Updated 15 April 2 am --"শুভাশীষকে চিঠি": এপিসোড ৫
নীল,
ছেলেরা তোমার চিঠি পেয়ে, বিশেষ করে বাবার ছেলেবেলার বন্ধুর চিঠি পেয়ে ভীষণ খুশি। তোমায় নাকি ওরা লিখেছে ইমেইলে।
আগের চিঠিতে তুমি আমায় যা যা বলেছো এর উত্তরে আমার কিছু বলার নেই। শুধু এটুকু বুঝতে পারি, আমি তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারিনি। ভালোবাসার যে 'আদব' থাকে, সেই আদব তোমায় প্রত্যুত্তরে দিতে পারিনি। শামস এর মতো তুমি কাটা দেখেছিলে কিন্তু সেই সাথে দেখেছিলে গোলাপ। রাত্রির অন্ধকার দেখেছিলে সেই সাথে দেখেছিলে আলোকিত ভোর। তুমি জানতে এক ফালি বাঁকা চাদ পূর্ণচন্দ্রে রূপান্তর হতে সময় লাগে। সালমান-আল-ফারসি(র:) তার প্রিয় বন্ধুর খোঁজে পৃথিবী চোষে বেড়িয়েছিলেন। সূদুর ইরান থেকে কত পথ পাড়ি দিয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন তার না-দেখা বন্ধুকে। তার কাছে স্বর্গ হয়ে গেছিলো সামান্য আর বন্ধুর খেজুর পাতায় মোড়া মাটির ঘর হয়ে গেছিলো অসামান্য। আতিফ আসলাম এর গজাল এর মতো, "জান্নাত ভি গাওয়ারা হ্যায় মাগার মেরে লিয়ে/ইয়ে কাতিব-এ-তাকদির মদিনা লিখ দে"।
মাইমুনা(র:)ও তার ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর ৩০ বছর পর, নিজের মৃত্যুশয্যায় যেতে চেয়েছিলেন সারিফ'এ, যে জায়গায় তার বাসর হয়েছিল। সেটাও ভালোবাসার 'আদব' এর কারণে। মাজনুন কেন দেয়াল গুলো ছুঁয়েছিল, পথগুলো দিয়ে হেটেছিলো? It was the walls that he touched but not the walls that he touched. He touched those walls which were touched by Laila.
তুমি আমার জন্য ভালোবাসার আদব ধারণ করেছিলে, তোমার অন্তরে আদব এর দর্শন লালন করেছিলে। আমি তোমার জন্য সেই দর্শন ধারণ করতে পারিনি। তুমি তোমার হৃদয় কাড়া, সঙ্গী হারা, আলোছায়া মাখা চোখের জলে যখন আমায় ডেকেছিলে, আমি তো শুনিনি তোমার ডাক!
জানো, আজকাল কেমন যেন নিজেকে নির্বাসিত মনে হয়। শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরএর মতো আমিও যেন নির্বাসিত। ব্রিটিশ-রাজ্, সেপাই বিপ্লবের পর যাকে তার তিন পুত্রের ছিন্ন মস্তক উপহার দিয়ে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করেছিল, সেই দুঃখী দরবেশ-সম্রাট এর মতো যেন আমিও নির্বাসিত। জাফর এর মতো আমারও মন যেন কেমন করে- লাগতা নাহি হে দিল মেরা উজরে দাইয়ার মে…
“মন লাগে না আমার এই লুন্ঠিত ভূখণ্ডে
কেই বা পরিতৃপ্ত এই নিষ্ফল পৃথিবীতে?
বুলবুল, শিকারী কিংবা শিকার কোনটা নিয়েই অভিযোগ করে না
কেননা ভাগ্য যখন রায় দিয়েছিলো, বসন্ত তখন ছিল শীর্ষে।
ইচ্ছেগুলোকে জানিয়ে দাও, ওরা যেন ঘর বাধে অন্য কোথাও
কি জায়গাই বা আছে ওদের এ বিদীর্ণ হৃদয়ে?
বুলবুল ফুলের ডালে বসে গান গাইতেই পারে
কিন্তু সে তো কাটা ফুটিয়েছিল আমার হৃদয়ে।
জীবন চেয়েছিলাম বহু দিনের, কিন্তু আমায় দেয়া হলো শুধু দিন চারেকের
দুই গেলো বাসনায়, দুই অপেক্ষাতে.....
কি দুর্ভাগা জাফর, সমাধি’র জন্য!
দুই গজ জমিও জুটলোনা প্রেয়সীর স্বদেশ ভূমিতে” !
যে ঋজু প্রচ্ছন্ন ঈশ্বরবোধ শিরদাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়ে তোমার অন্তরে, সে কি তোমায় বলেছে কোন এক নির্বাসিত কবি রাত্রির মরুভূমিতে তোমায় জোৎস্না দেখাবে বলে জেগে থাকে বহুকাল?
তোমার জার্মান চকলেট
৬ই জুলাই ২০১৬,
টাওয়ার হিল, লন্ডন
শুভ,
আমার জার্মান চকলেট!! মনে আছে তাহলে? বান্ধবীকে দিয়ে তোমায় বলে পাঠিয়েছিলাম তুমি 'জার্মান চকলেট', মিষ্টি-তেতো। তুমি হেসে উত্তরে বলেছিলে, তুমি 'বেলজিয়ান', তেতো, শুধুই তেতো।
শোনো মিষ্টি-তেতো বালক, সব ভুলে গিয়ে এবার দেশে ফের। তোমাকে জাফর এর মতো কেউ নির্বাসনে পাঠায়নি; তুমি হয়েছো স্বেচ্ছা নির্বাসিত। এটা সত্যি, তোমায় হারিয়ে আমি নির্বাসনে যাইনি কিন্তু ভালোবাসার আদব ধারণ করেছিলাম। আর তোমার যে পথচলা অবিনশ্বর নির্ধারণ করেছিলেন, তুমিও সেই পথের পথিক হয়ে তার খোঁজে হেটে বেড়িয়েছ। আমি বুঝিনি কখনো কোনো এক নির্বাসিত কবি পৃথিবীর আরেক প্রান্তে জেগে রয় রাত্রির মরুভূমিতে আমায় জোৎস্না দেখাবে বলে। কি আশ্চর্য এই মানব জীবন!
কিন্তু এবার যদি তোমায় জিজ্ঞেস করি কেন এই নির্বাসন, এটা কি অপ্রাপ্তির দুঃখবোধ, অপূর্ণতার পূর্ণতা খোঁজা, নাকি আমার এই মুখটা হঠৎ করে দেখে ফেলবার ভয়? এতো লুকোনো আবেগ তোমার! আমার মতো একজন সাধারণ নিলিশ্বরী'র কারণে, একজন ভাঙাচোরা হৃদয়সর্বস্ব মানুষের কারণে, নিজের ঘর ছেড়ে, দেশের মাটি ছেড়ে, হাজার মাইল দূরে থেকে গিয়ে আমায় আর অপরাধী করোনা। যদি বলি আবুল হাসান এর মতো,
‘কবি তোমার কিসের দুঃখ? কিসের এ হিরন্ময় কৃষকতা?
মাটির ভিতরে তুমি সুগোপন একটি স্বদেশ রেখে কেন কাঁদো
বৃক্ষ রেখে কেন কাঁদো? বীজ রেখে কেন কাঁদো? কেন তুমি কাঁদো?
নাকি এক অদেখা শিকড় যার শিকড়ত্ব নেই তাকে দেখে তুমি ভীত আজ?
ভীত আজ তোমার মানুষ বৃক্ষশিশু প্রেম নারী আর নগরের নাগরিক ভূমা?
বুঝি তাই দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও তুমি অনাবাদী রাখবে না আর
এম্ফিথিয়েটার থেকে ফিরে এসে উষ্ণ চাষে হারাবে নিজেকে, বলবে
ও জল, ও বৃক্ষ, ও রক্তপাত, রাজনীতি ও নিভৃতি, হরিৎ নিভৃতি
পুনর্বার আমাকে হোমার করো, সুনীতিমূলক এক থরোথরো দুঃখের
জমিন আমি চাষ করি এদেশের অকর্ষিত অমা!’
তোমার মতো একজন মানুষ যে জীবনানন্দ ধারণ করে বুকে, অন্তরে লালন করে মাস্টারদা সূর্যসেন, যার প্রাণে বাজে নেতাজি সুবাস চন্দ্র বোস এর দেশপ্রেম, চে'গাভারার মতো যে চির বিপ্লবী বালক, সেই মানুষটার দেশ ছেড়ে ১৯ বছর কাটিয়ে দেয়া অযৌক্তিক! তুমি যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলে, সেই দেশে এখনো দারিদ্রতা আর ক্ষুধার ভয়াল থাবা রয়ে গেছে। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, অপূর্ণতা আর হতাশার পরও আমরা এদেশে প্রতিনিয়ত জীবন-যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। তুমিও ফিরে এসো, ফিরে এসো এদেশের যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা সাধারণ মানুষের কাছে। তুমিও আবার দেশের মাটিতে উষ্ণ চাষে হারাও নিজেকে, পুনর্বার হোমার হও, কেঁদো না আর সুগোপন এই স্বদেশ বুকে রেখে। নিঃষঙ্গতার দীর্ঘশ্বাস আজন্ম বয়ে নিয়ে বেড়িও না। কথা দাও আসবে এবার; ভয় পেও না, সেই দিনগুলিতে আমি নাহয় দূরে কোথাও চলে যাবো। এই মানচিত্রের সীমানা পেরিয়ে দূরে কোথাও। হেসো না, তোমায় কেউ না চিনলেও আমি তোমায় ঠিক চিনি- তাই বললাম।
পড়া শুরু করেছি কোলম্যান বার্কস এর ‘Soul of Rumi’, যে বইটা তুমি পাঠিয়েছিলে। মুচকি হেসেই পড়া শুরু করেছি। সেই যে তুমি বললে, যখন বইখানা ধরবো যেন ভেবে নেই তোমার হাত দুখানা ধরে আছি। সারাদিন কাজ শেষে যখন বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে টেবিল ল্যাম্প এর নিভু আলোয় বইখানা ধরি, মনে হয় সত্যি সত্যি যেন তুমি আমার হাত দুখানা ধরে আছো।
আমার মতো পড়াশোনায় ফাঁকিবাজ, অষ্টরম্ভা মেয়েটাকে বই পড়া তো তুমিই শিখিয়েছিলে। জোর করে চাপিয়ে দিতে কত কত রাজ্যের বই। শুরুতেই বলেছিলে, you liked books and music and had a streak for black dark humor. তোমার সেই black dark humor কি তা পুরোপুরি বুঝতাম না। ভাবতাম ওটা grotesque জাতীয় কিছু একটা হবে! Somehow I felt you were in a drive to simultaneously invoke your audience with an uncomfortable bizarreness with a feeling of some sort of sympathy- অনেকটা রবিঠাকুরের শেষের কবিতার অমিত রয় এর মতো। অদ্ভুত ভাবে তুমি ছিলে mysterious, magnificent, hideous, ugly, unpleasant আর কখনো কখনো repulsive! তোমার ভাষণে যেন জ্বলে উঠতো সার্বিয়া, কসোভো আর হুন্ডুরাস এর বিদ্ধস্ত মানুষ, সমাপ্ত হতো তাদের অসমাপ্ত স্লোগান। বিশ্বসংসারে তোমারই যেন ছিল একমাত্র কাজ, বাকি সকলে বেকার। তুমি ছিলে একমাত্র জীবন দেবতা যে যীশুশুদ্ধ ক্রুশ টেনে নিয়ে যেতে। চেগাভারার তুমিই ছিলে একমাত্র সৈনিক, বাকিরা সবাই মৃত। প্রলেটারিয়ানদের নেতা হয়েও ভোগবাদীদের ভদকা ছাড়া তোমার জমতো না। শহরসুদ্ধ অভাগাদের তুমি ছিলে একমাত্র উদ্ধারদাতা, তোমার ভাষণেই যেন ওদের মানবাধিকারে প্রাণ পেত। তুমিই ছিলে ওদের শুভবুদ্ধির বিজ্ঞ বন্ধুবর। তুমি ছিলে মহান, বাকিরা সব যেন নচ্ছার!! তোমার ছিল ঘরের মধ্যে ঘর, সেই ঘরের বিমুগ্ধ শ্রোতামন্ডলীদের তুমি একই ভাষণ শোনাতে- যে ভাষণ চক্রাকারে ঘুরতো ফিরত, সেই একই বাক্যলোচলা। তোমার ভাষণ শুনতে শুনতে আমার কান পচে যেত। তোমার সেই একই চরিত্রে অভিনয়, সেই একই মুখোশ, একই মুখশ্রী, একই script যে কি ভীষণ boring, strenuous, exhausting আর out dated ছিল তা কি তুমি জানতে? সেই একই মানুষ, একই কলঘর, একই পুজোর থালায় সেই একই পুণ্যময় অর্পণ। এতো কিছুর পরও আমি নিজে নিজে ধ্বংস হতাম। তোমার জন্য, শুধু তোমার জন্য আমি বারবার নিয়তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতাম! আর একটা সময় আমি কিছু ভাবতাম না, কারণ আমি ভাবতে চাইতাম না কিছু। তুমি তো হেসে বলতে বারবার, I was desperately in love with ‘a very bad man with a very dark side’।
তুমি যখন চলে গেলে, তোমায় হারিয়ে আমি তোমার ভালোলাগার সব জিনিষগুলি করে যেতাম। তোমার পছন্দের গানগুলি শুনতাম, তোমার পছন্দের বইগুলি পড়তাম, আরো কত কি করতাম। তোমার ভালোলাগার সব জিনিস গুলির মধ্যে যেন তোমায় খুঁজে পেতাম। Ilya Kaminskyর মতো,
‘I read Plato, Augustine, the loneliness of their syllables
While Icarcus keeps falling.
And I read Akhmatova, her rich weight binds me to the earth,
the nut trees on a terrace breathing
the dry air, the daylight’.
আমি পড়েই চলতাম, কখনো রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতো, তবুও আমি পড়েই চলতাম। পৃথিবী থাকতো ঘুমিয়ে, শুধু জেগে থাকতাম আমরা জনতিনেক: তুমি, আমি আর অবিনশ্বর। তোমায় নিয়ে কথা বলে যেতাম অবিনশ্বরের সাথে। ভোরের সূর্য দেখতাম; আশ্চর্য, সেই সূর্য ধরিত্রীর গায়ে রং ছড়াতো না, সে রং ছড়াতো আমার অস্তিত্বে।
কিন্তু এখন তোমায় খুঁজে পাবার জন্য বই পড়ি না, এখন পড়ি ভালোবেসে। কোনো ভালো লেখার মর্যাদা দিতে পড়ি। সেই যে বললে ভালোবাসার মর্যাদা, সে মর্যাদা দিতেই পড়ি। তবে জানো, এখনো যদি কোনো বই হাতে নেই কোত্থেকে যেন তুমি হাজির হয়ে চুপটি করে আমার মুখোমুখি বসে থাকো।
আগের একটা চিঠিতে লিখেছো, তুমি আমায় পুরোপুরি চিনতে পারোনি কিন্তু অবিনশ্বর আমায় ঠিক চিনেছিলেন। এর উত্তরে তোমায় বলি, আমারে না হয়ে নাই চিনেছিলে, নাই জেনেছিলে, সেই ছিল ভাল, সেই ভাল।
ভালো থেকো জার্মান চকলেট। অবিনশ্বর যেন তোমায় আমার জীবনে মিষ্টি-তেতো বালক করে চিরটাকাল বাঁচিয়ে রাখেন।
নিলিশ্বরী
৯ই জুলাই ২০১৬,
ধানমন্ডি, ঢাকা
নীল,
আর কত অপরাধের কথা শোনাবে? থাক, তুমি শোনাও। আমারও শোনা দরকার, যদিও সব জানি তবুও শোনা দরকার।
তুমি তো নিজেও স্বীকার করতে তুমি একজন অন্ধকার মানুষকে ভালোবেসেছিলে। তোমাকে বিন্দুমাত্র বুঝতে দিতাম না আমি কখন কি করবো, কি বলবো, কোথায় তোমায় নিয়ে যাবো। তুমি বাধ্য মেয়ের মতো সম্মোহিত হয়ে আমার হাত ধরে হেটে চলতে। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে দেখতাম আমাদের পথচলা বিস্ময়কর আর অনিন্দসুন্দর এক পৃথিবীতে ছিল। কিন্তু হটাৎ যখন ইচ্ছে হতো তোমায় সরিয়ে দিতে, একমুহূর্তে তোমার সরিয়ে দিতাম। ইচ্ছে হলে তোমায় চিনতাম না, চিনতে চাইতাম ও না। আবার যখন ইচ্ছে হতো পাশে ডাকতে তোমার পাশে ডাকতাম। পরে বুঝেছি তুমি ছিলে আমার প্রাণভোমরা। তোমায় রুপোর কৌটোয় সযতনে পুরে রাখতাম, কেননা তোমাতে আমার প্রাণ লুকোনো ছিল বলে। সেকারণে যখন বিষাক্ত নিঃশ্বাস নিতে নিতে আর পারতাম না, কৌটো খুলে তোমায় দেখে নিতাম।
আমি বেঁচে ছিলাম একজন মরে যাওয়া মানুষ হয়ে। আমি চাইতাম তুমি ছুঁয়ে দাও আমার কর্কশ শব, আমার শোকগাথা। ছুঁয়ে দাও শ্মশানে যেভাবে ছুঁয়ে দেয় একান্ত স্বজন। আমি চাইতাম তুমি বয়ে নিয়ে যাও যত ক্লান্তির ভার, নুহ্য অতল স্তব্ধতা। শান্ত স্নিগ্ধ তুমি যেন শুইয়ে দাও আমার কর্কশ শব তোমার বুকে চাদ করে। আমি চাইতাম একজন মৃত আমায় তোমার ভালোবাসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখো, বেহুলা হয়ে:
“আমারে উঠিয়ে নাও হে বেহুলা, শরীরে তোমার,
প্রবল বাহুতে বেঁধে এ-গতর ধরো, সতী ধরো,
তোমার ভাসানে শোবে দেবদ্রোহী ভাটির কুমার।
কুটিল কালের বিষে প্রাণ যদি শেষ হয়ে আসে,
কুন্তল এলিয়ে কন্যা শুরু করো রোদন পরম।
মৃত্যুর পিঞ্জর ভেঙে প্রাণপাখি ফিরুক তরাসে
জীবনের স্পর্ধা দেখে নত হোক প্রাণাহরী যম্,
বসন বিদায় করে নেচে ওঠো মরণের পাশে
নিটোল তোমার মুদ্রা পাল্টে দিক বাঁচার নিয়ম”। I wanted you to hold me with your strength like the revolutionary who went against all Gods and Godly rules of this decadent world. I wanted you to wake me up from the dead, from the poison I was drenched with by your bare dance of striking gestures— ঠিক আল মাহমুদের কালজয়ী সনেট 'সোনালী কাবিন' এর মতো।
তোমার সাথে যখন দেখা হয়েছিল তখন আমি ছিলাম একজন অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষ। অর্থহীন ছিল এই পৃথিবী, সমাজের সব কলুষিত নিয়ম কানুন, যত অন্যায় যুদ্ধ, বধ্যভূমির শহর, ধূসর ধ্বংসস্তুপে বিলীন হওয়া হাজার বছরের সভ্যতা পেরুনো জনপদ। কিন্তু যখন তোমায় তাড়িয়ে দিলাম, তোমায় হারিয়ে আমি অন্য মানুষ হয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম অর্থহীন কিছুই নয়; অর্থহীন নয় এ পৃথিবীর রাহুগ্রস্ত সভ্যতা, সব সমাজযন্ত্র, গ্রন্থ, গদ্য-পদ্য, রাজতন্ত্র, মার্ক্স্, অগাস্টিন, ম্যাকিয়াভেলি ফিলোসফি বা সকল মুদ্রাযন্ত্র, বেহালা, পিয়ানো, সরোদ, চেলো, রবীঠাকুরের শ্রাবণধারা, চাইকভস্কির যত নোটেশন, রুশদেশের উপকথা, গ্রিক পৌরাণিক কল্পকাহিনী, নয়তো অপাপবিদ্ধ শিশুদের অমিয় খিলখিল হাসি। কিছুই অর্থহীন নয় কারণ এসবের মাঝেই লুকিয়ে আছে অর্থবহ আত্মশুদ্ধি আর এতেই নিরাকারের খোঁজ পাওয়া।
আর বলতে ভালো লাগছেনা সেই সব দিনের কথা। আচ্ছা, এবার মন ভালো করবার মতো কিছু বলি। আগের চিঠিতে তুমি দেশের ফেরার কথা বলেছো; আমিও ভাবছি এবার সত্যি দেশে ফেরা দরকার। আর কাঁদবো না সুগোপন একটা স্বদেশ বুকে রেখে, এবার বাড়ি ফিরবো। ছেলেরাও দেখেনি দেশ আর জুলিয়াও দেখতে চায় ওর ভালোবাসার মানুষের শেকড়। কতদিন দেখিনা ছেলেবেলার সেই স্মৃতির ইশকুল, ফেলে আশা প্রিয় শহর প্রাণের ঢাকা, বন্ধু বান্ধব, কত আত্মীয়-স্বজন, কত অনাত্মীয় যারা রক্তের সম্পর্কবিহীন হয়েও আত্মার অনেক কাছাকাছি।
সব চাইতে বেশি মন কাঁদে গ্রামের বাড়ির কথা মনে পড়লে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা পাকা ঘাট আছে, খুব সুন্দর ঘাট, তোমায় অনেক বলতাম ঘাটটার কথা। আর বাড়ির মধ্যে একটা আমগাছ আছে, যেটা এখনো আছে, মা ও বলছিলো সেদিন। ছেলেবেলায় গাছটার চারপাশে আমরা ভাই বোনেরা খেলতাম আর বেয়েও উঠতাম। আরেকটা প্রিয় জায়গা আছে আমার, বাড়ির কাছে একটা নদীর পাড়, যেখানে বিকেল হলেই আমি গিয়ে বসে থাকতাম। মনে পড়ে, তোমায় যখনি আমি আমার গ্রামের কথা বলতাম তুমি হেসে বলতে, রোজ কোনো নরম বিকেলি হাওয়া বয়ে যায় পদ্মার পাড়ে তোমার বাড়ি থেকে পদ্মার আরেক পাড়ে আমার বাড়ির আঙিনায়! “এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধুম্র পাহাড়/কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে/এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে"- ঠিক দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর কবিতার মতো আমার সোনার দেশ, ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমার বাংলাদেশ।
আরেকটা কথা বলে আজ শেষ করি, don’t be terribly confident thinking you know me entirely । হতেও তো পারে তুমিও আমায় পুরোপুরি চিনতে পারোনি, যেমনটা তুমি জোর গলায় দাবি করো সবসময়। হতেও তো পারে এমন কোনো দিন আসবে, যখন বেলুনের মতন শূন্যে উড়িয়ে দেব তোমায় সাথে কারণে, অকারণে, হাসতে হাসতে কিছু সময়। হয়তো এমন কোনো সময় আসবে, যখন তোমার বা হাতের একলা বাদামি তিলটা আমি আবারো ছুঁয়ে দেব। হয়তো এক থোকা কৃষ্ণচূড়া অথবা কাঠগোলাপ নিয়ে আমি আসবো। তোমার জন্য আমার যত প্রার্থনা সেগুলো দুহাতে কৃষ্ণচূড়া অথবা কাঠগোলাপে মুড়িয়ে আমি তোমায় দেখতে আসবো।
“Come close… closer… even closer!
How long will this hindrance last?
If you are me and I am you,
What is this separation between you and me?
We are the light of God, we are God‛s mirror.
So why do we struggle with ourselves and with one another” যে রুমি'র সূধায় তুমি ডুবে থাকতে, যে বলেছিলো অবিনশ্বর প্রেমময় তার কথাগুলোই তোমায় ফিরিয়ে দিলাম।
তৈরী থেকো রুপোর কৌটোয় সযত্নে রাখা প্রাণভোমরা আমার। হয়তো আবার দেখা হবে কোনো এক অচিহ্নিত সময়ে, কোনো এক পবিত্র অপরাহ্নে, সময় যখন জমাট বাধবে একখণ্ড রুপোলি ভোর!
তোমার মিষ্টি-তেতো বালক,
১৫ই জুলাই ২০১৬,
টাওয়ার হিল, লন্ডন
শুভাশীষ,
“We don't know how to say good-bye
We wander on, shoulder by shoulder…….
Let's step inside a church and watch
baptisms, marriages, masses for the dead…..
Or else, let's sit in the graveyard
On the trampled snow, sighing to each other.
That stick in your hand is tracing mansions
In which we shall always be together” - তুমিও কি Anna Akhmatova’র মানুষটার মতো হাতড়ে বেড়াও এমন কোনো স্বপ্নের প্রাসাদ যেখানে আমাদের খুব সাধারণ গল্পগুলো বেঁচে থাকে আজীবন!
এমন কিছু বলোনা যা হয়তো কোনোদিন হবেনা। তোমাকে দেখার স্বপ্ন সুন্দর একটা স্বপ্ন হয়ে নাহয় বেঁচে থাক। তোমাকে যে লিখে যাচ্ছি আমার সব না বলা কথা, এটাও তো আর কম প্রাপ্তি নয়। তুমি যে বললে হয়তো দেখা হবে, তোমার এই বলাতেই আমি খুশি। কজন বলে সেই ছেলেবেলার মেঘবালিকাকে ১৯টা বসন্ত পেরিয়ে লণ্ঠন হাতে তেপান্তরের মাঠে দেখতে আসবার কথা? কিন্তু আমিও তো সেই মেঘবালিকা আর নই। মেঘবালিকারা তো মেঘবালিকা থাকে না, একটা সময় পার হলে ওদের বৃষ্টি বলে ডাকে সবাই। তুমিও তো বলেছো, মনে নেই? তোমার মেঘবালিকা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েছে। পদ্মপাতায় জল দেখেছো? পদ্মপাতায় জল যেভাবে ভেসে থাকে তেমনি আমিও আমার এ ক্ষুন্নিবৃত্তির জীবনে ঝরেপড়া পদ্মপাতার জল হয়ে বেঁচে আছি। একদিন আমি মিলিয়ে যাবো খরস্রোতায়, মিলিয়ে যাবো দূরে কোথাও। তুমি তখন খুঁজে নিও আমায় বৃষ্টি কিংবা মেঘের মধ্যে।
লিখছি এয়ারপোর্ট থেকে। হটাৎ একটা আরবিট্রেশনে কলকাতা যেতে হচ্ছে। ৪ দিন আরবিট্রেশন, ৩ দিন ঘোরাঘুরি। প্রশ্নবোধক চিরকাল আমার কাছে, রাজনীতি কি মনুষত্ব কেড়ে নেয়, ছিনিয়ে নেয় বাবার ভিটে বাড়ি, দেশের মাটি, তাড়িয়ে নিয়ে যায় প্রাণের বন্ধুদের বহুদূর? ধর্মের অজুহাতে আশ্চর্য ধর্ম বিরোধী কান্ড ঘটেছিলো ১৯৪৬এর কলকাতা দাঙ্গায়। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে কুপিয়ে, পুড়িয়ে মারা, তাও আবার স্রষ্টার দোহাই দিয়ে! ভাবতেই যেন কেমন লাগে- অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, ঘর নেই, প্রিয় মানুষেরা নেই, আর গন্তব্যে পৌঁছনোর মুহূর্ত পর্যন্ত জীবনের নিশ্চয়তা নেই কেননা রেল থামিয়ে, বাস থামিয়ে, গরুর গাড়ি থামিয়ে জবাই করা হয়েছিল নিরাপরাধ শিশুদের, গর্ভবতী মায়েদের, কত নিরীহ মানুষদের। বাবা তখন মেট্রিক দিয়েছেন সবে, সেই ১৯৪৭ এর ঘটনা বলেন আমাদের আর বলেন তোমাদের ভাগ্য ভালো তোমরা ধর্মীয় দাঙ্গার ভয়াবহতা দেখোনি। ১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গা (The Great Calcutta Killing) এর পর হাজারো মানুষ এপার থেকে ওপারে পাড়ি দিয়েছিলেন। বাবার স্মৃতিতে আজো অমলিন আমাদের গ্রামের বীরতারা হাটের পিঠে কালো তিলওয়ালা ধবধবে ফর্সা মুদি'টা যে নাকি একগাল হেসে অদূরে গলায় নমস্কার করে বলতেন, ‘কিগো কত্তা, সেলাম, ভালো আছেন তো?' আর গ্রামের বিয়ে বাড়ির অপরিহার্য, বাজি তৈরির যদু কারিগর। বাবার স্কুল এর প্রিয় বন্ধুরা, নির্মল চক্রবর্তী, সুনীল ঘোষ, জোতির্ময় চক্রবর্তী, অসিত দাস হরিপদ, তপন পাল, আরো কত মানুষরা সীমানা পেরিয়ে চলে গেছেন, অনেকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে চলে গেছেন প্রাণের ভয়ে।
সীমান্ত পড়ি দেয়া বিহার থেকে ঠিক তেমনি নাকি এসেছিলেন হাজার মানুষ। নবাবপুরে বাবা তেমনি একটা স্কুলের শরণার্থী শিবিরে কাজ করতে গিয়ে দেখেছিলেন “বাচ্চাদের দুর্ভিক্ষ পীড়িত চেহারা। গাল চোখ বসে গেছে, অসহায় মা নোংরা অচল দিয়ে মাছি তাড়াচ্ছেন, অনেকের গায়ে আঘাতের চিহ্ন... বেদনার সমুদ্রেও তাদের মুখে একটি নিশ্চিত নিরাপত্তার আভাস। –'ভাইয়া, একঠো রুপিয়া দোগে?'- কে হাত বাড়ালো” চমকে গিয়ে কিশোর বাবার মনে পড়তো তার সেই যদু কারিগর, সেই বাচ্চা মতো নাপিত ছেলেটা, যোগেশ ডাক্তার, বীরতারার সেই মুদিটা, স্কুল এর বন্ধুরা ওরা কেমন আছে? ওরা স্কুল ক্যাম্প এর বিহারীদের মতো ক্ষত বিক্ষত, অভুক্ত, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন হয়ে নেইতো? জীবনের এই অধ্যায়ের গল্প বলতে বলতে এখনো বাবার ওর গলা ধরে যায়, চোখ ভিজে যায় অবচেতনে। একারণেই হয়তো যতবার কলকাতা আসি সব সময় মন কাঁদে দেশ ফেলে, প্রিয়জন হারিয়ে, ভিটেহীন হওয়া সেই সব দু-বাংলার মানুষের জন্য।
এবার থাকছি বাড়তি ৩ দিন আরবিট্রেশন এর পর, এর কারণ ঘুরে দেখবো তোমার প্রিয় শহর। আর কোর্টও বন্ধ তাই ভাবলাম এটাই সুযোগ। ধরে নাও, it will be my pilgrim! Like Majnoon I will touch those walls you once touched and walk those roads you once walked. গঙ্গার ধার, কলেজে স্ট্রিটে কফি হাউসের সেই আড্ডাটা, বই পাড়া, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সদর স্ট্রিটের নতুন আর পুরাতনের flaunting fusion, হাওড়া, মল্লিক ঘাটের ফুলের বাজার, শ্যামলিমায় মোড়া রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতন! আমার চোখ দিয়ে তোমায় বেড়িয়ে আনবো তোমার প্রিয় কলকাতা!!
“তোমায় কিছু দেব বলে চায় যে আমার মন,
নাই বা তোমার থাকলো প্রয়োজন
যখন তোমার পেলাম দেখা, অন্ধকারে এক একা
ফিরতে ছিলে বিজন গহীন বন
ইচ্ছে ছিল একটি বাতি জ্বালাই তোমার পথে,
নাই বা তোমার থাকলো প্রয়োজন ”। তোমার নাইবা থাকলো প্রয়োজন, তবুও নাহয় দিয়ে গেলাম তোমার পথে জ্বেলে একটা বাতি। যখন আমি আর থাকবোনা আমায় যেন মনে রাখো তুমি।
আগের মতো তোমায় বলতে ইচ্ছে করে আরেকবার, ‘You are so annoyingly irresistible’! আর তুমিও নাহয় আগের মতো হেসে উত্তর দিও, ‘Now honestly no one has ever called me as such’! ‘Annoyingly irresistible’ হয়েই চিরকাল বেঁচে থেকো; কখনো কোনোকালে তোমার চির সবুজ দুষ্টুমি করা বালক হৃদয় যেন ফ্যাকাশে না হয়ে যায়।
অনেক সময় পেরুলো এবার তুমি শান্ত হও, আমিও না হয় শান্ত হই এবার।
নিলিশ্বরী
২০শে জুলাই ২০১৬,
ধানমন্ডি, ঢাকা
নীল,
ছেলেরা তোমার চিঠি পেয়ে, বিশেষ করে বাবার ছেলেবেলার বন্ধুর চিঠি পেয়ে ভীষণ খুশি। তোমায় নাকি ওরা লিখেছে ইমেইলে।
আগের চিঠিতে তুমি আমায় যা যা বলেছো এর উত্তরে আমার কিছু বলার নেই। শুধু এটুকু বুঝতে পারি, আমি তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারিনি। ভালোবাসার যে 'আদব' থাকে, সেই আদব তোমায় প্রত্যুত্তরে দিতে পারিনি। শামস এর মতো তুমি কাটা দেখেছিলে কিন্তু সেই সাথে দেখেছিলে গোলাপ। রাত্রির অন্ধকার দেখেছিলে সেই সাথে দেখেছিলে আলোকিত ভোর। তুমি জানতে এক ফালি বাঁকা চাদ পূর্ণচন্দ্রে রূপান্তর হতে সময় লাগে। সালমান-আল-ফারসি(র:) তার প্রিয় বন্ধুর খোঁজে পৃথিবী চোষে বেড়িয়েছিলেন। সূদুর ইরান থেকে কত পথ পাড়ি দিয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন তার না-দেখা বন্ধুকে। তার কাছে স্বর্গ হয়ে গেছিলো সামান্য আর বন্ধুর খেজুর পাতায় মোড়া মাটির ঘর হয়ে গেছিলো অসামান্য। আতিফ আসলাম এর গজাল এর মতো, "জান্নাত ভি গাওয়ারা হ্যায় মাগার মেরে লিয়ে/ইয়ে কাতিব-এ-তাকদির মদিনা লিখ দে"।
মাইমুনা(র:)ও তার ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর ৩০ বছর পর, নিজের মৃত্যুশয্যায় যেতে চেয়েছিলেন সারিফ'এ, যে জায়গায় তার বাসর হয়েছিল। সেটাও ভালোবাসার 'আদব' এর কারণে। মাজনুন কেন দেয়াল গুলো ছুঁয়েছিল, পথগুলো দিয়ে হেটেছিলো? It was the walls that he touched but not the walls that he touched. He touched those walls which were touched by Laila.
তুমি আমার জন্য ভালোবাসার আদব ধারণ করেছিলে, তোমার অন্তরে আদব এর দর্শন লালন করেছিলে। আমি তোমার জন্য সেই দর্শন ধারণ করতে পারিনি। তুমি তোমার হৃদয় কাড়া, সঙ্গী হারা, আলোছায়া মাখা চোখের জলে যখন আমায় ডেকেছিলে, আমি তো শুনিনি তোমার ডাক!
জানো, আজকাল কেমন যেন নিজেকে নির্বাসিত মনে হয়। শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরএর মতো আমিও যেন নির্বাসিত। ব্রিটিশ-রাজ্, সেপাই বিপ্লবের পর যাকে তার তিন পুত্রের ছিন্ন মস্তক উপহার দিয়ে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করেছিল, সেই দুঃখী দরবেশ-সম্রাট এর মতো যেন আমিও নির্বাসিত। জাফর এর মতো আমারও মন যেন কেমন করে- লাগতা নাহি হে দিল মেরা উজরে দাইয়ার মে…
“মন লাগে না আমার এই লুন্ঠিত ভূখণ্ডে
কেই বা পরিতৃপ্ত এই নিষ্ফল পৃথিবীতে?
বুলবুল, শিকারী কিংবা শিকার কোনটা নিয়েই অভিযোগ করে না
কেননা ভাগ্য যখন রায় দিয়েছিলো, বসন্ত তখন ছিল শীর্ষে।
ইচ্ছেগুলোকে জানিয়ে দাও, ওরা যেন ঘর বাধে অন্য কোথাও
কি জায়গাই বা আছে ওদের এ বিদীর্ণ হৃদয়ে?
বুলবুল ফুলের ডালে বসে গান গাইতেই পারে
কিন্তু সে তো কাটা ফুটিয়েছিল আমার হৃদয়ে।
জীবন চেয়েছিলাম বহু দিনের, কিন্তু আমায় দেয়া হলো শুধু দিন চারেকের
দুই গেলো বাসনায়, দুই অপেক্ষাতে.....
কি দুর্ভাগা জাফর, সমাধি’র জন্য!
দুই গজ জমিও জুটলোনা প্রেয়সীর স্বদেশ ভূমিতে” !
যে ঋজু প্রচ্ছন্ন ঈশ্বরবোধ শিরদাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়ে তোমার অন্তরে, সে কি তোমায় বলেছে কোন এক নির্বাসিত কবি রাত্রির মরুভূমিতে তোমায় জোৎস্না দেখাবে বলে জেগে থাকে বহুকাল?
তোমার জার্মান চকলেট
৬ই জুলাই ২০১৬,
টাওয়ার হিল, লন্ডন
শুভ,
আমার জার্মান চকলেট!! মনে আছে তাহলে? বান্ধবীকে দিয়ে তোমায় বলে পাঠিয়েছিলাম তুমি 'জার্মান চকলেট', মিষ্টি-তেতো। তুমি হেসে উত্তরে বলেছিলে, তুমি 'বেলজিয়ান', তেতো, শুধুই তেতো।
শোনো মিষ্টি-তেতো বালক, সব ভুলে গিয়ে এবার দেশে ফের। তোমাকে জাফর এর মতো কেউ নির্বাসনে পাঠায়নি; তুমি হয়েছো স্বেচ্ছা নির্বাসিত। এটা সত্যি, তোমায় হারিয়ে আমি নির্বাসনে যাইনি কিন্তু ভালোবাসার আদব ধারণ করেছিলাম। আর তোমার যে পথচলা অবিনশ্বর নির্ধারণ করেছিলেন, তুমিও সেই পথের পথিক হয়ে তার খোঁজে হেটে বেড়িয়েছ। আমি বুঝিনি কখনো কোনো এক নির্বাসিত কবি পৃথিবীর আরেক প্রান্তে জেগে রয় রাত্রির মরুভূমিতে আমায় জোৎস্না দেখাবে বলে। কি আশ্চর্য এই মানব জীবন!
কিন্তু এবার যদি তোমায় জিজ্ঞেস করি কেন এই নির্বাসন, এটা কি অপ্রাপ্তির দুঃখবোধ, অপূর্ণতার পূর্ণতা খোঁজা, নাকি আমার এই মুখটা হঠৎ করে দেখে ফেলবার ভয়? এতো লুকোনো আবেগ তোমার! আমার মতো একজন সাধারণ নিলিশ্বরী'র কারণে, একজন ভাঙাচোরা হৃদয়সর্বস্ব মানুষের কারণে, নিজের ঘর ছেড়ে, দেশের মাটি ছেড়ে, হাজার মাইল দূরে থেকে গিয়ে আমায় আর অপরাধী করোনা। যদি বলি আবুল হাসান এর মতো,
‘কবি তোমার কিসের দুঃখ? কিসের এ হিরন্ময় কৃষকতা?
মাটির ভিতরে তুমি সুগোপন একটি স্বদেশ রেখে কেন কাঁদো
বৃক্ষ রেখে কেন কাঁদো? বীজ রেখে কেন কাঁদো? কেন তুমি কাঁদো?
নাকি এক অদেখা শিকড় যার শিকড়ত্ব নেই তাকে দেখে তুমি ভীত আজ?
ভীত আজ তোমার মানুষ বৃক্ষশিশু প্রেম নারী আর নগরের নাগরিক ভূমা?
বুঝি তাই দুঃখের এক ইঞ্চি জমিও তুমি অনাবাদী রাখবে না আর
এম্ফিথিয়েটার থেকে ফিরে এসে উষ্ণ চাষে হারাবে নিজেকে, বলবে
ও জল, ও বৃক্ষ, ও রক্তপাত, রাজনীতি ও নিভৃতি, হরিৎ নিভৃতি
পুনর্বার আমাকে হোমার করো, সুনীতিমূলক এক থরোথরো দুঃখের
জমিন আমি চাষ করি এদেশের অকর্ষিত অমা!’
তোমার মতো একজন মানুষ যে জীবনানন্দ ধারণ করে বুকে, অন্তরে লালন করে মাস্টারদা সূর্যসেন, যার প্রাণে বাজে নেতাজি সুবাস চন্দ্র বোস এর দেশপ্রেম, চে'গাভারার মতো যে চির বিপ্লবী বালক, সেই মানুষটার দেশ ছেড়ে ১৯ বছর কাটিয়ে দেয়া অযৌক্তিক! তুমি যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলে, সেই দেশে এখনো দারিদ্রতা আর ক্ষুধার ভয়াল থাবা রয়ে গেছে। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, অপূর্ণতা আর হতাশার পরও আমরা এদেশে প্রতিনিয়ত জীবন-যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। তুমিও ফিরে এসো, ফিরে এসো এদেশের যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা সাধারণ মানুষের কাছে। তুমিও আবার দেশের মাটিতে উষ্ণ চাষে হারাও নিজেকে, পুনর্বার হোমার হও, কেঁদো না আর সুগোপন এই স্বদেশ বুকে রেখে। নিঃষঙ্গতার দীর্ঘশ্বাস আজন্ম বয়ে নিয়ে বেড়িও না। কথা দাও আসবে এবার; ভয় পেও না, সেই দিনগুলিতে আমি নাহয় দূরে কোথাও চলে যাবো। এই মানচিত্রের সীমানা পেরিয়ে দূরে কোথাও। হেসো না, তোমায় কেউ না চিনলেও আমি তোমায় ঠিক চিনি- তাই বললাম।
পড়া শুরু করেছি কোলম্যান বার্কস এর ‘Soul of Rumi’, যে বইটা তুমি পাঠিয়েছিলে। মুচকি হেসেই পড়া শুরু করেছি। সেই যে তুমি বললে, যখন বইখানা ধরবো যেন ভেবে নেই তোমার হাত দুখানা ধরে আছি। সারাদিন কাজ শেষে যখন বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে টেবিল ল্যাম্প এর নিভু আলোয় বইখানা ধরি, মনে হয় সত্যি সত্যি যেন তুমি আমার হাত দুখানা ধরে আছো।
আমার মতো পড়াশোনায় ফাঁকিবাজ, অষ্টরম্ভা মেয়েটাকে বই পড়া তো তুমিই শিখিয়েছিলে। জোর করে চাপিয়ে দিতে কত কত রাজ্যের বই। শুরুতেই বলেছিলে, you liked books and music and had a streak for black dark humor. তোমার সেই black dark humor কি তা পুরোপুরি বুঝতাম না। ভাবতাম ওটা grotesque জাতীয় কিছু একটা হবে! Somehow I felt you were in a drive to simultaneously invoke your audience with an uncomfortable bizarreness with a feeling of some sort of sympathy- অনেকটা রবিঠাকুরের শেষের কবিতার অমিত রয় এর মতো। অদ্ভুত ভাবে তুমি ছিলে mysterious, magnificent, hideous, ugly, unpleasant আর কখনো কখনো repulsive! তোমার ভাষণে যেন জ্বলে উঠতো সার্বিয়া, কসোভো আর হুন্ডুরাস এর বিদ্ধস্ত মানুষ, সমাপ্ত হতো তাদের অসমাপ্ত স্লোগান। বিশ্বসংসারে তোমারই যেন ছিল একমাত্র কাজ, বাকি সকলে বেকার। তুমি ছিলে একমাত্র জীবন দেবতা যে যীশুশুদ্ধ ক্রুশ টেনে নিয়ে যেতে। চেগাভারার তুমিই ছিলে একমাত্র সৈনিক, বাকিরা সবাই মৃত। প্রলেটারিয়ানদের নেতা হয়েও ভোগবাদীদের ভদকা ছাড়া তোমার জমতো না। শহরসুদ্ধ অভাগাদের তুমি ছিলে একমাত্র উদ্ধারদাতা, তোমার ভাষণেই যেন ওদের মানবাধিকারে প্রাণ পেত। তুমিই ছিলে ওদের শুভবুদ্ধির বিজ্ঞ বন্ধুবর। তুমি ছিলে মহান, বাকিরা সব যেন নচ্ছার!! তোমার ছিল ঘরের মধ্যে ঘর, সেই ঘরের বিমুগ্ধ শ্রোতামন্ডলীদের তুমি একই ভাষণ শোনাতে- যে ভাষণ চক্রাকারে ঘুরতো ফিরত, সেই একই বাক্যলোচলা। তোমার ভাষণ শুনতে শুনতে আমার কান পচে যেত। তোমার সেই একই চরিত্রে অভিনয়, সেই একই মুখোশ, একই মুখশ্রী, একই script যে কি ভীষণ boring, strenuous, exhausting আর out dated ছিল তা কি তুমি জানতে? সেই একই মানুষ, একই কলঘর, একই পুজোর থালায় সেই একই পুণ্যময় অর্পণ। এতো কিছুর পরও আমি নিজে নিজে ধ্বংস হতাম। তোমার জন্য, শুধু তোমার জন্য আমি বারবার নিয়তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতাম! আর একটা সময় আমি কিছু ভাবতাম না, কারণ আমি ভাবতে চাইতাম না কিছু। তুমি তো হেসে বলতে বারবার, I was desperately in love with ‘a very bad man with a very dark side’।
তুমি যখন চলে গেলে, তোমায় হারিয়ে আমি তোমার ভালোলাগার সব জিনিষগুলি করে যেতাম। তোমার পছন্দের গানগুলি শুনতাম, তোমার পছন্দের বইগুলি পড়তাম, আরো কত কি করতাম। তোমার ভালোলাগার সব জিনিস গুলির মধ্যে যেন তোমায় খুঁজে পেতাম। Ilya Kaminskyর মতো,
‘I read Plato, Augustine, the loneliness of their syllables
While Icarcus keeps falling.
And I read Akhmatova, her rich weight binds me to the earth,
the nut trees on a terrace breathing
the dry air, the daylight’.
আমি পড়েই চলতাম, কখনো রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতো, তবুও আমি পড়েই চলতাম। পৃথিবী থাকতো ঘুমিয়ে, শুধু জেগে থাকতাম আমরা জনতিনেক: তুমি, আমি আর অবিনশ্বর। তোমায় নিয়ে কথা বলে যেতাম অবিনশ্বরের সাথে। ভোরের সূর্য দেখতাম; আশ্চর্য, সেই সূর্য ধরিত্রীর গায়ে রং ছড়াতো না, সে রং ছড়াতো আমার অস্তিত্বে।
কিন্তু এখন তোমায় খুঁজে পাবার জন্য বই পড়ি না, এখন পড়ি ভালোবেসে। কোনো ভালো লেখার মর্যাদা দিতে পড়ি। সেই যে বললে ভালোবাসার মর্যাদা, সে মর্যাদা দিতেই পড়ি। তবে জানো, এখনো যদি কোনো বই হাতে নেই কোত্থেকে যেন তুমি হাজির হয়ে চুপটি করে আমার মুখোমুখি বসে থাকো।
আগের একটা চিঠিতে লিখেছো, তুমি আমায় পুরোপুরি চিনতে পারোনি কিন্তু অবিনশ্বর আমায় ঠিক চিনেছিলেন। এর উত্তরে তোমায় বলি, আমারে না হয়ে নাই চিনেছিলে, নাই জেনেছিলে, সেই ছিল ভাল, সেই ভাল।
ভালো থেকো জার্মান চকলেট। অবিনশ্বর যেন তোমায় আমার জীবনে মিষ্টি-তেতো বালক করে চিরটাকাল বাঁচিয়ে রাখেন।
নিলিশ্বরী
৯ই জুলাই ২০১৬,
ধানমন্ডি, ঢাকা
নীল,
আর কত অপরাধের কথা শোনাবে? থাক, তুমি শোনাও। আমারও শোনা দরকার, যদিও সব জানি তবুও শোনা দরকার।
তুমি তো নিজেও স্বীকার করতে তুমি একজন অন্ধকার মানুষকে ভালোবেসেছিলে। তোমাকে বিন্দুমাত্র বুঝতে দিতাম না আমি কখন কি করবো, কি বলবো, কোথায় তোমায় নিয়ে যাবো। তুমি বাধ্য মেয়ের মতো সম্মোহিত হয়ে আমার হাত ধরে হেটে চলতে। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে দেখতাম আমাদের পথচলা বিস্ময়কর আর অনিন্দসুন্দর এক পৃথিবীতে ছিল। কিন্তু হটাৎ যখন ইচ্ছে হতো তোমায় সরিয়ে দিতে, একমুহূর্তে তোমার সরিয়ে দিতাম। ইচ্ছে হলে তোমায় চিনতাম না, চিনতে চাইতাম ও না। আবার যখন ইচ্ছে হতো পাশে ডাকতে তোমার পাশে ডাকতাম। পরে বুঝেছি তুমি ছিলে আমার প্রাণভোমরা। তোমায় রুপোর কৌটোয় সযতনে পুরে রাখতাম, কেননা তোমাতে আমার প্রাণ লুকোনো ছিল বলে। সেকারণে যখন বিষাক্ত নিঃশ্বাস নিতে নিতে আর পারতাম না, কৌটো খুলে তোমায় দেখে নিতাম।
আমি বেঁচে ছিলাম একজন মরে যাওয়া মানুষ হয়ে। আমি চাইতাম তুমি ছুঁয়ে দাও আমার কর্কশ শব, আমার শোকগাথা। ছুঁয়ে দাও শ্মশানে যেভাবে ছুঁয়ে দেয় একান্ত স্বজন। আমি চাইতাম তুমি বয়ে নিয়ে যাও যত ক্লান্তির ভার, নুহ্য অতল স্তব্ধতা। শান্ত স্নিগ্ধ তুমি যেন শুইয়ে দাও আমার কর্কশ শব তোমার বুকে চাদ করে। আমি চাইতাম একজন মৃত আমায় তোমার ভালোবাসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখো, বেহুলা হয়ে:
“আমারে উঠিয়ে নাও হে বেহুলা, শরীরে তোমার,
প্রবল বাহুতে বেঁধে এ-গতর ধরো, সতী ধরো,
তোমার ভাসানে শোবে দেবদ্রোহী ভাটির কুমার।
কুটিল কালের বিষে প্রাণ যদি শেষ হয়ে আসে,
কুন্তল এলিয়ে কন্যা শুরু করো রোদন পরম।
মৃত্যুর পিঞ্জর ভেঙে প্রাণপাখি ফিরুক তরাসে
জীবনের স্পর্ধা দেখে নত হোক প্রাণাহরী যম্,
বসন বিদায় করে নেচে ওঠো মরণের পাশে
নিটোল তোমার মুদ্রা পাল্টে দিক বাঁচার নিয়ম”। I wanted you to hold me with your strength like the revolutionary who went against all Gods and Godly rules of this decadent world. I wanted you to wake me up from the dead, from the poison I was drenched with by your bare dance of striking gestures— ঠিক আল মাহমুদের কালজয়ী সনেট 'সোনালী কাবিন' এর মতো।
তোমার সাথে যখন দেখা হয়েছিল তখন আমি ছিলাম একজন অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষ। অর্থহীন ছিল এই পৃথিবী, সমাজের সব কলুষিত নিয়ম কানুন, যত অন্যায় যুদ্ধ, বধ্যভূমির শহর, ধূসর ধ্বংসস্তুপে বিলীন হওয়া হাজার বছরের সভ্যতা পেরুনো জনপদ। কিন্তু যখন তোমায় তাড়িয়ে দিলাম, তোমায় হারিয়ে আমি অন্য মানুষ হয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম অর্থহীন কিছুই নয়; অর্থহীন নয় এ পৃথিবীর রাহুগ্রস্ত সভ্যতা, সব সমাজযন্ত্র, গ্রন্থ, গদ্য-পদ্য, রাজতন্ত্র, মার্ক্স্, অগাস্টিন, ম্যাকিয়াভেলি ফিলোসফি বা সকল মুদ্রাযন্ত্র, বেহালা, পিয়ানো, সরোদ, চেলো, রবীঠাকুরের শ্রাবণধারা, চাইকভস্কির যত নোটেশন, রুশদেশের উপকথা, গ্রিক পৌরাণিক কল্পকাহিনী, নয়তো অপাপবিদ্ধ শিশুদের অমিয় খিলখিল হাসি। কিছুই অর্থহীন নয় কারণ এসবের মাঝেই লুকিয়ে আছে অর্থবহ আত্মশুদ্ধি আর এতেই নিরাকারের খোঁজ পাওয়া।
আর বলতে ভালো লাগছেনা সেই সব দিনের কথা। আচ্ছা, এবার মন ভালো করবার মতো কিছু বলি। আগের চিঠিতে তুমি দেশের ফেরার কথা বলেছো; আমিও ভাবছি এবার সত্যি দেশে ফেরা দরকার। আর কাঁদবো না সুগোপন একটা স্বদেশ বুকে রেখে, এবার বাড়ি ফিরবো। ছেলেরাও দেখেনি দেশ আর জুলিয়াও দেখতে চায় ওর ভালোবাসার মানুষের শেকড়। কতদিন দেখিনা ছেলেবেলার সেই স্মৃতির ইশকুল, ফেলে আশা প্রিয় শহর প্রাণের ঢাকা, বন্ধু বান্ধব, কত আত্মীয়-স্বজন, কত অনাত্মীয় যারা রক্তের সম্পর্কবিহীন হয়েও আত্মার অনেক কাছাকাছি।
সব চাইতে বেশি মন কাঁদে গ্রামের বাড়ির কথা মনে পড়লে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা পাকা ঘাট আছে, খুব সুন্দর ঘাট, তোমায় অনেক বলতাম ঘাটটার কথা। আর বাড়ির মধ্যে একটা আমগাছ আছে, যেটা এখনো আছে, মা ও বলছিলো সেদিন। ছেলেবেলায় গাছটার চারপাশে আমরা ভাই বোনেরা খেলতাম আর বেয়েও উঠতাম। আরেকটা প্রিয় জায়গা আছে আমার, বাড়ির কাছে একটা নদীর পাড়, যেখানে বিকেল হলেই আমি গিয়ে বসে থাকতাম। মনে পড়ে, তোমায় যখনি আমি আমার গ্রামের কথা বলতাম তুমি হেসে বলতে, রোজ কোনো নরম বিকেলি হাওয়া বয়ে যায় পদ্মার পাড়ে তোমার বাড়ি থেকে পদ্মার আরেক পাড়ে আমার বাড়ির আঙিনায়! “এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধুম্র পাহাড়/কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে/এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে"- ঠিক দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর কবিতার মতো আমার সোনার দেশ, ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমার বাংলাদেশ।
আরেকটা কথা বলে আজ শেষ করি, don’t be terribly confident thinking you know me entirely । হতেও তো পারে তুমিও আমায় পুরোপুরি চিনতে পারোনি, যেমনটা তুমি জোর গলায় দাবি করো সবসময়। হতেও তো পারে এমন কোনো দিন আসবে, যখন বেলুনের মতন শূন্যে উড়িয়ে দেব তোমায় সাথে কারণে, অকারণে, হাসতে হাসতে কিছু সময়। হয়তো এমন কোনো সময় আসবে, যখন তোমার বা হাতের একলা বাদামি তিলটা আমি আবারো ছুঁয়ে দেব। হয়তো এক থোকা কৃষ্ণচূড়া অথবা কাঠগোলাপ নিয়ে আমি আসবো। তোমার জন্য আমার যত প্রার্থনা সেগুলো দুহাতে কৃষ্ণচূড়া অথবা কাঠগোলাপে মুড়িয়ে আমি তোমায় দেখতে আসবো।
“Come close… closer… even closer!
How long will this hindrance last?
If you are me and I am you,
What is this separation between you and me?
We are the light of God, we are God‛s mirror.
So why do we struggle with ourselves and with one another” যে রুমি'র সূধায় তুমি ডুবে থাকতে, যে বলেছিলো অবিনশ্বর প্রেমময় তার কথাগুলোই তোমায় ফিরিয়ে দিলাম।
তৈরী থেকো রুপোর কৌটোয় সযত্নে রাখা প্রাণভোমরা আমার। হয়তো আবার দেখা হবে কোনো এক অচিহ্নিত সময়ে, কোনো এক পবিত্র অপরাহ্নে, সময় যখন জমাট বাধবে একখণ্ড রুপোলি ভোর!
তোমার মিষ্টি-তেতো বালক,
১৫ই জুলাই ২০১৬,
টাওয়ার হিল, লন্ডন
শুভাশীষ,
“We don't know how to say good-bye
We wander on, shoulder by shoulder…….
Let's step inside a church and watch
baptisms, marriages, masses for the dead…..
Or else, let's sit in the graveyard
On the trampled snow, sighing to each other.
That stick in your hand is tracing mansions
In which we shall always be together” - তুমিও কি Anna Akhmatova’র মানুষটার মতো হাতড়ে বেড়াও এমন কোনো স্বপ্নের প্রাসাদ যেখানে আমাদের খুব সাধারণ গল্পগুলো বেঁচে থাকে আজীবন!
এমন কিছু বলোনা যা হয়তো কোনোদিন হবেনা। তোমাকে দেখার স্বপ্ন সুন্দর একটা স্বপ্ন হয়ে নাহয় বেঁচে থাক। তোমাকে যে লিখে যাচ্ছি আমার সব না বলা কথা, এটাও তো আর কম প্রাপ্তি নয়। তুমি যে বললে হয়তো দেখা হবে, তোমার এই বলাতেই আমি খুশি। কজন বলে সেই ছেলেবেলার মেঘবালিকাকে ১৯টা বসন্ত পেরিয়ে লণ্ঠন হাতে তেপান্তরের মাঠে দেখতে আসবার কথা? কিন্তু আমিও তো সেই মেঘবালিকা আর নই। মেঘবালিকারা তো মেঘবালিকা থাকে না, একটা সময় পার হলে ওদের বৃষ্টি বলে ডাকে সবাই। তুমিও তো বলেছো, মনে নেই? তোমার মেঘবালিকা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েছে। পদ্মপাতায় জল দেখেছো? পদ্মপাতায় জল যেভাবে ভেসে থাকে তেমনি আমিও আমার এ ক্ষুন্নিবৃত্তির জীবনে ঝরেপড়া পদ্মপাতার জল হয়ে বেঁচে আছি। একদিন আমি মিলিয়ে যাবো খরস্রোতায়, মিলিয়ে যাবো দূরে কোথাও। তুমি তখন খুঁজে নিও আমায় বৃষ্টি কিংবা মেঘের মধ্যে।
লিখছি এয়ারপোর্ট থেকে। হটাৎ একটা আরবিট্রেশনে কলকাতা যেতে হচ্ছে। ৪ দিন আরবিট্রেশন, ৩ দিন ঘোরাঘুরি। প্রশ্নবোধক চিরকাল আমার কাছে, রাজনীতি কি মনুষত্ব কেড়ে নেয়, ছিনিয়ে নেয় বাবার ভিটে বাড়ি, দেশের মাটি, তাড়িয়ে নিয়ে যায় প্রাণের বন্ধুদের বহুদূর? ধর্মের অজুহাতে আশ্চর্য ধর্ম বিরোধী কান্ড ঘটেছিলো ১৯৪৬এর কলকাতা দাঙ্গায়। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে কুপিয়ে, পুড়িয়ে মারা, তাও আবার স্রষ্টার দোহাই দিয়ে! ভাবতেই যেন কেমন লাগে- অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, ঘর নেই, প্রিয় মানুষেরা নেই, আর গন্তব্যে পৌঁছনোর মুহূর্ত পর্যন্ত জীবনের নিশ্চয়তা নেই কেননা রেল থামিয়ে, বাস থামিয়ে, গরুর গাড়ি থামিয়ে জবাই করা হয়েছিল নিরাপরাধ শিশুদের, গর্ভবতী মায়েদের, কত নিরীহ মানুষদের। বাবা তখন মেট্রিক দিয়েছেন সবে, সেই ১৯৪৭ এর ঘটনা বলেন আমাদের আর বলেন তোমাদের ভাগ্য ভালো তোমরা ধর্মীয় দাঙ্গার ভয়াবহতা দেখোনি। ১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গা (The Great Calcutta Killing) এর পর হাজারো মানুষ এপার থেকে ওপারে পাড়ি দিয়েছিলেন। বাবার স্মৃতিতে আজো অমলিন আমাদের গ্রামের বীরতারা হাটের পিঠে কালো তিলওয়ালা ধবধবে ফর্সা মুদি'টা যে নাকি একগাল হেসে অদূরে গলায় নমস্কার করে বলতেন, ‘কিগো কত্তা, সেলাম, ভালো আছেন তো?' আর গ্রামের বিয়ে বাড়ির অপরিহার্য, বাজি তৈরির যদু কারিগর। বাবার স্কুল এর প্রিয় বন্ধুরা, নির্মল চক্রবর্তী, সুনীল ঘোষ, জোতির্ময় চক্রবর্তী, অসিত দাস হরিপদ, তপন পাল, আরো কত মানুষরা সীমানা পেরিয়ে চলে গেছেন, অনেকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে চলে গেছেন প্রাণের ভয়ে।
সীমান্ত পড়ি দেয়া বিহার থেকে ঠিক তেমনি নাকি এসেছিলেন হাজার মানুষ। নবাবপুরে বাবা তেমনি একটা স্কুলের শরণার্থী শিবিরে কাজ করতে গিয়ে দেখেছিলেন “বাচ্চাদের দুর্ভিক্ষ পীড়িত চেহারা। গাল চোখ বসে গেছে, অসহায় মা নোংরা অচল দিয়ে মাছি তাড়াচ্ছেন, অনেকের গায়ে আঘাতের চিহ্ন... বেদনার সমুদ্রেও তাদের মুখে একটি নিশ্চিত নিরাপত্তার আভাস। –'ভাইয়া, একঠো রুপিয়া দোগে?'- কে হাত বাড়ালো” চমকে গিয়ে কিশোর বাবার মনে পড়তো তার সেই যদু কারিগর, সেই বাচ্চা মতো নাপিত ছেলেটা, যোগেশ ডাক্তার, বীরতারার সেই মুদিটা, স্কুল এর বন্ধুরা ওরা কেমন আছে? ওরা স্কুল ক্যাম্প এর বিহারীদের মতো ক্ষত বিক্ষত, অভুক্ত, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন হয়ে নেইতো? জীবনের এই অধ্যায়ের গল্প বলতে বলতে এখনো বাবার ওর গলা ধরে যায়, চোখ ভিজে যায় অবচেতনে। একারণেই হয়তো যতবার কলকাতা আসি সব সময় মন কাঁদে দেশ ফেলে, প্রিয়জন হারিয়ে, ভিটেহীন হওয়া সেই সব দু-বাংলার মানুষের জন্য।
এবার থাকছি বাড়তি ৩ দিন আরবিট্রেশন এর পর, এর কারণ ঘুরে দেখবো তোমার প্রিয় শহর। আর কোর্টও বন্ধ তাই ভাবলাম এটাই সুযোগ। ধরে নাও, it will be my pilgrim! Like Majnoon I will touch those walls you once touched and walk those roads you once walked. গঙ্গার ধার, কলেজে স্ট্রিটে কফি হাউসের সেই আড্ডাটা, বই পাড়া, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সদর স্ট্রিটের নতুন আর পুরাতনের flaunting fusion, হাওড়া, মল্লিক ঘাটের ফুলের বাজার, শ্যামলিমায় মোড়া রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতন! আমার চোখ দিয়ে তোমায় বেড়িয়ে আনবো তোমার প্রিয় কলকাতা!!
“তোমায় কিছু দেব বলে চায় যে আমার মন,
নাই বা তোমার থাকলো প্রয়োজন
যখন তোমার পেলাম দেখা, অন্ধকারে এক একা
ফিরতে ছিলে বিজন গহীন বন
ইচ্ছে ছিল একটি বাতি জ্বালাই তোমার পথে,
নাই বা তোমার থাকলো প্রয়োজন ”। তোমার নাইবা থাকলো প্রয়োজন, তবুও নাহয় দিয়ে গেলাম তোমার পথে জ্বেলে একটা বাতি। যখন আমি আর থাকবোনা আমায় যেন মনে রাখো তুমি।
আগের মতো তোমায় বলতে ইচ্ছে করে আরেকবার, ‘You are so annoyingly irresistible’! আর তুমিও নাহয় আগের মতো হেসে উত্তর দিও, ‘Now honestly no one has ever called me as such’! ‘Annoyingly irresistible’ হয়েই চিরকাল বেঁচে থেকো; কখনো কোনোকালে তোমার চির সবুজ দুষ্টুমি করা বালক হৃদয় যেন ফ্যাকাশে না হয়ে যায়।
অনেক সময় পেরুলো এবার তুমি শান্ত হও, আমিও না হয় শান্ত হই এবার।
নিলিশ্বরী
২০শে জুলাই ২০১৬,
ধানমন্ডি, ঢাকা
এতদিন পর আলোকরেখায় নতুন লেখা পেয়ে কি যে ভাল লাগছে। আমরা "শুভাশীষকে চিঠি": পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। খুব ভালো লাগলো। আলোকরেখা ও লেখককে অনেক অভিনন্দন।
ReplyDeleteApnakeo onek dhonnobad.
Deleteবহুদিন পর আলোকরেখায় নতুন লেখা পেয়ে খুব ভালো ভাল লাগছে। বহু প্রতিক্ষিত "শুভাশীষকে চিঠি": প্রকাশিত হলো শেষ অবদি। একটা সময় ভেবেছিলাম আর বোধ করি জানা হবে না শুভাশীষ ও নীলেশ্বরীর কি হলো ? আজ লেখা পেয়ে খুব ভালো লাগছে খুব ভালো লাগলো। আলোকরেখা ও লেখককে অনেক অভিনন্দন।
ReplyDeleteAlokrekhar ar Shubhabshish-Nilisshorir shathe thakar jonno dhonnobad.
Deleteবহুদিন পর আলোকরেখায় নতুন লেখা পেয়ে খুব ভালো ভাল লাগছে। বহু প্রতিক্ষিত আমাদের প্রিয় লেখা "শুভাশীষকে চিঠি": প্রকাশিত হলো। অনেকনের মত আমিও ভেবেছিলাম আর বোধ করি জানা হবে না শুভাশীষ ও নীলেশ্বরীর কি হলো ? আজ প্রিয় লেখকের লেখা পেয়ে খুব ভালো লাগছে লেখককে অনেক অভিনন্দন।
ReplyDeleteApnakeo onek obhinondon o dhonnobad.
Deleteবহুদিন পর মনে হচ্ছে এক যুগ পর আলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম। খুব ভালো ভাল লাগছে।তার উপরে বহু প্রতিক্ষিত আমাদের প্রিয় লেখা "শুভাশীষকে চিঠি": প্রকাশিত হলো। জানা হবে শুভাশীষ ও নীলেশ্বরীর কি হলো ?তাদের সুখ দুঃখের কথা। লেখককে সুললিত অভিনন্দন।
ReplyDeleteThank u and God bless.
Deleteবহুদিন পর আলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম। খুব ভালো ভাল লাগছে।আলোকরেখার যাত্রা সুগম হোক কোন বাধাই যেন তার পথ রুখতে না পারে এই আমার কামনা। আমাদের প্রতিক্ষিত প্রিয় লেখা "শুভাশীষকে চিঠি": প্রকাশিত হলো।খুব ভালো লাগছে। লেখককে অভিনন্দন।
ReplyDeleteThank u for liking "শুভাশীষকে চিঠি".
Deleteআজ বহুদিন বাদে আলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম। খুব ভালো ভাল লাগছে।আলোকরেখার যাত্রা সুগম হোক এই কামনা করি সর্বদা। অনেককেই মোট আমার চাওয়া কোন বাধাই যেন তার পথ রুখতে না পারে এই আমার কামনা। আমাদের প্রতিক্ষিত প্রিয় লেখা "শুভাশীষকে চিঠি": প্রকাশিত হলো।খুব ভালো লাগছে। লেখককে অভিনন্দন।
ReplyDeleteThank u for the wait. God bless.
Deleteআলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম। খুব ভালো ভাল লাগছে।আলোকরেখার যাত্রা সুগম হোক এই কামনা করি সর্বদা। সবার ভালোলাগার প্রতিক্ষিত প্রিয় লেখা "শুভাশীষকে চিঠি": প্রকাশিত হলো।খুব ভালো লাগছে। লেখককে অভিনন্দন জানাই কিন্তু কবি সুনিকেতের কবিতা দিয়ে যাত্রা শুরু করলে নেয় অনেক খুশি হতাম। এতদিন তাঁর কোন নতুন কবিতা পড়তে না পেরে মনটা বিষণ্ণ। পুরোনো কবিতাগুলোই বার বার পড়েছি। আলোকরেখার কাছে বিনীত নিবেদন যেন অতি সত্ত্বর আমার প্রিয় কবি সুনিকেতের কবিতা প্রকাশ করে। প্রতীক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteHello. Thank u. This is not a new write up but 5th episode of this novel. if you have time pls read other episodes of the novel in Alokrekha. God bless.
Deleteআলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম। খুব ভালো ভাল লাগছে।শুভাশীষকে চিঠি" লেখকের হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতির কি গভীর প্রকাশ।গহীন ভালোবাসার জগতে কখনো শান্ত যদি আবার কখনো জোয়ার ভাটায় আবার খরস্রোতা যদি ক্ষুদার্থ বাজে পাখির মত আঁকড়ে ধরে. লেখকের অভিমানী চেতনার অভিব্যক্তি এই লেখা । নিদারুন । অনেক শুভেচ্ছা লেখককে। আর যেন অপেক্ষায় না থাকতে হয় প্রতীক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteআলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম। খুব ভালো ভাল লাগছে।শুভাশীষকে চিঠি" লেখকের অনিন্দ্য এক লেখা। আমরা অপেক্ষায় থাকি লেখক মুনা চৌধুরীর লেখার জন্য। মনটা ভরিয়ে দিল। দারুন অনুভূতি কবিতা বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। ! আলোকরেখাকে ও লেখককে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
ReplyDeleteআলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম।তার ওপরে শুভাশীষকে চিঠি" লেখকের অনিন্দ্য এক লেখা পেয়ে খুব ভালো ভাল লাগছে।।মনটা ভোরে গেল। কি প্রজ্ঞাময় লেখা। এতো গবেষণা করে লিখেছেন লেখক মুনা চৌধুরী। এমন লেখা আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়।ভালোবাসায় মানুষ যখন নির্বাসিত অনুভব করে খুব কস্টকর সেই অনুভূতি। সেই কস্টকে বাহাদুর শাহ -এর সাথে তুলনা অতুলনীয়। ভালোবাসার কি অকিঞ্চন আকুতি। আমরা অপেক্ষায় থাকি লেখক মুনা চৌধুরীর লেখার জন্য ! আলোকরেখাকে ও লেখককে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
ReplyDeleteআলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম। শুভাশীষকে চিঠি" লেখা পেয়ে খুব ভালো ভাল লাগছে।। পড়ে মনটা ভোরে গেল।দারুন প্রজ্ঞাময় লেখা।"ভালোবাসার যে 'আদব' থাকে"তা অনুভব করে থাকি কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনি কোনদিন। এই সামান্য কথাটাকে অসামান্য করে তুলেছেন লেখক মুনা চৌধুরী। কেবল তাই নয় এতো গবেষণা করে লিখেছেন
ReplyDelete। এমন লেখা আমাদের জ্ঞানকে প্রজ্ঞাময় করে তোলে। খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন লেখক আরো ভালো ভালো প্রজ্ঞাময় লেখা উপহার দেবেন আশা করছি। আলোকরেখাকে ও লেখককে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
"Adab" & 'Ishq", were inherent characters of Islamic mysticism which were essential to depict who Nil and Shubhashish were as individuals. Eta progga kina jani na, amar bhalolagar shob beparguli uponnashe debar chesta korechi. Dhonnobad.
Deleteঅনেকদিন আলোকরেখায় নতুন লেখা পেলাম। শুভাশীষকে চিঠি" লেখা পড়ে খুব ভালো ভাল লাগছে।তা ভাষায় প্রকাশ যোগ্য নয়। লেখন আমাদের নিয়ে গেছেন সারা বিশ্বময়। কখন জাফর কখন মাস্টারদা আবার নেতাজি কিংবা বরিঠাকুরের ফিলোসফি। পড়ে মনটা ভোরে গেল।দারুন প্রজ্ঞাময় ।লেখক মুনা চৌধুরী কেবল গবেষণা করে লিখেছেন তাই নয় আমাদেরকেও নিয়ে গেছেন উচ্চ মার্গে। এই জন্যি আলোকরেখা আমাদের এত প্রিয়। এখানে এমন লেখা প্রকাশিত হয় যা আমাদের জ্ঞানকে প্রজ্ঞাময় করে তোলে। খুব ভালো লাগলো। আলোকরেখাকে ও লেখককে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
ReplyDeleteThank u for your comments. Stay with Alokrekha and Shubhashish ke Chithi.
Deleteঅনেকদিন আলোকরেখায় শুভাশীষকে চিঠি" নতুন লেখা পেলাম। লেখাটা পড়ে দারুন ভাল লাগছে।তা শুধু মন্তব্যে যথেষ্ট নয়। এই লেখার উপর আরেকটা লেখা লিখতে হয়। এ কেবল দুটি মানব মানবীর প্রেম গাঁথা নয় বিশ্ব সাহিত্যের ভান্ডার। চিঠির প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে জ্ঞানের আধার। ভালোবাসায় শুধু মিষ্টি বা সাধু তেতো নয় দুটোর সংমিশ্রনে হয়ে ওঠে শুভাশিস ও নীলের প্রেম কাহিনী। বহুবার পড়তে হয়ে এর নির্যাস তুলতে। অনেক ভালো লাগলো লেখক। শুভাশিস রইলো। ভালো থাকবেন। আরো আরো দূর এগোতে হবে আমাদের প্রজ্ঞাময় করতে।
ReplyDeleteশুভাশীষকে চিঠি" দারুন অনবদ্য লেখা বরাবরের মতই! অপূর্ব ভাব ! অনন্য উপমা! শব্দের মুক্তা মালা! ভালবাসার অপরূপ অলংকরণ। বার বার দেশে ফেরার আবাহন! অনেক সুন্দর লেখা ! শুভেচ্ছা রইল!
ReplyDeleteNil ar Shubho desh bhokto, tai oder deshprem ei golpe thakbei.
Deleteলেখক মুনা চৌধুরী ! আমরা তাঁর লেখার অপেক্ষায় থাকি। "শুভাশীষকে চিঠি" "-এ জন্য লেখককে সাধুবাদ জানাই। বরাবর-ই কবির কবিতা মন ও মননের সুগভীর অনুচিন্তন,ভাব,আশাবাদ,প্রেরণার অভিব্যক্তি ছায়া দেখতে পাই । অপূর্ব শব্দশৈলী চমৎকার। অপরূপ-বহুবর্ণ ও ভাষার প্রকাশ। উত্কৃষ্ট ও চমৎকার সৃষ্ট লেখনী । অনেক ভালোবাসা কবি।
ReplyDeleteThank you.
Delete"শুভাশীষকে চিঠি" "-এ জন্য লেখককে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। জীবনের এমন গভীর ভাবনা, প্রতিফলন ও তার অভিব্যক্তির প্রকাশ।যেমন বিষয় বস্তু, তেমনি চমৎকার ভাষাভাব অপূর্ব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য ও অনিন্দ্য এক প্রেমের গাঁথা। বড্ডো ভালো লাগলো।
ReplyDeleteThank u for yr comments.
Delete"শুভাশীষকে চিঠি" "-এ জন্য লেখককে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। যেমন বলেছি চিঠিগুলো জীবনের এমন গভীর ভাবনা, প্রতিফলন ও তার অভিব্যক্তির প্রকাশ।বিষয় বস্তু, তেমনি চমৎকার ভাষাভাব অপূর্ব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য ও অনিন্দ্য এক প্রেমের গাঁথা। লেখক মুনা চৌধুরী যে মন্তব্যে অংশগ্রহণ করেছেন তা আমাদের পড়ার ও সাথে থাকার প্রেরণা যোগায়। তবে বাংলায় লিখলে আরো ভালো লাগলতো। নিজের ভাষার সাথে যে আত্মিক যোগসূত্র থাকে অন্য ভাষার সাথে ততটা খুঁজে পাইনা নিজেকে।
Deleteনিশ্চই এবার থেকে বাংলাতেই উত্তর দেব. আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ
Deleteলেখক মুনা চৌধুরীর চিঠি উত্কৃষ্ট চমৎকার জীবন বোধের প্রকাশ।অপূর্ব বিষয় বস্তু,ভাষাভাব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য ও অনিন্দ্য এক লেখা । আমরা অপেক্ষায় থাকি এই চিঠির জন্য। মনটা ভরিয়ে দিল। দারুন অনুভূতি লেখা বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। ! আলোকরেখাকে ও কবিকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
ReplyDelete