হিন্দি কবি গুলজারের কবিতার অনুবাদ করার প্রচেষ্টা
कोबी गुलज़ार साब की कविता….. माकन की ऊपरी मंज़िल पे अब कोई नहीं रहता
কবি গুলজারের কবিতা।
অনুবাদঃ সানজিদা রুমী
বাড়ির উপর তলায় এখন কেউ থাকে না আর।
বাড়ির উপর তলায় এখন কেউ থাকে না আর,
ওই ঘরগুলো বন্ধ বহুদিন ;
যে সিঁড়ির চব্বিশটি ধাপ গিয়ে ঠেকতো সেখানতক
সেটা আর উপরতক যায় না এখন।
ওখানের ঘরে কতো যে স্মৃতি আমার,
পুরোনো এক ঝুড়ি ভরে রেখেছিলাম খেলনাগুলো
যার বেশ কিছু খোয়া গেছে খেলা শেষে উঠিয়ে-গুছিয়ে রাখতে গিয়ে।
ওখানে ঝুল-বারান্দাও ছিল একটা
যেখানে ঝোলানো ছিল একটা বসার দোলনা।
আমার ছিল এক বন্ধু, সেই তোতাপাখী রোজ আসতো,
কাজের লোক হরি তাকে মরিচ খেতে দিতো।
এর ঠিক সামনেই ছিল খোলা এক চিলতে ছাদ
যেখানে বসে এক মুয়ূর রাতভর
গুঁনতো আকাশের তারা !
আমার সন্তানেরা নীচের তলায় রাখা জিনিসগুলো দেখেনি;
যেখানে ঘরের এক কোণে রাখা আছে পিয়ানো একটা
পুরানো পার্সি স্টাইল ফ্রেজার থেকে কেনা-
কিন্তু কেমন যেন বেসুরো একটা আওয়াজ বের হয়,
রিডগুলো সব নড়বড়ে হয়ে গেছে বলে
এক সুর দখল করেছে অন্য সুর !
ওই বাড়ীতে একটি পশতু বৈঠকখানা ছিল
যার দেওয়ালে ঝোলানো থাকতো পূর্বপুরুষদের ছবি,
আমি সোজা করে রাখতাম,
আর বাতাস এসে করে দিত বাঁকা।
আমার পুত্র বধূকে গোঁফওয়ালা এই পূর্বপুরুষরা
অস্বস্তিতে ফেলতো বলে
আমার ছেলে অবশেষে তাদেরকে
দেয়াল থেকে নামিয়ে,
পুরোনো খবর-কাগজে মুড়িয়ে,
রেখে দিয়েছিলো সুরক্ষিত করে।
আমার এক ভাগ্না মাঝে মাঝে ওগুলো
ফিল্মের সেটে ভাড়া দেয়,
এর জন্যে অর্থ পায় সে !
আমার বাড়ীতে আমার ঘরের সামনে
অতিথিদের থাকার জায়গা,
আমেরিকা থেকে আমার নাতি এলে থাকে ওখানে।
একেকবার একেক সাইজে আসে –
খোদাই জানেন, প্রতিবার সে-ই আসে,
নাকি, একেকবার আসে একেকজন!
আরেকটা ঘর, যার পেছনের দিকটা বন্ধ,
যেখানে বাতি জ্বলেনা;
ওখানে রাখা একটি জপমালায় আলোকিত থাকে ঘরটি;
সেখানে থাকতো একজন ধাত্রী
যে তিন সন্তানকে বড় করতে
পার করে দিয়েছিলো নিজের জীবনটা!
সে মারা গেলে আমি তাঁর দাফন করি নি,
বরং রেখেছি সুরক্ষিত করে !
এরপরে সিঁড়ির যে এক-দুই ধাপ সেটা গিয়েছে হিমঘরে।
সেখানে নীরবতা আলোকিত, শুয়ে আছে প্রশান্তি
তার কোলের কাছে এইটুকু জায়গা রেখে, যে
যবে সিঁড়ি ভেঙে নীচে নেমে আসবো, আমি যাতে
তারই কোলে, তারই বাহুতে মাথা রেখে,
তাকে জড়িয়ে ধরে
যাই ঘুমিয়ে!
বাড়ির উপর তলায় এখন কেউ থাকে না আর, কেউ থাকে না !
আমার মূল কবিতাটা পড়া নেই। কিন্তু সানজিদা রুমির অনুবাদিত কবিতার বিষয় বস্তু অনবদ্য। আমাদের জীবনের কথা। আজ এই রকমই হয়ে থাকে। পুরোনো সব কিছু কিছু ফেলে আসা - নতুনের দিকে ধাওয়া এই যেন জীবনের আজকের বিষয়। খুব ভালো লাগলো। অভিনন্দন সানজিদা রুমি কে।
ReplyDeleteআলোকরেখা ভালো লাগে এই নতুন নতুন প্রয়াসে। হিন্দি কবি গুলজারের কবিতার সাথে পরিচিত করাবার জন্য। অনন্য বিষয়। পুরোনো স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকা। এ যেন জীবনের দর্পন। খুবই সুন্দর লেখা। খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteহিন্দি কবি গুলজারের কবিতা শুনতে আমার খুব ভালো লাগে। শুনতে বলছি কারণ আমি হিন্দি পড়তে পারি না। ইউটুবে শুনি তার কবিতা। সবটুকু বুঝিনা মোটামোটি আন্দাজ করি। তার কবিতা অনুবাদ করার প্রয়াস খুবই প্রশংসনীয়। এই কবিতাটা আমি বহুবার পড়েছি আজ পুরোটা বুঝতে পারছি। অনেক ধন্যবাদ আলোকরেখাকে।
ReplyDeleteহিন্দি কবি গুলজারের কবিতা পড়তে বিশেষ করে ওঁনার ভরাট গলায় শুনতে আমার খুব ভালো লাগে। তাঁর সব কবিতাটি আমার ভালো লাগে বিশেষ করে এই কবিতাটা। দারুন অনুবাদ হয়েছে। সাধারণত অনুবাদে মূল বক্তব্য হারিয়ে যায়। কিন্তু সানজিদা খুব দক্ষতার সাথে মূল রচনার সাথে অনুবাদিত কবিতা ধরে রাখতে পেরেছে। আলোকরেখা আমার জন্য শুধু পড়া বা জানা নয়। আমার ব্যস্ত জীবনের বিনোদনও বটে। আমি আলোকরেখার নিয়মিত পাঠক। মন্তব্য করা হয়ে ওঠে না। আজ আমার প্রিয় কবি গুলজার সাহাবের কবিতার অনবদ্য অনুবাদ পড়ে অসম্ভব ভালো লাগলো। সানজিদা অতি মেধাবী একজন মানুষ। আমি তার একনিষ্ট ভক্ত। অনেক অনেক ভালো থেকো সুন্দর থেকো। আরো ভালো লেখো।
ReplyDeleteহিন্দি কবি গুলজারের অনুবাদিত কবিতা বাড়ির উপর তলায় এখন কেউ থাকে না আর। পড়ে আমার খুই ভালো লাগলো। আমি যেন আমার জীবনের প্রতিফলন দেখতে পেলাম। আমারদের পুরোনো ঢাকার বাড়িটার কথা মনে পড়ে গেল। এমনই একটা বাড়ি যার বর্ণনা এই কবিতায় উঠে এসেছে। এখন ওই বাড়িতে কেউ থাকে না আমরা সবাই নতুন ঢাকায়। বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। বাবা থাকতে যাওয়া হত।এখন আর যাওয়া হয় না। বাড়িতে টাঙ্গানো পূর্বপুরুষের ছবি ছিল। ছোট বেলায় গোফ আর দাড়িওয়ালা ছবিগুলো দেখে খুব ভয় করতো। এখন প্রায় ভঙ্গুর বাড়িটা বিল্ডার্সের কাছে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পুরোনো স্মৃতিময় বাড়িটা এখন বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক সম্মত হবে। আমাদের উষ্ণ স্মৃতিগুলি দাফন নয় হৃদয়ে সংরক্ষিত। আব্দুল্লা কায়সার
ReplyDeleteহিন্দি কবি গুলজারের অনুবাদিত কবিতা বাড়ির উপর তলায় এখন কেউ থাকে না আর। অসাধারণ। কি সুনিপুন বর্ণনা। পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো। শৈশবের খেলনা ,ঝুল বারান্দা ,খোলা এক চিলতে ছাদ রাতভর ,আকাশের তারা গোনা ,পিয়ানো পুরানো পার্সি স্টাইলের ,দেওয়ালে পূর্বপুরুষের ছবি আরো কত স্মৃতি উঠে এসেছে এই কবিতায়। অনেক অনেক ভালো লাগলো। শুভ কামনা।
ReplyDeleteহিন্দি কবি গুলজারের অনুবাদিত কবিতা বাড়ির উপর তলায় এখন কেউ থাকে না আর। অসাধারণ আমার খুই ভালো লেগেছে। জীবনের দর্পন কবিতা। সানজিদা রুমি তার উপয়োগ নিপুণতার সাথে করেছেন। মূল কবিতা জানা নেই। কিন্তু বাড়ির উপর তলায় এখন কেউ থাকে না আর। অনন্য। অনেক শুভ কামনা।
ReplyDeleteকবিতা বাড়ির উপর তলায় এখন কেউ থাকে না আর। অপূর্ব কবিতা । কি সুনিপুন বর্ণনা। আলোকরেখায় অনেক কবিদের অনুবাদিত লেখা প্রকাশিত হয় যা আমাদের ভালো লাগা দেয়। অনেক অনেক শুভ কামনা আলোকরেখাকে।
ReplyDelete