উত্তর
আধুনিক
মেহরাব রহমান
তিনি আমার
জন্মদিনে
একটি চায়ের
কাপ উপহার দিয়ে
পালিয়ে গেলেন।
অন্তর্জালে তাঁকে আর পাচ্ছি না।
এই একটু
আগেই অনলাইনে ছিলেন
ককটেল হাইপার সাউন্ড ডট কম।
এখন অফলাইন,
পুরোমাত্রায় ঘুমিয়ে
পড়েছে,
হাইবারন্যাশন কিংবা
ব্যাঙের শীতনিদ্রা কি না জানি না।
এটাচমেন্টে
পাঠিয়েছে বিশাল মাপের
শ্বেত মর্মরের চায়ের কাপ।
পিডিএফ
ফাইলকে
স্ট্রাক্চার
ফাইলে কনভার্ট করে
রাক্ষুসে
মাপের চায়ের কাপটা
হাইপার ডাইমেনশনাল ওয়াই, ওয়াই সিক্স
জেরো মেটেরিয়াল প্রিন্টার থেকে টেনেটুনে জোরজবরদস্তি বের করেছি।
দার্জিলিং
টি, লো ইন সুগার ডাউনলোড করে
মেটেরিয়াল প্রিন্ট নিয়েছি।
এখন মাথাটা খারাপ হয়ে আছে।
এত মনোমুগ্ধকর কাপে চা খেতে পারছি
না।
দার্জিলিং-এর
সুরভিত পাতার ওপর
ট্যাপের
ফুটন্ত জল ঢালতেই
মুহূর্তে সব শুষে নিল।
বুঝেছি
নির্ধারিত বিশেষ
গ্রেড-এর জল ছাড়া চা হবে না।
অগত্যা
ট্রিপল এক্স টি ওয়াটার ডট কম-এ ঢুকে
২ লিটার ফুটন্ত পানি ডাউনলোড করেছি।
উইন্ডোজের
বদলে
লোড দিয়েছি
অলপারপাস ডাবলডোর
এর পুরোনো
ভার্সান
তাই ডাউনলোডেড
ফাইল
ইনস্টল করতে ঘাম ছুটে গেছে।
মেটেরিয়েলাইজারে
জলের প্রিন্ট আউট নিয়ে
শেষমেশ চা বানালাম।
কিন্তু স্বচ্ছন্দে পান করা গেল না।
কলমবিহীন
যুগে কলম না পিষলেও
আঙুল দিয়ে
রকমারি বোতাম টিপতে টিপতে
আঙুলগুলোর
রুগ্ন-লতার মতো লিকলিকে,
কিছুতেই
এই অপদার্থ হাতে
চায়ের কাপটা তোলা গেল না।
অগত্যা
উবু হয়ে, নতজানু হয়ে
অতি অনিচ্ছায়
চা পান করে
বিরক্তিতে ঘুম এসে গেল।
আকাশ ছোঁয়া
বিজ্ঞানের বদৌলতে
বিছানাপত্তর
বহু আগেই
জলাঞ্জলি দিয়েছি।
বোতাম
চেপে মাধ্যাকর্ষণ
শক্তি
শূন্যের কোটায় আনতেই
শূন্যের
বোধহীন বিছানায় স্বপ্নহীন
ঘুমে যখন
নিমজ্জিত
কে যেন কড়া নাড়ছে দরজাবিহীন ঘরে।
জোরে জোরে অনর্গল কড়া নেড়েই চলেছে।
তিনি এসে গেছেন।
তাঁর কণ্ঠস্বরে
ধ্বনিত হলো,
‘ঘুম লগ
অফ করে উঠে এসো ইলেক্ট্রন ৫৭৫
আমি অনলাইনে আছি।’
‘অতএব বান্দা হাজির’।
অ্যালফা!
অ্যালফা! বিটা! বিটা!
গ্যাম্যা!
গ্যাম্যা! থিট্যা! থিট্যা!
‘সরি পৃথিবীর
বাইরে ছিলাম, অন্তর্জালে
সংযোগ পাইনি। সীমানায় ঢুকতেই
ব্রেইন
সেল-এ ব্লিন্ক...করল
কম্পিউটার লিংকে বার্তা পেলাম।
আরে বোকা
উবু হয়ে কেউ চা খায়?
কাপটা
ছোট থেকে ছোট কর, আরো
ছোট। সুপার জিপ করে আরো একটা
মেটেরিয়াল প্রিন্ট আউট নাও।
বুঝেছি তোমার মন ভালো নেই।
আরে মন
থাকলে তো
ভালো-খারাপের প্রশ্ন।
যাক কোনো
এরর
নিয়ে চলা ঠিক নয়।
কোনো কারণে ডিসকানেক্ট থাকলে ঐ যে
বলে, দিস পেইজ ক্যানট বি ডিসপ্লেইড।
পুরানো চ্যাপ্টার ডিলিট করো।
ডাব্লিউ
, ডাব্লিউ , ডাব্লিউ
অপ্রেম
ভায়োলেন্স পেইজ
ডট কমে
ঢুকে পছন্দের
মানুষ ডাউনলোড করো।
এরপর মেটেরিয়েলাইজার
থেকে বের করে
সোউল ইনসার্টারে দিলেই জীবন্ত মানুষ।
তারপর কী করবে তোমার খুশি।
ফ্লোরোসেন্ট
না ব্ল্যাকহোল
কালো অন্ধকারে ঘুমবে তা তোমার ইচ্ছে।
আপাতত আমাকে যেতে হচ্ছে।
হাইড্রোজেন
১২’র খবর নেয়া হয়নি
অনেক দিন।
তাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
অফলাইন
অফলাইন অফলাইন...
তিনি যেতেই
তড়িঘড়ি ঢুকে
পড়ি, অতিকায়
সাইবার অ্যালবামে
বেছে টেছে
ডাউনলোড করি
মারকারি ল্যাডি পারমানেন্ট ‘১৬’।
ফাইল ওপেন করতেই চক্ষু চড়কগাছ।
বেআব্রু, বেঢপ শরীর।
ফটো ইন্ডাস্ট্রি ২১০৫-এ নিয়ে কাজ
করতে হবে।
কেটে-ছেঁটে বাদ দিলাম শরীরের মেদ।
অবশেষ
ছিমছাম গড়ন
যেন নাটোরের
বনলতা সেন;
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকাজ ।
মন মতন পরালাম পোশাক এবং সাজ।
সোউল ইনসার্টারে দিতেই বিভ্রাট।
হুটহাট হ্যাং হয়ে গেল।
কম্পিউটারে দ্রুত সোউল ট্রান্সফারে
জ্যাম লেগে গেছে।
মনিটরে
ভেসে উঠল, সেন্ড এরর মেসেজ
টু এক্স
এক্স এক্স সুপার গড-কম
অসীম ঈশ্বরের কাছে বার্তা পাঠাও।
এরর! এরর!
এরর!
ফেইলড্ টু লোড সোউল।
ক্ষোভে
দুঃখে মাড়িয়ে দুমড়িয়ে
ভেঙে ফেললাম যন্ত্রটা।
পুরোনো
ভার্সান অসভ্য যন্ত্র,
প্রতিদিন
বদলে যাচ্ছে পৃথিবী
আধুনিকতা
ডিঙিয়ে উত্তর আধুনিক
হতে পারোনি এখনো।
তারপরও
চৌচির যন্ত্রটা
মুখ ভেংচে
বলে যাচ্ছে
এরর! এরর!
এরর!
ফেউলড্ টু লোড সোউল।
অসীম ঈশ্বরের
কাছে বার্তা পাঠাও
এক্স এক্স এক্স সুপার গড ডট কম।
উত্তর আধুনিক কবিতায় কবি মেহরাব রহমান আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে লিখেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। নুতুন ধরণের কবিতা। খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteউত্তর আধুনিক কবিতায় কবি মেহরাব রহমান আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে যে কবিতা রেখেছে তা অনন্য । নুতুন ধরণের কবিতা। খুব ভালো লাগলো। দারুন অনবদ্য কবিতা বরাবরের মতই! অপূর্ব ভাব ! অনন্য উপমা আধুনিক প্রযুক্তির জীবন বোধের ! শব্দের মুক্তা মালা!আবাহন আলোর নতুন দিনের! অনেক সুন্দর কবিতা! শুভেচ্ছা রইল!
ReplyDeleteউত্তর আধুনিক কবিতায় কবি মেহরাব রহমান আধুনিক প্রযুক্তি জীবনের সাথে যে তুলনা করেছেন তা অনন্য । নুতুন ধারার কবিতা। খুব ভালো লাগলো। উত্কৃষ্ট চমৎকার নব জীবন বোধের প্রকাশ।অপূর্ব বিষয় বস্তু,ভাষাভাব ও শব্দচয়ন ও রচনা শৈলী মিলিয়ে অনবদ্য ও অনিন্দ্য এক কবিতা।
ReplyDeleteপ্রথম পড়ায় মেহরাব রহমানের "উত্তর আধুনিক" মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষকে একটা ঝাঁকি দিয়ে জাগিয়ে দিলো যেন ! কি? কি? কি বলছেন কবি?! মানুষ ডাউনলোড করে সোউল ইনসারটারে দিয়ে জীবন্ত মানুষ!! জন্মদিনে উপহার পাওয়া ডিজিটাল চায়ের কাপ ব্যবহার করে চা কিভাবে পান করলেন সেটা বর্ণনা করতে কবি আমাদেরকে যে উত্তর আধুনিক জগতের ইঙ্গিত দিয়েছেন তা আমাদের মানসে ভগবানের কাছাকাছি নিয়ে যায় আমাদেরকে ! কবিতাটি বেশ কয়েকবার পড়ার পর একটা অনুভূতি আপ্লুত করে হৃদয়কে যে, সব অংকের সঠিক হিসেব ঠিকমতো কষেও কখনও কখনও সিস্টেম ফেইল করে, ব্যর্থ হয় soul download! আর তখন এক্স এক্স এক্স সুপারগড ডট কম এ অসীম ঈশ্বরের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকেনা আমাদের। বোধের গভীরতায় অত্যন্ত উচ্চ মার্গের এই কবিতা কবির ধ্যানমগ্নতার ফসল তা অনায়াসে অনুমান করা যায় ! এই কবিতা পড়ে আমরা পাঠকেরা একান্ত সততায় এই সাক্ষী দিতে পারি: আপনি সম্পন্ন করেছেন আপনার কাজ, কবি : আমরা বার্তা পেয়েছি !
ReplyDeleteউত্তর আধুনিক কবিতায় কবি মেহরাব রহমান আধুনিক প্রযুক্তি জীবনের সাথে যুক্ত করেছেন। উচ্চ মাত্রার কবিতা। খুব ভালো লাগলো। আরো কবিতার অপেক্ষায় থাকলাম।
ReplyDelete'উত্তর আধুনিক' অনেকবার পড়লাম, বুঝতে সময় লাগলো. সাইন্স ফিক্শন এর উপন্যাস পড়েছি, তবে এই প্রথম পড়লাম সাইন্স ফিক্শন এর সাথে আধ্যাত্মবাদের fusion এ কবিতা. খুব সুন্দর করে মেহরাব রহমান বলেছেন সব theory, সব equation সব solution solve করবার অদম্য চেষ্টা যখন fails তখন আমরা ঈশ্বরের শরণাপন্ন হই. এর কারণ আমাদের আত্মার শুদ্ধতা না থাকা. তাই তাবৎ সব দরকারি বেদরকারী জিনিস download করলেও এখন সবচাইতে জরুরি 'বিশুদ্ধ আত্মার' download করা.
ReplyDeleteঅসীম ঈশ্বরের কাছে, যিনি যোজন যোজন দূরে থেকেও আমাদের নিঃশ্বাসের চাইতেও কাছাকাছি, তার কাছে আমরা আর আমাদের উত্তর পুরুষেরা যেন এভাবেই শুদ্ধতার ভিক্ষা চেয়ে বার্তা পাঠাই নিরন্তর ! অনেক ধন্যবাদ কবি এতো সুন্দর একটা লেখা আমাদের উপহার দেবার জন্য.
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteআমি নিজেকে ঈশ্বরের একজন কারনিক মনে করি
ReplyDeleteকবিতার জন্য আমি তাঁর কাছে বিনম্রচিত্তে নতজানু হয়ে তাহাজ্জতে প্রার্থনা করি "বাণী দাও দাও" তিনি দেন আমি শব্দের কারিগর শব্দমালায় গাঁথি
আর তা যখন আমার পাঠকের ভাল লাগে তখন আমি
তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ হই
কৃতজ্ঞতা জানাই স্রষ্টাকে
আমার কবিতা পড়ে যাঁরা চমৎকার সব মন্তব্য করেছেন
তাঁদের প্রতি আমার অন্তহীন কৃতজ্ঞতা
দোয়া করবেন যেন আরো অনেক ভালো কবিতা লিখতে পারি