আমার শহর
দীপক মুখার্জী
আদর করতে ইচ্ছা করে না
আজ ।
যে পার্কটা ছিলো আমার
বাড়ির কাছে , জানালা খুলে দেখতাম ।
তার ঘাশগুলো কে যেন
তুলে নিয়ে গিয়েছে
দোলনা দুটো ভেঙে গেছে ।
রঙ চটে গেছে অনেকদিন ।
আগুন ধরে গেলো দুটো বস্তি তে
কে আগুন দিলো কেউ জানে না ।
পুলিশ আসলো - দমকল আসলো
মানুষগুলো জ্যান্ত পুড়ে মারা গেলো ।
অনাথ হলো বছর চারেকের ভোলা সাউ
বাপ মা মারা গেলো আগুনে পুড়ে
সে এখন বছর দশেকের ছেলে ।
আর ক বছর পর জোয়ান হবে
পেটের দায়ে চুরি করবে
কিংবা সমাজ বিরোধী হবে ।
আগামী ইলেকশনে ওর বয়েস হবে পনের বছর ।
পেটো ছোড়ার জন্যে ভাড়া করা হবে তাকে ।
সে বদলী তে জেলও খাটতে পারে .......
সে এভাবে হয়তো নেতা হয়েও যেতে পারে
যে বস্তি তে সে থাকতো
ঠিক তার পাশে একটা বক্তৃতা দেয়ার মঞ্চ হয়েছে ...
ওখানে নেতারা আসে আর বলে -
পুড়ে যাওয়া লোকগুলোর নতুন ঘর হবে ।
অবাক চোখে তাকায় আর ওই টুকু ছেলে হাসে ...
বোঝে সব ঢপের কেত্তোন হচ্ছে ।
ওখানে এখন সত্যিই নতুন বাড়ি হয়েছে
সতের তলা ফ্ল্যাট বাড়ি
তৈরী করেছে ঢপ মাস্টার নেতা ।
এবার মন্ত্রী হবে -- লিস্টে নাম উঠেছে ।
ভোলা এখন মোটর গ্যরেজে কাজ করে ।
তার কচি হাতে অনেক ক্ষতের দাগ
মালিকের গাল আর দুবেলা খাওয়া এই নিয়েই
বেঁচে থাকে রোজ ছেলেবেলার ভোলা ।
পার্কটা এখন খোলে না কেউ
কেউ আর আসে না
পড়ে আছে একপাশে পার্ক আর ভোলা ।
http://www.alokrekha.com
আমার শহর---- দীপক মুখোপাধ্যায়ের অনন্য উপমা।কবির হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতির কি গভীর প্রকাশ। খুব ভালো লাগলো । ভালো থাকবেন।
ReplyDeleteদীপক মুখোপাধ্যায়ের "আমার শহর" কবিতায় কবি এমন একটি কথাও লিখেন নি যা কিনা যা আমরা ইতিমধ্যে জানিনা ! আমরা প্রতিদিন তো এর মধ্যেই বাস করি। বর্তমানের আমরা কেমন করে যেন জেনে গেছি, মেনে নিয়েছি যে এমনিই তো হবে ! এমনিই তো হবার কথা! বস্তির বাড়ী পুড়ে যাওয়া ভিটেয় আবারো বস্তি গড়ে উঠলে সেটাতো হবে প্রগতির আর উন্নয়নের পরিপন্থী! ভোলা মোটর সাইকেলের গ্যারেজে কাজ করে কোনমতে দিনগুজরানের পরিবর্তে জজ ব্যারিস্টার হলে তো আমাদের সবার জাত চলে যাবে যে! আর একটা সমাজের হাল যখন এরকমটা হয়, আমরা যারা সেই সমাজের সদস্য তাদের সবার চোখে যখন ছানি পড়ে যায় তখন দীপক মুখার্জীর মতো চক্ষু সার্জনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে সমাজের সবার চেখের সেই ছানি কলমের খোঁচায় অপারেশন করে সরিয়ে দেবার যাতে করে আমরা আবার দেখতে পাই যা আমরা প্রতিদিন নিতান্ত স্বাভাবিক বলে ধরে নেই!
ReplyDelete