প্রান্তিকে অধরা আলো
-----© সুনীতি দেবনাথ
প্রান্তিকে অধরা আলো রাত গভীর নিশুতি
নক্ষত্রের অশ্রু ঝরার কাল
বড়সড় অঘটন ঘটে যেতে পারে
মেয়ে তুই দোর বন্ধ করে থাক্
ভুলেও খুলিস্ নে।
এখন মায়াবী মারীচ দলে দলে ঘোরাফেরা করে
অন্ধকার পথে নামিস্ নে মেয়ে
রাবণেরা ওত্ পেতে আছে।
এই অন্ধকারে মেয়ে তুই
চোখ খোলা রেখে ঘুমোস্,
মেয়ে তোকে লুটেপুটে নেবে শেয়ালে কুকুরে
এরপর রক্তাক্ত শরীর তোর নর্দমায় দেবে ফেলে –
এমনকি জনারণ্যে উন্মুক্ত প্রসারে।
প্রতিবাদ জানাবো কাকে, কোন্ ভাষায় জানি না তো।
হাজার হাজার ভাষার সারিতে
এমন কোন প্রতিবাদী ভাষা আজও সৃষ্টি হয়নি,
আর প্রতিবাদ জানানোর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান
দূরবীণ- অনুবীক্ষণ নিরীক্ষণে পাবি না তো।
মেয়ে তোর একমাত্র পরিচয় শুধু মেয়ে তুই
পাঁচ পঁচিশ বা পঞ্চাশ বা তারও বেশী
মেয়েলি শরীর নিয়ে ভোগ্য পন্যের পশরা মাত্র
তার বেশী কণা মাত্র নয়।
কথাটা নতুন নয়- এতো সেই কোন কালের
নিরবচ্ছিন্ন প্রবহমান ধারা
ঘরের ভেতরেও, বাইরে তো বটে।
মেয়ে তোর অপমান নিয়ে রাজনীতি হয়-
সেতো হয়েছিল কৌরবসভায় দ্রৌপদীকে নিয়েও,
তারও আগে সুসভ্য আর্যেরা উত্তর ভারতের মাটি
দখল করে পুবে এগিয়ে এলো জল- জঙ্গলের দেশে।
মাটিতে বিজয় পতাকা উড়ল আর অনার্য নারী লুণ্ঠিতা-
স্বদেহের রক্ত দিয়ে টিকা পরাল সিঁথিতে,
হাতে পরিয়ে দিল লোহার শেকল,
নোয়া- সিঁদুরের পবিত্রতা গ্র।স করল নারী সত্ত্বাকে,
নারী পুরুষের অর্জিত সম্পদ – ইতিহাস বলে।
নারীর অপমানের ব্যাকরণ – কঠিন কঠোর নিয়মনীতির শৃঙ্খল,
আর তা নারীর ক্ষেত্রেই কেবল আর্ষ প্রয়োগ।
এই রাজনীতি সমাজনীতি সর্বকালীন, কিন্তু আজ আকাশছোঁয়া-
অগ্রগামী সভ্যতার সর্বোন্নত এক প্রহসন!
মেয়ে তোকে বেঁচে থাকার জন্য
নিজের সম্মান নিয়ে স্বাধীন পার্থিব পদচারণার জন্য,
জন্ম দিতে হবে সেই অজাত মোক্ষম প্রতিবাদের ভাষাকে
প্রচলিত রীতিনীতি ব্যাকরণের কঠোর শাসন
সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে উজ্জ্বল অভ্রান্ত অভূতপূর্ব অনন্য নির্মাণ!
দোরে আগল দিয়ে কতদিন কতকাল গোপন অশ্রুপাত
কতদিন আর দেখানো সমবেদনার নির্লজ্জ অপমান,
পাশবিকতার আস্ফালিত চাবুকের আঘাত সইতে হবে?
মেয়ে তোরা সংঘবদ্ধ হ’ আর সুচেতনায় প্রাণিত হয়ে
সেই পথ খুঁজে নে, যে পথের নিশানা দিশা আজও অধরা
আজো যে পথে চলার চিহ্ন আঁকা, আবিষ্কার বাকি রয়ে গেছে।
কাজরী,
জানুয়ারি ১০, ২০১৫
http://www.alokrekha.com
খুব ভাল লাগল কবিতাটি পড়ে।বিষয়য়বস্তু অনবদ্য। মেয়েদের জীবনের রূঢ় সত্য প্রকাশিত হয়েছে কবির কলমে। মেয়ে তোর একমাত্র পরিচয় শুধু মেয়ে তুই পাঁচ পঁচিশ বা পঞ্চাশ বা তারও বেশী মেয়েলি শরীর নিয়ে ভোগ্য পন্যের পশরা মাত্র তার বেশী কণা মাত্র নয়। কথাটা নতুন নয়-চিরন্তন। অনেক শুভেচ্ছা কবি।
ReplyDeleteকবিতাটি ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা আপনাকে।
Deleteদিন বদলায় সভ্যতা বদলায় কিন্তু মেয়েদের জীবন বদলায় না। এই সমাজে সীতা দৌপদী প্রমুখকে অস্তিত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কবি সুনীতি দেবনাথ প্রান্তিকে অধরা আলো কবিতায় এক অনন্য ভাবের পরিচয় দিয়েছেন। মেয়ে তাই তাকে দ্বোর দিয়ে রাখতে হবে অন্ধকার পথে নামিস্ নে মেয়ে রাবণেরা ওত্ পেতে আছে। চোখ খোলা রেখে ঘুমোস্, না না জেগে থাক্ নিঃশব্দে নিঃসাড়ে।শক্তিশালী বক্তব্য। অনেক শুভেচ্ছা কবি
ReplyDeleteসুন্দর ব্যাখ্যা আপনার। আমি কৃতার্থ! শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ!
Deleteসুনীতি দেবনাথ "প্রান্তিকে অধরা আলো" কবিতায় আমার ভালো লেগেছে ইটা একটা ইতিবাচক কবিতা। কবি মেয়েদের দুর্বলতার কথা যেমনভাবে অংকিত করেছেন তেমনি মেয়েদের সবল শক্তিশালী হত্যার কোথাও দৃঢ়তার সাথে বলেছেন। দারুন কবিতা ও অভিব্যক্তি। উত্কৃষ্ট চমৎকার জীবন বোধের প্রকাশ।অপূর্ব বিষয় বস্তু,ভাষাভাব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য ও অনিন্দ্য এক কবিতা। অনেক শুভেচ্ছা কবি।
ReplyDeleteখুব খুশি হলাম আপনার কমেন্ট পড়ে! অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা !
Deleteসুনীতি দেবনাথ "প্রান্তিকে অধরা আলো" কবিতার গভীরতা ও ভাব মনের ভেতর অতল তলে অনুরণ সৃষ্টি করে। কত বার যে কবিতাটা পড়ালাম। কবি সুনীতি দেবনাথ যেন আমার মনের কথাই বলছেন। অনেক ভালোবাসা কবিকে। আলোকরেখা অনেক ধন্যবাদ এমন একজন গুনি কবিকে পরিচিত করিয়ে দেবার জন্য । অনেক শুভেচ্ছা কবি।
ReplyDeleteরেহানা সুলতানা ম্যাডাম ,আমার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা নেবেন ।আপনার ভালো লাগা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে !পাশে থাকবেন !
Deleteসুনীতি দেবনাথ "প্রান্তিকে অধরা আলো" কবিতার চমৎকার রচনাশৈলী ও স্বতন্ত্র ভাব ও ভাষা প্রয়োগে চমৎকার একটা কবিতা ।কাব্যিক ছন্দোবদ্ধ দারুন কবিতা। অনেক শুভেচ্ছা কবি। আপনি ভালো থাকুন আরো লিখুন !
ReplyDeleteআপনার মূল্যবান কমেন্ট আমাকে আপ্লুত করেছে ! নিত্য শুভকামনা !
Deleteসুনীতি দেবনাথ "প্রান্তিকে অধরা আলো" কবিতায় এই পংতিগুলো "মেয়ে তোকে লুটেপুটে নেবে শেয়ালে কুকুরে এরপর রক্তাক্ত শরীর তোর নর্দমায় দেবে ফেলে –এমনকি জনারণ্যে উন্মুক্ত প্রসারে।প্রতিবাদ জানাবো কাকে, কোন্ ভাষায় জানি না তো।হাজার হাজার ভাষার সারিতে এমন কোন প্রতিবাদী ভাষা আজও সৃষ্টি হয়নি,আর প্রতিবাদ জানানোর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দূরবীণ- অনুবীক্ষণ নিরীক্ষণে পাবি না তো।মেয়ে তোর একমাত্র পরিচয় শুধু মেয়ে তুই অনেক শুভেচ্ছা কবি। " দারুন অভিব্যক্তি।প্রচন্ড শক্তিশালী লেখনী। অনেক ভালোবাসা কবি।
ReplyDeleteআপনার মূল্যায়ন এবং ব্যাখ্যা সত্যিই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মনে রাখবো। শুভকামনা ও ভালোবাসা!
ReplyDeleteপ্রিয় Sanjida Rumi আমার কবিতা আপনার ব্লগে প্রকাশ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা !
ReplyDelete