মৃণালের পত্র
দেবব্রত সিংহ
---------------------------------
সেই ছুটুবেলাতে আমাদের পাহাড় কোলের জোড়ে
লদী পেরাতে যাইয়ে
এক আষাঢ় মাসের হড়কা বানে
আমি আর আমার ভাই
ভাস্যে গেছলম বানের তোড়ে
ভাইটি গেল ডুবে আমি উঠলম বাঁচে
পাড়ার লোকে বললেক
বিটিছেল্যার জীবন
যদি বেটাছেল্যা হতক
তাহলে কি বাঁচতক।
আমার মরণ নাই
সেই কথাটাই আজ তুমাকে লতুন করে বলতে চাই
বেশিদিনের কথা লয়
আমাদে বাঘমুণ্ডির পাহাড়ী পথে জিবগাড়ি ছুটাই
লাল ধুলা উড়াই
যিদিন আল্যে তুমরা
পাহাড়কোলে জোড়ের ধারে চড়ুভাতি করতে আল্যে
সিদিনটা মনে আছে তুমার
দিনটা ছিল খরবার
মাসটা ছিল মধুমাস
টাঁড়ে টাঁড়ে ডাঙা ডহরে
পলাশবনে আগুন লাগা মধুমাস।
আমার মরণ নাই
তুমি বলেছিলে তুমার সঙ্গে দেখা হবেক বলে
মরণ নাই আমার
তুমি রাজপুত্তুর
কত লেখাপড়া জানা মানুষ তুমি
বি এ, এম এ পাশ
হাই ইসকুলের মাস্টার
আমি
আমি আর কে
কাঠকুড়ানি
রাঙামাটির গাঁয়ে ঘরের ইসকুলছুট কাঠকুড়ানি
কী সুন্দর গায়ের রং তুমার
একবারি চাঁপা ফুলের পারা
আমি
আমি একবারি কালো
আঁকড় ফলের পারা মিশমিশে কালো
তবে সবাই বলে কালো হলে হবে কী
আমার গড়ন খুউব ভালো
টানা টানা চোখ বাঁশির মতন নাক
ছিপছিপে চেহারা
বাঘমুণ্ডির হাটের হলুদরাঙা শাড়ি পরে দাঁড়ালে
খোঁপায় লাল পলাশের ফুল গুঁজলে
আমাকে নকি দেখায় দারুণ
একবারি মনভুলানি
একবারি মনকাড়ানি।
---------------------------------
সেই ছুটুবেলাতে আমাদের পাহাড় কোলের জোড়ে
লদী পেরাতে যাইয়ে
এক আষাঢ় মাসের হড়কা বানে
আমি আর আমার ভাই
ভাস্যে গেছলম বানের তোড়ে
ভাইটি গেল ডুবে আমি উঠলম বাঁচে
পাড়ার লোকে বললেক
বিটিছেল্যার জীবন
যদি বেটাছেল্যা হতক
তাহলে কি বাঁচতক।
আমার মরণ নাই
সেই কথাটাই আজ তুমাকে লতুন করে বলতে চাই
বেশিদিনের কথা লয়
আমাদে বাঘমুণ্ডির পাহাড়ী পথে জিবগাড়ি ছুটাই
লাল ধুলা উড়াই
যিদিন আল্যে তুমরা
পাহাড়কোলে জোড়ের ধারে চড়ুভাতি করতে আল্যে
সিদিনটা মনে আছে তুমার
দিনটা ছিল খরবার
মাসটা ছিল মধুমাস
টাঁড়ে টাঁড়ে ডাঙা ডহরে
পলাশবনে আগুন লাগা মধুমাস।
আমার মরণ নাই
তুমি বলেছিলে তুমার সঙ্গে দেখা হবেক বলে
মরণ নাই আমার
তুমি রাজপুত্তুর
কত লেখাপড়া জানা মানুষ তুমি
বি এ, এম এ পাশ
হাই ইসকুলের মাস্টার
আমি
আমি আর কে
কাঠকুড়ানি
রাঙামাটির গাঁয়ে ঘরের ইসকুলছুট কাঠকুড়ানি
কী সুন্দর গায়ের রং তুমার
একবারি চাঁপা ফুলের পারা
আমি
আমি একবারি কালো
আঁকড় ফলের পারা মিশমিশে কালো
তবে সবাই বলে কালো হলে হবে কী
আমার গড়ন খুউব ভালো
টানা টানা চোখ বাঁশির মতন নাক
ছিপছিপে চেহারা
বাঘমুণ্ডির হাটের হলুদরাঙা শাড়ি পরে দাঁড়ালে
খোঁপায় লাল পলাশের ফুল গুঁজলে
আমাকে নকি দেখায় দারুণ
একবারি মনভুলানি
একবারি মনকাড়ানি।
বাপ আমার বাবু ঘরে মুনিষখাটা খেতমজুর
এমনিতে তার সব ভালো
শুধু দোষের মধ্যে দোষ
সে একজনা নেশাভাঙ করা মানুষ
দিন ফুরালে সনঝা হল্যেই
তাকে হাতছানি দেয় মহুয়াতলার মদ ভাঁটি
ঘরদুয়ার, ছেল্যাপেলা, লেখাপড়া
বাপের কনদিকে লজর নাই
তখন বহুত ছুটুবেলা
তখন থাকেই দেখতম
বাপ আমাকে বিদায় করলেই বাঁচে
একদম হাঁফ ছাড়ে বাঁচে
মা কিন্তুক তা লয়
মা বলতক আত ছুটুতে বিহা কীসের
আর পাঁচটা বিটিছেলা যেরম যাচ্ছে ইসকুলে
তেমনি যাক
দুপাতা লেখাপড়া করে আসুক
সেই করে টানেটুনে কোনোমতনে গাঁয়ের ইসকুলে ওই নাইন টুকুন
ইয়ার মাঝে বলা নাই কওয়া নাই
বাপ একদিন হুট করে লাগাই দিলেক বিহা
তখন কী আর জানথম অত
পুরুল্যার খোট্টা পাড়ার জানকি যাদবের কাছে
আগাম টাকা লিইছে বাপ
আমি দাঁড়াইছিলম রুখে
সেই রুখে দাঁড়ানর জোরে
বিহার দিনে থানায় যাইয়ে আমি ভাঙে দিইছিলম সব
কাগজআওলা টিভিআওলারা কুথায় থাকে কেজানে
তারা আমাকে লিয়ে একঘড়িকে দুনিয়া দিলেক খবর করে
সে খবর ত দেখেছিলে তুমি
মিছা নাই বলব এতসব জানে শুনে
তুমি আমাকে বিহা করেছিলে বলে
গাঁয়ের লোকে দেবতা বলেছিল তুমাকে
মনে আছে আমার সব মনে আছে।
এমনিতে তার সব ভালো
শুধু দোষের মধ্যে দোষ
সে একজনা নেশাভাঙ করা মানুষ
দিন ফুরালে সনঝা হল্যেই
তাকে হাতছানি দেয় মহুয়াতলার মদ ভাঁটি
ঘরদুয়ার, ছেল্যাপেলা, লেখাপড়া
বাপের কনদিকে লজর নাই
তখন বহুত ছুটুবেলা
তখন থাকেই দেখতম
বাপ আমাকে বিদায় করলেই বাঁচে
একদম হাঁফ ছাড়ে বাঁচে
মা কিন্তুক তা লয়
মা বলতক আত ছুটুতে বিহা কীসের
আর পাঁচটা বিটিছেলা যেরম যাচ্ছে ইসকুলে
তেমনি যাক
দুপাতা লেখাপড়া করে আসুক
সেই করে টানেটুনে কোনোমতনে গাঁয়ের ইসকুলে ওই নাইন টুকুন
ইয়ার মাঝে বলা নাই কওয়া নাই
বাপ একদিন হুট করে লাগাই দিলেক বিহা
তখন কী আর জানথম অত
পুরুল্যার খোট্টা পাড়ার জানকি যাদবের কাছে
আগাম টাকা লিইছে বাপ
আমি দাঁড়াইছিলম রুখে
সেই রুখে দাঁড়ানর জোরে
বিহার দিনে থানায় যাইয়ে আমি ভাঙে দিইছিলম সব
কাগজআওলা টিভিআওলারা কুথায় থাকে কেজানে
তারা আমাকে লিয়ে একঘড়িকে দুনিয়া দিলেক খবর করে
সে খবর ত দেখেছিলে তুমি
মিছা নাই বলব এতসব জানে শুনে
তুমি আমাকে বিহা করেছিলে বলে
গাঁয়ের লোকে দেবতা বলেছিল তুমাকে
মনে আছে আমার সব মনে আছে।
সেই ফাগুন দিনের দিন ফুরনো বেলায়
যিদিন তুমার সঙ্গে গেলম তুমাদে ঘরে
সিদিন ঘোমটা মাথায় আমাকে দেখে
ভূত দেখেছিল তুমার মা
তার মু গেছল শুকাই
তুমার বউদিদি মানে আমার বড়ো জা
সেও দেখলাম তাই
তুমার ইসকুলের মাস্টাররা পাড়ার বন্ধুরা
তারা বাহবা দিইছিল খুব
তবে সে কিন্তুক ভালো লাগে নাই আমার
সে ঠিক বাহবা লয়
তার ভিতরে কতকটা ছিল কৌতুক কতকটা করুণা।
যিদিন তুমার সঙ্গে গেলম তুমাদে ঘরে
সিদিন ঘোমটা মাথায় আমাকে দেখে
ভূত দেখেছিল তুমার মা
তার মু গেছল শুকাই
তুমার বউদিদি মানে আমার বড়ো জা
সেও দেখলাম তাই
তুমার ইসকুলের মাস্টাররা পাড়ার বন্ধুরা
তারা বাহবা দিইছিল খুব
তবে সে কিন্তুক ভালো লাগে নাই আমার
সে ঠিক বাহবা লয়
তার ভিতরে কতকটা ছিল কৌতুক কতকটা করুণা।
তুমি বলেছিলে লতুন করে আবার আমাকে লেখাপড়া শিখাবে
তুমি বলেছিলে লতুন করে আবার আমাকে ভরতি করে দিবে ইসকুলে
কাজের চাপে সে আর তুমার হল্য কই
কত ব্যস্ত মানুষ তুমি
ইসকুল, পার্টি, ক্লাব, বস্তিবাসী, গরিব দুখী
প্রতিবন্ধী, রক্তদান জীবনদান,
তুমার কত কাজ।
একেক দিন কাজের টানে তুমি বাইরে কাটাতে রাত
একেক দিন কাজের টানে ঘরের কথা মনে পড়ত না তুমার
এমনি করে দেখতে দেখতে
ঘরের চাইয়ে বাইরে থাকার সময় গেল বাড়ে
একদিক তুমার মা বললেক,
'ও তো ঘর সংসারের মানুষই না
বিয়ে টিয়ে কেনে যে গেল করতে',
একদিন তুমার বউদিদি বললেক,
'ও তো বাঁধনছাড়া লাগামছাড়া মানুষ
বাউন্ডুলে মানুষ
ওকে এসব মানায় না
বিয়ে টিয়ে একবারি মানায় না'
তুমি বলেছিলে লতুন করে আবার আমাকে ভরতি করে দিবে ইসকুলে
কাজের চাপে সে আর তুমার হল্য কই
কত ব্যস্ত মানুষ তুমি
ইসকুল, পার্টি, ক্লাব, বস্তিবাসী, গরিব দুখী
প্রতিবন্ধী, রক্তদান জীবনদান,
তুমার কত কাজ।
একেক দিন কাজের টানে তুমি বাইরে কাটাতে রাত
একেক দিন কাজের টানে ঘরের কথা মনে পড়ত না তুমার
এমনি করে দেখতে দেখতে
ঘরের চাইয়ে বাইরে থাকার সময় গেল বাড়ে
একদিক তুমার মা বললেক,
'ও তো ঘর সংসারের মানুষই না
বিয়ে টিয়ে কেনে যে গেল করতে',
একদিন তুমার বউদিদি বললেক,
'ও তো বাঁধনছাড়া লাগামছাড়া মানুষ
বাউন্ডুলে মানুষ
ওকে এসব মানায় না
বিয়ে টিয়ে একবারি মানায় না'
কথা শুনে কষ্ট হত খুব
দুঃখও
সেই দুঃখে একলা ঘরে দু চোখ দিয়ে জল গড়াত আমার
তখন মনে পড়ত দিদিমার কথা
দিদিমা বলত, 'গরিব ঘরের বিটিছেলার আবার দুখ কীসের
আমাদে দুখ ও যা সুখও তা
আর হেই দ্যাখ আমার একটা কথা শুনে রাখ
যার রং কালো
তার মব ভালো'
কিন্তু মন ভালো হলে হবেকটা কী
সে মনের খবর লিবার লোক কুথায়।
দুঃখও
সেই দুঃখে একলা ঘরে দু চোখ দিয়ে জল গড়াত আমার
তখন মনে পড়ত দিদিমার কথা
দিদিমা বলত, 'গরিব ঘরের বিটিছেলার আবার দুখ কীসের
আমাদে দুখ ও যা সুখও তা
আর হেই দ্যাখ আমার একটা কথা শুনে রাখ
যার রং কালো
তার মব ভালো'
কিন্তু মন ভালো হলে হবেকটা কী
সে মনের খবর লিবার লোক কুথায়।
বড়লোকদের হুজুগের কোনো কমতি নাই
কতরকমের হুজুগ,
গরিবঘরের বিহা ভাঙে যাওয়া
কালো মেইয়াকে উদ্ধার করাও যে একটা হুজুগ
সে আমি জানব কীরম করে,
দেখলম হজুগটা একটুন কাটতে না কাটতেই
তুমি পড়লে আমার গায়ের রং লিয়ে,
কালো রং ফরসা করার যত রকমের নামি দামি রকমারি ক্রিম
সব একের পর এক আনতে লাগলে তুমি
তার সঙ্গে আবার পালা করে শুনাতে লাগলে খবর
কাগজের সব মনখারাপ করা খবর
'গায়ের রং কালো বলে বউকে খুন করল বর'।
'গায়ের রং কালো বলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় গলায় দড়ি দিল মেয়ে'
এমনি সব আরও কত খারাপ খবর
তবে তুমি আবার সান্ত্বনাও দিতে
তুমি বলতে,
'কেন যে কাগজগুলো ছাপে এসব খবর',
আমি বলতম, চাই নাই ইসব খবর শুনতে নাই চাই।
তুমি বলতে,
'দেখো খারাপ খবরও জানা দরকার তুমার
নাইলে দেশটা যাচ্ছে কোনদিকে সে তুমি পারবে না বুঝতে',
আমি বলেছিলম, এমন দেশকে বুঝে আমার কাজ নাই।
এভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন
দিনের পর দিন।
তারপর একদিন জষ্টিমাসের বেলা পড়তি অবেলায়
তুমি বললে, হাওয়া খেতে যাব
চলো হাওয়া খেতে যাব গঙ্গার পাড়ে
কথা শুনে তুমার মুখের দিকে আমি রইলাম চাইয়ে
তাই দেখে তুমি বললে 'না না মিথ্যে নয় সত্যি বলছি'।
কতরকমের হুজুগ,
গরিবঘরের বিহা ভাঙে যাওয়া
কালো মেইয়াকে উদ্ধার করাও যে একটা হুজুগ
সে আমি জানব কীরম করে,
দেখলম হজুগটা একটুন কাটতে না কাটতেই
তুমি পড়লে আমার গায়ের রং লিয়ে,
কালো রং ফরসা করার যত রকমের নামি দামি রকমারি ক্রিম
সব একের পর এক আনতে লাগলে তুমি
তার সঙ্গে আবার পালা করে শুনাতে লাগলে খবর
কাগজের সব মনখারাপ করা খবর
'গায়ের রং কালো বলে বউকে খুন করল বর'।
'গায়ের রং কালো বলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় গলায় দড়ি দিল মেয়ে'
এমনি সব আরও কত খারাপ খবর
তবে তুমি আবার সান্ত্বনাও দিতে
তুমি বলতে,
'কেন যে কাগজগুলো ছাপে এসব খবর',
আমি বলতম, চাই নাই ইসব খবর শুনতে নাই চাই।
তুমি বলতে,
'দেখো খারাপ খবরও জানা দরকার তুমার
নাইলে দেশটা যাচ্ছে কোনদিকে সে তুমি পারবে না বুঝতে',
আমি বলেছিলম, এমন দেশকে বুঝে আমার কাজ নাই।
এভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন
দিনের পর দিন।
তারপর একদিন জষ্টিমাসের বেলা পড়তি অবেলায়
তুমি বললে, হাওয়া খেতে যাব
চলো হাওয়া খেতে যাব গঙ্গার পাড়ে
কথা শুনে তুমার মুখের দিকে আমি রইলাম চাইয়ে
তাই দেখে তুমি বললে 'না না মিথ্যে নয় সত্যি বলছি'।
সেই কতদিন আগে লতুন বউ হইয়ে আসার পরে
শাশুড়ি আর জায়ের সঙ্গে একদিন
পূজা দিয়ে আইছিলম গঙ্গার ঘাটে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে
ইপারে তুমাদে পুরোনো শহর
ভাঙা মন্দির চানের ঘাট কাঁসর ঘন্টা
উপারে সবুজ খেত সরষে ফুল আঁখের বাদা ইঁট ভাটা
তালসুপারি, মাটির বাড়ি, ডিঙি নৌকা, খায়াঘাট, হইচই মানুষজন
তুমার হাত ধরে কতদিন পরে আবার সেই গঙ্গার পাড়ে
দিন ফুরনো অবেলাতে আউলিবাউলি হাওয়ার তোড়ে
আমার চুড়িদারের ওড়না যাচ্ছিল উড়ে
তুমি চাইছিলে নিরিবিলি
আরও নিরিবিলি
সে বহুতদূরে পোড়া মন্দিরের ভাঙন ধরা ঘাটের ধারে
আমার কেমন দম আসছিল আটকে
তুমার তখন বাঁধ ভাঙেছে ভালোবাসার
বউয়ের গলা জড়াই চুমু খাইয়ে আদর করার ধুমে
তুমার তখন 'রা' সরে নাই মুখে।
শাশুড়ি আর জায়ের সঙ্গে একদিন
পূজা দিয়ে আইছিলম গঙ্গার ঘাটে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে
ইপারে তুমাদে পুরোনো শহর
ভাঙা মন্দির চানের ঘাট কাঁসর ঘন্টা
উপারে সবুজ খেত সরষে ফুল আঁখের বাদা ইঁট ভাটা
তালসুপারি, মাটির বাড়ি, ডিঙি নৌকা, খায়াঘাট, হইচই মানুষজন
তুমার হাত ধরে কতদিন পরে আবার সেই গঙ্গার পাড়ে
দিন ফুরনো অবেলাতে আউলিবাউলি হাওয়ার তোড়ে
আমার চুড়িদারের ওড়না যাচ্ছিল উড়ে
তুমি চাইছিলে নিরিবিলি
আরও নিরিবিলি
সে বহুতদূরে পোড়া মন্দিরের ভাঙন ধরা ঘাটের ধারে
আমার কেমন দম আসছিল আটকে
তুমার তখন বাঁধ ভাঙেছে ভালোবাসার
বউয়ের গলা জড়াই চুমু খাইয়ে আদর করার ধুমে
তুমার তখন 'রা' সরে নাই মুখে।
আমি কাঠকুড়ানি
রাঙামাটির গাঁ গেরামের ইসকুল ছুট কাঠকুড়ানি
আমি কী আর বুঝতে পারি
তুমার অমন আদর করার মানে কি আর বুঝতে পারি
আমার জায়গায় থাকত যদি অন্য কেউ
সেও কি পারত বুঝতে
ভালোবাসার মানুষ জড়িয়ে ধরে আদর করার ফাঁকে
একঘড়িকে লদীর জলে ফেলতে পারে ঠেলে
বলো না এটা বুঝবে কীরকম করে।
কত কী যে বুঝার আছে এই দুনিয়ায়
এই যে তুমি বি এ এম এ পাশ দিয়ে
মাস্টার হইছিলে হাই ইসকুলে
তুমিও কি পারেছিলে বুঝতে
যাকে অমন করে ঠেলে ফেললে ভরা গঙ্গার জলে
সে দিব্যি সাঁতার কাটে উথালপাতাল ঢেউয়ের তালে
পার হইয়ে যাবে লদী
অত বড় লদী
পারঅ নাই বুঝতে
একদম পারঅ নাই
তাই তখুনি পাড় ছাড়ে পালাইছিলে দৌড়ে
কী অদ্ভুত মানুষ তুমি
তুমাকে একদিন বসাইছিলাম দেবতার আসনে
বলঅ আজ কুথায় বসাব তুমায়।
রাঙামাটির গাঁ গেরামের ইসকুল ছুট কাঠকুড়ানি
আমি কী আর বুঝতে পারি
তুমার অমন আদর করার মানে কি আর বুঝতে পারি
আমার জায়গায় থাকত যদি অন্য কেউ
সেও কি পারত বুঝতে
ভালোবাসার মানুষ জড়িয়ে ধরে আদর করার ফাঁকে
একঘড়িকে লদীর জলে ফেলতে পারে ঠেলে
বলো না এটা বুঝবে কীরকম করে।
কত কী যে বুঝার আছে এই দুনিয়ায়
এই যে তুমি বি এ এম এ পাশ দিয়ে
মাস্টার হইছিলে হাই ইসকুলে
তুমিও কি পারেছিলে বুঝতে
যাকে অমন করে ঠেলে ফেললে ভরা গঙ্গার জলে
সে দিব্যি সাঁতার কাটে উথালপাতাল ঢেউয়ের তালে
পার হইয়ে যাবে লদী
অত বড় লদী
পারঅ নাই বুঝতে
একদম পারঅ নাই
তাই তখুনি পাড় ছাড়ে পালাইছিলে দৌড়ে
কী অদ্ভুত মানুষ তুমি
তুমাকে একদিন বসাইছিলাম দেবতার আসনে
বলঅ আজ কুথায় বসাব তুমায়।
দ্যাখঅ মানুষে মানুষে কী তফাত দ্যাখঅ
তুমি কত কাছের মানুষ হইয়ে কত সহজে
আমাকে ঠেলে ফেলে দিলে লদীর জলে
আরেকজন কত দূরের মানুষ হইয়ে লদীতে ঝাঁপ দিয়ে
সাঁতার কাটে দু হাত দিলে বাড়ায়ে
মানুষটা দেহাতি মানুষ
নাম শিউচরণ
পেশায় ইট ভাটার বদলি মজদুর
না তুমার মতন পড়াশুনা করা মাস্টার লয়
লেখাপড়ায় সে বিলকুল আনপড়।
তুমি কত কাছের মানুষ হইয়ে কত সহজে
আমাকে ঠেলে ফেলে দিলে লদীর জলে
আরেকজন কত দূরের মানুষ হইয়ে লদীতে ঝাঁপ দিয়ে
সাঁতার কাটে দু হাত দিলে বাড়ায়ে
মানুষটা দেহাতি মানুষ
নাম শিউচরণ
পেশায় ইট ভাটার বদলি মজদুর
না তুমার মতন পড়াশুনা করা মাস্টার লয়
লেখাপড়ায় সে বিলকুল আনপড়।
তুমি ভাবছ নালিশ করব তুমার নামে
না নালিশ আমি করব না
কী হবেক নালিশ করে
আমাদে এই পোড়া দেশটার সবই ত তুমাদে দখলে
নেতা, মন্ত্রী, থানা, পুলিশ,কোর্ট, কাছারি সব
সিখেনে গাঁ গেরামের গরিব ঘরের মেইয়াদের
কতটুকুনি আর জায়গা আছে বলঅ
তবে আখনো মানুষের পাশে দাঁড়ায় মানুষ
আখনো মানুষের জন্যে জীবন দেয় মানুষ
সেই মানুষকে সাক্ষী রাখে এক বড়মানুষের বহুতকালের কথা
আজ আবার লতুন করে বলি তুমাকে
শুনঅ,
না নালিশ আমি করব না
কী হবেক নালিশ করে
আমাদে এই পোড়া দেশটার সবই ত তুমাদে দখলে
নেতা, মন্ত্রী, থানা, পুলিশ,কোর্ট, কাছারি সব
সিখেনে গাঁ গেরামের গরিব ঘরের মেইয়াদের
কতটুকুনি আর জায়গা আছে বলঅ
তবে আখনো মানুষের পাশে দাঁড়ায় মানুষ
আখনো মানুষের জন্যে জীবন দেয় মানুষ
সেই মানুষকে সাক্ষী রাখে এক বড়মানুষের বহুতকালের কথা
আজ আবার লতুন করে বলি তুমাকে
শুনঅ,
'সংসারের মাঝখানে মেয়েমানুষের পরিচয়টা যে কী তা আমি পেয়েছি। আর আমার দরকার নেই।
.... তোমরা যে আপন ইচ্ছামত আপন দস্তুর দিয়ে জীবনটাকে চিরকাল পায়ের তলায় চেপে রেখে
দেবে, তোমাদের পা এত লম্বা নয়।
.... তোমরা যে আপন ইচ্ছামত আপন দস্তুর দিয়ে জীবনটাকে চিরকাল পায়ের তলায় চেপে রেখে
দেবে, তোমাদের পা এত লম্বা নয়।
ইতি
মৃণাল
তোমাদের চরণতলাশ্রয়ছিন্ন
এ যুগের মৃণাল।
মৃণাল
তোমাদের চরণতলাশ্রয়ছিন্ন
এ যুগের মৃণাল।
http://www.alokrekha.com
আঞ্চলিক ভাষার কবি দেবব্রত সিংহের "মৃণালের পত্র " কবিতাটা আমার বরাবরই খুব প্রিয়। কবি এখানে কি সুন্দর করে পাহাড়ি কোলের আঞ্চলিক মেয়েদের জীবন কি অদ্ভুত বর্ণনা করেছেন। খুব ভালো লাগলো কবিতাটা পড়ে। আলোকরেখাকে অনেক ধন্যবাদ।
ReplyDeleteআমি আলোকরেখার ভক্ত বরাবরই। আলোকরেখা পাঠকের মনের চাহিদা বোঝে। কাল উত্তম কুমার অভিনীত "অগ্নিশ্বর " ছবিটি খুব ভালো লেগেছিল। আজ কবি দেবব্রত। কবি দেবব্রত সিংহের "মৃণালের পত্র " কবিতাটা আমার খুব প্রিয়। আমি এ অবদি যত কবিতা আবৃতি করেছি তার মধ্যে "মৃণালের পত্র " অন্যতম। সানজিদা রুমিকে অনুরোধ এর সাথে যদি আমার আবৃতিটা যোগ করে দিত তবে কবিতাটার গ্রহণ যোগ্যতা আরো বেশি হত। ভালো থেকো। অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ReplyDeleteতুমি আলোকরেখার ভক্ত বরাবরই জেনে আপ্লুত হলাম। আর আমি তোমার ভক্ত । "আলোকরেখা পাঠকের মনের চাহিদা বোঝে।" তোমার এই মন্তব্য আমাদের কাছে পরম পাওয়া। অন্তরের অন্তরস্থল থেকে ধন্যবাদ এই কবিতার সাথে তোমার আবৃতি জুড়ে দেবার ভাবনা দেবার জন্য । অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমায়। তুমিও ভালো থেকো। আরো আরো সুন্দর আবৃতি আমাদের উপহার দাও। তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। শুভেচ্ছা জেনো।
Deleteকবি দেবব্রত সিংহের "মৃণালের পত্র " কবিতাটা আমার খুব প্রিয়।কাল উত্তম কুমার অভিনীত "অগ্নিশ্বর " ছবিটি খুব ভালো লেগেছিল। আজ কবি দেবব্রত সিংহের "মৃণালের পত্র " কবিতা মেধা বন্দোপাধ্যায়ের আবৃতি । আলোকরেখায় মন মননের প্রজ্ঞার প্রশ্রুতি। এই কথাটা বরাবরই রক্ষা করে এসেছে। অনেক অনেক ভালোবাসা আলোকরেখাকে।
ReplyDelete