আমার ফিরে আসা!
আমার একটার পর একটা অসুস্থতার নজরদারি করেই নিজের জীবনটা কাটালো সে! কিন্তু এ নিয়ে তাঁর অভিযোগ ছিলোনা কোনো! ছিলোনা কোনো আক্ষেপ, কিংবা কোনো অভিযোগ! বরং আমার জীবনটাকে সে ভরিয়ে রেখেছিল হাসি, গল্প, কথকতায়, জ্ঞানে এবং বৈচিত্র্যে! আর এর ফলে আমার নিজের বয়সের কথা মনে ছিলোনা, ছিলোনা কোনো দুশ্চিন্তা আমার ভবিষ্যতকে নিয়ে! আমার অতীতের কথাও যেন মনে ছিলো না। আমার ছিলো শুধু বর্তমান। ছিলো আমার হাসিখুশির সংসার, ছিলো আমার গান শোনা , আমার কবিতা, আমার নাটক, আমার আলোকরেখা। তারপর একদিন হঠাৎ দেখি, কিছু নেই। সব শূন্য, সব ফাঁকা! ঘর শূন্য, বিছানা শূন্য!
কিন্তু আমার মন যেন সেটা মেনে নিতে চায় না। তাইতো জেগে থাকা সারাটা সময় খুঁজে ফিরি ঘরে, পথে পথে, অলিতে গলিতে, টিম হর্টনস এর কফি শপে, উত্তপ্ত দুপুরে, বরফ জমা বিকেলে আর হীম শীতল রাত্রির নিকষ কালো অন্ধকারে ! আধো ঘুম আর আধো জাগা রাত সকাল হয়, দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত! আমার খোঁজার যেন বিরতি নেই। লিভিং রুমের সোফায় বসে জানালা দিয়ে গ্যারেজের মুখে পার্ক করা তোমার গাড়িটার দিকে চেয়ে চুপচাপ বসে থাকি। অপেক্ষায় থাকি! এই বুঝি তুমি আসবে। হারিয়ে যাই ভাবনায়! 'স্বপ্নে' ঢুকে অপেক্ষা করি, 'ফেয়ার ভিউ' মলে গেলে তোমার অপেক্ষা করি। খেয়াল নেই যে একই কাপড় পড়ে আছি দিনের পর দিন, গোসলও সারি না দিনের পর দিন, চুল আঁচড়াই না দিনের পর দিন! কারণ, দিন আমার কাটে না। আমার দিনগুলো সব স্থির হয়ে পাথরের মতো ঝুলে আছে শূন্যে। হায়, জীবন এত শূন্য কেন? এ জীবন, এই শূন্যতা কীভাবে ভরাট হবে? আমি তাঁর পঁয়তাল্লিশ বছরের জীবনসঙ্গী থাকা স্বত্তেও এতখানি ভঙ্গুর হয়ে গেলাম কী করে? সমাজের মানুষের সামনে সে সর্বদাই ছিল সচকিত, সর্বদাই সপ্রতিভ, সর্বদাই রেডি টু গো, আত্মবিশ্বাসী, কিছুটা বা বাইরের অচেনা মানুষের কাছে আত্ম-অহংকারীও! কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে ছিলো একজন সহানুভূতিশীল মানুষ, বন্ধু এবং আমার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, দয়া, করুণা এবং ভালেবাসায় টইটম্বুর!
সেদিনের চারদিক সাদা বরফে ঢাকা শীতের দুপুর, আমার বোন একই হাসপাতালের আমার বেডের সামনে এসে দাঁড়ালো। ওর দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা সহজাত ছিল না। কেমন যেন অন্য রকম। দুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তখনও বুঝিনি কিছুই। একটা অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ছেড়ে সে চলে গেছে বুঝতে পারিনি তখনও ! নাকি বুঝতে চাই নি! তবে একটা ভয় দানা বেঁধেছিলো মনের ভেতর সে লাইফ সাপোর্টে যাবার পর থেকেই। তবুও মনকে বুঝিয়েছি কত মানুষইতো লাইফ সাপোর্ট থেকে সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসে। কিন্তু সে ফিরে এলো না! সে ফিরে আসেনি! যা গত পয়ঁতাল্লিশটা বছরে লুকিয়ে রেখেছিলো তাঁর বুকের ভেতর, লাইফ সাপোর্টে নেবার প্রাক্কালে সে টেলিফোনে বলেছিলো যে সে আমার চোখের মাঝে "বনলতা সেনে"র মিল খুঁজে পেয়েছিলো! আর এটাই ছিলো তাঁর সাথে আমার শেষ কথা!
আমার সন্তানেরা, বন্ধু-বান্ধবরা বলছে, তারা কতদিন ধরে নাকি একই পোশাকে দেখছে আমাকে! একই পোশাক, একই জামা, একই এলোমেলো আঁচড়ানো চুল: তাদের কথা, আমরা জানি সে আর নেই, ফিরে আসবেনা আর কোনোদিন! হাজার বার মাথা কুটলেও না! কিন্তু তুমিতো এখনও আছো আমাদের মাঝে ! তুমি কেন উদভ্রান্তের মত এভাবে থাকছো, কাটাচ্ছো তোমার দিন-রাত্রি? তোমার জন্যেই তোমার নিজের কাছে ফিরে এসো! আমাদের জন্যে ফিরে এসো ! নিজের যত্ন নাও । তোমার হাতে তো এসে পড়েছে কিছু দায়ীত্ত্ব, কিছু দায়। সেগুলো ঠিকমত সারতে বেঁচে থাকতে হবে যে! সবার কথায়, সবার আদরে-ভালোবাসায় একটু একটু করে নিজকে গুছিয়ে নিতে পারছি মনে হয়! তাই আজ গরম জলে স্নান সারলাম। সুন্দর পোশাক পরে, চুল আঁচড়ে, তার উপহার দেওয়া পারফিউমে নিজেকে জড়িয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম। বহুদিন পর আমার ছোট্ট ল্যাপটপের ডালা খুলে ওপরে তুলে ধরলাম। ল্যাপটপের পর্দা ঝকঝকে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। যেন কতদিন দেখেনি আমাকে! তারপর, 'আলোকরেখা'য় প্রবেশ করলাম। দেখি আমার অনুপস্থিতিতেও আমার সম্মানিত পাঠকেরা 'আলোকরেখা'কে ছেড়ে যায়নি! পরিত্যাগ করেনি! উপলব্ধিতে এনে দিলো এক অপার কৃতজ্ঞতা বোধ! জীবনের চড়াই -উৎরাইয়ে আমরা এভাবেই ফিরে আসি জীবনের পথে আমাদের শুভার্থীদের অনুপ্রেরণায় ! জীবনের বন্ধুর পথে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব আর শুভকামনা আমাদের পরমতম পাথেয়।
সানজিদা রুমির আমার ফিরে আসা!পড়ে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। তাকে সান্তনা জানবার ভাষা নেই আমার কাছে। তবে আমরা আলোকরেখার পাঠকরা যেমন ভালোবাসি আলোকরেখাকে তেমনি সানজিদা রুমিকেও। তাই আমরা তাকে ছেড়ে কোথাও যাই না বারবার ফিরে ফিরে আসি। অনেক অনেক ভালোবাসা।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির আমার ফিরে আসা!পড়ে মনটার ভিতরে হাহাকার করে উঠলো। সাথী হারার গোপন ব্যথা আমার জানা আছে। তাইতো এই লেখার প্রতিটি শব্দ আমার চেনা। না সানজিদা আমরা আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আলোকরেখার পাঠক আপনার আপনজন -একটি পরিবার। প্রার্থনা করি আপনি ভালো থাকুন।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির আমার ফিরে আসা! লেখাটা পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। বিশেষ করে আশরাফ ওয়ার্ল্ড পরিবেশনার ভিডিওটা শুনে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। সৈকত আর ফেরেনি। সাগরিকা যেন সব হারিয়ে উদভ্রান্ত পাগল প্রায়। ভিডিওর প্রতিটি কথা আমি অনেক বার করে পড়লাম। কি নিদারুন ব্যাখ্যান। সবাইয়ের প্রতি অনেক অনেক শুভ কামনা।
ReplyDeleteআশরাফ ওয়ার্ল্ড পরিবেশনার ভিডিওটা শুনে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। কি সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিটি কথা হৃদয়ের কাছাকাছি। সাগরিকা সৈকতের জীবন কাহিনী জানলাম। কি সুন্দর সংসার তাদের। ভালবাসায় সিক্ত। একটা কালো থাবা সবকিছু এলোমেলো করে দিল সাগরিকার জীবন। সৈকতের আর ফেরা হলোনা তার বনলতা সেনের কাছে। আজো সে পথ চেয়ে অপেক্ষায় থাকে।
ReplyDeleteআশরাফ ওয়ার্ল্ড পরিবেশনার ভিডিওটা দেখলাম। সানজিদা রুমির আমার ফিরে আসা! লেখাটা পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। সবকিছু মিলিয়ে ভীষণ কষ্টের। মন্তব্য করার ভাষা নেই। শুধু বলবো আলোকরেখার পাঠকরা আপনার সাথে থাকবেই। আমরা নতুন কিছু না পেলেও পুরোনো লেখাগুলি পড়ি। তবুও একবার হলেও আলোকরেখায় বসি। অনেক অনেক ভালোবাসা।
ReplyDeleteভিডিওটা দেখলাম। সানজিদা রুমির তোমার আমার ফিরে আসা! লেখাটা পড়ে চোখের ভিজে গেল । কি লিখবো জানিনা না। এটাই জীবন মেনে নেওয়া ছাড়া আর কি কোন উপায় আছে ? ভালো লাগলো তুমি আবার উঠে দাঁড়িয়েছ। আলোকরেখার পাঠকেরা তোমার সাথেই আছে। সৈকত ও সাগরিকার গল্পটা অনুমুতি দিলে আমি পড়তে চাই। ভালো থাকার চেষ্টা করো। অনেক অনেক ভালোবাসা।
ReplyDeleteআশরাফ ওয়ার্ল্ড পরিবেশনার বিশেষ করে সৈকত আর ফেরেনি। জায়গাটা আবেগ আপ্লুত। সৈকতকে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তার সাথে বনলতা সেনের কবিতা না জানারই কথা । কিন্তু ভিডিওটিতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তা অতন্ত্য হৃদয়গ্রাহী। আলোকরেখার পাঠকেরা আলোকরেখাকে ভালোবেসে পরে।
ReplyDeleteআশরাফ ওয়ার্ল্ড পরিবেশনার সাগরিকা , সৈকত আর বনলতা সেনের গল্পটা অনবদ্য ভাবে বর্ণনা করেছেন। সাগরিকার জীবনে সৈকতের অবস্থান দুজনের জীবন যাপন ছিল অতীব সুন্দর আর অনন্য। যাবার বেলায় তাকে বনলতা সম্মোধন যেন বাস্তব নয় ছায়াছবির মোট। কিন্তু সৈকত আর ফেরেনি। জায়গাটা আবেগ প্লাবিত।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির তোমার আমার ফিরে আসা! লেখাটা পড়ে চোখের ভিজে গেল ভিডিওটাও দেখলাম। । কি লিখবো জানিনা না। এটাই জীবন মেনে নেওয়া ছাড়া আর কি কোন উপায় আছে ? ভালো লাগলো সানজিদা রুমি ভেঙে না পড়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন এই ইতিবাচক দিকটি খুব ভালো লাগলো। জীবনে চড়াই উৎরাই পাওয়া না পাওয়া থাকবেই তবুও এগিয়ে যেতে হবে। অনেক অনেক শুভ কামনা। আর প্রার্থনা করি ঈশ্বর তাকে এই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা দিক
ReplyDeleteমন্তব্যের ভাষা নেই। কেবল প্রার্থনা।
ReplyDeleteসাগরিকা, সৈকত আর বনলতা সেনের কাহিনী পড়ে মন ছুঁয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। রুমিকে যতটুকু জানি, চিনি তা আলোকরেখার সুত্র ধরেই। দিঘীর অতল জলের গভীরতা ওর ডাগর কালো চোখে । সেই চোখ আসলে কথা বলে নীরব অভিব্যাক্তিতে। আলোকরেখা পেইজে ওর ছবিতে নাচের ভঙ্গিমা আর মুদ্রা মুগ্ধ মগ্নতায় চেয়ে দেখেছি সবসময়। শ্রাবস্তির কারুকার্যময় মিস্টি মুখ দেখে দেখে মনে হয়েছে- এই এতোটাই এতোটাই, কতোটাই জানি, জেনে গেছি রুমিকে! আসলে জানিনি, বুঝিনি, খবর রাখিনি। একান্ত আপন সাথীকে হারিয়ে সে জীবনটা এখন এক ডানা ভাঙ্গা পাখি । আকাশে উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে কি ভীষণ কস্টে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মাটির প্রিথিবিতে। উপায়হীন নিরুপায়। প্রিয় মানুষ পাশে থাকার নির্ভার, নিশ্চিত জীবন আজ পলাতক। জানিনি, বুঝিনি, খবর রাখিনি ব্যস্ততার অহেতুক যুক্তিতে। নিরেট স্বার্থপরতায় নিজের সময়ের নিশ্চিত সুখ বারবার পরিমাপেই তৃপ্ত হয়েছি- আর কতটা সুখ জমা রইলো খরচের ! আশরাফ ওয়ার্ল্ড এর ভিডিও মন ভিজিয়ে জানিয়ে গেলো - আপাতঃ দৃষ্টিতে আমরা সম্পূর্ণর খুব সামান্য অংশ দেখি, আর যা দেখার কথা ছিল তার অনেক কিছুই নিজ অন্ধত্বে দেখতে পাইনা। রুমি! তোমার কষ্টে সান্ত্বনার ভাষা উচ্চারণ করবোনা। শুধু বলবো বাঁচো, বেঁচে ওঠ নিজের জন্য ! জানতো ! বাঁচতে হয়, কষ্ট সামলে, শোক সামলে উঠে বসতে হয়- অসময়ে চলে যাওয়া বা মরে যাওয়া যায়না বলেই...! আমার দুহাত প্রসারিত রইলো- তুমি এসো ! এই বিশ্বাস রেখো - আমি সত্যি আছি! রুমি!
ReplyDeleteMay the Creator comfort your soul. From Him we came to Him we will return.
ReplyDelete