আমাদের ছোটবেলার পড়া ছড়া কবিতাগুলো কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। পাঠ্য পুস্তকেও এখন এগুলো আর পাওয়া যায় না। তাই আলোকরেখায় এই সব বিস্মৃতির ছায়াতলে লুকোনো প্রচলিত ছড়া ,কবিতা প্রকাশের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা
গোলাম মোস্তফা
বনভোজন
নুরু, পুশি, আয়েশা, শফি সবাই এসেছে
আম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে।
রাঁধুনিদের শখের রাঁধার পড়ে গেছ ধুম,
বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম।
বাপ মা তাদের ঘুমিয়ে আছে এই সুবিধা পেয়ে,
বনভোজনে মিলেছে আজ দুষ্টু কটি মেয়ে।
বসে গেছে সবাই আজি বিপুল আয়োজনে,
ব্যস্ত সবাই আজকে তারা ভোজের নিমন্ত্রণে।
কেউবা বসে হলদি বাটে কেউবা রাঁধে ভাত,
কেউবা বলে দুত্তুরি ছাই পুড়েই গেল হাত।
বিনা আগুন দিয়েই তাদের হচ্ছে যদিও রাঁধা,
তবু সবার দুই চোখেতে ধোঁয়া লেগেই কাঁদা।
কোর্মা পোলাও কেউবা রাঁধে, কেউবা চাখে নুন,
অকারণে বারে বারে হেসেই বা কেউ খুন।
রান্না তাদের শেষ হল যেই, গিন্নী হল নুরু,
এক লাইনে সবাই বসে করলে খাওয়া শুরু।
ধূলোবালির কোর্মা-পোলাও আর সে কাদার পিঠে,
মিছিমিছি খেয়া সবাই, বলে- বেজায় মিঠে।
এমন সময় হঠাৎ আমি যেই পড়েছি এসে,
পালিয়ে গেল দুষ্টুরা সব খিলখিলিয়ে হেসে।
কাজী নজরুল ইসলাম
খোকার সাধ
আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি।
সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে,
'হয়নি সকাল,
ঘুমো এখন'- মা বলবেন রেগে।
বলব আমি,
'আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাক,
হয়নি সকাল-
তাই বলে কি সকাল হবে না কা!
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!'
ঊষা দিদির ওঠার আগে উঠব পাহাড়-চূড়ে,
দেখব নিচে ঘুমায় শহর শীতের কাঁথা মুড়ে,
ঘুমায় সাগর বালুচরে নদীর মোহনায়,
বলব আমি 'ভোর হল যে, সাগর ছুটে আয়!
ঝর্ণা মাসি বলবে হাসি', 'খোকন এলি নাকি?'
বলব আমি নই কো খোকন,
ঘুম-জাগানো পাখি!'
ফুলের বনে ফুল ফোটাব, অন্ধকারে আলো,
সূয্যিমামা বলবে উঠে,
'খোকন,
ছিলে ভাল?'
বলব 'মামা,
কথা কওয়ার নাইক সময় আর,
তোমার আলোর রথ চালিয়ে ভাঙব ঘুমের দ্বার।'
রবির আগে চলব আমি ঘুম-ভাঙা গান গেয়ে,
জাগবে সাগর,
পাহাড় নদী, ঘুমের ছেলেমেয়ে!
কালী প্রসন্ন ঘোষ
পারিব না
পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
কেন পারিবে না তাহা ভাব এক বার,
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না পার কর যতন আবার
এক বারে না পারিলে দেখ শত বার।
পারিব না বলে মুখ করিও না ভার,
ও কথাটি মুখে যেন না শুনি তোমার,
অলস অবোধ যারা
কিছুই পারে না তারা,
তোমায় তো দেখি নাক তাদের আকার
তবে কেন পারিব না বল বার বার?
জলে না নামিলে কেহ শিখে না সাঁতার
হাঁটিতে শিখে না কেহ না খেয়ে আছাড়,
সাঁতার শিখিতে হলে
আগে তব নাম জলে,
আছাড়ে করিয়া হেলা,
হাঁট বার বার
পারিব বলিয় সুখে হও আগুয়ান।
চলবে :----------সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
আলোকরেখার এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কবিতাগুলো পড়তে পড়তে ছোট বেলায় পেয়েছে গেছি। খুব ভালো লাগলো পড়ে ,অনেক ধন্যবাদ আলোকরেখাকে।
ReplyDeleteকবিতা ও ছড়াগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো । ধন্যবাদ।
ReplyDeleteআমাদের ছোটবেলার পড়া ছড়া কবিতাগুলো কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। পাঠ্য পুস্তকেও এখন এগুলো আর পাওয়া যায় না। তাই আলোকরেখায় এই সব বিস্মৃতির ছায়াতলে লুকোনো প্রচলিত ছড়া ,কবিতা প্রকাশের সিন্ধান্ত একটি অনন্য পদক্ষেপ। আমরা তা সাধুবাদ জানাই। খুব ভালো লাগলো যে এই ধারাবাহিক ভাবে চলবে।
ReplyDeleteনুরু, পুশি, আয়েশা, শফি সবাই এসেছে
ReplyDeleteআম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে।
রাঁধুনিদের শখের রাঁধার পড়ে গেছ ধুম,
বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম। অনেকদিন পর পড়লাম খুব ভাল লাগল। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই ।