জলপাই সবুজ উড়াল দেয়া পাখী !
ঋতু মীর
তুই যে কেন ওই দু’জনের
মাঝখানে ওভাবে বসে থাকিস! দেখিস! ত্রিভুজ প্রেমের জন্ম দিস না ! উচ্ছল হাসিতে গুড়োগুড়ো
হয়ে কৌতুকে উজ্জ্বল চোখ রাখি বন্ধুর চোখে – আরে ! ওদের মেয়ের
নাকটা আমার মত হবে কিনা সেই বিষয়ে কথা বলতেই না মাঝখানে বসা! বিষয়টা জটিল কিনা বল!
স্থান কাল বিবেচনা না করেই বন্ধুর বাহু খামচে ধরি ততক্ষণে – তুইও চল না সাথে। আমার রোদে পোড়া ঘাম চিকচিকে মুখ, উরুখুরু অবিন্যস্ত চুল আর
দৌড় ঝাঁপের দেহ ভঙ্গিমার দিকে তাকিয়ে বন্ধুর চোখে অভিমান আহত হালছাড়া হতাশা যেন! সেই
সাথে ভালবাসার এক
মায়াবী আলো চকিতে খেলে যায় ওই মুখে। দাঁড়ানোর শিথিল
ভঙ্গীতে অজানা কষ্টের বিষাদ, উদাস চোখ অন্যরকম ভাষায় নীরব । স্বভাবজাত বন্য অস্থিরতায় তাঁর অনুভুতির সেই গভীরতাটুকু
উপলব্ধির সময় হয়না আমার। ততক্ষনে প্রায় ছুটে চলে গেছি কোন বন্ধুসভার উত্তাল আড্ডায়
অথবা ধুম করে বসে গেছি অনাগত সংসারের স্বপ্নে মগ্ন অন্য কোন যুগলের মাঝখানে ।
পেছনে ফেলে আসা সেই সব দিনগুলো এক অমুল্য স্মৃতির মত জীবনকে
আঁকড়ে আছে। কত শত ঘটনা, কত দুর্লভ মুহূর্ত। বর্ণীল, অসংখ্য ফুলে সাজানো বাগান যেন! সবটাই
খণ্ডে খণ্ডে নিজস্ব সৌন্দর্যে আলোকিত। আজও কি উজ্জ্বল, মনের গভীরে কি অসাধারন যত্নে লালিত এখনও ! তারুণ্যের পরিক্রমায় উত্তাল সেই সময়ের একটা বড় অংশ দখল করে ছিল বন্ধু,
বন্ধুত্ব, সম্পর্ক আর আড্ডা। নারী না পুরুষ- লিঙ্গ বিভাজনের এই সব কৃত্তিম অসারতাকে উড়িয়ে দেয়ার এক যাদুকরী
ক্ষমতা বুঝি ছিল আমার রন্ধ্রে। মানুষকে তার পূর্ণ স্বত্বায় বুঝতে পারার তৃতীয় এক নয়নও বুঝি
আমার জন্মলগ্নেই পাওয়া। স্বভাবে আপাদমস্তক সামাজিক আমি মেলামেশার ক্ষেত্রে বরাবর দ্বিধাদ্বন্দ্বহীন
এক স্বাধীন সত্তা। ছেলে-মেয়েতে কখনো
বন্ধু হয় কি হয় না- এই ধোঁয়াশা, অমীমাংসিত বিতর্কটা প্রতিমুহূর্তে ডিঙিয়ে যেতে
যেতে ‘বন্ধু’ এবং ‘বন্ধুত্ব’ বিষয়টা দাড়িয়ে যায় শক্ত মজবুত এক বিশ্বাসের ভিতের
উপর। বন্ধু থাকে পাশাপাশি, সমান্তরাল, থাকে হৃদয়ের অনুচ্চারিত শব্দাবলীতে, আস্থায়,
নির্ভরতায়, ভালবাসায়, আলাপচারিতা, উচ্চস্বর বাকবিতণ্ডা, খুনসুটি, হাসি, গল্প, মান
অভিমান আর নির্ভেজাল আড্ডার আস্তানায়।
১।
রঙ্গি, কুহকীনি,
বহুরুপী, টাট্টু ঘোড়া- বন্ধুদের কাছে কত নামেই
না আখ্যায়িত আমি। মাঝে মাঝেই মেয়েলী
অভিযোগে মুখর মেয়েবন্ধুর দল। ছেলেদের সাথে এত মিসিস
কেন রঙ্গি ? তোর কোনদিন বিয়ে হবেনা দেখিস! গলাগলি বন্ধুত্বে ঘন হয়ে বসে থাকা জটলায়
লজ্জাহীন উচ্ছাসে হাসতে থাকি- ছেলে কোথায় দেখলি ! সবতো বন্ধু! অকালপক্ব কপট গাম্ভীর্যে ওরা বলতে থাকে- জানিস তো
ছেলে-মেয়েতে বন্ধু হয় না কোনদিন! কেন হয় না এই প্রশ্নটা অবান্তর লাগে। এই ফাঁকেই
কানের কাছে লাজুক মুখ, ফিসফিসে কণ্ঠ। অমুক ছেলের লেখাপড়ার খবর, বাড়ির অবস্থা, পছন্দ, অভ্যাস ইত্যাদি বিষয়ে
জানার জন্য আমিই যে বিশ্বস্ত এক খবর বাহক!
এমন এক ঝাঁক রঙ্গিন প্রজাপতির ভিড়ে হটাত নিজেকে কেমন গোত্রহীন, দলছুট মনে হত। হাস্যে, লাস্যে, শাড়ি, গয়নায়, লজ্জা
পাওয়া আবীরে, চোখের ইশারার কাঁপনে, ঠোটে রহস্যময় হাসির মদির আবেশে ওরা যে রমণীয়
রমনী, আমার থেকে অন্যরকম, আলাদা! মনটা মুহূর্তে উধাও হয়ে যেত আড্ডার এই বলয় ছেড়ে। প্রবল
অন্যমনস্কতায় বান্ধবীর হাতের নিবিড় বাঁধন ছেড়ে
উঠে দাঁড়াতাম। মরালীর গ্রীবার ঢাল বেয়ে নামা কালো চুলের প্রপাতে ঝটিতে নাক ছুঁইয়ে
ছুটে চলে যেতাম উদ্ভ্রান্ত। আজ কোথায় বসেছে সব? লাইব্রেরী চত্তর, বটতলার মাঠ, গিজগিজে
ভিড়ের ক্যান্টিন অথবা বেড়ার ছাউনির সস্তা চা বিস্কিটের দোকানে ঠিক ঠিক খুঁজে পেয়ে
যাই। ঘাম, বিড়ি, সিগারেটের চেনা গন্ধে চনমনে আড্ডাটা টগবগ করে
ফুটছে যেন! এলোমেলো কথা, ঠাট্টা, সুরে বেসুরে গান, কবিতার পংতি
আর কারনে, অকারণে হাসি হল্লা সবটাই ছিল দুরন্ত যৌবনের রংধনু রঙ সময়, নিখাদ ভালবাসা আর বিশ্বাসে মজবুত স্বপ্নিল
তারুণ্য । নাটকের মহড়াতো ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। মিচকে স্বভাব
বন্ধু যাত্রা স্টাইলে নাটুকে ভঙ্গিমার মনোরম বিভঙ্গে বলতে থাকতো – তুই এত হাসিস না
! কবি বলেছে- ওই হাসিতে কি এক গভীর দুঃখ লুকিয়ে
আছে। কবি ! সে কোথায় রে! প্রায় লাফ মেরে বন্ধুর ঘাড়ে পড়ে অজানা কবির উদ্দেশ্যে গাইতে থাকতাম- ফুলের
জলসায় নীরব কেন কবি! মনে পড়ে টি এস সি মিলনায়তনে ধুপধাপ মঞ্চে ওঠা, নির্ভীক
কণ্ঠে গান ধরা- ‘একটা গান লিখো আমার জন্য’। নেমে আসতেই সন্মিলিত কণ্ঠে বন্ধুদের বেসুরো গান
–‘একটা পান বানাও আমার জন্য’। পড়াশুনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে
অথচ রাজনীতির আলোচনায়, খবরে আমি বরাবর উদাসীন, অনভিজ্ঞ। হেগেল, প্লেটো, এরিস্টটল, হবস, লক, রুশোর তত্ত্ব ক্লাসের চার দেয়ালে রেখে প্রতিদিনের আড্ডাটাই
বেশী প্রয়োজনীয় মনে হত। ক্লাস ফাকি দিয়ে রাজনীতি করে, সস্তার বিড়ি
খায়, গলার রগ ফুলিয়ে মার্কসবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সর্বহারা তত্ত্ব
আওড়ায় এমন কিছু সুজন নিয়েই বন্ধুসভার বৃহৎ কলেবর। Imperialism-the Highest Stage of Capitalism –ক্লাশের
আলোচ্য বিষয় শিক্ষকের মুখ থেকে কেমন দুর্বোধ্য হয়ে মাথার উপর দিয়ে উড়ে উড়ে যায় । পুজিবাদ
নয়, চাই
সমাজতন্ত্র, চাই
সর্বহারা বা প্রলেতারিয়েতের রাজত্ব কায়েম। সিগারেটের কড়া
গন্ধ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আড্ডাটাতে দাড়িয়ে যাই উৎসাহে। কি এক মুগ্ধতায় তাকিয়ে থাকি। প্রশস্ত বুদ্ধিদীপ্ত কপালে উজ্জ্বল চোখ, শক্তিশালী
এক দৃঢ়তা কণ্ঠস্বরে, হাতের পেশিতে, দাঁড়ানোর ঋজু ভঙ্গিতে । ক্লাশে যা বুঝিনা বন্ধুসভায়
তা পরিস্কার হয়ে যায়। কেউ আবার যত্ন করে লেখা নোট লুকিয়ে দেখায়, গোপন প্রেমিকার কাছে তা সময়মত পৌঁছে দেয়াতে যে আমার জুড়ি নেই! অনেক সময় আমার নিরানন্দ বসে থাকায় উৎসাহের উদ্যম আনার চেষ্টা
চলে – দ্যাখ! মানুষ কেবল সামাজিক জীব নয়, রাজনৈতিকও বটে ! ধুর ! চলেই যাই আজ,
তোদের রাজনীতিই থাক ! সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে সবাই- আচ্ছা! ঋতুকে রাজনীতিতে দাড় করালে
কেমন হয়? যদি চোখ থেকে শুরু করি- আহা! কি দারুন
মায়াভরা আবেদন! ঠিক ! ঠিক! সর্বসন্মত ভোটে তাহলে পাশ ! আরে নেতার ক্যারিসমা তো তার
চোখের ভাষাতেই! হাসিটাও কিন্তু বেশ আন্তরিক , আপন আপন। জনগণ কিন্তু আপন লাগা নেতাই
খুঁজে রে! আর কণ্ঠ , ফিগার ...! এই পর্যন্ত নামতে রণে ভঙ্গ দেই- শয়তানের গুষ্টি!
তোদের ইচ্ছায় আমি বালি দেই! কপট রাগে এক প্রবল অনিচ্ছায় আড্ডা ছেড়ে উঠে পড়ি। মনটা পড়ে থাকে সোনালী
রোদে ভেসে যাওয়া সবুজ মাঠে, পড়ে থাকে হিসাব নিকাশহীন নির্ভেজাল আড্ডায় ।
২।
চোখে ঘৃণার জলন্ত আগুন,
চোয়ালে ইস্পাত কঠিন কাঠিন্য, মুষ্টি বদ্ধ হাত শূন্যে তুলছে বার বার, বুঝি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে চুরমার
করে দেবে সব। সম্পর্কের ভাঙনে রাগে, অপমানে অস্থির দেহ-
প্রতিশোধ নেবো, ঝলসে দেবো ওই সুন্দর মুখ, মারবো তারপর মরবো। তুই দেখিস ঋতু ! অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকি। দীর্ঘ শ্যামল দেহে বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার সুঠাম যুবক- আজ একি হাল
তার ! অনাচার
অবহেলার ধ্বসে কি ভীষণ ভাবেই না বিপর্যস্ত, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। প্রেমিকার ফেরত দেয়া লাল পাথরের সোনার আংটিটা হাতের মুঠোয় খচ খচ করে উঠে- কার কাছে জমা রাখবো ভালবাসার এই সাক্ষর! আমিতো এর মালিক নই, জিম্মাদারও নই যে! কি এক ভালবাসার মায়ায় ভিতরটা কুলকুল বয়ে
যায় । এই কাঁধে মাথা এলিয়ে আমার দুই বাহুতে
আশ্রয় খোঁজে ক্লান্ত নির্ঘুম চোখ- একটু
ঘুম দিতে পারিস ঋতু! হৃদয় দেয়া
নেয়া পর্ব থেকে শুরু করে পরিণয় অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঙ্গন পর্যন্ত সবটা সময়
বন্ধুদের পাশে এভাবেই থাকতাম বিশ্বস্ত সাক্ষীর মত। নিজের মধ্যে ধারন করতাম ওদের প্রতিটা গল্প , স্বপ্ন। সযত্নে রক্ষা করতাম গোপন সব চিঠি । হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দনে যেন আমি সম্পর্কে
ভাঙনের হাহাকার শুনতে পেতাম। এক সুনিপুন কারিগরের মত ভেঙ্গে যাওয়া মন আর হৃদয়ের
লাল রং ক্ষতে মমতার প্রলেপ
বুলিয়ে দিতাম। একসময় বেদনার
রঙ ফিকে হয়ে শান্ত হয়ে আসতো মন । তার আরও পরে গোধূলির আকাশে রঙ
বদলের মত বন্ধুর চোখের ভাষাটা বদলে যেত ধীরে । ব্যর্থ প্রেমিকের ঘোলাটে চোখে অন্যরকম প্রেমের গভীর আকুতি। বুঝি আমাকেই আঁকড়ে
ধরে বাঁচতে চায়, ভালবাসতে চায় আরেকবার। অঙ্কের জটিল ধাঁধার মত হিসাব মেলেনা আমার, বন্ধুত্বের
পথটা এবড়ো থেবড়ো অমসৃণ মনে হয় । না বন্ধু না প্রেমিক এমন সম্পর্কের এক জটিল আঙ্গুরলতা ফাস দিতে চায় আমাকে। কি
ভীষণ এক দ্বিধার কষ্ট কুড়ে কুড়ে খায় মন- আমার সামনে আজ কোনটা সত্যি ! এই হতভাগ্য প্রেমিক না আমার চিরচেনা সেই বন্ধু!
৩।
দ্রউপদি হয়ে যা ঋতু ! তাঁর পাঁচ স্বামী ছিল, তুই না হয় দুই জনকে
নিয়ে ঘর কর, আমাকে বাদ দিস না প্লিস! প্রখর চোখে তাকিয়ে থাকি, মুখে কপট রাগ। দুর্মুখ থামে না, বলতেই থাকে- মাঝে মঝেই তুই খুব অসহ্য ঋতু ! শক্ত খোলসে
ঢাকা কাছিম একটা । রসকষহীন কাঠখোট্টা । একটু বুঝতে পারিস না কেন আমাকে! সার্টের কলার ধরে আচমকা টানে প্রায় শুইয়ে ফেলি মাঠের ঘাসে-
কি আমি কাছিম! কথাগুলো নিছক ঠাট্টা বলে আর
উড়িয়ে দিতে পারিনা। চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ্বে বিবমিষা জাগে মনে। অরক্ষণীয় হৃদয়ের
খোলামেলা ঝাঁপিতে অবশিষ্ট আর কিইবা আছে যা দিতে পারি, আর কতটুকু দিলে মনে হবে
দিয়েছি! বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে সম্ভবত শেষ গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে
কাছের দুরের বন্ধুদের হাতে লেখা অনেক চিঠির মধ্যে একটা অন্যরকম চিঠিতে চোখ আটকে
যায়। খুলতেই দেখি চিঠি নয়, কার্ড! হাঁতে
আঁকা নিখুঁত সুন্দর এক নারী দেহের পেন্সিল স্কেচ । বিস্ময়ে চমৎকৃত হয়ে যাই-আমার বন্ধুর এত গুণ, আঁকার
এমন হাত অথচ আমিই জানিনা! মোটা শরীরে সরল ড্যাবডেবে চোখের ভীষণ সাদামাটা মুখটা
চোখে ভাসে। কার্ডের লেখাতে চোখ আটকে যায়-
‘তোমার চোখ জলপাই সবুজ, উড়াল দেয়া পাখী!’ অপ্রত্যাশিত এক আবিস্কারের আবেগে বাক্রুদ্ধ
হয়ে যাই । বন্ধু সে কখন নীরবে, নিভৃতে এমন প্রেমিক হয়ে বসে আছে! নিজের ভিতরে
ভাললাগার এক অচেনা পরশ অনুভব করি। অনেকদিন পর আবার হটাত দেখা হয়ে যায় । শরীরে বাড়তি মেদ,
চোখে আগের সেই সরলতা। শুধু চলাফেরায় আগের সেই আয়েশি আলস্য নেই। বউ, ছেলেমেয়ে সহ এক দায়িত্ববান, সুখী
গৃহকর্তার প্রতিমূর্তি যেন! উচ্ছাসে খলবল
করে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়, বলে – ও ঋতু ! আমার বন্ধু! হটাত দেখা হওয়ার প্রাপ্তিতে
আমিও খুশী হয়ে যাই । অন্য সবার কান বাঁচিয়ে বলি- আমার চোখ এখনও জলপাই সবুজ, উড়াল
দেয়া পাখী!
হারানো দিনগুলি যেন প্রিয়
উপন্যাসের জীবন্ত এক পটভূমি । প্রলম্বিত এক কবোষ্ণ মাধুর্যে জড়িয়ে রাখে সময়। বেলা, অবেলার এই সন্ধিক্ষণে এখনও
আনমনা হয়ে যাই কোন কবিতার সৃজনশীল ছন্দে অথবা গভীর কোন পংতিতে। ভাবি এ হয়তো ভালোবেসে
আমাকেই লেখা নীরবে হারিয়ে যাওয়া কোন এক কবির। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের বন্ধনে আজ এক
ভয়ঙ্কর শিথিলতা অনুভব করি। পৃথিবীর অনেক কিছু বদলের মত বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটাও বুঝি
আজ পালটে গেছে। সব যেন ছলাকলা, লুকোছাপার এক অদৃশ্য মোড়কে বন্দী । কচুপাতায় জলের
মত মুহূর্তেই পিছলে যাওয়ার শঙ্কায় শঙ্কিত। অবশ্যম্ভাবী বন্ধ্যাত্বে বন্ধুত্ব এখন প্রায়শ রঙহীন,
ফ্যাকাশে। এখনও বন্ধু আসে- আসে বিশ্বাস আর ভালবাসার ব্যাপ্তিতে যোজন যোজন পার্থক্য
আর দূরত্ব ঘটিয়ে। মন এখন এক পাকা জহুরী । সম্পর্ক গড়তে
যাচাই, বাছাইয়ের কষ্টি পাথরটা খুঁজে চলে প্রতিনিয়ত। এই মন আর এখন দুর্নিবার ইচ্ছার
কাছে আত্মসমর্পণ করে না। অসম্ভব নিপুণতায়
সরিয়ে রাখে ’ইচ্ছে’ নামের বিমল অনুভূতি । জলপাই সবুজ সেই পাখি
উড়ালে আড়াল হয় । এক অবিশ্বাস্য ভারসাম্যে আকাশের ওপারে অন্য এক আকাশে ভেসে থাকে- একা!
বন্ধুবিহীন !
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখো আমার এ হার
ছুঁয়ে ছুঁয়ে শেখো একি,
চোখ দিয়েছি প্রিয় বন্ধু
সে চোখে দেখো পৃথিবীর রুপ একি!
তবু বন্ধু ভালবেসো একবার
যা ছিল সব দিয়েছি দেবার ।
--কৃষ্ণকলি
http://www.alokrekha.com
জলপাই সবুজ উড়াল দেয়া পাখী ! ঋতু মীর-এর লেখাটা এতো সুন্দর পড়তে পড়তে অন্য এক মার্গে নিয়ে গেছে। এক কোথায় অসাধারণ।
ReplyDeleteজলপাই সবুজ উড়াল দেয়া পাখী ! অনিন্দ্য এক লেখা । মনটা ভরিয়ে দিল। দারুন অনুভূতি কবিতা বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। ! আলোকরেখাকে ও লেখক ঋতু মীরকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
ReplyDeleteজলপাই সবুজ উড়াল দেয়া পাখী ! পেছনে ফেলে আসা সেই সব দিনগুলো এক অমুল্য স্মৃতির মত জীবনকে আঁকড়ে আছে।তারুণ্যের পরিক্রমায় উত্তাল সেই সময়ের একটা বড় অংশ দখল করে ছিল বন্ধু, বন্ধুত্ব, সম্পর্ক আর আড্ডা নিয়ে অনবদ্য লেখা। খুব ভালো লাগলো। অনেক ভালোবাসা লেখক।
ReplyDeleteএকটা গান, একটা কবিতা অথবা একটা অন্য কোন সৃষ্টিকর্ম উপভোগ করার মানসে আমরা যখন তাতে মনোনিবেশ করি ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে যে শিল্প-সাহিত্য কর্মটি আমাদেরকে নিয়ে যায় 'হেথা নয়, অন্য কোনোখানে',আমাদের উপভোগের মাত্রাটা তখন যায় বেড়ে। আর আমাদেরকে এইযে একটা ভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পারদর্শিতা সেটা শব্দমালা কিংবা সুরমালা যার মাধ্যমেই হোক না কেন প্রতিষ্ঠিত করে দেয় ওই সৃষ্টকর্মের রচয়িতার মান। জলপাই সবুজ উড়াল দেয়া পাখীর বর্ণনায় ঋতু মীর আমাদেরকে 'কফি হাউসের সেই আড্ডাটা'র এলাকায় নিয়ে গিয়েছেন অত্যন্ত সাবলীল শব্দমালা ও বর্ণনার উচ্চ মার্গীয় দক্ষতায়। তার লেখা পরে স্মৃতি রোমন্থনের nostalgic walk down the memory lane তো আমাদের হয়েছেই কিন্তু সেইসাথে আমাদের দৃষ্টি এড়ায়নি বাংলা ভাষার প্রতি তার নিবিড় ভালোবাসা। ঋতু আপনি আমাদের ভালোবাসাও জয় করে ফেলেছেন এই জলপাই সবুজ (আমার প্রিয় রং) উড়াল পাখী দিয়ে !
ReplyDeleteলেখা প্রকাশের আনন্দ অনুভূতি অভূতপূর্ব ! সৃষ্টি সুখের উল্লাসে বিভোর মন তখন কেবলি উড়ে উড়ে বেড়ায়। সেই সাথে পাঠকের সুচিন্তিত মন্তব্য যেন বিশাল কোন প্রাপ্তি! সুপ্রিয় পাঠক! অনেক ধন্যবাদ! যদিও...পাঠের আনন্দ এবং প্রাপ্তি আমার কাছে লেখালেখির আনন্দের চাইতেও অনেক বেশি। জলপাই সবুজ উড়াল দেয়া পাখির কাহিনী পাঠকের সাথে ভাগাভাগি করতে পারার সৌভাগ্যের জন্য আলোকরেখাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ! আলকরেখার অঙ্গন সুস্থ সৃজনশীল চর্চায় এগিয়ে চলুক! শুভকামনা নিরন্তর!
ReplyDelete