কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল হল
একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল হল মহাকাশের এমন একটি স্থান যেখানে মধ্যাকর্ষণ বল এতটাই শক্তিশালী যে সেখান থেকে কোন কিছুই বের হতে পারে না। এমনকি আলোর মত তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণও এই প্রচন্ড আকর্ষণ বল ভেদ করে বের হয়ে আসতে পারে না।
ব্ল্যাক হোলে পদার্থের অত্যাধিক ঘনত্বের কারণে এটি এর চার দিকে এই অস্বাভাবিক মধ্যাকর্ষণ বল তৈরি করতে পারে। যেহেতু এখান থেকে কোন আলো বেরোতে পারে না, আমরা খালি চোখে এদের দেখতে পাই না। তারা সম্পূর্ন অদৃশ্য হয়। তবে বিশেষ সরঞ্জাম সহ স্পেস টেলিস্কোপগুলি ব্ল্যাক হোলের সন্ধান করতে সহায়তা করে। এদের দেখা না গেলেও আইনস্টাইনের বিখ্যাত সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, মহাশূন্যে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব থাকতে পারে এবং এত ভারি ভরের কোন স্থান অবশ্যই তার চারদিকের স্পেসটাইম কে বিকৃত করবে। সম্প্রতি এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই সম্ভব হয়েছে ব্ল্যাক হোল এর প্রথম চিত্র ধারন করা। ব্ল্যাক হোলের যে অঞ্চল থেকে কোন কিছু বের হয়ে আসতে পারে না।তাকে ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত বলে। একটি ব্ল্যাক হোল একটি আদর্শ কালো বস্তুর মতো কাজ করে, কারণ এটি কোন আলো প্রতিফলিত করে না।সাধারনত ব্ল্যাক হোল তৈরি হয় বৃহৎ কোন নক্ষত্রের নিজ কেন্দ্রে সংকুচিত হওয়ার ফলে। প্রতিটি নক্ষত্রে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন হয়। একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়াম অনু গঠন করে। দুটি হাইড্রোজেন অণু নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম অণু গঠন করার মাধ্যমে প্রচুর তাপশক্তি, আলোক শক্তি ও বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় বিকিরন করে। কিন্তু নক্ষত্রের এই নিউক্লীয় জ্বালানি(হাইড্রোজেন) শেষ হয়ে গেলে তাদের নিউক্লীয় বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়, যা নক্ষত্রটিকে একটি মৃত নক্ষত্রে পরিনত করে। প্রতিটি বস্তুর ন্যায় এসকল নক্ষত্রেরও অভিকর্ষ বল থাকে। এ সময় চন্দ্রশেখর সীমার নিচের নক্ষত্র গুলো White Dwarf বা শ্বেত বামনে পরিণত হয়। চন্দ্র শেখর সীমার ওপরের নক্ষত্র গুলোর ক্ষেত্রে এইরকম ঘটে না। এই বৃহৎ নক্ষত্রগুলির অভ্যন্তরে প্রচুর পদার্থ অবশিষ্ট থাকে এবং অত্যাধিক অভিকর্ষ বলের সৃষ্টি করে। ফলে একধরনের কেন্দ্রমুখী সংকোচনধর্মী চাপ সৃষ্টি হয়। এভাবে ধীরে ধীরে সমস্ত ভর কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হতে শুরু করে। এরা বাইরের ও ভিতরের চাপ সমান করতে গিয়ে এক অতি বৃহৎ বিস্ফোরনের তৈরি করে নিজের ভিতরের কিছু অংশ বাইরের দিকে প্রচণ্ড বেগে বের করে দেয়। এই অতি বৃহৎ বিস্ফোরণ “সুপারনোভা” নামে পরিচিত। এই বিস্ফোরনের কারণে নক্ষত্রের বাইরের পৃষ্ঠটি মহাশুন্যে নিক্ষিপ্ত হবে এবং অভ্যন্তরটি পরিনত হবে একটি ব্ল্যাক হোলে। একটি নক্ষত্রকে ব্ল্যাক হোকে পরিনত হতে গেলে তার যথেষ্ট ভর থাকতে হবে। সাধারনত ৩ সৌর ভরের চেয়ে বেশি ভরের নক্ষত্রগুলো সুপারনোভা বিস্ফোরনের মাধ্যমে ব্ল্যাক হোলে পরিনত হয়। কোন নক্ষত্রের মৃত্যুপূর্ব ভর কমপক্ষে ৩ সৌর ভর হলে এর কেন্দ্রে ভর সংকোচন সুপারনোভা বিস্ফোরন ঘটাতে পারে এবং ব্ল্যাক হোল এর সৃষ্টি করতে পারে।একটি নক্ষত্রের জীবনকালের শেষে নক্ষত্রটি যদি যথেষ্ট বড় (আমাদের সূর্যের ভরের ৩ গুণের বেশি) হয় তাহলে সেটা সুপারনোভার মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়ে স্টেলার ব্লাকহোলে পরিণত হয়। একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর পর সেটা ব্ল্যাক হোল হবে নাকি শ্বেত বামন হবে এটা নির্ভর করে তার ভরের ওপর। এই সীমাকে বলা হয় চন্দ্রশেখর সীমা। একটি স্টেলার ব্ল্যাক হোলের ভর সূর্যের ভরের থেকে ৩ গুণের বেশি থেকে শুরু করে কয়েকশত গুন পর্যন্ত হতে পারে। এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবথেকে ছোট স্টেলার ব্ল্যাক হোলের ভর সূর্যের ভরের ৩.৮ গুন যার ব্যাস মাত্র ২৪ কিলোমিটার।আবার, কখনো কখনো দুটি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষের ফলেও উৎপন্ন হয় নতুন একটি ব্ল্যাক হোলের। এমন সংঘর্ষের ফলে এক ধরনের বিশেষ তরঙ্গের সৃষ্টি হয় যা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বা গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ নামে পরিচিত। প্রায় একশত বছর আগে এই তরঙ্গের অস্তিত্বের কথা উল্ল্যেখ করে গিয়েছিলেন আইন্সটাইন যা সম্প্রতি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। ১৭৮৩ সালে ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell) ‘ডার্ক স্টার’ (dark stars) শিরোনামে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তার গবেষণা পত্রের বিষয়বস্তু ছিল "বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না"। এখান থেকেই মূলত ব্ল্যাক হোল এর ধারণা আসে এবং এটি নিয়ে গবেষনা ও অনুসন্ধান শুরু হয়। পরবর্তিতে অবশ্য এটি বিজ্ঞান মহলে একটি অযৌক্তিক তত্ত্ব হিসেবে বেশ অবহেলার স্বীকার হয়। আলোর মত কোন কিছু বেরিয়ে আসতে পারবে না এমন একটি তত্ত্ব বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। তাই ধীরে ধীরে থেমে যায় ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষনা।কিন্তু ১৯১৬ সালে প্রথম আলবার্ট আইনস্টাইন নিয়ে আসেন তার বিখ্যাত “সাধারন আপেক্ষিক তত্ত্ব”। তার এই তত্ত্বটি কেবল স্থান, সময়, মাধ্যাকর্ষণ এবং পদার্থের মধ্যকার সম্পর্কের বর্ণনাই দেয়নি, এটি একটি বিশেষ ঘটনার তাত্ত্বিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছিল যা আমাদের কাছে ব্ল্যাক হোল নামে পরিচিত।
তার এই তত্ত্ব মহাবিশ্বের দুটি বস্তুর আকর্ষন এর জন্য দায়ী মহাকর্ষ বলের ধারণা কে পালটে দিয়েছিল। তার মতে একটি বস্তু মহাবিশ্বে একটি স্পেস-টাইম বক্র করে রাখবে। একটি বস্তু যত ভারী তার স্পেস-টাইম বক্রতা তত বেশি। আর এই বক্রতার জন্যই কোন বস্তু তার আশেপাশের অন্য বস্তুকে নিজের দিকে টেনে আনবে যা আমরা মহাকর্ষ বল নামে চিনি। ব্যাপারটি এমন যে বস্তুটি স্পেস-টাইম কে বলে দেবে কতটুকু বাঁকতে হবে, আবার স্পেস-টাইম বক্রতা বস্তুটিকে বলে দিবে কীভাবে স্থানান্তরিত হতে হবে। তার এই অসাধারণ তত্ত্বের পর থেকেই শুরু হয় ব্ল্যাক হোল নিয়ে পুনরায় সাড়া পড়ে যায়।সর্বপ্রথম কার্ল শোয়ার্জশিল্ড নামে এক জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার আনুমানিকতার সঠিক সমাধান দিয়ে ১৯১৬ সালে ব্ল্যাক হোলের আধুনিক সংস্করণটির প্রস্তাব করেছিলেন।শোয়ার্জশিল্ড বুঝতে পেরেছিলেন যে, যে কোন ভরকে অসীম ক্ষুদ্র একটি বিন্দুতে সংকচন সম্ভব। আর কোন ভরকে যদি একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে সংকুচিত করা যায় তাহলে এটি তার চারপাশের স্পেসটাইমকে অনেক বেশি বাঁকিয়ে ফেলবে। যেহেতু সমস্ত ভর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত থাকবে, এর অভিকর্ষ বল হবে অত্যাধিক এবং এই নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোর ফোটন কণাও বের হতে পারবে না। ভরটির চারদিকে এই নির্দিষ্ট অঞ্চলকে বলা হয় শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ।তাত্ত্বিকভাবে, প্রত্যেক মহাজাগতিক বস্তুকে ব্ল্যাক হোলে পরিনত করা সম্ভব এবং তাদের একটি শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ থাকবে এবং তা গণনা করা সম্ভব। যদি সূর্যের ভর একটি অসীম ছোট্ট বিন্দুতে সংকুচিত হয় তবে এটি একটি ব্ল্যাক হোল তৈরি করবে যার ব্যাসার্ধ মাত্র 3 কিলোমিটারের (প্রায় 2 মাইল) ব্যাসার্ধের সমান। শোয়া র্জশিল্ড ব্যাসার্ধ, rs= 2GM/c2 ।
G= মহাকর্ষীয় ধ্রুবক
M= পদার্থের ভর
c= আলোর বেগ
একইভাবে, পৃথিবীর
শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ হিসাব করলে তা মাত্র কয়েক মিলিমিটার হবে, যা
কিনা একটি মার্বেলের সমান।
আইন্সটাইনের তত্ত্ব এবং
শোয়ার্জচাইল্ড এর গবেষনা ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষনায় নতুন করে জোয়ার নিয়ে আসে।
পরবর্তিতে গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন হুইলার,স্টিফেন হকিং আর রজার পেনরোজ এর গবেষণা এই ব্ল্যাক
হোল কে পরিণত করেছে বিজ্ঞানের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে
জন হুইলার এই বিস্ময়কর কালো বস্তুটির নামকরণ করেন ব্ল্যাক হোল। এর পর থেকেই এটি
আমাদের কাছে ব্ল্যাক হোল নামে পরিচিত। পরবর্তিতে ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারীরা প্রমাণ করেন
আসলেই ব্ল্যাক হোল আছে।ব্ল্যাক হোলের তিনটি স্তর রয়েছে বিবেচনা করা হয়; বহিঃস্ত ও অভ্যন্তরীণ ঘটনা দিগন্ত এবং সিঙ্গুলারিটি।
একটি ব্ল্যাক হোলের ঘটনা
দিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন ব্ল্যাক হোলের চারপাশের স্তর বা সীমানা, যা থেকে আলো পর্যন্ত বের হতে পারে না। যেহেতু
অবিচ্ছিন্ন মাধ্যাকর্ষণ বল ঘটনা দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত, কোনও
কণা ঘটনা দিগন্ত অতিক্রম করে বের হয়ে যেতে পারে না। শক্তিশালী মধ্যাকর্ষন বল একে
অভ্যন্তরে আটকে রাখে।আর কেন্দ্রে অবস্থান সিঙ্গুলারিটির । এটি হল কৃষ্ণগহ্বরের
কেন্দ্র, যেখানে সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত থাকে। এই বিন্দুতে
স্পেস-টাইম কার্ভেচার অসীমে পরিণত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সিঙ্গুলারিটির
এলাকার আয়তন শূন্য কিন্তু ঘনত্ব প্রায় অসীম। এর কারণ হচ্ছে প্রায় পুরো ব্ল্যাক
হোলের ভর তার সিঙ্গুলারিটিতেই জমা হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হল এই সিংগুলারিটি
সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা সবচেয়ে কম। তবে ধারণা করা হয় এই বিন্দুতে
পদার্থবিজ্ঞানের সকল নিয়ম ভেঙ্গে পরে। স্থান কাল বলে এখানে কিছু নেই।
কোন
কিছু কেন ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না? উত্তর
টি খুবই সহজ, অভিকর্ষ বল। একটি
ব্ল্যাক হোলের ভর এতটাই বেশি থাকে যে এটি এর চারদিকে প্রচন্ড শক্তিশালী মধ্যাকর্ষন
শক্তির বলয় তৈরি করে রাখে, যে বল ছিন্ন করে কোন কিছু
বেরিয়ে আসা অসম্ভব। এমনকি এর আশেপাশে কোন বস্তু গেলেও তা এই বলের কারণে ব্ল্যাক
হোলে বিলীন হয়ে যাবে।ব্যাপারটি ভাল ভাবে বোঝার জন্য মুক্তিবেগ বা Escape
velocity সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। যদি পৃথীবির কথা বিবেচনা
করা যায় তাহলে আমরা সবাই জানি যে কোন বস্তুকে যদি উপরের দিকে নিক্ষেপ করা যায়
তাহলে অবশ্যই সেটি পুনরায় ভূনিতে ফিরে আসবে। কিন্তু এই নিক্ষেপণ বেগের একটা সীমা
আছে। নির্দিষ্ট একটি বেগের পর কোন বস্তু আর পৃথীবিতে ফিরে আসবে না। এই বেগটিই হল
মুক্তিবেগ। অর্থাৎ, এটি এমন একটি বেগ যে বেগে কোন বস্তুকে
নিক্ষেপ করলে সেটি আর ভূমিতে ফিরে আসে না। পৃথিবীর মুক্তিবেগ ১১.২ কিমি/সেকেন্ড।
এর মানে হল, আপনি যদি উপরের দিকে কোন বস্তুকে ১১.২
কিমি/সেকেন্ড বেগে নিক্ষেপ করতে পারেন তাহলে এটি পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন শক্তি ভেদ করে
মহাশূন্যে চলে যাবে।বিজ্ঞানীরা যেভাবে তারা মহাকাশে নক্ষত্র এবং অন্যান্য বস্তু
দেখতে পান, কৃষ্ণগহ্বরগুলি সেভাবে দেখতে পান না। কারন এটি
থেকে কোন আলোর প্রতিফলন না হওয়া। তবে কিছু বিশেষ পদ্ধতিতে এটি দেখা সম্ভব।ব্ল্যাক
হোল এর আশেপাশের নক্ষত্র ও ধূলিকণার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেহেতু ব্ল্যাক
হোল এর আশেপাশের স্থান বাঁকিয়ে দেয়, এর পার্শ্ববর্তী
নক্ষত্র ও ধূলীকণার ভিজিবিলিটির পার্থক্য ব্ল্যাক হোলের উপস্থিতি জানান দেয়। আবার
ব্ল্যাক হোল সবসময় এক ধরনের বিকিরন করে করে থাকে। ব্ল্যাক হোল দেখা না গেলেও এসকল
বিকিরন সনাক্ত করা সম্ভব। এ সকল বিকিরন বিশ্লেষন করে ব্ল্যাক হোলের অবস্থান সনাক্ত
করা সম্ভব।অধিকাংশ সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ভর, চার্জ
এবং কৌনিক গতিবেগ রয়েছে। তবে সাধারন স্ট্যাটিক ব্ল্যাক হোলের ভর রয়েছে কিন্তু
বৈদ্যুতিক চার্জ বা কৌণিক গতিবেগ নেই। এই ব্ল্যাক হোলগুলি শোয়ার্জচাইল্ড ব্ল্যাক
হোল নামে পরিচিত, যিনি 1916 সালে
এই সমাধানটি আবিষ্কার করেছিলেন।কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ ক্ষেত্র এবং একই ধরণের অন্য
কোনও গোলাকার বস্তুর মধ্যকার মহাকর্ষ ক্ষেত্রের কোনও পর্যবেক্ষণযোগ্য পার্থক্য
নেই। ব্ল্যাক হোলের “সর্বগ্রাহীতা” মতবাদটি শুধু এর ঘটনা দিগন্তের নিকটেই কার্যকর; অধিক দুরত্বে বাহ্যিক মহাকর্ষ ক্ষেত্রে একই ভরের অন্য কোনও বস্তুর সাথে
এর কোন পার্থক্য নেই।
ব্ল্যাক হোল বিভিন্ন রকম হতে
পারে। কোন কোন ব্ল্যাক হোল আকারে অনেক বড়, আবার কোন কোন টি তুলনামূলক অনেক ছোট। ভরের দিকেও রয়েছে বিভিন্নতা।
বিজ্ঞানীদের মতে ক্ষুদ্রতম ব্ল্যাক হোল একটি পরমাণুর সমানও হতে পারে। প্রধানত নিম্নোক্ত
চার প্রকারের ব্ল্যকহোলের কথা জানা যায়;
১. মাইক্রো বা মিনি ব্ল্যাক
হোল (Micro Black hole)
২. স্টেলার ব্ল্যাক হোল (Stella Black hole)
৩. ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক
হোল (Intermediate Black hole)
৪. সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল
(Super Massive Blackhole) ।
একটি ব্ল্যাক হোল কোন
গ্যালাক্সির যে কোন স্থানে থাকতে পারে। স্টেলার ব্ল্যাকহলগুলি কোন গ্যালাক্সিতে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তবে প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি সুপাম্যাসিভ ব্ল্যাক
হোল থাকে। সম্পূর্ন গ্যালাক্সিটি এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের চারদিকে ঘুরতে
থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি ছোট গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল
থাকতে পারে। তবে বৃহৎ গ্যালাক্সিগুলোর কেন্দ্রে সবসময় একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক
হোল থাকে।হ্যাঁ, মিল্কিওয়ে মানে আমাদের
গ্যালিক্সিতেও ব্ল্যাক হোল রয়েছে, তাও আবার কয়েক শত
মিলিয়ন।Harvard-Smithsonian Center for Astrophysics একটি
গবেষণা থেকে জানা যায় আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে কয়েক শত মিলিয়ন স্টেলার
ব্লাকহোল রয়েছে। আবার নাসার তথ্যমতে আমাদের গ্যালাক্সিতে প্রায় ১০ মিলিয়ন স্টেলার
ব্ল্যাক হোল রয়েছে।আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে যে সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল
রয়েছে তার নাম Sagittarius A*। এই
ব্ল্যাক হোলকটির ভর আমাদের সূর্যের ভরের প্রায় ৪ মিলিয়ন গুন বেশি। বিজ্ঞানীদের
মতে, আমাদের সৌরজগত থেকে এই ব্ল্যাক হোল টির দূরত্ব
প্রায় ২৬০০০ আলোকবর্ষ। ২০১৯ সালে Paranal Space Observatory মিল্কিওয়ে থেকে প্রায় ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে Holmberg 15A গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল খুঁজে পায়,
যার ভর সূর্যের ভরের প্রায় ৪০ বিলিয়ন গুন বেশি এবং
শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ ১১৮.৩৫ বিলিয়ন কিলোমিটার যা পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার
দূরত্বের ৮০০ গুন! এর নাম S50014+81। ব্ল্যাক
হোলেরও ধ্বংস আছে। ব্ল্যাক হোল ক্রমাগত বিকিরণ নির্গমন করে। ১৯৭৪ সালে বিখ্যাত
পদার্থবজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এটি প্রমাণ করেন যে, ব্ল্যাক হোল
থেকে ক্রমাগত কিছু বিকিরন নিঃসরণ হয়। তার নাম অনুসারে এই বিকিরন কে বলা হয় হলিং
রেডিয়েশন (Hawking Radiation) ।তিনি
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি শাখা কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের সহায়তায় এই বিকিরন
ব্যাখ্যা করেছিলেন। কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মতে মহাশূন্যের শূন্যস্থান আসলে
শূন্য নয়। এই শূন্যস্থানে প্রতিনিয়ত ভার্চুয়াল কণারা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি
হচ্ছে এবং ধ্বংসও হচ্ছে। এদের মধ্যে একটি বাস্তব কণা (particle) অপরটি প্রতিকণা (anti-particle)। এই বস্তবকনা ও প্রতিকণা
সৃষ্টি হবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।
এই ভার্চুয়াল কণা গুলো যখন ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্তের কাছে উৎপন্ন হয় তখন
ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ শক্তির প্রভাবে এই কনা গুলো মিলিত হতে পারে না। এদের মধ্যে
একটিকে ব্ল্যাক হোল তার নিজের দিকে টেনে নেয় আর অপরটি বাইরের দিকে ঠেলে দেয়। এই
কণাটির বাইরের আসতে যে শক্তি লাগে তা ব্ল্যাক হোল নিজেই সরবরাহ করে। এই কণাটিকেই
আমরা বিকিরণ আকারে ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত থেকে বের হতে দেখি। এই বিকিরণ কে বলা
হয় হকিং বিকিরণ (Hawking
Radiation) । এই
বিকিরনের ফলে ধীরে ধীরে ব্ল্যাক হোলের শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। তবে এটি খুবই ধীর
প্রক্রিয়া। এভাবে বিকিরণ নির্গমনের ফলে ব্ল্যাক হোলের মৃত্যু ঘটে। ব্ল্যাক হোলের
মৃত্যুর একটি বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে এর সমস্ত ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একটি
ব্ল্যাক হোলের মৃত্যু কখন ঘটবে সেটা নির্ভর করে এর ভরের ওপর। যার ভর যত বেশি হবে
সেই ব্ল্যাক হোলটি মহাবিশ্বে তত বেশি কাল ধরে টিকে থাকবে। যেমন আইফেল টাওয়ারকে
যদি ব্ল্যাক হোল এ পরিণত করা হয় তাহলে এটা মাত্র কয়েক সেকেন্ড টিকে থাকবে।তিনি
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি শাখা কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের সহায়তায় এই বিকিরন
ব্যাখ্যা করেছিলেন। কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মতে মহাশূন্যের শূন্যস্থান আসলে
শূন্য নয়। এই শূন্যস্থানে প্রতিনিয়ত ভার্চুয়াল কণারা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি
হচ্ছে এবং ধ্বংসও হচ্ছে। এদের মধ্যে একটি বাস্তব কণা (particle) অপরটি প্রতিকণা (anti-particle)। এই
বস্তবকনা ও প্রতিকণা সৃষ্টি হবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে
নিঃশেষ হয়ে যায়। এই ভার্চুয়াল কণা গুলো যখন ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্তের কাছে
উৎপন্ন হয় তখন ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ শক্তির প্রভাবে এই কনা গুলো মিলিত হতে পারে
না। এদের মধ্যে একটিকে ব্ল্যাক হোল তার নিজের দিকে টেনে নেয় আর অপরটি বাইরের দিকে
ঠেলে দেয়। এই কণাটির বাইরের আসতে যে শক্তি লাগে তা ব্ল্যাক হোল নিজেই সরবরাহ করে।
এই কণাটিকেই আমরা বিকিরণ আকারে ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত থেকে বের হতে দেখি। এই
বিকিরণ কে বলা হয় হকিং বিকিরণ (Hawking Radiation) । এই
বিকিরনের ফলে ধীরে ধীরে ব্ল্যাক হোলের শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। তবে এটি খুবই ধীর
প্রক্রিয়া। এভাবে বিকিরণ নির্গমনের ফলে ব্ল্যাক হোলের মৃত্যু ঘটে। ব্ল্যাক হোলের
মৃত্যুর একটি বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে এর সমস্ত ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একটি
ব্ল্যাক হোলের মৃত্যু কখন ঘটবে সেটা নির্ভর করে এর ভরের ওপর। যার ভর যত বেশি হবে
সেই ব্ল্যাক হোলটি মহাবিশ্বে তত বেশি কাল ধরে টিকে থাকবে। যেমন আইফেল টাওয়ারকে
যদি ব্ল্যাক হোল এ পরিণত করা হয় তাহলে এটা মাত্র কয়েক সেকেন্ড টিকে থাকবে।ব্ল্যাক
হোল হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। হকিং রেডিয়েশন একটি অতি ধীর
প্রক্রিয়া। যে কারণে একটি ব্ল্যাক হোল অনেক দীর্ঘ সময় টিকে থাকে। সূর্যের ভরের
সমান একটি ব্ল্যাক হোল ক্ষয় হতে প্রায় 10^67 বছর সময় নেয়। মিল্কিওয়ে কেন্দ্রের ব্ল্যাক হোলটির ক্ষয় হতে 10^87
বছর সময় লাগবে। আবার মহাবিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তর ব্ল্যাক হোল টি
সময় নেবে প্রায় 10^100 বছর।
সানজিদা রুমি কর্তৃক গ্রথিত http://www.alokrekha.com
বহুদিন বাদে বাদে আলোকরেখায় লেখা পোস্ট হয়। আগের মতো আর প্রায় প্রতিদিন লেখা পাইনা। পুরোনো লেখা দেখেই সন্তুষ্ট হই। আলোকরেখার পাঠক সংখ্যা বাড়ার কারণ আমরা প্রতিদিনই একবার দুবার আলোকরেখায় ক্লিক করি নতুন কিছু পাওয়ার আশায়। না পেয়ে হতাশ হই সেটা বোঝার জন্য আলোকরেখার কর্তৃপক্ষকে বিশেষ অনুরোধ রইলো। এখন আসি আজকের লেখা নিয়ে। ব্ল্যাক হোল লেখাটা খুবই তথ্য বহুল। ছবি দিয়ে সানজিদা রুমি যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা প্রশংসনীয়। অনেক শুভ কামনা।
ReplyDeleteএকটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল লেখাটা অনেক ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমার খুব কৌতূহল ছিল এই বিষয় নিয়ে। লেখাটা পেয়ে উপশম হল। আলোকরেখা আমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। প্রতিদিন দু চার বার আলোকরেখা খুলে বসি। নতুন লেখা পেলে মনটা ভরে যায়। আলোকরেখাকে ভালোবাসি।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল লেখাটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। বিস্তারিত অনেক কিছু জানতে পারলাম। ব্ল্যাক হোল নিয়ে সবার কৌতূহলের অন্ত নেই। এখানে যেভাবে ছবি ও ডায়োগ্রাম দিয়ে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। অনেক শুভ কামনা।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল লেখাটা নিরীক্ষা ধর্মী লেখা। আমরা গুগল সার্চ করে বাংলায় এক জায়গায় কোন কিছু সম্পর্কে জানতে পারিনা। কিন্তু আলোকরেখা আমাদের সেই সুযোগ দেয় যেখানে আমাদের সকল আশা পুর হয়। আমি অনেক চেষ্টা করেও একটি লেখার মাধ্যমে ব্ল্যাক হোল সম্পকে জানতে পারিনি। পাই কিন্তু বিক্ষিপ্ত ভাবে। সানজিদা রুমি যেভাবে লিখেছেন তাতে পুরো ব্যাপারটা জলের মতন পরিষ্কার হয়ে গেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল লেখাটা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আলোকরেখার পাঠক সংখ্যা বেশি কারণ এখানে সবকিছু পাওয়া যায়। ব্ল্যাক হোল এর মত বিষয়ও আলোকরেখায় প্রকাশিত হয়েছে। এই বিষয়ে সবার জানার ইচ্ছা প্রবল। এই লেখার মাধ্যমে যে ভাবে বর্ণিত হয়েছে তা জানাকে সম্মৃদ্ধ করে। আলোকরেখাকে ধন্যবাদ।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল লেখাটা পড়ে আসলেও অনেক কিছু জানতে পারলাম। ব্ল্যাক হোলে পদার্থের অত্যাধিক ঘনত্ব মধ্যাকর্ষণ বল ইত্যাদি সরল সমীকরণে বিশদ বর্ননা তুলে ধরেছেন। খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteসানজিদা রুমির একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল লেখাটা আলোকরেখাকে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে। এখানে মনন ও প্রজ্ঞার খোরাক মেলে। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন বিষয় প্রকাশিত হয়। তাইতো আলোকরেখার পাঠক সংখ্যা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আলোকরাখার পথ চলা সুন্দর হোক ও আমরা নতুন নতুন লেখা পাই এই কামনা নিরন্তর।
ReplyDelete