নৈঃশব্দ নীরবতায়
মেহরাব রহমান
এক বৈরাগী বাউল পাখি
নিয়তির নিয়ন আলোয় আমার বসতবাড়ি
আমি লালনের ভাঙা ঘর ,ভরা-প্রাণ শূন্যতা;
সমুদ্রস্নাত
পবিত্রতায় ....
যে কোনও বসন্ত প্রভাতে
চৈতি হাওয়ায় উড়ি সুতাকাটা ঘুড়ি
অন্য আলোকবর্ষে...
রাত্রিদিন ভাবি কে আমি
কে এই অবিনশ্বর ?
ধূমকেতুর মতো আকাশ অরণ্যে
উড়তে উড়তে জেনেছি
রক্তের চঞ্চলতায় , মাতাল হাওয়ায়
আমার মহাপ্রভু জেগে থাকেন l
তাঁর নিমজ্জন
আমার ভালোবাসার সরোবরে
আমি নিশ্চয়ই তাঁকে এইভাবেই .....
এতকাল পরিচয় সংকটে
ভুগেছি ভীষণ ;এখন আর নয় ;
আজ সময় সীমান্ত উত্তীর্ণ করেছে সব ;
পূর্ব নির্ধারিত ভূখণ্ডে, গোত্রে,
ধর্মে,
বর্ণে,
জাতিতে,
আমার
সূচনা, আমার বিকাশ
অথচ না আমি হিন্দু, না মুসলমান,
না খ্রিষ্টান, না জৈন,
না
বৌদ্ধ, না ইহূদী,
না অগ্নি-উপাসক, না নাস্তিক ;
আমি বাক্সবন্দী কোনও পাখি নই ;
সৌরাকাশে মুক্ত পাখি l
অন্তহীন উড়ি l
এইমাত্র আমি নিজেকে
মানুষ বলে চিহ্নিত করতে শিখেছি l
অতএব আমি পরিচয়হীন নই
আমি কেবলি....
আজ একা একা জেগে থাকি অবেলায় বৈতরণির ভেলায় ;
পরিব্রাজক এক অচিন পর্যটক
আমি খুব খুব আস্তিক পুরুষ
আমার আত্মার অধিক আস্তিক.....
ধর্ম আমার লেবাস ;
পোশাক আমার খোলস ;
সাপের খোলসের মতো পোশাক বদলাই
শীত, বসন্তে,
অগ্রহায়ণ,
কার্তিকে
l
নির্ধারিত আনুষ্ঠানিকতার উর্ধে উঠে
ভালোবাসি জগৎ সংসার,
এই আলোআঁধারির নিমগ্ন ভুবন l
বৈচিত্রের তামাশার রং অনেক মেখেছি
পৃথিবীর এই যাত্রা মঞ্চে
অনেক খেলেছি হোলি l
কখনো নোঙ্গর করি
কৈশোর পৃথিবীর রূপকথা নগরে
সেখানে বর্ণিল ডানা মেলা
পরীদের সুবর্ণ বিকেল l
আমার নিত্য আসা যাওয়া
শৈশব থেকে কৈশোর
কৈশোর থেকে যৌবন
যৌবন থেকে আজকের তরতাজা বর্তমানে,
ঝুঁকে
পড়া আবিরের রং মাখা
সিন্গ্ধ বিকালের পাদদেশে ;
লাল নীল নানা রং
রঙিন সুতার নাটাই হাতে I
এখন গুটাবার পালা
ক্রমশ: গুটিয়ে নিচ্ছি:
অবিনাশী ঈর্ষা, রক্তাভ ক্ষোভ,
সাপের ফনার মত
ক্ষনে ক্ষনে ছোবল মারা
উদ্ধত ক্রোধ,
ব্যর্থ প্রেমের গোপন প্রকোষ্ঠে
ধিকি ধিকি আগুন জ্বলা l
গুটিয়ে নিচ্ছি
পরধন লোভে মত্ত
পরকীয়া নিষিদ্ধ চুম্বন,
জীবনের জোয়ার ভাটায়
যাপিত জীবনের
খুঁটিনাটি ভালমন্দ সব ;
অবনত রঙিন সুতায় l
তারপর জেগে থাকবো
অসীম শূন্যতায়
ভুবনেশ্বরের নীরব
নৈঃশব্দ নীরবতায়
নদীকূলে যখন পাখিরা ঘুমায়
মানুষেরা কেউ নেই ঘাটে
যার যার ঘরে মধ্যরাতে,
অলস বিছানায়,
নিজস্ব স্বপ্নে বিভোর l
শান্ত প্রশান্ত পরিশ্রান্ত সরোবর
জোনাকির ভিড় নাই ;
ঝিঁঝিঁরা ডাকেনা আর l
আমি লালনের ভরা-প্রাণ শূন্যতা;
ভাঙা ঘর, সমুদ্রস্নাত পবিত্রতা নিয়ে
চৈতি হাওয়ায় উড়ি l
এক বৈরাগী বাউল পাখি,
পরিব্রাজক এক অচিন পর্যটক,
ভেসে যাবো দূর অন্তহীন দূরে
বৈতরণীর ভেলায় l
http://www.alokrekha.com
দারুন অনবদ্য ও অনিন্দ্য কবিতাখানি। এখানে কবি ঈশ্বসরের সাথে তার যে গভীর সম্পর্ক তা তুলে ধরেছেন। ভাষা ও ছন্দে অনিন্দ্য বটে গভীরতায় অনন্য। অনেক ভালো লাগলো কবিতাটা পড়ে। অনেক শুভ কামনা কবি।
ReplyDeleteকবি এখানে নিজের সাথে বাউল গানের বৈরাগ্যের সাথে তুলনা করেছেন। তুলনা করেছেন লাললের ভাঙা ঘর ও তিনি সমুদ্রস্নাত পবিত্রতায়। কিন্তু নিয়তি তাকে এনে দিয়েছে যোবনের চাকচিক্যে ভরা ভুবনে। তাইতো কোনও বসন্ত প্রভাতে চৈতি হাওয়ায় উড়ি সুতাকাটা ঘুড়ি হয়ে নিরন্তন তার ভাবনা কে এই ভগবান বসে থাকেন মাথার উপর ? কে এই অবিনশ্বর ? কি গভীর চেতনা উচ্চ মার্গের সাধনা। খুব খুব ভালো লাগলো কবি মেহরাব রহমান আপনার কবিতাটা পড়ে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন।
ReplyDeleteকবির হৃদয় নিংড়ানো অধ্যাত্বিক অনুভূতির কি গভীর প্রকাশ। ঈশ্বরের সাথে যেন কবির গভীর প্রণয়। খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteআপনার ভালো লাগা আমাকে উজ্জীবিত করলো
Deleteকৃতজ্ঞতা
কবি মেহরাব রহমানের "নৈঃশব্দ নীরবতায় " সুফিবাদের কবিতা। কবি এখানে আমাদের যাপিত জীবনকে সুফিবাদের উচ্চ মার্গে নিয়ে গেছেন।
ReplyDeleteসুপ্রিয় মিতা হক,
Deleteআপনি ঠিক বলেছেন l কবিতাটি সুফিবাদের দর্শনে লেখা l আমি মাত্র স্বইচ্ছায় সুফিবাদের সদস্য পদ গ্রহণ করেছি lনিজেকে খুব মূর্খ মনে হয় l সুফিবাদ সম্পর্কে আরো আগে কেন জানলাম না ? জানিনা জানবার জন্য আর কতটা সময় পাবো ? দোয়া করবেন l অনেক কৃতজ্ঞতা মন্তব্যের জন্য l
কবি মেহরাব রহমানের "নৈঃশব্দ নীরবতায় " সুফিবাদের কবিতায় কবি ঈশ্বরের সাথে মাইল মিশে একাকার হয়ে গেছেন। তাইতো কোন ধর্মে বা লেবাসের বেড়াজালে আবদ্ধ নন। কবিতার মাধ্যমে তিনি সূফিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন আর এখানেই কবির সার্থকতা। খুব ভালো লাগলো কবি। প্রানঢালা শুভকামনা।
ReplyDeleteকবি মেহরাব রহমানের "নৈঃশব্দ নীরবতায় "কবিতায় সুফিবাদের যে আদল দেখতে পাই তা সত্যিই অনন্য। এখানে কবি নিজেকে বিলীন করেছেন। আবার যে অবিনাশী ঈর্ষা, রক্তাভ ক্ষোভ, সাপের ফনার মত ক্ষনে ক্ষনে ছোবল মারা উদ্ধত ক্রোধ,ব্যর্থ প্রেমের গোপন প্রকোষ্ঠে ধিকি ধিকি আগুন জ্বলা সেখান থেকেও ছুটি চাইছেন। দারুন অনবদ্য কবিতা খানি। অনেক অনেক ভালো লাগলো কিবি আপনার এই কবিতা পড়ে। ভালো থাকবেন।
ReplyDeleteকবি মেহরাব রহমানের "নৈঃশব্দ নীরবতায় "দারুন কবিতা ও অভিব্যক্তি। কোথায় থেকে শুরু করবো এই কবিতা পড়ে হৃদয়ের আলোড়ন জেগেছে। সুফিবাদের উচ্চ মার্গের কবিতা আমার যত কবিতা পড়া তার মাঝে এই কবিতা উচ্চ পর্যায়ে পড়ে। উত্কৃষ্ট চমৎকার জীবন বোধের প্রকাশ।অপূর্ব বিষয় বস্তু,ভাষাভাব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য ও অনিন্দ্য এক কবিতা। খুবই ভালো লাগলো কবি মেহরাব রহমান আপনার এই অনন্য কবিতাটা পড়ে। এমন কবিতা পাবার অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteকবি মেহরাব রহমানের "নৈঃশব্দ নীরবতায় "দারুন অনবদ্য ও অনিন্দ্য কবিতা। আলোকরেখায় এই অবদি যত কবিতা প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে এই কবিতা অন্যতম। আমি আলোকরেখার নিয়মিত পাঠক। ভালো লাগে যখন নতুন কোন স্বাদের উচ্চ মার্গের কিছু লেখা পাই। কবিকে আন্তরিক প্রাণের শুভেচ্ছা। আপনি দীর্ঘজীবী হন। আর এভাবেই আমাদের ভালো ভালো কবিতা লিখে পড়ার সুযোগ দিন। ভালো থাকবেন। আলোকরেখাকে ধন্যবাদ।
ReplyDelete