" কোজাগর পূর্ণিমা "
----------------------------- গীতালি চক্রবর্তী।
আজ , কোজাগর রাত , কোজাগর পূর্ণিমা !
মিষ্টি আলোয় ডুবে আছে ধরা ,
জ্যোৎস্নার বান ডেকেছে ভূবন জুড়ে ,
সাদা মেঘের পাল তোলা নৌকো
ভাসছে আলোর স্রোতে ।
আজ , কোজাগর পূর্ণিমা !
চারিদিকে চাঁদের হাসির লুটোপুটি ,
জ্যোৎস্নার ওড়না জড়িয়ে পায়ে পায়ে
এগিয়ে আসছে ধূষর সন্ধ্যা ,
অপূর্ব তার রং এর ছটা !
গভীর রাত , নিস্তব্ধ চারিধার ,
টুপটাপ শিউলি ঝরার শব্দ ,শিউলী সুবাস
জড়িয়ে আছে শরতের চপল হাওয়ায় ।
মুগ্ধচোখে দেখছি , প্রকৃতির অপ্রতিদ্বন্দ্বী নিরুপম শিল্পশালা।
দেখছি , কোজাগরের মধুময় রাত,পূর্ণ শশীর অফুরন্ত হাসির ঝলক ,
ঝিকিমিকি সহস্র তারার আলোকসমুদ্রে পুলকিত সন্তরন
শরতের পাঁজা তোলা সাদা মেঘের সঞ্চরণ দুষ্টুমি ।
আজ , কোজাগর রাত,কোজাগর পূর্ণিমা !
এমন কত রা-ত পাড়ি দিয়েছি দু'জনে !
সে অনেক কাল পার হয়ে যাওয়া পুরোনো কথা !
পুরোনো দিনের রঞ্জিত স্মৃতির কথামালা ,
দীর্ঘ দিবস - রজনীর উপাখ্যান।
নিত্যদিনের ঘটনা প্রবাহে মাখা ছিলো
অফুরন্তআনন্দ !
তোমার মনে পড়ে?সেদিনো ছিলো কোজাগর পূর্ণিমা !
আলোয় ভরা আকাশ সীমায়
পেঁজা তুলোর মত মেঘগুলো হাসির ফোয়ারা ঢেলে
উড়ছিল অলস মনে ।
পূর্ণ চাঁদখানা মেঘেদের সাথে
মত্ত ছিলো লুকোচুরি খেলায় ।
সেদিন , তুমি ছিলে মোর পাশে
ঠি-ক ঐ চাঁদ খানার মতো ।
আর আমি ! পুঞ্জীভূত পাখা মেলা সাদা মেঘ !
আকাশে চাঁদ ,পাশে তুমি , আমি যেনো কোন এক
স্বর্গ পুরীর কাহিনী কাব্যের নায়িকা !
কাব্য কথার জোয়ারে ভাস ছিলাম দুজনেই ,
ভেসে ভেসে চলে ছিলাম নিরুদ্দেশের পথে ।
মনে আছে ? কূহূ রবে অলখেতে ডেকে ছিলো
একটি কোকিল ?
বলেছিলে ," ঐ শোন ,অকালে - অসময়ে ,
কোকিলের ডাক ।"
বলেছিনু , " প্রেমের সময় কি গো ?
পাঁজি দেখে আসে না সে কভু ।
ছুটুক প্রেমের ঘোড়া , ডাকুক না বারোমাস ওরা ,
প্রেমের পাপড়ি মেলুক , সাজুক বসুন্ধরা ।
কোকিল না ডাকলে ভালোবাসার যে অকাল মরণ ।"
প্রাণ খোলা হাসির ফোয়ারায় ভিজিয়ে দিলে আমায় ।
বললে ," সত্যিইতো ভেবে দেখিনিতো এতো ! "
তুমি বলতে , " নীতু, আনন্দকে ছিনিয়ে আনতে হয়
অনুশীলনের মাঝে , ও যে জীবনের পরম ঐশ্বর্য্য ! "
আজ স্তব্ধ হয়ে গেছে আনন্দ নামের ঐশ্বর্য্যের স্রোত !
ধরে রাখার চেষ্টা আমার প্রাণপণ ! পারছি নাতো !
তুমি যুদ্ধে গেলে , যুদ্ধ শেষ হোলো , দেশ স্বাধীনতা পেলো ,
আমাদের সন্তান দুটো বড় হোল ।
অথচ , তোমার জায়গাটা শূন্য -ই রয়ে গেলো !
একটি ছোট্ট কার্তুজের ধ্বাক্কা তোমায় নিয়ে গেল
কতো দূরে ? যেখান থেকে ফেরা হলো না তোমার ??
আজও অপেক্ষায় আমি !
দেশ স্বাধীন ! পতাকার বুকে তোমার মতো
আরো শহীদের পুত রক্তে রাঙ্গা সূর্যটা
গর্বিত শিরে দাঁড়িয়ে ! গর্বে বুকটা ভরে ওঠে আমার !
তবুও....কোজাগর পূর্ণিমা এলে কি এক ব্যথা বাজে ,
বুকের মাঝে ! বড্ড কষ্ট হয় !
জ্যোৎস্না আমায় মিষ্টি আলোয় স্নান করিয়ে দেয় ,
তবুও , তবুও জ্বলে বুকের ভেতর , সমস্ত মন,সমস্ত প্রাণ !
আজও কোকিল ডাকে , কোজাগর রাত ফি বছর ফিরে ফিরে আসে !
এ রাতখানা একান্ত আমার !
আজ সে-ই কোজাগর রাত ,কোজাগর পূর্ণিমা !
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে , রাত গভীর !
চোখ বুজে ,কান পেতে তোমার অপেক্ষায় আছি।
মন বলছে ,তুমি আসবে !
শুনতে পাচ্ছি , তোমার পায়ের শব্দ ,
কাব্য কথার লহরী , প্রাণখোলা প্রফুল্ল হাসির তরঙ্গ !
তুমি আ-স-ছো সন্তর্পণে , তুমি এ-সে-গেছো !
আমায় ছুঁয়ে থাকো ,উষ্ণ আলিঙ্গনে বেঁধে নাও ,
আমি দু'চোখ মুদে প্রাণ ভরে তোমাকে পাই !
আ-জ , কোজাগর রাত , কোজাগর পূর্ণিমা !!
*********************http://www.alokrekha.com
কোজাগর পূর্ণিমা ! কবিতাটা অনন্য সুন্দর কবিতা। কবি গীতালি চক্রবর্তী অনবদ্য ভাবে কোজাগর পূর্ণিমার বর্ণনা দিয়েছেন। এই পূর্ণিমায় রাতের আঁধারেও আলোয় ডুবে থাকে পৃথিবী। জ্যোৎস্নার বান ডাকে ভূবন জুড়ে ,শরতের সাদা মেঘের মত জোৎনা যেন পাল তোলা নৌকো। এত সুন্দর তুলনা সত্যি অনন্য ,অনেক শুভেচ্ছা কবি।
ReplyDeleteকোজাগর পূর্ণিমা ! কবিতাটা অনন্য সুন্দর কবিতা। কবি গীতালি চক্রবর্তী অনবদ্য। দারুন কবিতা ! অপূর্ব ভাব ! অনন্য উপমা! শব্দের মুক্তা মালা!আবাহন আলোর নতুন দিনের! অনেক সুন্দর কবিতা! শুভেচ্ছা রইল!
ReplyDeleteকবি গীতালি চক্রবর্তীর কোজাগর পূর্ণিমা ! কবিতাটা অনন্য সুন্দর কবিতা।কোজাগর পূর্ণিমা লক্ষী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত।সেদিন চাঁদের আলোর বাঁধ ভাঙে। উছলে পড়ে আলো সারা ধরাময়। এই রাতে মনে পরে দুজনার আলোয় জোয়ারে ভেসে যাওয়া। সেই মধুময় স্মৃতি কবি মনে করেছেন এই কবিতায়। খুবই ভালো লাগলো। অনেক ভালোবাসা কবি।
ReplyDeleteকবি গীতালি চক্রবর্তীর কোজাগর পূর্ণিমা ! ---এ জন্য আলোকরেখাকে সাধুবাদ জানাই। কবির কবিতা মন ও মননের সুগভীর অনুচিন্তন,ভাব,আশাবাদ,প্রেরণার অভিব্যক্তি ছায়া দেখতে পাই । অপূর্ব শব্দশৈলী চমৎকার। অপরূপ-বহুবর্ণ ও ভাষার প্রকাশ। উত্কৃষ্ট ও চমৎকার সৃষ্ট কবিতা । অনেক ভালোবাসা কবি।
ReplyDelete