কাছে ।অবশেষে জহর সরকার (সি ই
ও -প্রসার ভারতী) এর চেষ্টায় ৮ই আগষ্ট ২০১২ তে দুরদর্শনে দেখানো হয়। ঋতুর ইচ্ছেছিল
এই ছবিট 'নন্দনে' প্রীমিয়ার হবার ,হয় নি।ছবিটি হলে দেখানোর জন্যই বানানো হয়েছিল 'ডলবি
ডিজিটালে'। ঋতু দেখে যেতে পারেনি তার এই শিল্পকর্ম।
আমার ভালবাসার মানুষ খুব কম
হাতে গোনা...তার মাঝে ঋতু একজন। ছিল বলিনা কেন? কারন ও তো আছে কথাও ছেড়ে যাইনি। আমাদের মাঝে একটা প্রবণতা আছে...যারা দৃশ্যমান নয় তাদের কথা খুব একটা বলি না। ঋতু রবীন্দ্রানাথকে
ধারন করত। ওর ধ্যানে,মননে, চিন্তা ও চেতনায় ছিল রবী ঠাকুর। আমি প্রায় দুষ্টুমি করে
বলতাম "তুই রবীন্দ্রানাথের ধামাধরা"। ও বলতো নারে " আমারা রবী ঠাকুর
আর সত্যজিৎ রায়ের জিন বয়ে বেড়াই ধমনিতে"।এমন কথা কেবল ঋতুই বলতে পারে। আজ ঋতুর
কথাই মনে পড়ছে।তাই আর ওর কাজের কথা বললাম না।
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত
http://www.alokrekha.com
0 comments:
Post a Comment
অনেক অনেক ধন্যবাদ